শাইখ সিরাজ
গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে ওমানের কৃষি নিয়ে কাজ করতে গিয়েছিলাম মাসকাটে। মাসকাটের কাজ শেষে একটা বিশেষ কাজে সালালা যেতে হলো আমাদের। মাসকাট থেকে সালালার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার বিমান ভ্রমণ। এক সন্ধ্যায় রওনা দিয়ে রাতে পৌঁছালাম সালালায়। আমার সঙ্গে ছিলেন—আমার সহকর্মী জহির মুন্না, তানভীর আশিক, হাবিব এবং আমাদের সফরসঙ্গী ইয়াসিন চৌধুরী। সালালায় আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন সেখানকার প্রবাসী ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার তাঁর বন্ধুদের একটা দলসহ দুইটা প্রাডো গাড়ি নিয়ে এসেছেন আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিতে। আনোয়ারের বন্ধুদের একজনের দিকে আমার দৃষ্টি আটকাল। তাঁর গায়ের রং আমার মতোই, পরনে পিংকিশ স্যুট। চোখ দুটি উজ্জ্বল। ইয়াসিন চৌধুরী, তানভীর আর আমি চড়লাম আনোয়ারের গাড়িতে। জহির মুন্না ও হাবিব অন্য গাড়িতে চড়ল। হোটেলে পৌঁছেও সেই ছেলেটিকে দেখতে পেলাম। বেশ প্রাণবন্ত। তাঁকে বললাম, বাহ! দারুণ একটা স্যুট পরেছেন তো। নাম কী আপনার? বললেন, আইয়ুব হোসেন। জহির বলল, স্যার, ওর গাড়িতে উঠলে আপনি আরও চমকে যাবেন। জানতে চাইলাম, কেন? জহির বলল, গাড়িভর্তি ফাইল আর কাগজপত্র। গাড়িতে উঠে মনে হলো, গাড়ি যেন নয়, একটা অফিস রুম। তা দেখে সবাই হাসলাম। ছেলেটার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হলো।
পরদিন কাজের জন্য বের হলাম। যথারীতি আইয়ুবও এলেন তাঁর গাড়ি নিয়ে। আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আমাদের কাজ দেখবেন। আমি ইচ্ছে করেই উঠলাম আইয়ুবের গাড়িতে। সত্যি, গাড়ি নয়, যেন কোনো একটা অফিস রুম। ফাইলপত্তর আর কাগজপত্রে ভরা। জানতে চাইলাম, কী করেন আপনি? আইয়ুব জানালেন, তিনি সালালায় কনস্ট্রাকশনের কাজ করেন। সেখানে তিনি ২০ থেকে ২৫টি বিল্ডিং তৈরি করেছেন। প্রায় ১০-১২টার মতো কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। জরুরি প্রয়োজনে কাগজপত্র যেন হাতের কাছে পাওয়া যায়, তার জন্য গাড়িটাকেই অফিসের মতো ব্যবহার করছেন তিনি। যদিও তাঁর অফিস আছে। তবে গাড়িটাই তাঁর মূল অফিস। আর এই অফিসের জন্যই তাঁকে সব সময় পরিপাটি হয়ে থাকতে হয়। তাঁকে বললাম, ‘চলেন, আজ আপনার কাজকর্মই দেখব আগে। কোথায় কোথায় কাজ চলছে নিয়ে চলুন।’ তিনি গাড়িতে করে নিয়ে গেলেন ওয়াদি এলাকায়। সেখানে এক ভবনের সামনে নিয়ে গিয়ে বললেন, ‘এই বিল্ডিংটা আমি তৈরি করেছি। শুধু এটি নয়, এ রকম আরও অনেক ভবনই নির্মাণ করছে আমার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। অথচ আজ থেকে বছর ১৩ আগে ওমানে এসেছিলাম শ্রমিক হিসেবে।’ তারপর শুনলাম আইয়ুবের জীবনের গল্প।
নোয়াখালীর কৃষকের সন্তান আইয়ুব ভাগ্যের সন্ধানে শ্রমিক ভিসায় পাড়ি জমিয়েছিলেন ওমানের সালালায়। পাকিস্তানি এক কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ পেয়েছিলেন। আগে কঠিন কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। জানতেন কনস্ট্রাকশনের কাজও। কিন্তু বাংলা ছাড়া আর কোনো ভাষা জানতেন না। ভাষা না জানার কারণে যে কাজের জন্য তিনি গিয়েছিলেন, সেই কাজের পর আর কোনো কাজ পাচ্ছিলেন না। তিনি ভাবলেন, কাজ না থাকুক, শ্রমিক কার্ডটা থাকলে অন্য কোথাও কাজের চেষ্টা করবেন। তিনি পাকিস্তানি ওই কোম্পানিতে গিয়ে শ্রমিক কার্ডটা চাইলেন। কিন্তু তাঁকে বলা হলো, ‘সুবা মিলেগা।’ ‘সুবা মিলেগা’র অর্থ বুঝতে পারেননি আইয়ুব। তিনি বারবার কার্ডের জন্য তাগাদা দিতে থাকলেন। আর ওপাশ থেকে বারবারই কড়াভাবে বলা হতে থাকল ‘সুবা মিলেগা’। ঘণ্টাখানেক পরে ফের তিনি কার্ড চাইতে গেলেন, তখনো তাঁকে বলা হলো, সুবা মিলেগা। তিনি এ কথার অর্থ না বোঝার কারণে অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা হলো। প্রচণ্ড মন খারাপ অবস্থা নিয়ে তিনি মেসে ফিরে গেলেন। সন্ধ্যায় মেসের এক বড় ভাইয়ের কাছে তিনি জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, সুবা মিলেগা অর্থ কী?’ পাকিস্তানি লোকটা তাঁকে বারবার সুবা মিলেগা কেন বলল? সেই বড় ভাই তাঁকে জানালেন, লোকটি তাঁকে সকালে যেতে বলেছেন। এই সামান্য অর্থ বুঝতে না পারায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তিনি বুঝলেন ওমানে টিকে থাকতে হলে, আগে তাঁকে ভাষা শিখতে হবে। তিনি শুরু করলেন ভাষা শেখা। সুবা মিলেগা বুঝতে না পারা আইয়ুব এখন আরবি, হিন্দি, উর্দুসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন।
এভাবেই উত্থানের শুরু আইয়ুবের। ভাষা জানার কারণে তিনি সরাসরি যোগাযোগ শুরু করলেন। সেই সঙ্গে কাজে দক্ষ হয়ে উঠলেন। তিনি নিজেই এখন কাজগুলো তদারকি করেন। দেশের অনেকের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমনকি অন্য দেশের শ্রমিকদেরও কাজের ব্যবস্থা করছেন তিনি। তিনি জীবনে কাজকেই প্রাধান্য দেন আগে। তাই কাজের জিনিসপত্রগুলো রাখেন হাতের কাছে। কাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখেন সব সময়।
বহু বাধা পেরিয়ে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে আইয়ুব হয়ে উঠেছেন উদ্দিষ্ট উচ্চতায়। অর্জন করছেন সচ্ছলতা আর সম্মান। শ্রমে-ঘামে অর্জিত অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে পাঠাচ্ছেন। কোভিডের বছরগুলোতে অর্থনৈতিক দুর্দশা মুছে ফেলতে সবাই যাঁর যাঁর জায়গা থেকে তৎপর ছিলেন। সে সময় সংকটের প্রকট আঘাত থেকে আমাদের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে কৃষি আর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। তাঁরাই আমাদের দুঃসময়ের আসল হিরো। কৃষির হিরোদের সম্পর্কে আমরা কম-বেশি জানি। কিন্তু দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে অপরিচিত জগতে কীভাবে লড়াই করেন একেকজন রেমিট্যান্স-যোদ্ধা! তাঁদের গল্প আমরা কজনই বা জানি, কতটা উপলব্ধি করতে পারি সেই সব হিরোর জীবনযুদ্ধের কাহিনি। আইয়ুবের মতো অসংখ্য প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্সে সচল আমাদের অর্থনীতি। আমরা আগের চেয়ে ভালো থাকতে পারছি। কিন্তু দেশে কতটা সম্মান পান এই নায়কেরা?
আইয়ুব বলছিলেন, ‘দেখেন, এ দেশের মানুষ আমাদের সম্মান করে। দেশের আইন মেনে চলি, নিয়ম মেনে চলি, কোনো ঝামেলা হয় না। অথচ বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট থেকেই শুরু হয় ঝামেলা। কোনো সিস্টেম নেই। সেবার আমার বাবা মারা গেলেন। দেশ থেকে খবর এল। আমি দ্রুত টিকিট কেটে রওনা হলাম। ঢাকা এয়ারপোর্টে আমাকে আটকে রাখল অনেকক্ষণ। আমার মালপত্র ছাড়ে না। শেষে মালপত্র রেখেই চলে গেলাম। আট দিন পর আমাকে নোয়াখালী থেকে পুনরায় ঢাকায় এসে মালপত্র নিয়ে যেতে হলো। এয়ারপোর্টে যেমন হয়রানির শিকার হতে হয় আমাদের, তেমনি ভীষণ অসহযোগিতা করেন মানুষগুলো।’
শুধু আইয়ুব নন, বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের বিস্তর অভিযোগ আমাদের এয়ারপোর্ট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আছে। প্রবাসীদের সঙ্গে সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ নিয়ে। অথচ এই মানুষগুলো বিদেশ বিভুঁইয়ে গিয়ে হাড়ভাঙা খাটুনিতে যা আয় করছেন, তাতে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত) ৭ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলার। বলতে দ্বিধা নেই, প্রবাসীদের শ্রমেই আমাদের অনেকের রোজগার, ভালো থাকা। যাঁরা আমাদের জন্য এত করছেন, তাঁরা দেশের মাটিতে কেন হয়রানির শিকার হবেন, কেন একটু ভালো আচরণ পাবেন না? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।
তারপরও আইয়ুবরা কিছু মনে রাখেন না। নিজের দেশ আর মানুষকে ভালোবেসে ভুলে যান সব। কারণ সত্যিকারের হিরোরা তো এমনই। সব ক্ষিপ্রতা তাঁদের শুধু লক্ষ্যে পৌঁছানোর। আইয়ুবের সাফল্য অর্জনের পথটা সহজ ছিল না। কিছুটা এগিয়ে গিয়েও বহুবার পিছলে ফিরেছেন সূচনায়। কিন্তু তিনি তাঁর বুদ্ধি, ধৈর্য আর একাগ্রতা দিয়ে অতিক্রম করেছেন সাফল্যের পিচ্ছিল পথ, সব বাধার কাঁটা। তিনি সত্যিকারের এক নায়ক, হিরো আইয়ুব।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে ওমানের কৃষি নিয়ে কাজ করতে গিয়েছিলাম মাসকাটে। মাসকাটের কাজ শেষে একটা বিশেষ কাজে সালালা যেতে হলো আমাদের। মাসকাট থেকে সালালার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার বিমান ভ্রমণ। এক সন্ধ্যায় রওনা দিয়ে রাতে পৌঁছালাম সালালায়। আমার সঙ্গে ছিলেন—আমার সহকর্মী জহির মুন্না, তানভীর আশিক, হাবিব এবং আমাদের সফরসঙ্গী ইয়াসিন চৌধুরী। সালালায় আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন সেখানকার প্রবাসী ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার তাঁর বন্ধুদের একটা দলসহ দুইটা প্রাডো গাড়ি নিয়ে এসেছেন আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিতে। আনোয়ারের বন্ধুদের একজনের দিকে আমার দৃষ্টি আটকাল। তাঁর গায়ের রং আমার মতোই, পরনে পিংকিশ স্যুট। চোখ দুটি উজ্জ্বল। ইয়াসিন চৌধুরী, তানভীর আর আমি চড়লাম আনোয়ারের গাড়িতে। জহির মুন্না ও হাবিব অন্য গাড়িতে চড়ল। হোটেলে পৌঁছেও সেই ছেলেটিকে দেখতে পেলাম। বেশ প্রাণবন্ত। তাঁকে বললাম, বাহ! দারুণ একটা স্যুট পরেছেন তো। নাম কী আপনার? বললেন, আইয়ুব হোসেন। জহির বলল, স্যার, ওর গাড়িতে উঠলে আপনি আরও চমকে যাবেন। জানতে চাইলাম, কেন? জহির বলল, গাড়িভর্তি ফাইল আর কাগজপত্র। গাড়িতে উঠে মনে হলো, গাড়ি যেন নয়, একটা অফিস রুম। তা দেখে সবাই হাসলাম। ছেলেটার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হলো।
পরদিন কাজের জন্য বের হলাম। যথারীতি আইয়ুবও এলেন তাঁর গাড়ি নিয়ে। আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আমাদের কাজ দেখবেন। আমি ইচ্ছে করেই উঠলাম আইয়ুবের গাড়িতে। সত্যি, গাড়ি নয়, যেন কোনো একটা অফিস রুম। ফাইলপত্তর আর কাগজপত্রে ভরা। জানতে চাইলাম, কী করেন আপনি? আইয়ুব জানালেন, তিনি সালালায় কনস্ট্রাকশনের কাজ করেন। সেখানে তিনি ২০ থেকে ২৫টি বিল্ডিং তৈরি করেছেন। প্রায় ১০-১২টার মতো কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। জরুরি প্রয়োজনে কাগজপত্র যেন হাতের কাছে পাওয়া যায়, তার জন্য গাড়িটাকেই অফিসের মতো ব্যবহার করছেন তিনি। যদিও তাঁর অফিস আছে। তবে গাড়িটাই তাঁর মূল অফিস। আর এই অফিসের জন্যই তাঁকে সব সময় পরিপাটি হয়ে থাকতে হয়। তাঁকে বললাম, ‘চলেন, আজ আপনার কাজকর্মই দেখব আগে। কোথায় কোথায় কাজ চলছে নিয়ে চলুন।’ তিনি গাড়িতে করে নিয়ে গেলেন ওয়াদি এলাকায়। সেখানে এক ভবনের সামনে নিয়ে গিয়ে বললেন, ‘এই বিল্ডিংটা আমি তৈরি করেছি। শুধু এটি নয়, এ রকম আরও অনেক ভবনই নির্মাণ করছে আমার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। অথচ আজ থেকে বছর ১৩ আগে ওমানে এসেছিলাম শ্রমিক হিসেবে।’ তারপর শুনলাম আইয়ুবের জীবনের গল্প।
নোয়াখালীর কৃষকের সন্তান আইয়ুব ভাগ্যের সন্ধানে শ্রমিক ভিসায় পাড়ি জমিয়েছিলেন ওমানের সালালায়। পাকিস্তানি এক কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ পেয়েছিলেন। আগে কঠিন কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। জানতেন কনস্ট্রাকশনের কাজও। কিন্তু বাংলা ছাড়া আর কোনো ভাষা জানতেন না। ভাষা না জানার কারণে যে কাজের জন্য তিনি গিয়েছিলেন, সেই কাজের পর আর কোনো কাজ পাচ্ছিলেন না। তিনি ভাবলেন, কাজ না থাকুক, শ্রমিক কার্ডটা থাকলে অন্য কোথাও কাজের চেষ্টা করবেন। তিনি পাকিস্তানি ওই কোম্পানিতে গিয়ে শ্রমিক কার্ডটা চাইলেন। কিন্তু তাঁকে বলা হলো, ‘সুবা মিলেগা।’ ‘সুবা মিলেগা’র অর্থ বুঝতে পারেননি আইয়ুব। তিনি বারবার কার্ডের জন্য তাগাদা দিতে থাকলেন। আর ওপাশ থেকে বারবারই কড়াভাবে বলা হতে থাকল ‘সুবা মিলেগা’। ঘণ্টাখানেক পরে ফের তিনি কার্ড চাইতে গেলেন, তখনো তাঁকে বলা হলো, সুবা মিলেগা। তিনি এ কথার অর্থ না বোঝার কারণে অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা হলো। প্রচণ্ড মন খারাপ অবস্থা নিয়ে তিনি মেসে ফিরে গেলেন। সন্ধ্যায় মেসের এক বড় ভাইয়ের কাছে তিনি জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, সুবা মিলেগা অর্থ কী?’ পাকিস্তানি লোকটা তাঁকে বারবার সুবা মিলেগা কেন বলল? সেই বড় ভাই তাঁকে জানালেন, লোকটি তাঁকে সকালে যেতে বলেছেন। এই সামান্য অর্থ বুঝতে না পারায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তিনি বুঝলেন ওমানে টিকে থাকতে হলে, আগে তাঁকে ভাষা শিখতে হবে। তিনি শুরু করলেন ভাষা শেখা। সুবা মিলেগা বুঝতে না পারা আইয়ুব এখন আরবি, হিন্দি, উর্দুসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন।
এভাবেই উত্থানের শুরু আইয়ুবের। ভাষা জানার কারণে তিনি সরাসরি যোগাযোগ শুরু করলেন। সেই সঙ্গে কাজে দক্ষ হয়ে উঠলেন। তিনি নিজেই এখন কাজগুলো তদারকি করেন। দেশের অনেকের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমনকি অন্য দেশের শ্রমিকদেরও কাজের ব্যবস্থা করছেন তিনি। তিনি জীবনে কাজকেই প্রাধান্য দেন আগে। তাই কাজের জিনিসপত্রগুলো রাখেন হাতের কাছে। কাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখেন সব সময়।
বহু বাধা পেরিয়ে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে আইয়ুব হয়ে উঠেছেন উদ্দিষ্ট উচ্চতায়। অর্জন করছেন সচ্ছলতা আর সম্মান। শ্রমে-ঘামে অর্জিত অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে পাঠাচ্ছেন। কোভিডের বছরগুলোতে অর্থনৈতিক দুর্দশা মুছে ফেলতে সবাই যাঁর যাঁর জায়গা থেকে তৎপর ছিলেন। সে সময় সংকটের প্রকট আঘাত থেকে আমাদের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে কৃষি আর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। তাঁরাই আমাদের দুঃসময়ের আসল হিরো। কৃষির হিরোদের সম্পর্কে আমরা কম-বেশি জানি। কিন্তু দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে অপরিচিত জগতে কীভাবে লড়াই করেন একেকজন রেমিট্যান্স-যোদ্ধা! তাঁদের গল্প আমরা কজনই বা জানি, কতটা উপলব্ধি করতে পারি সেই সব হিরোর জীবনযুদ্ধের কাহিনি। আইয়ুবের মতো অসংখ্য প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্সে সচল আমাদের অর্থনীতি। আমরা আগের চেয়ে ভালো থাকতে পারছি। কিন্তু দেশে কতটা সম্মান পান এই নায়কেরা?
আইয়ুব বলছিলেন, ‘দেখেন, এ দেশের মানুষ আমাদের সম্মান করে। দেশের আইন মেনে চলি, নিয়ম মেনে চলি, কোনো ঝামেলা হয় না। অথচ বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট থেকেই শুরু হয় ঝামেলা। কোনো সিস্টেম নেই। সেবার আমার বাবা মারা গেলেন। দেশ থেকে খবর এল। আমি দ্রুত টিকিট কেটে রওনা হলাম। ঢাকা এয়ারপোর্টে আমাকে আটকে রাখল অনেকক্ষণ। আমার মালপত্র ছাড়ে না। শেষে মালপত্র রেখেই চলে গেলাম। আট দিন পর আমাকে নোয়াখালী থেকে পুনরায় ঢাকায় এসে মালপত্র নিয়ে যেতে হলো। এয়ারপোর্টে যেমন হয়রানির শিকার হতে হয় আমাদের, তেমনি ভীষণ অসহযোগিতা করেন মানুষগুলো।’
শুধু আইয়ুব নন, বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের বিস্তর অভিযোগ আমাদের এয়ারপোর্ট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আছে। প্রবাসীদের সঙ্গে সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ নিয়ে। অথচ এই মানুষগুলো বিদেশ বিভুঁইয়ে গিয়ে হাড়ভাঙা খাটুনিতে যা আয় করছেন, তাতে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত) ৭ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলার। বলতে দ্বিধা নেই, প্রবাসীদের শ্রমেই আমাদের অনেকের রোজগার, ভালো থাকা। যাঁরা আমাদের জন্য এত করছেন, তাঁরা দেশের মাটিতে কেন হয়রানির শিকার হবেন, কেন একটু ভালো আচরণ পাবেন না? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।
তারপরও আইয়ুবরা কিছু মনে রাখেন না। নিজের দেশ আর মানুষকে ভালোবেসে ভুলে যান সব। কারণ সত্যিকারের হিরোরা তো এমনই। সব ক্ষিপ্রতা তাঁদের শুধু লক্ষ্যে পৌঁছানোর। আইয়ুবের সাফল্য অর্জনের পথটা সহজ ছিল না। কিছুটা এগিয়ে গিয়েও বহুবার পিছলে ফিরেছেন সূচনায়। কিন্তু তিনি তাঁর বুদ্ধি, ধৈর্য আর একাগ্রতা দিয়ে অতিক্রম করেছেন সাফল্যের পিচ্ছিল পথ, সব বাধার কাঁটা। তিনি সত্যিকারের এক নায়ক, হিরো আইয়ুব।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে