মহিউদ্দিন খান মোহন
গত সপ্তাহে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাস থেকে নামতেই দেখা এক ছোট ভাই সৈয়দ হোসেনের সঙ্গে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিরে, এখানে কারেন্ট যায় কেমন?’ গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎকে ‘ইলেকট্রিসিটি’ না বলে কারেন্টই বলে। আমিও তাই বললাম। সৈয়দ বলল, ‘দাদা, আমাদের এখানে কারেন্ট এখন আর যায় না, মাঝে মাঝে আসে।’ এ বাক্যটি এখন সবাই বলে। এ যেন এক ধ্রুব সত্যে পরিণত হয়েছে।
বিদ্যুতের এই যাওয়া-আসা বাল্যকালে স্কুলপাঠ্য বইয়ে পড়া ‘ফুয়াদের গল্প বলা’ গল্পটির কথাই মনে করিয়ে দেয়। এক বাদশাহ শাহজাদার বন্ধু নির্বাচনের জন্য অনেক ছেলেকে ডাকলেন পরীক্ষা করবেন বলে। একজন বুদ্ধিমান ও সাহসী ছেলে দরকার শাহজাদার বন্ধু হিসেবে।
অনেকেই এল। বাদশাহ সবাইকে গল্প বলতে বলেন। তারা বলে। কিন্তু কাউকেই বুদ্ধিমান বলে মনে হয় না বাদশাহর। সবশেষে এল ফুয়াদ নামের চটপটে এক কিশোর। বাদশাহ তাকে গল্প বলতে বললেন। সে গল্প বলা শুরু করল—এক দালানে একটি চড়ুই পাখির বাসা ছিল।
চড়ুই দুটি সারা দিন যাওয়া-আসা করে। এই আসে, আবার ফুড়ুৎ করে উড়ে যায়। এটুকু বলে ফুয়াদ থামল। বাদশাহ বললেন, ‘তারপর?’ ফুয়াদ বলল, ‘ফুড়ুৎ।’ বাদশাহ বললেন, ‘তারপর?’ ফুয়াদ বলল, ‘তারপরও ফুড়ুৎ।’ এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘ফুড়ুৎ আর কতক্ষণ চলবে?’ ফুয়াদ জবাব দিল, ‘চড়ুই পাখি যতক্ষণ যাওয়া-আসা করবে, ফুড়ুৎও ততক্ষণ চলবে।’ বাদশা খুশি হলেন। দেখলেন, এ ছেলের যেমন বুদ্ধি আছে, তেমনি সাহসও আছে। বাদশাহ তাকেই শাহজাদার বন্ধু নির্বাচন করলেন।
গল্পে উড়ে যেত চড়ুই পাখি, আর আমাদের দেশে এখন বলা নেই, কওয়া নেই চলে যায় বিদ্যুৎ। সেদিন দেখলাম ফেসবুকে এক রসিক ভদ্রলোক লিখেছেন, ‘ভালোভাবে গরমটাকেও উপভোগ করতে পারছি না। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ মিয়া এসে ডিসটার্ব করে।’ মানুষ কতটা অতিষ্ঠ হলে এ ধরনের শ্লেষ মিশ্রিত বাক্য তৈরি ও প্রচার করে তা উপলব্ধি করা কষ্টকর নয়। তা ছাড়া সবাই যেখানে ভুক্তভোগী, সেখানে বলবেই বা কী।
আধুনিক জীবনযাত্রায় বিদ্যুতের আবশ্যকতা বলে বোঝানোর দরকার পড়ে না। বিদ্যুৎ ছাড়া জীবনই অচল। বিদ্যুৎ না থাকলে লাইট জ্বলে না, পাখা ঘোরে না, ছাদের ট্যাংকে পানি তোলা যায় না। প্রচণ্ড গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করে। একসময় আমাদের দেশে গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ ছিল না। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলও ছিল না। কিন্তু এখন তো সারা দেশে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে বিদ্যুতের ব্যবহারে। মানুষ তো অভ্যাসের দাস। আমরা যখন স্কুলে পড়তাম, তখন রাতের বেলা কুপি কিংবা হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে বসতাম। ওই স্বল্প আলোতেই সবাই যার যার কাজ সারত। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরত না। ঘুমাত হাতে তালের পাখা নিয়ে।
কিন্তু এখন সময় বদলেছে। ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমনকি শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের খুশিতে লাখ টাকার বাজিও পোড়ানো হয়েছে। তাহলে সেই শতভাগ বিদ্যুৎ গেল কোথায়? খবর বেরিয়েছে, কয়লার বকেয়া পরিশোধ না করায় রপ্তানিকারক দেশ কয়লা দেয়নি। তাই বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ নিয়ে মানুষ সামাজিক মাধ্যমে ট্রল করছে।
লিখছে, ‘আমরা তো বিদ্যুৎ বিল বাকি রাখি না। তাহলে কয়লার দাম পরিশোধ করা হলো না কেন?’ এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আর জবাবই-বা কী?
৪ জুন আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল ‘বিদ্যুতের জন্য হাপিত্যেশ’। তাতে বলা হয়েছে, দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং মানুষের কষ্ট বাড়াচ্ছে। ঢাকায় লোডশেডিং চার-পাঁচ ঘণ্টা। ঢাকার বাইরে বিদ্যুতের জন্য হাপিত্যেশ করতে হচ্ছে মানুষকে। উপজেলা পর্যায়ের একজন গ্রাহক জানিয়েছেন, দিনে ১২ থেকে ১৪ বার লোডশেডিং হয়। ৫ জুন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফলে লোডশেডিং আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৬ জুন আজকের পত্রিকা ‘যত গরম তত লোডশেডিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে লিখেছে, জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কোনো না কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার উৎপাদনে থাকা বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রও পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না পর্যাপ্ত কয়লা ও গ্যাসের অভাবে। ফলে সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুৎসংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এই অসহনীয় পরিস্থিতির একটি ব্যাখ্যা অবশ্য দাঁড় করিয়েছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গরম না কমলে অবস্থার উন্নতির কোনো আশা নেই।
৪ জুন অন্য একটি দৈনিকের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘বৃষ্টির অপেক্ষায় বিদ্যুৎ বিভাগ’। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, উন্নয়নের মহাযজ্ঞের ১০ বছর পর এসে প্রকৃতির কাছে বিশেষ অসহায় হয়ে পড়েছে দেশের বিদ্যুৎ বিভাগ। তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার চাপে অনিবার্য হয়ে পড়ছে লোডশেডিং। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, বৃষ্টি এসে তাপমাত্রা না কমালে লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা।
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ প্রকৃতির কাছে অসহায়, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বলে নিজেদের উদ্ভাবিত ও উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিয়েও তারা অসহায় বোধ করবে, এটা কেমন কথা? তাহলে এত দিন যে বিদ্যুৎ সেক্টরে মহাবিপ্লবের গালগপ্পো শোনানো হলো, তার সবই কি ভেলকিবাজি, না শুভংকরের ফাঁকি?
কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সচেতন কারও পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রশ্ন, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের কি হিসাব ছিল না মজুত কয়লায় কত দিন উৎপাদন চলবে? যদি থাকত তাহলে তাঁরা কেন আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেন না? শোনা যাচ্ছে ডলারসংকটের কারণে কয়লার বকেয়া পাওনা শোধ করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। এ বিষয়ে আমরা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কোনো রা-শব্দ শুনতে পাচ্ছি না। তিনি কি জেগে আছেন, নাকি ঘুমিয়ে আছেন?
এদিকে বিদ্যুৎসংকট তৈরি করছে বহুমাত্রিক সমস্যা। শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া পড়বে রপ্তানি বাণিজ্যে। পোলট্রিশিল্পে দেখা দিয়েছে সংকট। বিদ্যুতের অভাবে প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন স্থানে মুরগির ইন্তেকালের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর কিছুদিন এ অবস্থা চলতে থাকলে এই শিল্প খাতটি পড়বে মারাত্মক সংকটে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ আমাদের একবারে নাকাল করে দিচ্ছে।
পাদটীকা: গরম থেকে বাঁচার জন্য যদি বৃষ্টির দিকেই চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতে হয়, তাহলে আসুন, সবাই মিলে কোরাস গাই—‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই...’।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
গত সপ্তাহে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাস থেকে নামতেই দেখা এক ছোট ভাই সৈয়দ হোসেনের সঙ্গে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিরে, এখানে কারেন্ট যায় কেমন?’ গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎকে ‘ইলেকট্রিসিটি’ না বলে কারেন্টই বলে। আমিও তাই বললাম। সৈয়দ বলল, ‘দাদা, আমাদের এখানে কারেন্ট এখন আর যায় না, মাঝে মাঝে আসে।’ এ বাক্যটি এখন সবাই বলে। এ যেন এক ধ্রুব সত্যে পরিণত হয়েছে।
বিদ্যুতের এই যাওয়া-আসা বাল্যকালে স্কুলপাঠ্য বইয়ে পড়া ‘ফুয়াদের গল্প বলা’ গল্পটির কথাই মনে করিয়ে দেয়। এক বাদশাহ শাহজাদার বন্ধু নির্বাচনের জন্য অনেক ছেলেকে ডাকলেন পরীক্ষা করবেন বলে। একজন বুদ্ধিমান ও সাহসী ছেলে দরকার শাহজাদার বন্ধু হিসেবে।
অনেকেই এল। বাদশাহ সবাইকে গল্প বলতে বলেন। তারা বলে। কিন্তু কাউকেই বুদ্ধিমান বলে মনে হয় না বাদশাহর। সবশেষে এল ফুয়াদ নামের চটপটে এক কিশোর। বাদশাহ তাকে গল্প বলতে বললেন। সে গল্প বলা শুরু করল—এক দালানে একটি চড়ুই পাখির বাসা ছিল।
চড়ুই দুটি সারা দিন যাওয়া-আসা করে। এই আসে, আবার ফুড়ুৎ করে উড়ে যায়। এটুকু বলে ফুয়াদ থামল। বাদশাহ বললেন, ‘তারপর?’ ফুয়াদ বলল, ‘ফুড়ুৎ।’ বাদশাহ বললেন, ‘তারপর?’ ফুয়াদ বলল, ‘তারপরও ফুড়ুৎ।’ এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘ফুড়ুৎ আর কতক্ষণ চলবে?’ ফুয়াদ জবাব দিল, ‘চড়ুই পাখি যতক্ষণ যাওয়া-আসা করবে, ফুড়ুৎও ততক্ষণ চলবে।’ বাদশা খুশি হলেন। দেখলেন, এ ছেলের যেমন বুদ্ধি আছে, তেমনি সাহসও আছে। বাদশাহ তাকেই শাহজাদার বন্ধু নির্বাচন করলেন।
গল্পে উড়ে যেত চড়ুই পাখি, আর আমাদের দেশে এখন বলা নেই, কওয়া নেই চলে যায় বিদ্যুৎ। সেদিন দেখলাম ফেসবুকে এক রসিক ভদ্রলোক লিখেছেন, ‘ভালোভাবে গরমটাকেও উপভোগ করতে পারছি না। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ মিয়া এসে ডিসটার্ব করে।’ মানুষ কতটা অতিষ্ঠ হলে এ ধরনের শ্লেষ মিশ্রিত বাক্য তৈরি ও প্রচার করে তা উপলব্ধি করা কষ্টকর নয়। তা ছাড়া সবাই যেখানে ভুক্তভোগী, সেখানে বলবেই বা কী।
আধুনিক জীবনযাত্রায় বিদ্যুতের আবশ্যকতা বলে বোঝানোর দরকার পড়ে না। বিদ্যুৎ ছাড়া জীবনই অচল। বিদ্যুৎ না থাকলে লাইট জ্বলে না, পাখা ঘোরে না, ছাদের ট্যাংকে পানি তোলা যায় না। প্রচণ্ড গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করে। একসময় আমাদের দেশে গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ ছিল না। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলও ছিল না। কিন্তু এখন তো সারা দেশে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে বিদ্যুতের ব্যবহারে। মানুষ তো অভ্যাসের দাস। আমরা যখন স্কুলে পড়তাম, তখন রাতের বেলা কুপি কিংবা হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে বসতাম। ওই স্বল্প আলোতেই সবাই যার যার কাজ সারত। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরত না। ঘুমাত হাতে তালের পাখা নিয়ে।
কিন্তু এখন সময় বদলেছে। ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমনকি শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের খুশিতে লাখ টাকার বাজিও পোড়ানো হয়েছে। তাহলে সেই শতভাগ বিদ্যুৎ গেল কোথায়? খবর বেরিয়েছে, কয়লার বকেয়া পরিশোধ না করায় রপ্তানিকারক দেশ কয়লা দেয়নি। তাই বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ নিয়ে মানুষ সামাজিক মাধ্যমে ট্রল করছে।
লিখছে, ‘আমরা তো বিদ্যুৎ বিল বাকি রাখি না। তাহলে কয়লার দাম পরিশোধ করা হলো না কেন?’ এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আর জবাবই-বা কী?
৪ জুন আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল ‘বিদ্যুতের জন্য হাপিত্যেশ’। তাতে বলা হয়েছে, দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং মানুষের কষ্ট বাড়াচ্ছে। ঢাকায় লোডশেডিং চার-পাঁচ ঘণ্টা। ঢাকার বাইরে বিদ্যুতের জন্য হাপিত্যেশ করতে হচ্ছে মানুষকে। উপজেলা পর্যায়ের একজন গ্রাহক জানিয়েছেন, দিনে ১২ থেকে ১৪ বার লোডশেডিং হয়। ৫ জুন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফলে লোডশেডিং আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৬ জুন আজকের পত্রিকা ‘যত গরম তত লোডশেডিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে লিখেছে, জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কোনো না কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার উৎপাদনে থাকা বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রও পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না পর্যাপ্ত কয়লা ও গ্যাসের অভাবে। ফলে সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুৎসংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এই অসহনীয় পরিস্থিতির একটি ব্যাখ্যা অবশ্য দাঁড় করিয়েছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গরম না কমলে অবস্থার উন্নতির কোনো আশা নেই।
৪ জুন অন্য একটি দৈনিকের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘বৃষ্টির অপেক্ষায় বিদ্যুৎ বিভাগ’। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, উন্নয়নের মহাযজ্ঞের ১০ বছর পর এসে প্রকৃতির কাছে বিশেষ অসহায় হয়ে পড়েছে দেশের বিদ্যুৎ বিভাগ। তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার চাপে অনিবার্য হয়ে পড়ছে লোডশেডিং। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, বৃষ্টি এসে তাপমাত্রা না কমালে লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা।
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ প্রকৃতির কাছে অসহায়, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বলে নিজেদের উদ্ভাবিত ও উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিয়েও তারা অসহায় বোধ করবে, এটা কেমন কথা? তাহলে এত দিন যে বিদ্যুৎ সেক্টরে মহাবিপ্লবের গালগপ্পো শোনানো হলো, তার সবই কি ভেলকিবাজি, না শুভংকরের ফাঁকি?
কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সচেতন কারও পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রশ্ন, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের কি হিসাব ছিল না মজুত কয়লায় কত দিন উৎপাদন চলবে? যদি থাকত তাহলে তাঁরা কেন আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেন না? শোনা যাচ্ছে ডলারসংকটের কারণে কয়লার বকেয়া পাওনা শোধ করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। এ বিষয়ে আমরা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কোনো রা-শব্দ শুনতে পাচ্ছি না। তিনি কি জেগে আছেন, নাকি ঘুমিয়ে আছেন?
এদিকে বিদ্যুৎসংকট তৈরি করছে বহুমাত্রিক সমস্যা। শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া পড়বে রপ্তানি বাণিজ্যে। পোলট্রিশিল্পে দেখা দিয়েছে সংকট। বিদ্যুতের অভাবে প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন স্থানে মুরগির ইন্তেকালের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর কিছুদিন এ অবস্থা চলতে থাকলে এই শিল্প খাতটি পড়বে মারাত্মক সংকটে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ আমাদের একবারে নাকাল করে দিচ্ছে।
পাদটীকা: গরম থেকে বাঁচার জন্য যদি বৃষ্টির দিকেই চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতে হয়, তাহলে আসুন, সবাই মিলে কোরাস গাই—‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই...’।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে