পচা করে আঁকা বই

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১১: ০৯

রফিকুন নবী, যাঁকে রনবী নামেই চেনে মানুষ, তিনি ১৯৬৩ সালে খণ্ডকালীন চাকরিতে ঢুকেছিলেন পত্রিকা অফিসে। একই ঘরে ‘পূর্বদেশ’ ও ‘চিত্রালী’র দপ্তর ছিল। দালানটি ছিল বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে। রনবী তখনো আর্ট কলেজে পড়ছেন। ক্লাস করে সন্ধ্যায় যান অফিসে। পূর্বদেশ সম্পাদক কাজী ইদ্রিস আর চিত্রালী সম্পাদক এস এস পারভেজের পরামর্শে রনবীকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়, কিছু কাজ অফিসে করেন, কিছু কাজ নিয়ে যান বাড়িতে।

ফয়েজ আহ্‌মদ তখন পূর্বদেশের চিফ রিপোর্টার। রনবী চলে যাওয়ার পরই তিনি অফিসে আসেন, তাই দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। একদিন দেখা হয়ে গেল। ফয়েজ আহ্‌মদ খোঁচা মেরে বললেন, ‘আরে, মাসখানেক ধইরা শুনতাছি, একজন নতুন আর্টিস্ট রাখা হইছে। কোথায় সে? একদিনও দেখলাম না! আসে কখন আর যায়ই-বা কখন?’

সবাই মিলে আড্ডা হচ্ছিল, আর ফয়েজ আহ্‌মদ পরিচিত হচ্ছিলেন রনবীর সঙ্গে।

‘কী মিয়া, কালকে কয়টায় আসবেন? আমার একটা জরুরি কাম আছে।’

ঠিক হলো সময়। পরদিন রনবী অপেক্ষা করছেন। ফয়েজ আহ্‌মদ এলেন নির্দিষ্ট সময়ের ঘণ্টাখানেক পর। ব্যাগ থেকে একতাড়া কাগজ বের করে বললেন, ‘এইটা একটা পাণ্ডুলিপি। ছড়া। সাথে নিয়া যাও। ইলাস্ট্রেশন করতে হইব। কামরুল ভাইয়ের মতো বোল্ড লাইন দিয়া করবা।’

রনবী পড়লেন মহাবিপদে। ছোটদের জন্য ইলাস্ট্রেশন কখনো করেননি। অভয় দিলেন ফয়েজ আহ্‌মদ, ‘এইটা বড়দের ছড়া।’

দুদিনের মধ্যে যে ইলাস্ট্রেশন হলো, তা নিজেরই পছন্দ হলো না রনবীর। ফয়েজ আহ্‌মদ দেখে বললেন, ‘চলব। অত খারাপ না।’ কিন্তু সেই পাণ্ডুলিপি আর ইলাস্ট্রেশন হারিয়ে গেল।

কয়েক বছর পর ফয়েজ আহ্‌মদ জরুরি ভিত্তিতে রনবীকে ডাকলেন। তিনি এলে হাতে তুলে দিলেন একটি চটি বই। রনবী বললেন, ‘ফয়েজ ভাই, আপনার বইয়ের একি দশা! এত পচা করে আঁকা বই!’
হা হা করে হেসে ফয়েজ আহ্‌মদ বললেন, ‘মিয়া, নিজের কাম নিজেই চিনলা না? হারাইয়া গেছিল। অরিজিনালটা দিয়াই বই করছি!’

সূত্র: রফিকুন নবী, ফয়েজ আহ্‌মদ স্মারকগ্রন্থ, পৃষ্ঠা ১৩০-১৩৩ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত