পাতা খেলায় উপচেপড়া ভিড়

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২২, ০৭: ৩১
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, ১২: ৩৭

হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে ঠাকুরগাঁও সদরের বড়গাঁও ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কাচারী বাজার উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় যুব সমাজের আয়োজনে এই খেলা দেখতে নারী-পুরুষের উপচেপড়া ভিড় হয়।

খেলায় জেলার বিভিন্ন এলাকার ১৪ জন তান্ত্রিকের (পাতা-ফকির) দল ও পাতা হিসেবে ছয়জন অংশ নেন।

খেলার ধরন সম্পর্কে তান্ত্রিকেরা জানান, খেলা শুরু হওয়ার আগে মাঠের মাঝখানে একটি কলাগাছে পুঁতে রাখা হয়। কলাগাছের গোড়ায় পানিভর্তি মাটির ঘটি রেখে তান্ত্রিকেরা সেখানে হাত ভিজিয়ে নেন। পরে মাঠের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নিয়ে তাঁরা মাটিতে হাত রেখে মন্ত্র জপতে শুরু করেন। নিজ নিজ মন্ত্র দিয়ে পাতারূপী ব্যক্তিকে মাঠের মাঝখান থেকে নিজের দিকে টানার প্রতিযোগিতা করেন।

প্রতিযোগিতায় যে তান্ত্রিক মন্ত্রের সাহায্যে বেশি পাতা দাগের বাইরে নিয়ে আসবেন ও বশ করতে পারবেন সেই তান্ত্রিক জয়লাভ করবেন। অন্যদিকে যে পাতা মন্ত্রের বিরুদ্ধে নিজেকে স্থির রেখে দাগের ভেতরে থাকবেন তাঁকেও বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

খেলা দেখতে আসা মামুনুর রশিদ নামের এক স্কুল শিক্ষার্থী বলে, ‘আমি কখনো এই পাতা খেলা দেখিনি। আজকে প্রথম দেখলাম। অনেক ভালো লাগল। শুধু আমি না, আমার অনেক বন্ধু এই পাতা খেলা দেখতে আসছে।’

হরিহর রায় নামের এক বৃদ্ধ জানান, তাঁরা যখন ছোট ছিলেন তখন অনেক জনপ্রিয় ছিল পাতা খেলা। আগে এই খেলা বিভিন্ন গ্রামে নিয়মিত হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ কোথাও দেখা যায় না। তাই অনেক দিন পর এমন খেলার কথা শুনে আর লোভ সামলাতে পারেননি। খেলাটি দেখে তাঁর খুব ভালো লেগেছে।

খেলায় অংশগ্রহণকারী তান্ত্রিক আফসার উদ্দিন বলেন, ‘৩০ বছর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে খেলে আসছি। এখন অনেক বয়স হয়ে গেছে। তাই আগের মতো আর বেশি খেলতে পারি না। আর আগের মতো এই তন্ত্রমন্ত্রের পাতা খেলার তেমন বেশি আয়োজন করা হয় না।’

খেলায় পাতা হিসেবে অংশ নেওয়া শাহিনুর ইসলাম জানান, তান্ত্রিকেরা যখন মন্ত্র পড়েন তখন নিজের মন ঠিক রাখা খুব কঠিন হয়ে যায়। অনেক দিন পর এমন খেলায় অংশ নিতে পেরে তিনি খুব খুশি বলে জানান।

আয়োজক কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান মঞ্জু বলেন, ‘গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতেই আমাদের এই আয়োজন। তিন দিনব্যাপী এই খেলা চলবে। খেলা শেষে বিজয়ীদের বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত