ত্রিদিব বর্মণ
অগ্রহায়ণ প্রায় মাঝামাঝিতে। সঙ্গে বইছে শীতের আমেজ। শীত এলে জমে ওঠে নতুন ধানের চালে তৈরি পিঠা-পুলি খাওয়া। এসব খাবারের অন্যতম অনুষঙ্গ গুড় ও চিনি।আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা পদের গুড় তৈরি হয়। এর মূল উপকরণ ভিন্ন হলেও তৈরির প্রক্রিয়া একই। বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি হয়। রসের ঘনত্বের তারতম্যের ওপর এর নাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
রস সামান্য ঘন হয়ে এলে অঞ্চলভেদে এর নাম হয় রাব, লালি বা নালি, মধু গুড় বা তাত রস। এর থেকে একটু বেশি ঘন হলে তার নাম ঝোলা গুড়, দানা গুড়, মরিচা গুড়, ভিড় গুড়। এ অবস্থা থেকে আরও বেশি ঘন, কঠিন বা শক্ত হয়ে এলে তার নাম পাটালি, বাটালি বা পাটা গুড়।
বাঙালির খাদ্যতালিকায় গুড়ের অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত। ব্রিটিশদের হাত ধরে চিনি এলেও, এই অঞ্চলে গুড়ের ব্যবহার বহু পুরোনো। একটা সময় ছিল যখন বাড়িতে কোনো আগন্তুক পানি চাইলে তাকে শুধু পানি দেওয়া হতো না। পানির সঙ্গে একটু গুড়ও দেওয়া হতো।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে আমাদের জীবনে বা সংস্কৃতিতে গুড় বহু পুরোনো উপাদান। গুড় দিয়ে তৈরি হয় নাড়ু, মোয়া, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, জিলাপি ইত্যাদি মুখরোচক খাবার। গুড়ের তৈরি খাবারের মধ্যে সম্ভবত নলেন গুড়ের সন্দেশের খ্যাতি জগৎজোড়া। এ ছাড়া গুড়ের শরবত ও চা-ও বাঙালির দারুণ পছন্দের পানীয়।
আমাদের গুড়ের প্রসিদ্ধিও জগৎজোড়া। মানিকগঞ্জের ঝিটকায় খেজুরের রস থেকে তৈরি হাজারি গুড় খেয়ে অভিভূত হয়েছিলেন ব্রিটিশ রানি। তারপর এই গুড় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাদৃত হয়েছে। দেশকালের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার এসব গল্প বেশ চিত্তাকর্ষক।
যত রকমের গুড়
আখ, খেজুর কিংবা তালের রস থেকে গুড় তৈরি হয়—এটা জানা বিষয়। এর বাইরে নারকেলের রস থেকেও গুড় তৈরি হয়! থাইল্যান্ডে এই গুড় তৈরি হচ্ছে ইতিমধ্যে। ভারতের সমুদ্রঘেঁষা বেশ কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে কেরালায় শুরু হয়েছে নারকেলের রসের গুড় তৈরি। আর তার ঢেউ এসে লেগেছে ভারতের কৃষ্ণনগরেও। আশা করা যায়, বাংলাদেশেও অচিরেই শুরু হবে নারকেলগাছের রস থেকে গুড় তৈরির কাজ।
গোলপাতাগাছের রস থেকে গুড় তৈরি হয়। এই গুড় পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ কিছু অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় এবং এটি অনেকেরই জীবন-জীবিকার অংশ। তালগাছে শুধু তালই হয় না; এর রস থেকেও যে গুড় তৈরি হয়, সেটা কমবেশি আমরা জানি। তালের গুড় বেশ জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। প্রকৃতিতে তালগাছ কমে যাওয়ায় তালের গুড়ও এখন অপ্রতুল।
বাঙালির কাছে খেজুরের গুড় দারুণ জনপ্রিয় এক বস্তু। স্বাদ আর ঘ্রাণে এর অবস্থান সব গুড় থেকে আলাদা। খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় খেজুর গুড়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খেজুরের গুড় তৈরি হলেও, যশোর অঞ্চলের খেজুর গুড়কে সেরার তালিকায় রাখেন বোদ্ধা মানুষেরা। রাজশাহী বা ফরিদপুর অঞ্চলের খেজুর গুড়ও ভালো। ময়মনসিংহের কিছু অংশেও খেজুর গুড় তৈরি হয়। আর মানিকগঞ্জের বিখ্যাত হাজারি গুড়ের কথা তো আগেই বলেছি।
আখের রস মাড়াই করে সেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় আখের গুড়। উপকরণের প্রাচুর্য থাকায় আমাদের দেশে বেশি প্রচলিত আখের গুড়। এটি সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। ব্যবহারের দিক বিবেচনা করলে, চিনির ব্যবহারের পরেই আখের গুড়ের অবস্থান।
কৌতূহলের বশে তরমুজের গুড় তৈরির কথা আমরা সংবাদমাধ্যমে জেনেছি! যদিও সেটা এখনো খুব প্রচলিত হয়নি। এখনো মানুষ সরাসরি তরমুজ খেতেই বেশি অভ্যস্ত।
গুড়ের চাহিদার বিপরীতে এর কাঁচামালের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে; বিশেষ করে খেজুরের গুড় তৈরিতে। যেভাবে কমেছে খেজুরগাছ, ঠিক সেভাবেই কমে যাচ্ছে এই পেশার লোকবলও। নতুন প্রজন্ম আর এই কষ্টের কাজে যুক্ত হচ্ছে না। পরম্পরা ভেঙে গেছে অনেক ক্ষেত্রেই। কিন্তু দিন দিন চাহিদা বাড়ছে গুড়ের।
দরদাম
দেশের বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন গুড়ের দাম মানভেদে ভিন্ন ভিন্ন। বাজারে প্রতি কেজি গুড় ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
অগ্রহায়ণ প্রায় মাঝামাঝিতে। সঙ্গে বইছে শীতের আমেজ। শীত এলে জমে ওঠে নতুন ধানের চালে তৈরি পিঠা-পুলি খাওয়া। এসব খাবারের অন্যতম অনুষঙ্গ গুড় ও চিনি।আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা পদের গুড় তৈরি হয়। এর মূল উপকরণ ভিন্ন হলেও তৈরির প্রক্রিয়া একই। বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি হয়। রসের ঘনত্বের তারতম্যের ওপর এর নাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
রস সামান্য ঘন হয়ে এলে অঞ্চলভেদে এর নাম হয় রাব, লালি বা নালি, মধু গুড় বা তাত রস। এর থেকে একটু বেশি ঘন হলে তার নাম ঝোলা গুড়, দানা গুড়, মরিচা গুড়, ভিড় গুড়। এ অবস্থা থেকে আরও বেশি ঘন, কঠিন বা শক্ত হয়ে এলে তার নাম পাটালি, বাটালি বা পাটা গুড়।
বাঙালির খাদ্যতালিকায় গুড়ের অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত। ব্রিটিশদের হাত ধরে চিনি এলেও, এই অঞ্চলে গুড়ের ব্যবহার বহু পুরোনো। একটা সময় ছিল যখন বাড়িতে কোনো আগন্তুক পানি চাইলে তাকে শুধু পানি দেওয়া হতো না। পানির সঙ্গে একটু গুড়ও দেওয়া হতো।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে আমাদের জীবনে বা সংস্কৃতিতে গুড় বহু পুরোনো উপাদান। গুড় দিয়ে তৈরি হয় নাড়ু, মোয়া, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, জিলাপি ইত্যাদি মুখরোচক খাবার। গুড়ের তৈরি খাবারের মধ্যে সম্ভবত নলেন গুড়ের সন্দেশের খ্যাতি জগৎজোড়া। এ ছাড়া গুড়ের শরবত ও চা-ও বাঙালির দারুণ পছন্দের পানীয়।
আমাদের গুড়ের প্রসিদ্ধিও জগৎজোড়া। মানিকগঞ্জের ঝিটকায় খেজুরের রস থেকে তৈরি হাজারি গুড় খেয়ে অভিভূত হয়েছিলেন ব্রিটিশ রানি। তারপর এই গুড় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাদৃত হয়েছে। দেশকালের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার এসব গল্প বেশ চিত্তাকর্ষক।
যত রকমের গুড়
আখ, খেজুর কিংবা তালের রস থেকে গুড় তৈরি হয়—এটা জানা বিষয়। এর বাইরে নারকেলের রস থেকেও গুড় তৈরি হয়! থাইল্যান্ডে এই গুড় তৈরি হচ্ছে ইতিমধ্যে। ভারতের সমুদ্রঘেঁষা বেশ কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে কেরালায় শুরু হয়েছে নারকেলের রসের গুড় তৈরি। আর তার ঢেউ এসে লেগেছে ভারতের কৃষ্ণনগরেও। আশা করা যায়, বাংলাদেশেও অচিরেই শুরু হবে নারকেলগাছের রস থেকে গুড় তৈরির কাজ।
গোলপাতাগাছের রস থেকে গুড় তৈরি হয়। এই গুড় পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ কিছু অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় এবং এটি অনেকেরই জীবন-জীবিকার অংশ। তালগাছে শুধু তালই হয় না; এর রস থেকেও যে গুড় তৈরি হয়, সেটা কমবেশি আমরা জানি। তালের গুড় বেশ জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। প্রকৃতিতে তালগাছ কমে যাওয়ায় তালের গুড়ও এখন অপ্রতুল।
বাঙালির কাছে খেজুরের গুড় দারুণ জনপ্রিয় এক বস্তু। স্বাদ আর ঘ্রাণে এর অবস্থান সব গুড় থেকে আলাদা। খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় খেজুর গুড়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খেজুরের গুড় তৈরি হলেও, যশোর অঞ্চলের খেজুর গুড়কে সেরার তালিকায় রাখেন বোদ্ধা মানুষেরা। রাজশাহী বা ফরিদপুর অঞ্চলের খেজুর গুড়ও ভালো। ময়মনসিংহের কিছু অংশেও খেজুর গুড় তৈরি হয়। আর মানিকগঞ্জের বিখ্যাত হাজারি গুড়ের কথা তো আগেই বলেছি।
আখের রস মাড়াই করে সেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় আখের গুড়। উপকরণের প্রাচুর্য থাকায় আমাদের দেশে বেশি প্রচলিত আখের গুড়। এটি সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। ব্যবহারের দিক বিবেচনা করলে, চিনির ব্যবহারের পরেই আখের গুড়ের অবস্থান।
কৌতূহলের বশে তরমুজের গুড় তৈরির কথা আমরা সংবাদমাধ্যমে জেনেছি! যদিও সেটা এখনো খুব প্রচলিত হয়নি। এখনো মানুষ সরাসরি তরমুজ খেতেই বেশি অভ্যস্ত।
গুড়ের চাহিদার বিপরীতে এর কাঁচামালের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে; বিশেষ করে খেজুরের গুড় তৈরিতে। যেভাবে কমেছে খেজুরগাছ, ঠিক সেভাবেই কমে যাচ্ছে এই পেশার লোকবলও। নতুন প্রজন্ম আর এই কষ্টের কাজে যুক্ত হচ্ছে না। পরম্পরা ভেঙে গেছে অনেক ক্ষেত্রেই। কিন্তু দিন দিন চাহিদা বাড়ছে গুড়ের।
দরদাম
দেশের বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন গুড়ের দাম মানভেদে ভিন্ন ভিন্ন। বাজারে প্রতি কেজি গুড় ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে