শিবরাম চক্রবর্তীর বিশ্বভ্রমণ

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৪: ২৫

হাসির গল্পের রাজা বলে শিবরাম চক্রবর্তীর নাম আছে। একটা মেসে কাটিয়েছেন অনেকটা কাল। একটা ঘরের একটা তক্তপোশই ছিল তাঁর আশ্রয়, অথচ মনটা ঘুরে বেড়াত বিশ্বজুড়ে।

একবার প্রেমেন্দ্র মিত্র একটা পোস্টকার্ড পেলেন। লিখেছেন শিবরাম। প্রেমেন্দ্র মিত্রের অপরিণত বয়সের একটি লেখার প্রশংসা করে সেই পোস্টকার্ড। শিবরাম চক্রবর্তী তখন অনেক বড় লেখক।

একদিন প্রেমেন্দ্র মিত্র সবচেয়ে সস্তা টিকিট কিনে সিনেমা দেখছেন ম্যাডান সিনেমা হলে, পরে যার নাম হয়েছিল এলিট। তখনো সিনেমা কথা বলে না। বাজনা বাজানো হয় দৃশ্যের সঙ্গে। সিনেমা দেখছেন প্রেমেন্দ্র, এ সময় পাশের আসনের মানুষটি বদলে গেল। সে আসনে এসে বসলেন শিবরাম এবং একটু পরেই প্রেমেন্দ্র বুঝতে পারলেন, তাঁরা এখন আর সিনেমা হলে নেই। কলকাতা শহর ছাড়িয়ে ভারতবর্ষ পেরিয়ে অন্য এক লোকে পৌঁছে গেছেন। শিবরাম কথার তুবড়ি ছোটাচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধুত্ব পাকা করে নিয়ে বিশ্বভ্রমণের ফন্দি আঁটছেন। শিবরামের দৃঢ় বিশ্বাস, পৃথিবী ভ্রমণ না করলে সাহিত্যিক হওয়া যায় না।

প্রেমেন্দ্র মিত্র থ হয়ে গেছেন। তখন পর্যন্ত তাঁর দৌড় লক্ষ্ণৌ থেকে ঢাকা আর গঙ্গাসাগর। আর এখন কিনা বিশ্বভ্রমণের পাঁয়তারা!
বিশ্বভ্রমণের জন্য মন প্রস্তুত, সমস্যা শুধু টাকার। সেটাও কি খুব বড় ব্যাপার? সে ব্যাপারটাও তো শিবরাম প্রায় মিটিয়ে ফেলেছেন। এক লাখ টাকা তাঁর হাতের মুঠোয়। হাইকোর্টের একটা মামলার রায় বের হলেই হাতে চলে আসবে এই টাকা!

এগুলো কিন্তু বানানো কথা নয়। শিবরামের সেই মামলাটা কিন্তু হাইকোর্টে উঠেছিল। প্রধান বিচারপতি নিজেই রায় দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, হাইকোর্টের ইতিহাসে এমন আজগুবি মামলা কেউ কখনো করেনি।

শিবরাম মামলা করার সময় আইনকানুন, উকিল-ব্যারিস্টার কিছুরই তোয়াক্কা করেননি। একজনকে শুধু সাক্ষী মেনেছেন। কাকে? যাঁর কাছে টাকার দাবি, তাঁকে! সেই সাক্ষী এসে বললেন, দাবি ভুয়া। ব্যস, মামলা ডিসমিস! 

সূত্র: প্রেমেন্দ্র মিত্র, স্মৃতিকথা ও অন্যান্য, পৃষ্ঠা ২১৮-২১৯

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত