সংকটে পেপার কাপশিল্প

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১০: ০৩

বিপুল সম্ভাবনায়ও সংকটে পরিবেশবান্ধব পেপার কাপশিল্প। কাঁচামালে উচ্চ শুল্কের কারণে এই শিল্পটির প্রসার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক কাপে চা থেকে বিভিন্ন পানীয় পান করেন ভোক্তারা। শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে বর্তমানে পেপার কাপশিল্পের বাজার প্রায় আড়াই শ কোটি টাকার। সরকারি সহায়তা পেলে এটি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি ঝুলিতে নতুন পণ্য হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সমৃদ্ধ করতে পারবে।

পেপার কাপ শিল্পমালিকদের সংগঠন পেপার কাপ ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (পিসিএমএবি) তথ্যমতে, পেপার কাপ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে বাংলাদেশে শুল্ক দিতে হয় ৬১ শতাংশ। যেখানে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, ভারত পেপার কাপের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। অন্যদিকে নেপালে সাড়ে ৭ শতাংশ, মিয়ানমারে ৫ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।

শুল্ক বেশি থাকায় প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে উৎপাদন খরচে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। তাই পেপার কাপ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তবে এখনো এর কোনো সুরাহা হয়নি।

জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩১৬ বিলিয়ন ডলারের পেপার কাপের বাজার রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি মাসে পেপার কাপের চাহিদা ২০ কোটি পিসেরও বেশি। সব মিলিয়ে বছরে দেশে পেপার কাপের বাজারও প্রায় আড়াই শ কোটি টাকার।

পেপার কাপ ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের (পিসিএমএবি) সভাপতি ও কাগজের কাপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাজেদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি বিরাট সম্ভাবনাময় শিল্প। সময়ের প্রেক্ষাপটে পরিবেশবান্ধব কাপে ঝুঁকছে সবাই। বাংলাদেশে ধীরে হলেও এটি এগোচ্ছে। মাঝখানে ভারত থেকে আমদানি করা নিম্নমানের পেপার কাপ এলেও আমাদের দাবির কারণে তাতে বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে ফিনিশড পেপার কাপ আমদানি কমেছে। এতে স্থানীয় শিল্পের জন্য সহায়ক হয়েছে। তবে সমস্যা যেটা হয়েছে তা হলো, এই শিল্পের কাঁচামাল কাগজ আমদানিতে ৬১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আছে। ফলে বেশি দামে কাঁচামাল আমদানি করে পেপার কাপ উৎপাদন করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। এখন শুল্ক না কমালে শিল্পটি এগোতে পারবে না।

কাঁচামাল-সংকটে পেপার কাপ তৈরি করে এমন অনেক কারখানায় উৎপাদন সীমিত হয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। কোনো কোনো কারখানায় সক্ষমতার অর্ধেক কমিয়ে আনতে হয়েছে কাঁচামাল-সংকটের কারণে। সংগঠনের সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে মাসে ২০ কোটিরও বেশি পেপার কাপ বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ কোটি কাপ দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করে। আমদানি হয় ১৫ কোটি কাপ। যার বেশির ভাগই ভারত থেকে আসে।

দেশে ৮০ এমএল থেকে ৩৬০ এমএলের পেপার কাপ উৎপাদিত হয়। দাম ৮০ পয়সা থেকে আড়াই টাকা পর্যন্ত। ৮০ এমএল ৮০ পয়সা, ১০০ এমএল ৯০ পয়সা, ১২০ এমএল ৯৫ পয়সা। আর পেপারের তৈরি প্লেট ৩ থেকে ৫ টাকা। এগুলো ৭ ইঞ্চি, ৮ ইঞ্চি, ৯ ইঞ্চি, ১০ ইঞ্চি আকারের প্লেট। একটি মেশিনে আমদানি করা কাগজের ওপর প্রথমে নকশা ও প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোগো ছাপানো হয়। এরপর আরেকটি মেশিনে নির্দিষ্ট কাপের আকার অনুযায়ী কাটা হয়।

এরপর কাটা কাগজগুলো আরেকটি যন্ত্রের মাধ্যমে তাপ দিয়ে কাপের আকার দেওয়া হয়। পেপার কাপ একধরনের কাগজের তৈরি পাত্র, যা পরিবেশবান্ধব। এই পাত্র ব্যবহারের পর ফেলে দিলে তা মাটির সঙ্গে মিশে জৈবসার তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ‘কাগজের কাপের বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার ৩১৬ বিলিয়ন ডলারের। সরকার এ খাতে একটু নজর দিলে দেশের বাজারের চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারও ধরতে পারব আমরা। বর্তমানে যে চাহিদা তাতে ১০০টি প্রতিষ্ঠান চালানোর সক্ষমতা রয়েছে।’ সংগঠন সূত্রে আরও জানা যায়, দেশে বর্তমানে পেপার কাপ তৈরিতে শতাধিক উদ্যোক্তা রয়েছেন। তাঁরা এ খাতের সম্ভাবনা দেখে শিল্প শুরু করলেও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।

যত দ্রুত পরিবেশবান্ধব পেপার কাপশিল্পের প্রসারে নীতি সহায়তা দেওয়া হবে, ততই শিল্পটি এগিয়ে যাবে। এতে দেশের কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে বলেও উদ্যোক্তারা জানান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত