মুজতবা আলীর রসিকতা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩, ১০: ২৩

পথের পাঁচালী ছবিটি তৈরি হওয়ার আগে কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৈয়দ মুজতবা আলীর দেখা হয় এক আড্ডায়। সেই আড্ডায় অন্যদের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ও উপস্থিত থাকতেন। কফি হাউসের সেই আড্ডায় সৈয়দ মুজতবা আলীকে ডেকে এনেছিলেন পরিচিত শাটুল বাবু।

আড্ডার শুরুতেই সবার মন জয় করার জন্য একটা অশ্লীল গল্প ফেঁদে বসেছিলেন আলী সাহেব। তিনি কখনো গল্প করার সময় ছোট-বড়র ধার ধারতেন না।কিছুক্ষণের মধ্যেই কুমারপ্রসাদকে আপনি থেকে নামিয়ে আনলেন তুই-এ। কুমারপ্রসাদ যখন কথা বলতে গিয়ে ‘গুষ্টিসুখ’ শব্দটি ব্যবহার করলেন, তখন মুজতবা আলী বললেন, ‘মনে হচ্ছে তুই মুজতবা আলীর বই পড়েছিস?’

তারপর আড্ডার অন্য সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমরাও পড়েছ “দেশে বিদেশে?” তাই পাবলিশার আমাকে বলেছিল আমার বই ছ কপি বিক্রি হয়েছে।’ এরপর আড্ডায় উপস্থিত প্রত্যেককে গুনে দেখলেন ছজনই আছে! সত্যজিৎ রায়কে বললেন, ‘তুমি তো মস্ত বড় বাপের ছেলে। ওই শতরঞ্জি মলাটের হ-য-ব-র-ল আর তোমার বাপের ছবি আঁকা আবোলতাবোলের প্রচ্ছদ বদলালে কেন ভাই?’

কুমারপ্রসাদকে বললেন, ‘তোর বাবা তো (ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) ভরত মুনি শার্ঙ্গদেবের পরই সংগীতজগতের বিখ্যাত অথোরিটি। গুরুদেব পর্যন্ত মানতেন, তা ওই নভেল তিনটে লিখতে গেল কেন? বাপরে! ঘেমে-নেয়ে বিষম খেয়ে ঘটি ঘটি জলটল খেয়ে শেষ করেছিলাম কোনোক্রমে। তুই লিখিস?’ ‘না।’

‘যদি লিখিস তো আনাতোল ফ্রাঁসের কথা মনে রাখবি, “ইফ ইউ ওয়ান্ট টু রিচ পস্টারিটি, ট্রাভেল লাইট”।’

একবার অন্নদাশঙ্কর রায়ের বাড়িতে গেছেন আলী সাহেব। অন্নদাশঙ্করের আমেরিকান স্ত্রী লীলা রায় তখন বাঙালি হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। আলী সাহেব দেখলেন তিনি নিড়েন নিয়ে ফুলগাছের তলাগুলো খোঁচাতে ব্যস্ত। জিজ্ঞেস করলেন, ‘মিস্টার রায় বাড়ি আছেন?’

লীলা রায় বললেন, ‘তিনি এখন সৃষ্টির কাজে ব্যাপৃটো আছেন।’

আলী সাহেব বললেন, ‘তাহলে আ–আপনি এখানে বাইরে কী করছেন মিসেস রায়?’ 

সূত্র: কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, মেহফিল, পৃষ্ঠা ৩১–৩৫

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত