অগ্রজকে সম্মান

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ০৯: ০১

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন নির্মোহ এক মানুষ। তিনি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতেন। দেবব্রত বিশ্বাসকে যখন হেয় করা হয়েছে নানাভাবে, তখনো হেমন্ত মুখোপাধ্যায় দেবব্রত বিশ্বাসকে নিয়ে তাঁর গর্বের কথা ভোলেননি।

‘ব্যারিটোন ভয়েস’ ছিল দেবব্রত বিশ্বাসের। জর্জদা নামেই তাঁকে ডাকতেন সেকালের সতীর্থরা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ডাকতেন ‘জর্জকাকা’ বলে। ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’ গানটি দেবব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠে যেভাবে উঠে এসেছে, তার তুলনা বিরল। সে গান শুনে মনে হয়, গানের এতটা ভেতরেও কেউ যেতে পারে? এই গান দিয়েই যেন তিনি ঝড় ওঠাতে পারতেন। সেই কণ্ঠের কল্যাণেই দীপ নিভে যায়, সেই কণ্ঠেই উদাসিনী বেশে বিদেশিনী আসে।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মুখেই ‘অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি’ গানটি আমরা শুনে থাকি। কানে সে গানটাই বাজে। হেমন্ত কিন্তু বলেন, ‘এ গানটি জর্জকাকা আমার চেয়ে ভালো গাইতেন। আমি যদি গানটা দশ-বারোবার রেকর্ড করতাম, তবু জর্জকাকা যে উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন, আমি তা পারতাম না।’

আরেকবার রবীন্দ্রসংগীতে অবদানের কথা বলতে গিয়ে কেউ একজন পঙ্কজ মল্লিকের পরেই হেমন্তের নাম বললেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে উঠলেন হেমন্ত।বললেন, ‘আমি নয়, পঙ্কজ মল্লিকের পর যদি কারও নাম করতে হয়, তবে তিনি জর্জকাকা।’

যখন দেবব্রত বিশ্বাসের গান বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ডের ছাড়পত্র পায়নি, তখন গান রেকর্ড করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। হেমন্ত কিন্তু থেমে থাকেননি। স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে বিশ্বভারতীর খানিকটা দোষ আছে। আমরা যেসব গান শিখেছিলাম, সেগুলোর স্বরলিপি দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের করা। উনি (দেবব্রত বিশ্বাস) সেই স্বরলিপি অনুসারেই গাইতেন, যার সাথে এখনকার স্বরলিপির অনেক তফাত।’

দেবব্রত সংবর্ধনা গ্রহণ করার মতো মানুষই নন। কিন্তু হেমন্ত তাঁকে ১৯৮০ সালের ১৮ মার্চ সংবর্ধনায় হাজির করেছিলেন। তিনি গান গাইতে চাননি, কিন্তু এত শ্রোতা দেখে তাদের সামনে বাতি জ্বালিয়েই গান করলেন দেবব্রত বিশ্বাস। 

সূত্র: শ্যামল চক্রবর্তী, ঝড় যে তোমার জয়ধ্বজা, পৃষ্ঠা ১৪৮-১৫০

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত