নিদাল আদাইলেহ
মাজদাল শামস সিরিয়ার গোলান মালভূমির বৃহত্তম গ্রাম। এটি হারমন পর্বতের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত এবং বর্তমানে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। গ্রামটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিটার ওপরে। ওসমানীয় শাসনামলে মাজদাল শামস, বাকি বালান অঞ্চলের সঙ্গে রাশায়া জেলার মাউন্ট লেবানন গভর্নরেটের অন্তর্গত ছিল। ফরাসি ম্যান্ডেটের পরে এটি সিরিয়ার দামেস্ক গভর্নরেটের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সিরিয়ার স্বাধীনতার পরে গ্রামটি কুনেইট্রা গভর্নরেটের অংশ হয়।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল মাজদাল শামসসহ গোলান মালভূমি দখল করেছিল এবং গ্রামটি এখনো ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত মাজদাল শামস ইসরায়েলি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল এবং ১৯৮২ সাল থেকে এটি বেসামরিক শাসনের অধীনে ছিল ইসরায়েল কর্তৃক গোলান মালভূমিকে সংযুক্ত করার অবৈধ সিদ্ধান্তের কারণে। ইসরায়েল সিরিয়ার দখল করা ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি নির্মাণ করেছে, যার সবই আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। প্রায় ৫ লাখ সিরীয়কে অধিকৃত গোলান মালভূমিতে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
এই মাজদাল শামস গ্রামের একটি ফুটবল খেলার মাঠে ২৭ জুলাই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এতে শিশুসহ ১২ জন নিহত হয়। এরা সবাই ছিল স্থানীয় দ্রুজ সম্প্রদায়ের। ইসরায়েল এই হামলার জন্য লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছে এবং পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
মাজদাল শামসের দ্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস, খোদ ইসরায়েলই এ হামলা চালিয়েছে। মাজদাল শামসের বিশাল জনতা ২৮ জুলাই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১২ জনের জন্য শোক মিছিল বের করে।
কিছু ইসরায়েলি মন্ত্রী নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু জনতা স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তাঁদের স্বাগত জানানো হয়নি। মন্ত্রী নির বরকত, ইদিত সিলমান এবং ইয়োভ কিশ ছাড়াও চরম ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গিয়েছিলেন সেখানে। শোকার্ত জনতা তাঁদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেছে, ‘এখান থেকে চলে যাও, তোমরা অপরাধী। আমরা তোমাদের গোলানে চাই না।’
নিহতদের পরিবারগুলো ইসরায়েলি মন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং একটি ইসরায়েলি অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মাজদাল শামসে চালানো হামলাকে যেন ব্যবহার না করা হয়। গোলানে দ্রুজ নেতৃত্ব এবং শোকাহত পরিবারগুলো ইসরায়েলি সরকারের মন্ত্রীদের নিহতদের জানাজায় অংশ নিতে নিষেধ করে।
লেবাননের হিজবুল্লাহও মাজদাল শামসে হামলা চালানোর দায় অস্বীকার করেছে। যা-ই হোক, ইহুদিবাদী কর্মকর্তাদের বিবৃতি ইঙ্গিত দেয় যে দখলদার রাষ্ট্র ঘটনাটিকে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ শুরু করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।
মাজদাল শামসের মতো হামলা আগে হয়নি। হিজবুল্লাহ সরাসরি বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য পরিচিত নয়। মাজদাল শামসের কাছাকাছি দুটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং ইসরায়েলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কখনো তাতে হস্তক্ষেপ করেনি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে দক্ষিণ লেবানন থেকে।
ইহুদিবাদীরা এখন যুদ্ধের ন্যায্যতা খোঁজার চেষ্টা করছে। কাকতালীয়ভাবে এখনই গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য রোমে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে। তারা হিজবুল্লাহ যে প্রতিরোধের ফ্যাক্টরটি ভেঙে দিয়েছিল, তা পুনরুদ্ধার করতে এবং কৌশলগত অঞ্চলগুলোর আকাশে পুনরায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কেননা লেবাননের হিজবুল্লাহ ইতিমধ্যে ড্রোন ব্যবহার করে ৩৩ বার ইসরায়েল অধিকৃত উত্তরাঞ্চলের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে।
এটা আমার ধারণা যে ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে মাজদাল শামসের ওপর আক্রমণ করেছে। তাই যদি না হবে তাহলে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম কেন ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত বা ধ্বংস করেনি?
আসলে এ ধরনের একটি গণহত্যা ইসরায়েলি স্বার্থে কাজ করে, বিশেষ করে নেতানিয়াহু এবং তাঁর ডানপন্থী জোট সরকারের, যারা উত্তর ফ্রন্টে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত ও প্রসারিত করতে চায়।
(মিডলইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
লেখক: নিদাল আদাইলেহ
জর্ডানভিত্তিক লেখক ও সাংবাদিক এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ
মাজদাল শামস সিরিয়ার গোলান মালভূমির বৃহত্তম গ্রাম। এটি হারমন পর্বতের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত এবং বর্তমানে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। গ্রামটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিটার ওপরে। ওসমানীয় শাসনামলে মাজদাল শামস, বাকি বালান অঞ্চলের সঙ্গে রাশায়া জেলার মাউন্ট লেবানন গভর্নরেটের অন্তর্গত ছিল। ফরাসি ম্যান্ডেটের পরে এটি সিরিয়ার দামেস্ক গভর্নরেটের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সিরিয়ার স্বাধীনতার পরে গ্রামটি কুনেইট্রা গভর্নরেটের অংশ হয়।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল মাজদাল শামসসহ গোলান মালভূমি দখল করেছিল এবং গ্রামটি এখনো ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত মাজদাল শামস ইসরায়েলি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল এবং ১৯৮২ সাল থেকে এটি বেসামরিক শাসনের অধীনে ছিল ইসরায়েল কর্তৃক গোলান মালভূমিকে সংযুক্ত করার অবৈধ সিদ্ধান্তের কারণে। ইসরায়েল সিরিয়ার দখল করা ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি নির্মাণ করেছে, যার সবই আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। প্রায় ৫ লাখ সিরীয়কে অধিকৃত গোলান মালভূমিতে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
এই মাজদাল শামস গ্রামের একটি ফুটবল খেলার মাঠে ২৭ জুলাই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এতে শিশুসহ ১২ জন নিহত হয়। এরা সবাই ছিল স্থানীয় দ্রুজ সম্প্রদায়ের। ইসরায়েল এই হামলার জন্য লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছে এবং পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
মাজদাল শামসের দ্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস, খোদ ইসরায়েলই এ হামলা চালিয়েছে। মাজদাল শামসের বিশাল জনতা ২৮ জুলাই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১২ জনের জন্য শোক মিছিল বের করে।
কিছু ইসরায়েলি মন্ত্রী নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু জনতা স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তাঁদের স্বাগত জানানো হয়নি। মন্ত্রী নির বরকত, ইদিত সিলমান এবং ইয়োভ কিশ ছাড়াও চরম ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গিয়েছিলেন সেখানে। শোকার্ত জনতা তাঁদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেছে, ‘এখান থেকে চলে যাও, তোমরা অপরাধী। আমরা তোমাদের গোলানে চাই না।’
নিহতদের পরিবারগুলো ইসরায়েলি মন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং একটি ইসরায়েলি অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মাজদাল শামসে চালানো হামলাকে যেন ব্যবহার না করা হয়। গোলানে দ্রুজ নেতৃত্ব এবং শোকাহত পরিবারগুলো ইসরায়েলি সরকারের মন্ত্রীদের নিহতদের জানাজায় অংশ নিতে নিষেধ করে।
লেবাননের হিজবুল্লাহও মাজদাল শামসে হামলা চালানোর দায় অস্বীকার করেছে। যা-ই হোক, ইহুদিবাদী কর্মকর্তাদের বিবৃতি ইঙ্গিত দেয় যে দখলদার রাষ্ট্র ঘটনাটিকে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ শুরু করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।
মাজদাল শামসের মতো হামলা আগে হয়নি। হিজবুল্লাহ সরাসরি বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য পরিচিত নয়। মাজদাল শামসের কাছাকাছি দুটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং ইসরায়েলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কখনো তাতে হস্তক্ষেপ করেনি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে দক্ষিণ লেবানন থেকে।
ইহুদিবাদীরা এখন যুদ্ধের ন্যায্যতা খোঁজার চেষ্টা করছে। কাকতালীয়ভাবে এখনই গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য রোমে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে। তারা হিজবুল্লাহ যে প্রতিরোধের ফ্যাক্টরটি ভেঙে দিয়েছিল, তা পুনরুদ্ধার করতে এবং কৌশলগত অঞ্চলগুলোর আকাশে পুনরায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কেননা লেবাননের হিজবুল্লাহ ইতিমধ্যে ড্রোন ব্যবহার করে ৩৩ বার ইসরায়েল অধিকৃত উত্তরাঞ্চলের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে।
এটা আমার ধারণা যে ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে মাজদাল শামসের ওপর আক্রমণ করেছে। তাই যদি না হবে তাহলে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম কেন ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত বা ধ্বংস করেনি?
আসলে এ ধরনের একটি গণহত্যা ইসরায়েলি স্বার্থে কাজ করে, বিশেষ করে নেতানিয়াহু এবং তাঁর ডানপন্থী জোট সরকারের, যারা উত্তর ফ্রন্টে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত ও প্রসারিত করতে চায়।
(মিডলইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
লেখক: নিদাল আদাইলেহ
জর্ডানভিত্তিক লেখক ও সাংবাদিক এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে