আটার দামের প্রভাব বেকারি পণ্যে

রাসেল আহমেদ, তেরখাদা
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২২, ০৭: ০৩
আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ১৩: ১৩

চাল ও আটার দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে অন্য পণ্যে। তেরখাদায় বেকারি পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ৫ টাকার রুটি খেতে হচ্ছে এখন ১০ টাকায়। অন্য সব নিত্যপণ্যের দামও নাগালের বাইরে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ।

উপজেলার বেকারি ব্যবসায়ীরা জানান, আগে বাজারে ৫০ কেজির আটার বস্তার দাম ছিল দেড় থেকে ২ হাজার টাকা। এখন আড়াই হাজার টাকা। এ ছাড়া তেল, ঘি ও চিনির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেকারি পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কাটেংগা বাজারের চা বিক্রেতা হামিদ বলেন, ‘আগে ৫ টাকায় যে রুটির সাইজ ছিল, তা এখন ছোট করে বানানো হয়। সাধারণ মানুষ এত দামে বেকারির পণ্য কিনতে নারাজ। প্রতিদিন যেখানে আমার ৫০ থেকে ৭০ পিস রুটি বিক্রি হয়। দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০ পিসের মতো বিক্রি হচ্ছে। সবকিছুর দাম বাড়ছে। এ জন্যই বেকারি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছি।’

কাটেংগা এলাকার রেজওয়ান মোল্লা বলেন, ‘সামান্য রুটি, তার দামও দ্বিগুণ হয়ে গেল। আমি প্রতিদিন সকালে এক কাপ চা ও একটা রুটি খাই। চায়ের দোকানে গেলে দোকানদার বলেন, ‘রুটি কিন্তু এখন ১০ টাকা।’ আমি অবাক হয়ে যাই। কয়েক দিন আগেও যে রুটি ৫ টাকায় খেয়েছি, এখন তা ১০ টাকায় খেতে হবে। আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষ এখন মুখ বুজে আর্তনাদ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

কাটেংগা বাজারে বেকারির মালিক অনিমেষ সাহা বলেন, ‘সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আটা, তেল, ঘি ও চিনি এসব পণ্য বেকারির জন্য খুবই জরুরি। তবে এসব পণ্যের দাম অনেক আগেই বেড়েছে। তারপরও আমরা দাম বাড়াইনি। বেকারির শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করতে হয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে বেকারির পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম না বাড়ালে বেকারি বন্ধ করে দিতে হবে।’

এদিকে ভোজ্যতেলের পর তেরখাদা উপজেলার বাজারগুলোতে এবার বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন ও ডিমের দাম। একই সঙ্গে বেড়েছে সবজির। মাছের বাজারও চড়া। ডাল, আটা-ময়দার দামও ঊর্ধ্বমুখী। সরেজমিন নগরীরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমনটা জানা যায়। সবজিবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৯০, টমেটো ৬০, বরবটি ৬০, শসা ৪০, পেঁপে ৫০, করলা ৫০, মিষ্টিকুমড়া ৩০, চিচিঙ্গা ৪০, চাল কুমড়া ৩০, পটোল ৪০, কাঁকরোল ৬০, ঢ্যাঁড়স ৪০ ও আলু ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত সপ্তাহে এসব সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা কম ছিল।

এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে তেরখাদার বাজারগুলোতে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে দেশি রসুন ৬০ থেকে বেড়ে ৮০ ও চায়না রসুন ১২০ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০ এবং সোনালি ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কক বা লেয়ারের কেজি ২৯০ টাকা। ফার্মের ডিমের দাম প্রতি হালি ৩ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ এবং খাসির ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মাছের দামও চড়া। চাষের কই ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, মাঝারি তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৬০, শিং মাছ ৬৫০ থেকে ৮০০, মাঝারি আকারের শোল ৫৫০ থেকে ৬৫০ ও ছোট আকারের চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা বাজারের খুচরা মুদিদোকানি আজিজুল ফকির বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে পাইকারি বাজারেই দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পাইকারি পর্যায়ে রসুনের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট রয়েই গেছে। ভোজ্যতেল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা চাহিদামতো বোতলজাত তেল সরবরাহ করছেন না। তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোনো ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালে, তাঁদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত