ফারুক মেহেদী
তৃণমূলে দলীয় কোন্দল চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে। আর এসবের ফলই হচ্ছে মানুষ খুন, হামলা, মামলা ইত্যাদি। এখনো নির্বাচনের অনেক বাকি। এর মধ্যেই অন্তত অর্ধশতাধিক লোক নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর হয়েছে।
কী দিয়ে শুরু করব ভাবছি। কত কিছুই তো চারপাশে ঘুরছে। সব নিয়ে লিখতে মন চাইছে না। দুয়েকটি বিষয় নিয়ে আজকের লেখা শেষ করব। যেগুলো সরকারের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বিব্রত হওয়ার মতো; কিছু কিছু বিষয় সরকারি দলকে নানান প্রশ্ন আর সমালোচনার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। অথচ এগুলো না হলেই হয়তো ভালো হতো। জনগণও ভালো থাকত, আবার সরকার বা সরকারি দলকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো না।
ক. এ লেখা যখন লিখছি, তখন দেশজুড়ে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এদিন ৮৩৮টি ইউপিতে নির্বাচন হয়। নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে খুনোখুনি, মারামারি, হামলা, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ খবরগুলো যখন নিউজ ফিডে আসে, তখন চোখ আটকে যায়। পড়তে ইচ্ছে না করলেও পড়তে হয়। তখন ভাবি, একটি নির্বাচন হবে, মানুষ উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিতে যাবেন, পরিচিত সব মানুষ নিজেদের প্রতিনিধি বাছাই করবেন, যাঁদের সুখে-দুঃখে পাশে পাবেন, এমন নির্বাচনের বদলে সেখানে কেন মানুষের রক্ত ঝরবে?
ভাবা যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই কিছুদিন ধরে স্থানীয় এই নির্বাচন ঘিরে ভালো কোনো খবর নেই। প্রথম ধাপের নির্বাচনেও ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে, মানুষ মারা গেছে। জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এত কিছু দেখে, নিজের ভেতরে হতাশা চেপে বসেছে! সরকারে থাকা দল আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় মার্কায় প্রার্থী দিচ্ছে। বিএনপি সরাসরি নিজেদের মার্কায় প্রার্থী দিচ্ছে না। আর অন্য দলেরও নিজস্ব প্রার্থীর তৎপরতা কম। সুতরাং নির্বাচনটি বলা যায় একেবারে আওয়ামী লীগকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সমস্যা হলো একটি মাত্র দলের প্রার্থীর অংশগ্রহণের নির্বাচন ঘিরে সাধারণ মানুষের তেমন আগ্রহ না থাকলেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে চাঞ্চল্যের কমতি নেই! এ চাঞ্চল্য দলীয় সম্প্রীতি বা ঐক্যের নয়; এ চাঞ্চল্য কোন্দল, খুনোখুনি, মারামারি আর ভাঙনের।
এসব খবর পড়ে ও দেখে এ ধারণা হয়েছে যে, একটি স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। একটি ইউপিতে একজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, আর বঞ্চিত হচ্ছেন অন্তত কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়ন কেন্দ্র থেকে দেওয়া হলেও, স্থানীয় শীর্ষ নেতারাই নামের তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন।
আর এই নামের তালিকা করার ক্ষেত্রেও যে শতভাগ স্বচ্ছতা, যোগ্যতা মানা হচ্ছে বা দলের ত্যাগী ও জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য নেতা-কর্মীকে বাছাই করা সম্ভব হচ্ছে, এমন নয়।
এখানেও স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে অনেক অযোগ্য, অগ্রহণযোগ্য ও পক্ষপাতদুষ্ট প্রার্থীও মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় ঢুকে যাচ্ছেন। এতে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে। আর এসবের ফলই হচ্ছে মানুষ খুন, হামলা, মামলা ইত্যাদি। এখনো নির্বাচনের অনেক বাকি। এর মধ্যেই অর্ধশতাধিক লোক নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর হয়েছে। আর আহত হয়েছেন অন্তত আড়াই হাজার লোক।
কোন্দল যদি এখানেই থেমে যেত, তাহলে কথাই ছিল না। কিন্তু এর রেশ রয়ে যাচ্ছে। সামনে আসছে সাধারণ নির্বাচন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই নির্বাচনেও এই কোন্দলের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা তাঁদের। কারণ, প্রার্থী মনোনয়নে দায়ী করা হচ্ছে স্থানীয় এমপিদের। স্থানীয়ভাবে এই ধারণা জন্ম হয়েছে যে, এমপিদের সমর্থন ছাড়া প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার কথা নয়। যদি তা-ই হয়, তাহলে একটি নির্বাচনী এলাকায় যদি কমবেশি ১৫টি ইউনিয়ন থাকে, সেখানে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন ১৫ জন। অথচ প্রায় প্রতিটি ইউপিতেই দলীয় অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এ রকম প্রতি ইউপিতে গড়ে চারজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে ওই সাংসদের নির্বাচনী এলাকায় মোট বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা হয় ৬০ জন। তাঁদের অনেকেই আবার নির্বাচিতও হচ্ছেন। ফলে বেলা শেষে দেখা যায়, এমপি সাহেবের পছন্দের লোক থাকছেন হয়তো ১৫ জন, কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে কোন্দল ছড়িয়ে পড়ায় তাঁর বিপক্ষে চলে যাচ্ছেন এর চার গুণ বা ৬০ জন প্রার্থী।
স্থানীয়দের অভিমত, যদি কমবেশি সর্বত্র এ রকম ঘটনা ঘটে, তাহলে আসছে নির্বাচনে দলের হয়ে এমপির জন্য ১৫ জন খাটলেও বাকি ৬০ জনের ভূমিকা কী হবে, এটি যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। তাঁরা কি এমপির হয়ে কাজ করবেন, নাকি নীরব থাকবেন, নাকি আর কারও পক্ষে কাজ করবেন–এটিই বড় প্রশ্ন। তার মানে হচ্ছে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন দলের জন্য ভালোর চেয়ে বরং খারাপই হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা যায়। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন বিতর্কমুক্ত হয়নি। অনেকে একে খুনোখুনির নির্বাচন বলছেন। অনেকে নির্বাচন না বলে প্রহসন বলছেন ইত্যাদি। অথচ সরকার একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে এত ঘটনা, এত প্রাণহানি কিংবা এত প্রশ্নের জন্ম হতো না। আর সামনে নির্বাচন ঘিরে দলীয় প্রার্থীদের জন্য ঝুঁকিও তৈরি হতো না।
খ. এবার তেল নিয়ে একটু কথা বলি। সাধারণত তেল নিয়ে কথা বললে, অনেক মুখরোচক বিষয় সামনে আসতে পারে বলে মানুষ মনে করে। কিন্তু আমি যা বলব তা পুরোই উল্টো। এটা ‘তেলমারা’ তো নয়ই; বরং তেল-জলের যে সম্পর্ক, সে রকম একটা বিষয়! আমি তেল মানে জ্বালানি তেল; মানে ডিজেল, কেরোসিনের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে দুয়েক কথা বলেই লেখাটি শেষ করব।
সম্প্রতি সরকার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার যুক্তিতে দেশের বাজারেও এর দাম বাড়িয়েছে। শুধু বাড়ায়নি; বরং প্রতি লিটার ডিজেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। এটা সরকারের কার মাথা থেকে এসেছে, জানি না; তবে যিনিই সরকারকে এ বুদ্ধি দিয়েছেন, তিনি যে সাধারণ মানুষের স্নায়ু বুঝতে পারেন না–এটা নিশ্চিত করে বলা যায়! দুই বছর ধরে সারা বিশ্ব করোনার মতো মরণব্যাধি মহামারির সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এই যুদ্ধে প্রিয়জন হারানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে মানুষ কঠিন দিন পার করছে। আয় কমেছে, চাকরি চলে গেছে। ব্যবসায় ধস নেমেছে। ব্যাংকঋণ বেড়েছে। সরকারও কিছু কিছু খাতকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা দিয়েছে। এখন সবকিছু খুলে দেওয়া হলেও মন্দার ক্ষত শুকায়নি। উল্টো প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য প্রায় সব পণ্যের দাম অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। বলা যায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা অবস্থা। এ রকম এটি সময়ে কীভাবে সরকার মানুষকে আরও বাড়তি চাপে ফেলতে পারে, কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে এটা কী করে সম্ভব, এটা বোধগম্য হচ্ছে না।
এটা ঠিক সরকারের আয় কম হলেও ব্যয়ের চাপ আছে। তাই বড় লোকসান দিয়ে বেশি দিন চলা কঠিন। কিন্তু জ্বালানি খাতে সরকার গত কয়েক বছরে বিপুল অঙ্কের মুনাফা করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আর কিছুদিন যদি ভর্তুকি দিত, তাহলে যে লোকসান হতো, সামনে জ্বালানি তেলের দাম কমলে তা পুষিয়ে নিতে পারত কিংবা মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা আরেকটু ভালোর দিকে গেলে সিদ্ধান্তটি নিতে পারত। আকস্মিক একসঙ্গে এত দাম বাড়ানোর আগে মানুষকে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। জ্বালানি তেল একক কোনো পণ্য নয়; এটি স্ট্র্যাটেজিক কমোডিটি বা পণ্য হিসেবে পরিচিত। যেমন একটি জাহাজ যখন ডোবে, তখন শুধু জাহাজটিই ডোবে না; এর সঙ্গে শত শত মানুষ, তাদের পরিবার, তাদের প্রতিষ্ঠান, স্বপ্ন কিংবা সম্ভাবনাও ডোবে!
তেমনি জ্বালানি তেলের লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো মানেই ভোক্তার পকেট থেকে শুধু ১৫ টাকাই কেটে রাখা নয়; বরং এর সঙ্গে পরিবহন ভাড়া, কৃষকের উৎপাদন ও পরিবহন খরচ, উদ্যোক্তার পণ্য উৎপাদন ব্যয়সহ এ রকম অসংখ্য খাতে দাম ও খরচ বাড়ার মহোৎসব শুরু হয়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ভোক্তার ওপর। আর ভোক্তা মানে দেশের সাধারণ মানুষ। যাদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা সরকারের। সরকার হয়তো জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে কিছুটা লোকসান কমাল। কিন্তু পুরো অর্থনীতিতে এর সুযোগে যে ব্যয় বাড়ল, তার পরিমাণ এর চেয়ে শত গুণ বেশি; যা শুধু টাকার অঙ্কে হিসাব হবে না। এটা প্রতিযোগিতা সক্ষমতায়ও আঘাত করতে পারে। যে ক্ষতি পুরো অর্থনীতির। এটা সম্ভবত সরকারকে অঙ্ক করে কেউ বুঝিয়ে দেয়নি!
ফারুক মেহেদী, সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
তৃণমূলে দলীয় কোন্দল চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে। আর এসবের ফলই হচ্ছে মানুষ খুন, হামলা, মামলা ইত্যাদি। এখনো নির্বাচনের অনেক বাকি। এর মধ্যেই অন্তত অর্ধশতাধিক লোক নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর হয়েছে।
কী দিয়ে শুরু করব ভাবছি। কত কিছুই তো চারপাশে ঘুরছে। সব নিয়ে লিখতে মন চাইছে না। দুয়েকটি বিষয় নিয়ে আজকের লেখা শেষ করব। যেগুলো সরকারের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বিব্রত হওয়ার মতো; কিছু কিছু বিষয় সরকারি দলকে নানান প্রশ্ন আর সমালোচনার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। অথচ এগুলো না হলেই হয়তো ভালো হতো। জনগণও ভালো থাকত, আবার সরকার বা সরকারি দলকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো না।
ক. এ লেখা যখন লিখছি, তখন দেশজুড়ে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এদিন ৮৩৮টি ইউপিতে নির্বাচন হয়। নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে খুনোখুনি, মারামারি, হামলা, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ খবরগুলো যখন নিউজ ফিডে আসে, তখন চোখ আটকে যায়। পড়তে ইচ্ছে না করলেও পড়তে হয়। তখন ভাবি, একটি নির্বাচন হবে, মানুষ উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিতে যাবেন, পরিচিত সব মানুষ নিজেদের প্রতিনিধি বাছাই করবেন, যাঁদের সুখে-দুঃখে পাশে পাবেন, এমন নির্বাচনের বদলে সেখানে কেন মানুষের রক্ত ঝরবে?
ভাবা যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই কিছুদিন ধরে স্থানীয় এই নির্বাচন ঘিরে ভালো কোনো খবর নেই। প্রথম ধাপের নির্বাচনেও ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে, মানুষ মারা গেছে। জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এত কিছু দেখে, নিজের ভেতরে হতাশা চেপে বসেছে! সরকারে থাকা দল আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় মার্কায় প্রার্থী দিচ্ছে। বিএনপি সরাসরি নিজেদের মার্কায় প্রার্থী দিচ্ছে না। আর অন্য দলেরও নিজস্ব প্রার্থীর তৎপরতা কম। সুতরাং নির্বাচনটি বলা যায় একেবারে আওয়ামী লীগকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সমস্যা হলো একটি মাত্র দলের প্রার্থীর অংশগ্রহণের নির্বাচন ঘিরে সাধারণ মানুষের তেমন আগ্রহ না থাকলেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে চাঞ্চল্যের কমতি নেই! এ চাঞ্চল্য দলীয় সম্প্রীতি বা ঐক্যের নয়; এ চাঞ্চল্য কোন্দল, খুনোখুনি, মারামারি আর ভাঙনের।
এসব খবর পড়ে ও দেখে এ ধারণা হয়েছে যে, একটি স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। একটি ইউপিতে একজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, আর বঞ্চিত হচ্ছেন অন্তত কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়ন কেন্দ্র থেকে দেওয়া হলেও, স্থানীয় শীর্ষ নেতারাই নামের তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন।
আর এই নামের তালিকা করার ক্ষেত্রেও যে শতভাগ স্বচ্ছতা, যোগ্যতা মানা হচ্ছে বা দলের ত্যাগী ও জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য নেতা-কর্মীকে বাছাই করা সম্ভব হচ্ছে, এমন নয়।
এখানেও স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে অনেক অযোগ্য, অগ্রহণযোগ্য ও পক্ষপাতদুষ্ট প্রার্থীও মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় ঢুকে যাচ্ছেন। এতে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে। আর এসবের ফলই হচ্ছে মানুষ খুন, হামলা, মামলা ইত্যাদি। এখনো নির্বাচনের অনেক বাকি। এর মধ্যেই অর্ধশতাধিক লোক নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর হয়েছে। আর আহত হয়েছেন অন্তত আড়াই হাজার লোক।
কোন্দল যদি এখানেই থেমে যেত, তাহলে কথাই ছিল না। কিন্তু এর রেশ রয়ে যাচ্ছে। সামনে আসছে সাধারণ নির্বাচন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই নির্বাচনেও এই কোন্দলের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা তাঁদের। কারণ, প্রার্থী মনোনয়নে দায়ী করা হচ্ছে স্থানীয় এমপিদের। স্থানীয়ভাবে এই ধারণা জন্ম হয়েছে যে, এমপিদের সমর্থন ছাড়া প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার কথা নয়। যদি তা-ই হয়, তাহলে একটি নির্বাচনী এলাকায় যদি কমবেশি ১৫টি ইউনিয়ন থাকে, সেখানে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন ১৫ জন। অথচ প্রায় প্রতিটি ইউপিতেই দলীয় অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এ রকম প্রতি ইউপিতে গড়ে চারজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে ওই সাংসদের নির্বাচনী এলাকায় মোট বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা হয় ৬০ জন। তাঁদের অনেকেই আবার নির্বাচিতও হচ্ছেন। ফলে বেলা শেষে দেখা যায়, এমপি সাহেবের পছন্দের লোক থাকছেন হয়তো ১৫ জন, কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে কোন্দল ছড়িয়ে পড়ায় তাঁর বিপক্ষে চলে যাচ্ছেন এর চার গুণ বা ৬০ জন প্রার্থী।
স্থানীয়দের অভিমত, যদি কমবেশি সর্বত্র এ রকম ঘটনা ঘটে, তাহলে আসছে নির্বাচনে দলের হয়ে এমপির জন্য ১৫ জন খাটলেও বাকি ৬০ জনের ভূমিকা কী হবে, এটি যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। তাঁরা কি এমপির হয়ে কাজ করবেন, নাকি নীরব থাকবেন, নাকি আর কারও পক্ষে কাজ করবেন–এটিই বড় প্রশ্ন। তার মানে হচ্ছে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন দলের জন্য ভালোর চেয়ে বরং খারাপই হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা যায়। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন বিতর্কমুক্ত হয়নি। অনেকে একে খুনোখুনির নির্বাচন বলছেন। অনেকে নির্বাচন না বলে প্রহসন বলছেন ইত্যাদি। অথচ সরকার একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে এত ঘটনা, এত প্রাণহানি কিংবা এত প্রশ্নের জন্ম হতো না। আর সামনে নির্বাচন ঘিরে দলীয় প্রার্থীদের জন্য ঝুঁকিও তৈরি হতো না।
খ. এবার তেল নিয়ে একটু কথা বলি। সাধারণত তেল নিয়ে কথা বললে, অনেক মুখরোচক বিষয় সামনে আসতে পারে বলে মানুষ মনে করে। কিন্তু আমি যা বলব তা পুরোই উল্টো। এটা ‘তেলমারা’ তো নয়ই; বরং তেল-জলের যে সম্পর্ক, সে রকম একটা বিষয়! আমি তেল মানে জ্বালানি তেল; মানে ডিজেল, কেরোসিনের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে দুয়েক কথা বলেই লেখাটি শেষ করব।
সম্প্রতি সরকার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার যুক্তিতে দেশের বাজারেও এর দাম বাড়িয়েছে। শুধু বাড়ায়নি; বরং প্রতি লিটার ডিজেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। এটা সরকারের কার মাথা থেকে এসেছে, জানি না; তবে যিনিই সরকারকে এ বুদ্ধি দিয়েছেন, তিনি যে সাধারণ মানুষের স্নায়ু বুঝতে পারেন না–এটা নিশ্চিত করে বলা যায়! দুই বছর ধরে সারা বিশ্ব করোনার মতো মরণব্যাধি মহামারির সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এই যুদ্ধে প্রিয়জন হারানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে মানুষ কঠিন দিন পার করছে। আয় কমেছে, চাকরি চলে গেছে। ব্যবসায় ধস নেমেছে। ব্যাংকঋণ বেড়েছে। সরকারও কিছু কিছু খাতকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা দিয়েছে। এখন সবকিছু খুলে দেওয়া হলেও মন্দার ক্ষত শুকায়নি। উল্টো প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য প্রায় সব পণ্যের দাম অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। বলা যায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা অবস্থা। এ রকম এটি সময়ে কীভাবে সরকার মানুষকে আরও বাড়তি চাপে ফেলতে পারে, কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে এটা কী করে সম্ভব, এটা বোধগম্য হচ্ছে না।
এটা ঠিক সরকারের আয় কম হলেও ব্যয়ের চাপ আছে। তাই বড় লোকসান দিয়ে বেশি দিন চলা কঠিন। কিন্তু জ্বালানি খাতে সরকার গত কয়েক বছরে বিপুল অঙ্কের মুনাফা করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আর কিছুদিন যদি ভর্তুকি দিত, তাহলে যে লোকসান হতো, সামনে জ্বালানি তেলের দাম কমলে তা পুষিয়ে নিতে পারত কিংবা মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা আরেকটু ভালোর দিকে গেলে সিদ্ধান্তটি নিতে পারত। আকস্মিক একসঙ্গে এত দাম বাড়ানোর আগে মানুষকে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। জ্বালানি তেল একক কোনো পণ্য নয়; এটি স্ট্র্যাটেজিক কমোডিটি বা পণ্য হিসেবে পরিচিত। যেমন একটি জাহাজ যখন ডোবে, তখন শুধু জাহাজটিই ডোবে না; এর সঙ্গে শত শত মানুষ, তাদের পরিবার, তাদের প্রতিষ্ঠান, স্বপ্ন কিংবা সম্ভাবনাও ডোবে!
তেমনি জ্বালানি তেলের লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো মানেই ভোক্তার পকেট থেকে শুধু ১৫ টাকাই কেটে রাখা নয়; বরং এর সঙ্গে পরিবহন ভাড়া, কৃষকের উৎপাদন ও পরিবহন খরচ, উদ্যোক্তার পণ্য উৎপাদন ব্যয়সহ এ রকম অসংখ্য খাতে দাম ও খরচ বাড়ার মহোৎসব শুরু হয়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ভোক্তার ওপর। আর ভোক্তা মানে দেশের সাধারণ মানুষ। যাদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা সরকারের। সরকার হয়তো জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে কিছুটা লোকসান কমাল। কিন্তু পুরো অর্থনীতিতে এর সুযোগে যে ব্যয় বাড়ল, তার পরিমাণ এর চেয়ে শত গুণ বেশি; যা শুধু টাকার অঙ্কে হিসাব হবে না। এটা প্রতিযোগিতা সক্ষমতায়ও আঘাত করতে পারে। যে ক্ষতি পুরো অর্থনীতির। এটা সম্ভবত সরকারকে অঙ্ক করে কেউ বুঝিয়ে দেয়নি!
ফারুক মেহেদী, সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে