মামুনুর রশীদ
আশা ছিল একাত্তরের মার্চ মাস এবং তার গৌরবগাথা নিয়ে মাসব্যাপীই লেখালেখি করব। কিন্তু তা আর হলো না। একের পর এক বিস্ফোরণে মৃত্যু এবং পঞ্চগড়ের ধর্মভিত্তিক সংঘাত মিলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্বহীনতা এক চূড়ান্ত মাত্রায় চলে গেছে। আবার ওদিকে চট্টগ্রামে রেল ইঞ্জিনের ওপর বাস চালিয়ে দেওয়ায়ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
বিস্ফোরণ এবং মৃত্যু যেন আমাদের নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন কোনো ধর্ম আছে পৃথিবীতে, যেখানে বিভাজন নেই? খ্রিষ্টানধর্মে বিভক্তি আছে, বৌদ্ধধর্মে আছে, পৃথিবীতে আরও যত ধর্ম আছে, সব ধর্মেই নানাভাবে বিভক্তি আছে, ভিন্ন মতামতও আছে। আবার ধর্মে ধর্মেও আছে সংঘাত। এসবের মীমাংসা হাজার বছর ধরেও হয়নি। কিন্তু এসব নিয়ে যুদ্ধবিগ্রহ, দাঙ্গা অব্যাহতভাবে চলছে। সাধারণ মানুষ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। কিছু উসকানিদাতা আছে, যারা এসবে অনুঘটকের কাজ করে থাকে। অদ্ভুত সব দাবি ওঠায় তারা। যেমন আহমদিয়া বা কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে! কে অমুসলিম ঘোষণা করবে? কোনো সরকারের পক্ষে কি এ দাবি মানা কোনো দিন সম্ভব? যে যার ধর্ম পালন করুক, এটা নিশ্চিত করাই তো সরকারের কাজ হওয়া উচিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্ম নিয়ে বিভেদের পেছনে সম্পদ লুণ্ঠনের একটা বিষয় থাকে। না হলে এসব ঘটনায় মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় কেন? ভাঙচুর হয় কেন? লুটপাটের ঘটনাই বা কী করে ঘটে?
এসব ব্যাপারে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল একে অপরকে দোষারোপ করবে, জনগণ এসবের কোনোটাকেই বিশ্বাস করবে না। মাঝখান থেকে আসল অপরাধীরা নিরাপদে বসে তাদের ব্যবসাটি চালিয়ে যাবে। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার না করার জন্য কোনো দলই কোনো দিন দৃঢ় অবস্থান নেয়নি। ভবিষ্যতেও নেবে বলে মনে হয় না।
বিস্ফোরণ ঘটছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, দুর্ঘটনায় মানুষ বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছে—এসব নতুন কিছু নয়। দুর্ঘটনার সময় এবং তারপর দু-চার দিন এ নিয়ে কথাবার্তা হয়। আবার নতুন কোনো ডামাডোলে সেসব মানুষ ভুলেও যায়। বিস্মরণপ্রিয়তাই যেন একমাত্র ভরসা।
দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়, তারা প্রধানত দুর্বল, দরিদ্র মানুষ। বড় কোনো জায়গায় যাওয়ার ক্ষমতাও তাদের নেই। দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মীয়-স্বজনের আহাজারির ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হয়। তারপর আর কোনো খোঁজ থাকে না। পত্রপত্রিকায় মাঝে মাঝে দু-চারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় বটে, কিন্তু সেগুলো কি কেউ দেখে? দাহ্য পদার্থ রাখা, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কি না, এসব তদারকির দায়িত্ব যেসব প্রতিষ্ঠানের, তারা কি যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন? সীতাকুণ্ডে গ্যাস কারখানাগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কি না, তা কি কোনো সংস্থা কখনো খতিয়ে দেখেছে? দেখলে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনাগুলো ঘটত না।
রাজনৈতিক নেতাদের এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময়ই নেই। তাঁদের প্রাত্যহিক জীবন বড়ই কর্মব্যস্ত। আর এখন তো সেলফোনের কল্যাণে তাঁদের হিসাব সেকেন্ডের। একটু অবসর নেই, কোথাও কোনো মনোযোগ দেওয়ার সময় নেই। ফোন করতে করতেই সময় শেষ। আর এই ফোনাফোনি দেশের বা মানুষের কোনো কল্যাণের নয়। একেবারেই যার যার অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। তদবির, বড় লিডারকে ম্যানেজ করা, ছোট লিডারকে বশে রাখা এবং ক্যাডারদের কল্যাণে তাদের দিন কেটে যায়।
আমলারা একসময় ন্যায়বিচারের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতেন। অনেক দিন হলো সেসব পাট চুকে গেছে। প্রমোশন, পোস্টিং, অবসরের পরও কীভাবে চাকরিতে থাকা যায়—তার জন্য মরিয়া। ক্ষমতাসীন দলের প্রতি কে কতটা অনুগত, তা প্রমাণ করতে গিয়েই তাঁরা দিশেহারা।
তারপর আছে দুর্নীতি। দুর্নীতি বিষয়টিতে আর কোনো রাখঢাক নেই, তা এখন প্রকাশ্য। টাকা না হলে কোনো কাজ হবে না, এটা প্রায় সর্বস্বীকৃত। আমলা-রাজনীতিবিদদের অনেক দায়িত্ব। তাঁদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে লেখাপড়া করে। তাঁদের প্রচুর টাকা দরকার। একটা সেকেন্ড হোম করার তাগিদ সর্বক্ষণ তাড়া করছে।
বর্তমানে এই দৌড়ে নেমেছেন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরাও। পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেবদের হাতেও এখন টাকা আসার ব্যাপার আছে। আগে ভোটের একটা ব্যাপার ছিল, এখন তা-ও নেই। ক্ষমতাসীন দলের নমিনেশন পেলেই ভোট এখন ‘ম্যানেজ’ হয়ে যায়।
অথচ যাদের কথা এতক্ষণ বলা হলো, তাদের কাজটা কী? রাজনৈতিক দলের কর্মীদের কাজটাই-বা কী? কার ঘরে চাল নেই, খাবার নেই, অসুস্থতায় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই—তাঁদের কাজ হলো ওইসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো, খোঁজখবর নেওয়া। কিন্তু এই যে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত চিকিৎসাব্যবস্থা, তার বিরুদ্ধেও কখনো তাঁদের সোচ্চার হতে দেখা গেছে? কীভাবে সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমনকি চিকিৎসারত মুমূর্ষু রোগীদের সর্বস্বান্ত করছে—তার কোনো প্রতিবাদ তাঁরা করেছেন? বরং উল্টো রাজনৈতিক পরিচয়ে সেখান থেকে কিছু কামানো যায় কি না, তার ধান্দা করেন।
দেশের স্বাধীনতার জন্য একসময় আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, মানুষ প্রাণ দিয়েছে, দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে, কিন্তু কিসের জন্য এই স্বাধীন দেশ, কার জন্য—সে হিসাব-নিকাশের প্রয়োজন কি রাজনৈতিক দলগুলো কখনো অনুভব করেছে? শুভ যা কিছু কখনো হয়েছে, তা-ও নাগরিকদের উদ্যোগে।
মানুষের শেখার ব্যবস্থা শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। মাধ্যমিকে তা আরও পাকাপোক্ত হয়। উচ্চমাধ্যমিকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা পরিপক্ব হয়ে মূল্যবোধে যুক্ত হতে থাকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে তো এসব নিয়ে গবেষণা করার কথা। কিন্তু প্রাথমিকেই শিশু শিখে যায়, তার শিক্ষকটি লেখাপড়ায় ভালো নন; কিন্তু লাখ লাখ টাকা দিয়ে চাকরিটি নিয়েছেন। মাধ্যমিকে গিয়ে এই অভিজ্ঞতাই সম্প্রসারিত হয়, উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে আরও একটা নোংরা চেহারা দেখে। লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত ডিগ্রি নিয়ে বেকারত্বের জীবন বেছে নেয়। শত শত ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পায় না। টাকার খেলায় বিপর্যস্ত হয়ে একটা রাজনৈতিক দলের ক্যাডার বনে গিয়ে কিছু টাকাপয়সার মালিক হওয়ার চেষ্টা করে। দুর্নীতি তখন হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাই সুবুদ্ধি, দেশপ্রেম—এসব তার কাছে ধরা দেয় না। এ অবস্থাতেই কিছু লোক দায়িত্বপূর্ণ কিছু কাজও পেয়ে যায়। দুর্নীতির হাতছানি তখন সে অগ্রাহ্য করতে পারে না। দায়িত্বে অবহেলা করে। অসৎ হলে, দুর্নীতিবাজ হলে, সমাজ তাকে ঘৃণা করে না। ঘরে-বাইরে বেশ একটা সম্মান মেলে।
তাই বিস্ফোরণে মানুষ মারা গেলে অপরাধী আত্মরক্ষার সুযোগ খোঁজে। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেল, চালক আর তাঁর সহকারী পালাল, মালিক প্রভাবশালী কারও তদবির নিয়ে হাজির হলো, ব্যস, মিটে গেল। কিছু টাকাপয়সার লেনদেন হলো, এতেই পরিসমাপ্তি ঘটল সবকিছুর। কে কাকে বোঝাবে যে আহমদিয়াদের ওপর আক্রমণ অন্যায্য, নিজের ধর্মটি ঠিকমতো পালন করো। বাড়িঘর ভাঙচুর, মারপিট, হত্যা—এসব ধর্মের অনুশাসন নয়। এ কাজটি যে রাজনৈতিক দলের, তা বোঝার চেষ্টা কোনো রাজনৈতিক দল করেনি। কারণ, যিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বটি হাতে পেয়েছেন, তিনিও তো ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে ওই জায়গায় যাননি। তাঁরও যে নেতৃত্বের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা নেই, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা কোত্থেকে আসবে?
আমরা পঞ্চাশ-ষাটের দশকে ছাত্র হিসেবেও মানুষের শ্রদ্ধা পেয়েছি। খেয়ার মাঝিও ছাত্রদের কাছ থেকে ভাড়া নিতে চাইতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র পেলে তার কাছ থেকে দেশের কিসে কল্যাণ হবে, তা জানতে চাইতেন। একাত্তরের মার্চ মাসে এই অভিজ্ঞতা আমাদের বারবার হয়েছে। তখন ভালো ত্যাগী শিক্ষক যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন রাজনীতিবিদ; যাঁরা জানতেন শিক্ষাটাই আসল। এখান থেকেই মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। এখন কি সেখান থেকে কিছু তৈরি হওয়া সম্ভব?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
আশা ছিল একাত্তরের মার্চ মাস এবং তার গৌরবগাথা নিয়ে মাসব্যাপীই লেখালেখি করব। কিন্তু তা আর হলো না। একের পর এক বিস্ফোরণে মৃত্যু এবং পঞ্চগড়ের ধর্মভিত্তিক সংঘাত মিলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্বহীনতা এক চূড়ান্ত মাত্রায় চলে গেছে। আবার ওদিকে চট্টগ্রামে রেল ইঞ্জিনের ওপর বাস চালিয়ে দেওয়ায়ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
বিস্ফোরণ এবং মৃত্যু যেন আমাদের নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন কোনো ধর্ম আছে পৃথিবীতে, যেখানে বিভাজন নেই? খ্রিষ্টানধর্মে বিভক্তি আছে, বৌদ্ধধর্মে আছে, পৃথিবীতে আরও যত ধর্ম আছে, সব ধর্মেই নানাভাবে বিভক্তি আছে, ভিন্ন মতামতও আছে। আবার ধর্মে ধর্মেও আছে সংঘাত। এসবের মীমাংসা হাজার বছর ধরেও হয়নি। কিন্তু এসব নিয়ে যুদ্ধবিগ্রহ, দাঙ্গা অব্যাহতভাবে চলছে। সাধারণ মানুষ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। কিছু উসকানিদাতা আছে, যারা এসবে অনুঘটকের কাজ করে থাকে। অদ্ভুত সব দাবি ওঠায় তারা। যেমন আহমদিয়া বা কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে! কে অমুসলিম ঘোষণা করবে? কোনো সরকারের পক্ষে কি এ দাবি মানা কোনো দিন সম্ভব? যে যার ধর্ম পালন করুক, এটা নিশ্চিত করাই তো সরকারের কাজ হওয়া উচিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্ম নিয়ে বিভেদের পেছনে সম্পদ লুণ্ঠনের একটা বিষয় থাকে। না হলে এসব ঘটনায় মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় কেন? ভাঙচুর হয় কেন? লুটপাটের ঘটনাই বা কী করে ঘটে?
এসব ব্যাপারে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল একে অপরকে দোষারোপ করবে, জনগণ এসবের কোনোটাকেই বিশ্বাস করবে না। মাঝখান থেকে আসল অপরাধীরা নিরাপদে বসে তাদের ব্যবসাটি চালিয়ে যাবে। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার না করার জন্য কোনো দলই কোনো দিন দৃঢ় অবস্থান নেয়নি। ভবিষ্যতেও নেবে বলে মনে হয় না।
বিস্ফোরণ ঘটছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, দুর্ঘটনায় মানুষ বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছে—এসব নতুন কিছু নয়। দুর্ঘটনার সময় এবং তারপর দু-চার দিন এ নিয়ে কথাবার্তা হয়। আবার নতুন কোনো ডামাডোলে সেসব মানুষ ভুলেও যায়। বিস্মরণপ্রিয়তাই যেন একমাত্র ভরসা।
দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়, তারা প্রধানত দুর্বল, দরিদ্র মানুষ। বড় কোনো জায়গায় যাওয়ার ক্ষমতাও তাদের নেই। দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মীয়-স্বজনের আহাজারির ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হয়। তারপর আর কোনো খোঁজ থাকে না। পত্রপত্রিকায় মাঝে মাঝে দু-চারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় বটে, কিন্তু সেগুলো কি কেউ দেখে? দাহ্য পদার্থ রাখা, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কি না, এসব তদারকির দায়িত্ব যেসব প্রতিষ্ঠানের, তারা কি যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন? সীতাকুণ্ডে গ্যাস কারখানাগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কি না, তা কি কোনো সংস্থা কখনো খতিয়ে দেখেছে? দেখলে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনাগুলো ঘটত না।
রাজনৈতিক নেতাদের এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময়ই নেই। তাঁদের প্রাত্যহিক জীবন বড়ই কর্মব্যস্ত। আর এখন তো সেলফোনের কল্যাণে তাঁদের হিসাব সেকেন্ডের। একটু অবসর নেই, কোথাও কোনো মনোযোগ দেওয়ার সময় নেই। ফোন করতে করতেই সময় শেষ। আর এই ফোনাফোনি দেশের বা মানুষের কোনো কল্যাণের নয়। একেবারেই যার যার অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। তদবির, বড় লিডারকে ম্যানেজ করা, ছোট লিডারকে বশে রাখা এবং ক্যাডারদের কল্যাণে তাদের দিন কেটে যায়।
আমলারা একসময় ন্যায়বিচারের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতেন। অনেক দিন হলো সেসব পাট চুকে গেছে। প্রমোশন, পোস্টিং, অবসরের পরও কীভাবে চাকরিতে থাকা যায়—তার জন্য মরিয়া। ক্ষমতাসীন দলের প্রতি কে কতটা অনুগত, তা প্রমাণ করতে গিয়েই তাঁরা দিশেহারা।
তারপর আছে দুর্নীতি। দুর্নীতি বিষয়টিতে আর কোনো রাখঢাক নেই, তা এখন প্রকাশ্য। টাকা না হলে কোনো কাজ হবে না, এটা প্রায় সর্বস্বীকৃত। আমলা-রাজনীতিবিদদের অনেক দায়িত্ব। তাঁদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে লেখাপড়া করে। তাঁদের প্রচুর টাকা দরকার। একটা সেকেন্ড হোম করার তাগিদ সর্বক্ষণ তাড়া করছে।
বর্তমানে এই দৌড়ে নেমেছেন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরাও। পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেবদের হাতেও এখন টাকা আসার ব্যাপার আছে। আগে ভোটের একটা ব্যাপার ছিল, এখন তা-ও নেই। ক্ষমতাসীন দলের নমিনেশন পেলেই ভোট এখন ‘ম্যানেজ’ হয়ে যায়।
অথচ যাদের কথা এতক্ষণ বলা হলো, তাদের কাজটা কী? রাজনৈতিক দলের কর্মীদের কাজটাই-বা কী? কার ঘরে চাল নেই, খাবার নেই, অসুস্থতায় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই—তাঁদের কাজ হলো ওইসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো, খোঁজখবর নেওয়া। কিন্তু এই যে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত চিকিৎসাব্যবস্থা, তার বিরুদ্ধেও কখনো তাঁদের সোচ্চার হতে দেখা গেছে? কীভাবে সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমনকি চিকিৎসারত মুমূর্ষু রোগীদের সর্বস্বান্ত করছে—তার কোনো প্রতিবাদ তাঁরা করেছেন? বরং উল্টো রাজনৈতিক পরিচয়ে সেখান থেকে কিছু কামানো যায় কি না, তার ধান্দা করেন।
দেশের স্বাধীনতার জন্য একসময় আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, মানুষ প্রাণ দিয়েছে, দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে, কিন্তু কিসের জন্য এই স্বাধীন দেশ, কার জন্য—সে হিসাব-নিকাশের প্রয়োজন কি রাজনৈতিক দলগুলো কখনো অনুভব করেছে? শুভ যা কিছু কখনো হয়েছে, তা-ও নাগরিকদের উদ্যোগে।
মানুষের শেখার ব্যবস্থা শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। মাধ্যমিকে তা আরও পাকাপোক্ত হয়। উচ্চমাধ্যমিকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা পরিপক্ব হয়ে মূল্যবোধে যুক্ত হতে থাকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে তো এসব নিয়ে গবেষণা করার কথা। কিন্তু প্রাথমিকেই শিশু শিখে যায়, তার শিক্ষকটি লেখাপড়ায় ভালো নন; কিন্তু লাখ লাখ টাকা দিয়ে চাকরিটি নিয়েছেন। মাধ্যমিকে গিয়ে এই অভিজ্ঞতাই সম্প্রসারিত হয়, উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে আরও একটা নোংরা চেহারা দেখে। লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত ডিগ্রি নিয়ে বেকারত্বের জীবন বেছে নেয়। শত শত ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পায় না। টাকার খেলায় বিপর্যস্ত হয়ে একটা রাজনৈতিক দলের ক্যাডার বনে গিয়ে কিছু টাকাপয়সার মালিক হওয়ার চেষ্টা করে। দুর্নীতি তখন হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাই সুবুদ্ধি, দেশপ্রেম—এসব তার কাছে ধরা দেয় না। এ অবস্থাতেই কিছু লোক দায়িত্বপূর্ণ কিছু কাজও পেয়ে যায়। দুর্নীতির হাতছানি তখন সে অগ্রাহ্য করতে পারে না। দায়িত্বে অবহেলা করে। অসৎ হলে, দুর্নীতিবাজ হলে, সমাজ তাকে ঘৃণা করে না। ঘরে-বাইরে বেশ একটা সম্মান মেলে।
তাই বিস্ফোরণে মানুষ মারা গেলে অপরাধী আত্মরক্ষার সুযোগ খোঁজে। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেল, চালক আর তাঁর সহকারী পালাল, মালিক প্রভাবশালী কারও তদবির নিয়ে হাজির হলো, ব্যস, মিটে গেল। কিছু টাকাপয়সার লেনদেন হলো, এতেই পরিসমাপ্তি ঘটল সবকিছুর। কে কাকে বোঝাবে যে আহমদিয়াদের ওপর আক্রমণ অন্যায্য, নিজের ধর্মটি ঠিকমতো পালন করো। বাড়িঘর ভাঙচুর, মারপিট, হত্যা—এসব ধর্মের অনুশাসন নয়। এ কাজটি যে রাজনৈতিক দলের, তা বোঝার চেষ্টা কোনো রাজনৈতিক দল করেনি। কারণ, যিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বটি হাতে পেয়েছেন, তিনিও তো ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে ওই জায়গায় যাননি। তাঁরও যে নেতৃত্বের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা নেই, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা কোত্থেকে আসবে?
আমরা পঞ্চাশ-ষাটের দশকে ছাত্র হিসেবেও মানুষের শ্রদ্ধা পেয়েছি। খেয়ার মাঝিও ছাত্রদের কাছ থেকে ভাড়া নিতে চাইতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র পেলে তার কাছ থেকে দেশের কিসে কল্যাণ হবে, তা জানতে চাইতেন। একাত্তরের মার্চ মাসে এই অভিজ্ঞতা আমাদের বারবার হয়েছে। তখন ভালো ত্যাগী শিক্ষক যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন রাজনীতিবিদ; যাঁরা জানতেন শিক্ষাটাই আসল। এখান থেকেই মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। এখন কি সেখান থেকে কিছু তৈরি হওয়া সম্ভব?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১৩ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে