ড. আর এম দেবনাথ
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেট আমাদের নতুন অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করবেন। সম্পূর্ণ ব্যর্থ সাবেক অর্থমন্ত্রীর পর আসছে নতুন মন্ত্রীর নতুন বাজেট। সবার মনেই ভয়, না জানি কী হয়! কারণ, অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সাবেক মন্ত্রী খোলাখুলি বলতেন, ‘ব্যবসাবান্ধব, ব্যবসায়ীবান্ধব’ বাজেটের কথা। তিনি নয়-ছয় সুদনীতি করে সঞ্চয়কারীদের সর্বনাশ করেছিলেন। আর সস্তায়, অতিসস্তায় ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন। সঞ্চয়পত্রকে করেছিলেন নিরুৎসাহিত। বারবার বলেছিলেন বিনিয়োগের কথা, ব্যবসার খরচের কথা। কত বড় বড় কথা! কিন্তু শেষ পর্যন্ত অশ্বডিম্ব। এ প্রেক্ষাপটেই নতুন বাজেট উপস্থাপিত হবে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে।
আগে আমরা ছিলাম কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শিকার। এখন আরেকটি যোগ হয়েছে—গাজা-ইসরায়েল এবং ইসরায়েল-ইরান-সংকট। বিশ্ব এখনো অস্থির। চারদিকে নানা আশঙ্কা, অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতার খবর। বিশ্বের দুই নম্বর অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনীতির অধঃগমনের খবর। বোঝাই যাচ্ছে, বৈশ্বিক সংবাদ ভালো নয়। পুনরুদ্ধারের আশা একটু দুরাশা। হুতিদের উৎপাতে আমাদের ‘শিপিং ব্যয়’ বৃদ্ধিজনিত কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বিঘ্নিত।
অভ্যন্তরীণভাবে সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের জীবন অতিষ্ঠ। সরকারিভাবেই মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। একমাত্র কৃষকের অবদান ছাড়া আর কোনো অবদানই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাঁদের ছেলেমেয়েরা এখনো মোটামুটি ভালো এবং সন্তোষজনক রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কৃষি খাত ছাড়া সেবা ও শিল্প খাতে হতাশাজনক।
২০২২-২৩ অর্থবছরে যেখানে এই হার ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, সেই স্থলে এবারের এই প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে মাত্র ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা একটা দুরাশা মাত্র। তারল্য-সংকট ব্যাংকে ব্যাংকে। সরকার নিজেই ব্যাংক থেকে সমানে ঋণ নিচ্ছে উচ্চ হারে। ফল—সরকারের সুদ ব্যয় বৃদ্ধি এবং অপরদিকে বেসরকারি খাতে ঋণাভাব। ডলার-সংকটও অব্যাহত। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত। রপ্তানি আগের মতো বাড়ছে না।
অর্থনীতির নিয়মে ৮৫ টাকার ডলার ১২০ টাকা হওয়ায় রপ্তানি যে পরিমাণ বাড়ার কথা তার ছটাকও বাড়ছে না। বাংলাদেশিরা বিদেশে চাকরি নিয়ে যাচ্ছে বেশি, বিপরীতে ডলার আসছে আনুপাতিক হারে কম। হুন্ডিতে চলে যাচ্ছে ডলার। শিল্প উৎপাদন ব্যাহত। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির।
এই হচ্ছে সংক্ষেপে আমাদের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ পরিস্থিতি। এই সময়ে আন্তর্জাতিক ‘মহাজন’ আইএমএফ এসে আমাদের অফিসে অফিসে যাচ্ছে। আর উপস্থাপন করছে তাদের সেই বিখ্যাত প্রেসক্রিপশন—যা দেশ, অবস্থানির্বিশেষে এক। কী যে সব উপদেশ-শর্ত! অল্প কয়টা টাকা। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি, ঋণ মাত্র ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। এর জন্য এখন তারা বলছে: তেলের দাম, গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম, সারের দাম বাড়াতে হবে। ভর্তুকি কমাতে হবে। আমদানি নেই, রপ্তানি কম, মানুষের আয় নেই—তবু বলছে রাজস্ব বাড়াতে হবে। যেখানে সমস্যা খেলাপি ঋণের, সেখানে তারা বলছে ব্যাংক একীভূতকরণের কথা। সিন্ডিকেট-সমস্যা, অর্থ পাচার-সমস্যা, ব্যয়ের গুণগত দিক ইত্যাদি বিষয়ে তাদের কোনো কথা নেই। এদিকে ব্যবসায়ীরা যথারীতি তাঁদের দাবি পেশ করে চলেছেন। অর্থনীতিবিদদের নরম-গরম সুপারিশের কোনো শেষ নেই।
এমনতর অবস্থায় বাজেট আসছে। একদিকে মানুষের দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা, আবার অন্যদিকে নানা প্রত্যাশা। এমতাবস্থায় নতুন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী বাস্তববাদী হবেন বলে আশা করি। প্রথম কাজটিই হচ্ছে, যেটুকু আছে তা ধরে রাখার চেষ্টা। বড় বড় টার্গেটমুখী না হওয়া। প্রবৃদ্ধির হার ইত্যাদি নিয়ে আমাদের মধ্যে অহেতুক একটা মাতামাতি আছে। মাতামাতি আছে ‘রেকর্ড’ পরিমাণ বাজেট দেওয়ার।
প্রতিযোগিতা আছে অবাস্তব ‘টার্গেট’ নির্ধারণের। মেগা প্রকল্পের উচ্চাশায় আমাদের ছোট ছোট কাজ হচ্ছে বিঘ্নিত। এবার করা হোক ছোট বাজেট, বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট। বড় বড় টার্গেট দরকার নেই। ৫-৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বর্তমান অবস্থায় আমাদের জন্য যথেষ্ট। বিশ্বের বর্তমান অবস্থায় এই অর্জনই হবে ভীষণ অর্জন। ধরে রাখার জন্য, বর্তমান ‘ম্যাক্রো ইকোনমিক’ অবস্থান ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, তা-ই করা হোক। বড় বড় প্রকল্পের দিকে কম নজর দিয়ে রাস্তাঘাটের পুনর্নির্মাণ, মেরামত ইত্যাদি করা দরকার।
হতে পারে কিছুটা সম্প্রসারণ। দেশের রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ, ঢাকা শহরের অলিগলি তো বটেই; ছোট ছোট কাজ, বকেয়া কাজে মন দেওয়া দরকার। এতে জনতুষ্টি বাড়বে। বাজেটের আকার ছোট করে গুণগত দিক উন্নত করার দিকে নজর দেওয়া দরকার। উন্নয়ন বাজেটে যেমন ব্যাপক দুর্নীতি হয়, তেমনি সরকারি অফিসে ১ টাকার বাল্ব ৫ টাকায় কেনা হয়। হাসপাতালের রোগীদের খাবার দেওয়া হয় অপ্রতুল, তা-ও আবার বাইরে বিক্রি হয়। কয়েদি এবং জেলে বন্দীদের খাবার নেই, বাজেট খরচ আছে। স্কুল বিল্ডিং ৫-৭ বছর যায় না। স্কুল নেই, শিক্ষক নেই—এমপিওভুক্তি আছে, খরচ আছে। সরকারি হাসপাতালে ওষুধ নেই—তা বিক্রি হয় বাইরে। গুদামের ওষুধ চলে যায় বাইরে। এভাবে তালিকা বড় করা যায়। দেখা যাবে, এমনকি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকার এক-তৃতীয়াংশ অপচয় হয়, যার ওপর পরিকল্পনা কমিশনেরই জরিপ আছে।
অর্থাৎ কি উন্নয়ন বাজেট, কি রাজস্ব বাজেট—উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক অনিয়ম-অপচয় চলছে। চলছে ঘুষ-দুর্নীতি। শতকরা হিসাবে বলতে পারব না; তবে অনেকেরই ধারণা, সরকারের ১ টাকার কাজ ২ টাকায় হয়। রাজস্ব বাজেটে কম করে হলেও ১০ থেকে ২০ শতাংশ টাকা চুরি হয়। সরকারের বহু অফিস আছে, বিভাগ আছে, অঙ্গ আছে, যেখানে কোনো কাজ নেই। অথচ হাজার হাজার টাকা কর্মচারী-কর্মকর্তারা মাসে মাসে নেন। সরকার আবার তাদের তুষ্টি সাধন করতে গিয়ে গাড়ির নামে মাসে ৩০-৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করে—যেন বেসরকারি খাতের নির্বাহী তাঁরা। এভাবে দেখলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকারি ব্যয় কমাতে এগিয়ে যেতে পারে। বাজেটের গুণগত দিক উন্নত করতে পারে। করদাতা বাড়ান, কর নয়। কর অব্যাহতি কমান, তা বাড়াবেন না।
বাজেট ঘাটতি কম করতে হবে। সরকারি ঋণ অবশ্যই হ্রাস করতে হবে। মূল্যস্ফীতি হ্রাসে আর্থিক, রাজস্ব এবং আমদানিজনিত কারণ চিহ্নিত করতে হবে। সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাত বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা দরকার। এককথায়, এবার বাজেট হতে হবে দরিদ্রবান্ধব, কৃষিবান্ধব মধ্যবিত্তের বাজেট। ছোট বাজেট, অপচয়হীন বাজেট, কম ঋণের বাজেট, কম ঘাটতির বাজেট, কম প্রবৃদ্ধি হারের বাজেট। সর্বোপরি মূল্যস্ফীতি রোধ ও সামাজিক নিরাপত্তার কাঠামো বৃদ্ধির বাজেট হতে হবে ২০২৪-২৫-এর বাজেট। আমরা দেখতে চাই, নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানের গুণগতভাবে উন্নত নতুন বাজেট।
ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেট আমাদের নতুন অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করবেন। সম্পূর্ণ ব্যর্থ সাবেক অর্থমন্ত্রীর পর আসছে নতুন মন্ত্রীর নতুন বাজেট। সবার মনেই ভয়, না জানি কী হয়! কারণ, অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সাবেক মন্ত্রী খোলাখুলি বলতেন, ‘ব্যবসাবান্ধব, ব্যবসায়ীবান্ধব’ বাজেটের কথা। তিনি নয়-ছয় সুদনীতি করে সঞ্চয়কারীদের সর্বনাশ করেছিলেন। আর সস্তায়, অতিসস্তায় ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন। সঞ্চয়পত্রকে করেছিলেন নিরুৎসাহিত। বারবার বলেছিলেন বিনিয়োগের কথা, ব্যবসার খরচের কথা। কত বড় বড় কথা! কিন্তু শেষ পর্যন্ত অশ্বডিম্ব। এ প্রেক্ষাপটেই নতুন বাজেট উপস্থাপিত হবে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে।
আগে আমরা ছিলাম কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শিকার। এখন আরেকটি যোগ হয়েছে—গাজা-ইসরায়েল এবং ইসরায়েল-ইরান-সংকট। বিশ্ব এখনো অস্থির। চারদিকে নানা আশঙ্কা, অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতার খবর। বিশ্বের দুই নম্বর অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনীতির অধঃগমনের খবর। বোঝাই যাচ্ছে, বৈশ্বিক সংবাদ ভালো নয়। পুনরুদ্ধারের আশা একটু দুরাশা। হুতিদের উৎপাতে আমাদের ‘শিপিং ব্যয়’ বৃদ্ধিজনিত কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বিঘ্নিত।
অভ্যন্তরীণভাবে সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের জীবন অতিষ্ঠ। সরকারিভাবেই মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। একমাত্র কৃষকের অবদান ছাড়া আর কোনো অবদানই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাঁদের ছেলেমেয়েরা এখনো মোটামুটি ভালো এবং সন্তোষজনক রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কৃষি খাত ছাড়া সেবা ও শিল্প খাতে হতাশাজনক।
২০২২-২৩ অর্থবছরে যেখানে এই হার ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, সেই স্থলে এবারের এই প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে মাত্র ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা একটা দুরাশা মাত্র। তারল্য-সংকট ব্যাংকে ব্যাংকে। সরকার নিজেই ব্যাংক থেকে সমানে ঋণ নিচ্ছে উচ্চ হারে। ফল—সরকারের সুদ ব্যয় বৃদ্ধি এবং অপরদিকে বেসরকারি খাতে ঋণাভাব। ডলার-সংকটও অব্যাহত। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত। রপ্তানি আগের মতো বাড়ছে না।
অর্থনীতির নিয়মে ৮৫ টাকার ডলার ১২০ টাকা হওয়ায় রপ্তানি যে পরিমাণ বাড়ার কথা তার ছটাকও বাড়ছে না। বাংলাদেশিরা বিদেশে চাকরি নিয়ে যাচ্ছে বেশি, বিপরীতে ডলার আসছে আনুপাতিক হারে কম। হুন্ডিতে চলে যাচ্ছে ডলার। শিল্প উৎপাদন ব্যাহত। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির।
এই হচ্ছে সংক্ষেপে আমাদের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ পরিস্থিতি। এই সময়ে আন্তর্জাতিক ‘মহাজন’ আইএমএফ এসে আমাদের অফিসে অফিসে যাচ্ছে। আর উপস্থাপন করছে তাদের সেই বিখ্যাত প্রেসক্রিপশন—যা দেশ, অবস্থানির্বিশেষে এক। কী যে সব উপদেশ-শর্ত! অল্প কয়টা টাকা। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি, ঋণ মাত্র ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। এর জন্য এখন তারা বলছে: তেলের দাম, গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম, সারের দাম বাড়াতে হবে। ভর্তুকি কমাতে হবে। আমদানি নেই, রপ্তানি কম, মানুষের আয় নেই—তবু বলছে রাজস্ব বাড়াতে হবে। যেখানে সমস্যা খেলাপি ঋণের, সেখানে তারা বলছে ব্যাংক একীভূতকরণের কথা। সিন্ডিকেট-সমস্যা, অর্থ পাচার-সমস্যা, ব্যয়ের গুণগত দিক ইত্যাদি বিষয়ে তাদের কোনো কথা নেই। এদিকে ব্যবসায়ীরা যথারীতি তাঁদের দাবি পেশ করে চলেছেন। অর্থনীতিবিদদের নরম-গরম সুপারিশের কোনো শেষ নেই।
এমনতর অবস্থায় বাজেট আসছে। একদিকে মানুষের দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা, আবার অন্যদিকে নানা প্রত্যাশা। এমতাবস্থায় নতুন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী বাস্তববাদী হবেন বলে আশা করি। প্রথম কাজটিই হচ্ছে, যেটুকু আছে তা ধরে রাখার চেষ্টা। বড় বড় টার্গেটমুখী না হওয়া। প্রবৃদ্ধির হার ইত্যাদি নিয়ে আমাদের মধ্যে অহেতুক একটা মাতামাতি আছে। মাতামাতি আছে ‘রেকর্ড’ পরিমাণ বাজেট দেওয়ার।
প্রতিযোগিতা আছে অবাস্তব ‘টার্গেট’ নির্ধারণের। মেগা প্রকল্পের উচ্চাশায় আমাদের ছোট ছোট কাজ হচ্ছে বিঘ্নিত। এবার করা হোক ছোট বাজেট, বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট। বড় বড় টার্গেট দরকার নেই। ৫-৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বর্তমান অবস্থায় আমাদের জন্য যথেষ্ট। বিশ্বের বর্তমান অবস্থায় এই অর্জনই হবে ভীষণ অর্জন। ধরে রাখার জন্য, বর্তমান ‘ম্যাক্রো ইকোনমিক’ অবস্থান ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, তা-ই করা হোক। বড় বড় প্রকল্পের দিকে কম নজর দিয়ে রাস্তাঘাটের পুনর্নির্মাণ, মেরামত ইত্যাদি করা দরকার।
হতে পারে কিছুটা সম্প্রসারণ। দেশের রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ, ঢাকা শহরের অলিগলি তো বটেই; ছোট ছোট কাজ, বকেয়া কাজে মন দেওয়া দরকার। এতে জনতুষ্টি বাড়বে। বাজেটের আকার ছোট করে গুণগত দিক উন্নত করার দিকে নজর দেওয়া দরকার। উন্নয়ন বাজেটে যেমন ব্যাপক দুর্নীতি হয়, তেমনি সরকারি অফিসে ১ টাকার বাল্ব ৫ টাকায় কেনা হয়। হাসপাতালের রোগীদের খাবার দেওয়া হয় অপ্রতুল, তা-ও আবার বাইরে বিক্রি হয়। কয়েদি এবং জেলে বন্দীদের খাবার নেই, বাজেট খরচ আছে। স্কুল বিল্ডিং ৫-৭ বছর যায় না। স্কুল নেই, শিক্ষক নেই—এমপিওভুক্তি আছে, খরচ আছে। সরকারি হাসপাতালে ওষুধ নেই—তা বিক্রি হয় বাইরে। গুদামের ওষুধ চলে যায় বাইরে। এভাবে তালিকা বড় করা যায়। দেখা যাবে, এমনকি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকার এক-তৃতীয়াংশ অপচয় হয়, যার ওপর পরিকল্পনা কমিশনেরই জরিপ আছে।
অর্থাৎ কি উন্নয়ন বাজেট, কি রাজস্ব বাজেট—উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক অনিয়ম-অপচয় চলছে। চলছে ঘুষ-দুর্নীতি। শতকরা হিসাবে বলতে পারব না; তবে অনেকেরই ধারণা, সরকারের ১ টাকার কাজ ২ টাকায় হয়। রাজস্ব বাজেটে কম করে হলেও ১০ থেকে ২০ শতাংশ টাকা চুরি হয়। সরকারের বহু অফিস আছে, বিভাগ আছে, অঙ্গ আছে, যেখানে কোনো কাজ নেই। অথচ হাজার হাজার টাকা কর্মচারী-কর্মকর্তারা মাসে মাসে নেন। সরকার আবার তাদের তুষ্টি সাধন করতে গিয়ে গাড়ির নামে মাসে ৩০-৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করে—যেন বেসরকারি খাতের নির্বাহী তাঁরা। এভাবে দেখলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকারি ব্যয় কমাতে এগিয়ে যেতে পারে। বাজেটের গুণগত দিক উন্নত করতে পারে। করদাতা বাড়ান, কর নয়। কর অব্যাহতি কমান, তা বাড়াবেন না।
বাজেট ঘাটতি কম করতে হবে। সরকারি ঋণ অবশ্যই হ্রাস করতে হবে। মূল্যস্ফীতি হ্রাসে আর্থিক, রাজস্ব এবং আমদানিজনিত কারণ চিহ্নিত করতে হবে। সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাত বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা দরকার। এককথায়, এবার বাজেট হতে হবে দরিদ্রবান্ধব, কৃষিবান্ধব মধ্যবিত্তের বাজেট। ছোট বাজেট, অপচয়হীন বাজেট, কম ঋণের বাজেট, কম ঘাটতির বাজেট, কম প্রবৃদ্ধি হারের বাজেট। সর্বোপরি মূল্যস্ফীতি রোধ ও সামাজিক নিরাপত্তার কাঠামো বৃদ্ধির বাজেট হতে হবে ২০২৪-২৫-এর বাজেট। আমরা দেখতে চাই, নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানের গুণগতভাবে উন্নত নতুন বাজেট।
ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে