কুমারদের মাটি সংগ্রহের সেই গর্ত এখন ডোবা

বরুড়া প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২২, ১১: ৫০
Thumbnail image

বরুড়া পৌরসভার পুরান কাদবা গ্রামের ‘কুমার গর্ত’ বর্তমানে ডোবায় পরিণত হয়েছে। এ গর্তের মাটি আশপাশের ফসলি জমির মাটি থেকে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ছিল। এই মাটিই বরুড়ার কুমারদের একটি অংশ পাত্র তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হতো। এর চাহিদা ছিল ব্যাপক। কালের আবর্তে জৌলুশ হারিয়েছে মাটির তৈরি পাত্র। সেসঙ্গে এ গর্তেরও আর পরিচর্যা নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বরুড়ায় কুমারদের বসবাস। ওই সময় বরুড়া থানা হয়নি। বরুড়ার মানুষ জমির দলিল ও আইনি সেবা নিতে চান্দিনা থানায় যেতেন।

সেই সময় থেকে কুমারেরা তাঁদের কুম্ভশালায় বিভিন্ন পাত্র তৈরির জন্য গর্তটি থেকে মাটি সংগ্রহ করতেন। একটা সময় গর্তের মাটি সংগ্রহে কুমারদের লাইন ধরতে হতো। এখানকার মাটির কারিগরদের এই গর্তের মাটিই ছিল রুটি-রুজির একমাত্র উপায়।

১৯৯০ সালের দিকে এসে কুমারেরা মাটির পাত্র তৈরি বাদ দিয়ে লোহার দা, কাঁচি ও ছুরিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বানানো শুরু করেন। এ কারণে গর্তটির চাহিদা কমতে থাকে। একপর্যায়ে এর খোঁজ আর কেউ নেয়নি।

মৃৎশিল্পে বিশেষ এঁটেল, কাদামাটি, চিনামাটির সাহায্যে হাঁড়ি-পাতিল ও বিভিন্ন আসবাব তৈরি করা হয়। মাটির গুণের ভিন্নতার ওপর তৈরি বস্তুর মজবুত ও স্থায়িত্ব নির্ভর করে। মাটি গুণগত মানে সেরা হলে এটি পোড়ানোও সহজ।

বর্তমানে উপজেলায় যাঁরা মাটির পাত্র বিক্রি করছেন, তাঁরা হাজীগঞ্জ, বিজয়পুর, রামচন্দ্রপুর থেকে পাইকারি দামে কিনে এনে খুচরা বিক্রি করেন।

এ ছাড়া কুমারপাড়ায় এখন কুমার পরিবারের সংখ্যা ১০-এর নিচে। এঁদের প্রতিবেশীরা অনেকেই বাড়ি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছেন।

জানা গেছে, কুমার গর্তটির জমির পরিমাণ ৪৮ শতাংশ। জমিটিও মুসলিম সম্প্রদায়ের একাধিক পরিবারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন মূল মালিকেরা। গর্তের এখন আর অস্তিত্ব নেই। যতটুকু আছে, তা-ও এখন ডোবায় পরিণত হয়েছে।

রিপন কর্মকার বলেন, ‘কুমার গর্তের মাটি দিয়ে মাটির পাত্র তৈরির সময় আমিও বাবার সঙ্গে কাজ করেছি। সঙ্গে মা, দিদি কাজ করতেন। সময়ের সঙ্গে আমাদের অনেকেরই পেশার পরিবর্তন হয়েছে। মাটির পাত্র তৈরির কাজটা আমাদের মধ্যে এখন আর কেউ করেন না।’

এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রতন কর্মকারের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ওই গর্ত থেকে মাটি সংগ্রহের ইতিহাস বাবা, দাদার কাছ থেকে শুনেছি। ওখান থেকে মাটি সংগ্রহ করে আমাদের কুম্ভশালায় এনে নির্দিষ্ট আকার দেওয়ার আগে কাদামাটি চটকানো হয়। যাতে একটি সুষম আর্দ্রতা বজায় থাকে। কাদামাটির তালে আটকা পড়া বাতাস বের করে নিতে হয়।’

রতন আরও বলেন, ‘পাকানোর মাধ্যমে সুষম আর্দ্রতাযুক্ত তাল পাওয়া যেত। চটকানো এবং নির্বায়ুকরণের পর কাদামাটির তালকে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়। এভাবে মাটির নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাব তৈরি করতেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা।’ এখন তাঁরা এসব কাজ করেন না, তাই গর্তটির খোঁজও নেন না বলে জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত