মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
তৃণমূলে অনেক স্থানেই জনগণের সঙ্গে সরকারের নৈকট্য স্থাপনের পরিবর্তে দূরত্ব তৈরি করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়গুলো বিরোধীরা আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করবেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দুই বছরের কিছু কম সময় বাকি আছে। নির্বাচনটি ভালোয় ভালোয় হওয়ার জন্য আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে যে দূরত্ব ও অনাস্থা বিরাজ করছে; তা কতটা দূর হবে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে কি না—সে সম্পর্কে এখনই কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি দাবি ছিল সংবিধানের ১১৮(১) অনুযায়ী আইন প্রণয়ন এবং সে আইন অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা।
নানা অনিশ্চয়তা থাকার পরও সরকার আইনটি প্রণয়নের জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তার সঙ্গে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি একমত পোষণ করেননি। তবে আইনটি মন্ত্রিপরিষদ হয়ে জাতীয় সংসদে বিল আকারে উপস্থাপিত হয়েছে এবং সংসদীয় কমিটিতে কিছু সংশোধনী আনয়নের মাধ্যমে বিলটি আইন আকারে পাস হয়েছে। সংসদীয় কমিটির আলোচনায় বিএনপিদলীয় সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বিলটি পাস হয়েছে। বিলটি পাসের পর নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এত দিন যে অনাস্থা ও বিরোধ ছিল, সেটি কিছুটা হলেও নিরসন হবে। এরপর দেখার বিষয় হচ্ছে, আইনানুযায়ী গঠিত সার্চ কমিটি কেমন তালিকা নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রস্তুত করে এবং রাষ্ট্রপতি সেই তালিকা অনুযায়ী কাদের সিইসি ও ইসি পদে নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন।
নির্বাচন কমিশন যদি কম বিতর্কের মধ্য দিয়ে গঠিত হতে পারে এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর আগামী নির্বাচনটি সবার অংশগ্রহণমূলক করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করে; তাহলে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দেশ কয়েক কদম এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। দ্বাদশ নির্বাচনটি সবার অংশগ্রহণে এবং সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে—সেটি রাজনীতিসচেতন সব মহল যেমন আশা করে, একই সঙ্গে বিদেশি বন্ধু এবং দাতা দেশগুলোও প্রত্যাশা করে।
নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর দেশে রাজনীতির পরিবেশ অনেকটাই বোঝা যাবে। তবে আমাদের রাজনীতিতে আদর্শগত পরস্পরবিরোধী অবস্থানের দ্বন্দ্ব বিস্ফোরিত না হওয়ার চেষ্টা অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, জনসম্পৃক্ত কৌশল কার্যকর করার ওপর। সরকারি দলের বিপক্ষে বিরোধী দল ও জোটের কৌশল এবার মোটেও সহজ-সরল থাকবে না। বিদেশের নানা মহলকেও নানাভাবে যুক্ত ও প্রভাবিত করার নীতি ও কৌশলনির্ভর হবে—সেটি অনেকটাই ধারণা করা যেতে পারে। বিরোধী জোটের জন্য এটি মরণকামড়তুল্য, সর্বশক্তি নিয়োগ এবং দেশি-বিদেশি বুদ্ধি-পরামর্শ নিয়েই সরকারপক্ষকে কুপোকাত করার চেষ্টার ত্রুটি হবে না—এটিও নিশ্চিত করে বলা যায়। সুতরাং আওয়ামী লীগের বিপক্ষে দেশে ও বিদেশে অনেকেই তৎপর থাকবে, সেটি আওয়ামী লীগ ভালো করে না বোঝার কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া, আওয়ামী লীগের পক্ষে জোট ও নির্বাচনের শক্তির সমীকরণটি কেমন হবে, তা এখনই হয়তো নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করতে বিভিন্ন শক্তি এবার প্রচলিত কৌশলের বাইরেও নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে পারে।
আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে, তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দৃশ্য ও অদৃশ্য শক্তি মোটেও দুর্বল নয়; বরং মানুষকে বিভ্রান্ত করার সহজ রাজনীতি তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। অতীতেও আওয়ামীবিরোধী শক্তি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় অনুভূতি, ভারতবিরোধিতা ইত্যাদি কার্ড খুব সুচতুরভাবে খেলে নির্বাচনে অনেক কিছুই উল্টে দিতে পেরেছে। এখন তাদের হাতে নতুন করে অনেক কিছুই যুক্ত করে নেওয়ার মতো মালমসলা রয়েছে, যে খবর এখনো হয়তো আমরা জানি না। সুতরাং নির্বাচনের পরিবেশটি সহনীয়, অনুকূল হলেও প্রতিপক্ষ শক্তি আওয়ামী লীগ এবং এর মিত্র শক্তিকে ঘায়েল করতে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা, অপপ্রচার এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ ও দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাতে মোটেও কসুর করবে না। সে জন্যই আওয়ামী লীগের জন্য আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের আত্মতুষ্টিরও কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের অভ্যন্তরে নানা ধরনের গোষ্ঠী দাঁড়িয়ে গেছে, যারা মুখে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম উচ্চারণ করতে করতে ফেনা তুলে ফেলে; কিন্তু বাস্তবে খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর গংয়ের মতো ছুরিকাঘাত করতে দ্বিধা করবে না।
সাম্প্রতিক ইউপিসহ বিভিন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অনেক অঞ্চলেই বিরোধ ভেতরে-ভেতরে চরম আকার ধারণ করেছে। প্রার্থীর নাম সুপারিশ করা না-করা নিয়ে মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় কমিটির মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনার চেয়ে অন্য নানা অনৈতিক এবং গোষ্ঠীবলয় সৃষ্টির নানা তৎপরতা জড়িয়ে আছে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহল থেকে এসবের রহস্য ভেদ, আমলনামা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রকৃত চিত্রটি যেমন বের হয়ে আসবে; তেমনি দল ও আদর্শে নিষ্ঠাবান, ত্যাগী কারা, কারা নন, সেসবেরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। শুধু গোয়েন্দা রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে প্রকৃত সত্য সব জায়গায় সমানভাবে পাওয়া না-ও যেতে পারে। অথচ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে শেখ হাসিনার সরকার আর্থসামাজিক নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ খরচ করেছে। অনেক মানুষ উপকৃত হওয়ার কথা; কিন্তু স্থানীয় নানা গোষ্ঠী দুর্নীতির কারণে প্রকৃত মানুষটি সেই আর্থিক সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যাঁরা এই অপকর্মটি করেছেন, তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, কাবিখা-কাবিটাসহ নানা ধরনের ভাতা, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মানুষ শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
তৃণমূলে অনেক স্থানেই জনগণের সঙ্গে সরকারের নৈকট্য স্থাপনের পরিবর্তে দূরত্ব তৈরি করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়গুলো বিরোধীরা আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করবেই। সুতরাং এখনই দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রতিটি আসন ধরে ধরে দলীয় নেতা-কর্মীদের কার্যক্রম যেমন বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে আনা দরকার, একইভাবে আসনভিত্তিক জনমনোভাব সম্পর্কে ব্যাপক জরিপ চালিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের পর স্পষ্ট হয়ে গেছে, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মতো জনসম্পৃক্ত নেতা-কর্মীরাই আওয়ামী লীগের Asset (সম্পদ), প্রভাবশালী বলে খ্যাত ওসমান পরিবার দলের জন্য Liability (দায়) তথা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন আসনে সেসব নেতাকেই দলের হাল ধরার সুযোগ করে দেওয়া এখনই জরুরি।
শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে কোনো কিছু করা উচিত নয়। আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের এখন থেকেই জায়গা করে দেওয়া উচিত; যিনি সেলিনা হায়াতের মতো দল-মতনির্বিশেষে সবার কাছে ভালো মানুষ, দুর্নীতিমুক্ত এবং জনদরদি হিসেবে ভোট পাওয়ার যোগ্যতা দেখাতে পারবেন। যাঁরা তাঁর বিরোধিতা করবেন, তাঁদের জায়গা যেন দলে না হয়, সেই ব্যবস্থাটিও থাকা দরকার। ব্যক্তিগত আচার-আচরণ, সততা, কর্মনিষ্ঠা, আদর্শের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ যোগ্য নেতাদেরই শুধু নির্বাচনে প্রাধান্য দিতে হবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
তৃণমূলে অনেক স্থানেই জনগণের সঙ্গে সরকারের নৈকট্য স্থাপনের পরিবর্তে দূরত্ব তৈরি করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়গুলো বিরোধীরা আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করবেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দুই বছরের কিছু কম সময় বাকি আছে। নির্বাচনটি ভালোয় ভালোয় হওয়ার জন্য আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে যে দূরত্ব ও অনাস্থা বিরাজ করছে; তা কতটা দূর হবে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে কি না—সে সম্পর্কে এখনই কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি দাবি ছিল সংবিধানের ১১৮(১) অনুযায়ী আইন প্রণয়ন এবং সে আইন অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা।
নানা অনিশ্চয়তা থাকার পরও সরকার আইনটি প্রণয়নের জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তার সঙ্গে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি একমত পোষণ করেননি। তবে আইনটি মন্ত্রিপরিষদ হয়ে জাতীয় সংসদে বিল আকারে উপস্থাপিত হয়েছে এবং সংসদীয় কমিটিতে কিছু সংশোধনী আনয়নের মাধ্যমে বিলটি আইন আকারে পাস হয়েছে। সংসদীয় কমিটির আলোচনায় বিএনপিদলীয় সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বিলটি পাস হয়েছে। বিলটি পাসের পর নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এত দিন যে অনাস্থা ও বিরোধ ছিল, সেটি কিছুটা হলেও নিরসন হবে। এরপর দেখার বিষয় হচ্ছে, আইনানুযায়ী গঠিত সার্চ কমিটি কেমন তালিকা নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রস্তুত করে এবং রাষ্ট্রপতি সেই তালিকা অনুযায়ী কাদের সিইসি ও ইসি পদে নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন।
নির্বাচন কমিশন যদি কম বিতর্কের মধ্য দিয়ে গঠিত হতে পারে এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর আগামী নির্বাচনটি সবার অংশগ্রহণমূলক করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করে; তাহলে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দেশ কয়েক কদম এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। দ্বাদশ নির্বাচনটি সবার অংশগ্রহণে এবং সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে—সেটি রাজনীতিসচেতন সব মহল যেমন আশা করে, একই সঙ্গে বিদেশি বন্ধু এবং দাতা দেশগুলোও প্রত্যাশা করে।
নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর দেশে রাজনীতির পরিবেশ অনেকটাই বোঝা যাবে। তবে আমাদের রাজনীতিতে আদর্শগত পরস্পরবিরোধী অবস্থানের দ্বন্দ্ব বিস্ফোরিত না হওয়ার চেষ্টা অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, জনসম্পৃক্ত কৌশল কার্যকর করার ওপর। সরকারি দলের বিপক্ষে বিরোধী দল ও জোটের কৌশল এবার মোটেও সহজ-সরল থাকবে না। বিদেশের নানা মহলকেও নানাভাবে যুক্ত ও প্রভাবিত করার নীতি ও কৌশলনির্ভর হবে—সেটি অনেকটাই ধারণা করা যেতে পারে। বিরোধী জোটের জন্য এটি মরণকামড়তুল্য, সর্বশক্তি নিয়োগ এবং দেশি-বিদেশি বুদ্ধি-পরামর্শ নিয়েই সরকারপক্ষকে কুপোকাত করার চেষ্টার ত্রুটি হবে না—এটিও নিশ্চিত করে বলা যায়। সুতরাং আওয়ামী লীগের বিপক্ষে দেশে ও বিদেশে অনেকেই তৎপর থাকবে, সেটি আওয়ামী লীগ ভালো করে না বোঝার কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া, আওয়ামী লীগের পক্ষে জোট ও নির্বাচনের শক্তির সমীকরণটি কেমন হবে, তা এখনই হয়তো নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করতে বিভিন্ন শক্তি এবার প্রচলিত কৌশলের বাইরেও নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে পারে।
আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে, তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দৃশ্য ও অদৃশ্য শক্তি মোটেও দুর্বল নয়; বরং মানুষকে বিভ্রান্ত করার সহজ রাজনীতি তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। অতীতেও আওয়ামীবিরোধী শক্তি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় অনুভূতি, ভারতবিরোধিতা ইত্যাদি কার্ড খুব সুচতুরভাবে খেলে নির্বাচনে অনেক কিছুই উল্টে দিতে পেরেছে। এখন তাদের হাতে নতুন করে অনেক কিছুই যুক্ত করে নেওয়ার মতো মালমসলা রয়েছে, যে খবর এখনো হয়তো আমরা জানি না। সুতরাং নির্বাচনের পরিবেশটি সহনীয়, অনুকূল হলেও প্রতিপক্ষ শক্তি আওয়ামী লীগ এবং এর মিত্র শক্তিকে ঘায়েল করতে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা, অপপ্রচার এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ ও দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাতে মোটেও কসুর করবে না। সে জন্যই আওয়ামী লীগের জন্য আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের আত্মতুষ্টিরও কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের অভ্যন্তরে নানা ধরনের গোষ্ঠী দাঁড়িয়ে গেছে, যারা মুখে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম উচ্চারণ করতে করতে ফেনা তুলে ফেলে; কিন্তু বাস্তবে খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর গংয়ের মতো ছুরিকাঘাত করতে দ্বিধা করবে না।
সাম্প্রতিক ইউপিসহ বিভিন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অনেক অঞ্চলেই বিরোধ ভেতরে-ভেতরে চরম আকার ধারণ করেছে। প্রার্থীর নাম সুপারিশ করা না-করা নিয়ে মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় কমিটির মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনার চেয়ে অন্য নানা অনৈতিক এবং গোষ্ঠীবলয় সৃষ্টির নানা তৎপরতা জড়িয়ে আছে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহল থেকে এসবের রহস্য ভেদ, আমলনামা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রকৃত চিত্রটি যেমন বের হয়ে আসবে; তেমনি দল ও আদর্শে নিষ্ঠাবান, ত্যাগী কারা, কারা নন, সেসবেরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। শুধু গোয়েন্দা রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে প্রকৃত সত্য সব জায়গায় সমানভাবে পাওয়া না-ও যেতে পারে। অথচ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে শেখ হাসিনার সরকার আর্থসামাজিক নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ খরচ করেছে। অনেক মানুষ উপকৃত হওয়ার কথা; কিন্তু স্থানীয় নানা গোষ্ঠী দুর্নীতির কারণে প্রকৃত মানুষটি সেই আর্থিক সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যাঁরা এই অপকর্মটি করেছেন, তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, কাবিখা-কাবিটাসহ নানা ধরনের ভাতা, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মানুষ শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
তৃণমূলে অনেক স্থানেই জনগণের সঙ্গে সরকারের নৈকট্য স্থাপনের পরিবর্তে দূরত্ব তৈরি করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়গুলো বিরোধীরা আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করবেই। সুতরাং এখনই দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রতিটি আসন ধরে ধরে দলীয় নেতা-কর্মীদের কার্যক্রম যেমন বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে আনা দরকার, একইভাবে আসনভিত্তিক জনমনোভাব সম্পর্কে ব্যাপক জরিপ চালিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের পর স্পষ্ট হয়ে গেছে, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মতো জনসম্পৃক্ত নেতা-কর্মীরাই আওয়ামী লীগের Asset (সম্পদ), প্রভাবশালী বলে খ্যাত ওসমান পরিবার দলের জন্য Liability (দায়) তথা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন আসনে সেসব নেতাকেই দলের হাল ধরার সুযোগ করে দেওয়া এখনই জরুরি।
শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে কোনো কিছু করা উচিত নয়। আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের এখন থেকেই জায়গা করে দেওয়া উচিত; যিনি সেলিনা হায়াতের মতো দল-মতনির্বিশেষে সবার কাছে ভালো মানুষ, দুর্নীতিমুক্ত এবং জনদরদি হিসেবে ভোট পাওয়ার যোগ্যতা দেখাতে পারবেন। যাঁরা তাঁর বিরোধিতা করবেন, তাঁদের জায়গা যেন দলে না হয়, সেই ব্যবস্থাটিও থাকা দরকার। ব্যক্তিগত আচার-আচরণ, সততা, কর্মনিষ্ঠা, আদর্শের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ যোগ্য নেতাদেরই শুধু নির্বাচনে প্রাধান্য দিতে হবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে