কষ্টের আখ এখন বোঝা

সনি আজাদ, চারঘাট 
Thumbnail image

রাজশাহী চিনিকলে এখনো আখ সংগ্রহ শুরু হয়নি। থ্রেসার মেশিনেও আখমাড়াইয়ে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার জনপ্রিয় ফসল আখ এবার কৃষকের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরজুড়ে আবাদ করার পর একসঙ্গে বিশাল অঙ্কের টাকার জোগান দেওয়া ফসল পরিপুষ্ট হয়ে জমিতেই থাকছে। আখ কেটে রবি মৌসুমের আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করতে পারছেন না কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, আখ কাটার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। তবু তাঁরা না পারছেন জমির আখ অন্যত্র বিক্রি করতে, আবার না পারছেন নিজেরা মাড়াই করতে। চিনিকল আখ নেওয়ার বিষয়ে এখনো কিছুই জানায়নি। জমি থেকে আখ কাটতে না পারায় গম, মসুর, সরিষা কিংবা অন্য ফসল চাষাবাদের প্রস্তুতিও নিতে পারছেন না। কিন্তু আখমাড়াই করতে গেলেই প্রশাসনের লোকেরা মেশিন জব্দ করে নিয়ে যাচ্ছেন।

রাজশাহী চিনিকল সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারী শিল্প কারখানা রাজশাহী চিনিকলের আওতায় ৯টি সাব-জোন এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সাব-জোন চারঘাট। চিনিকলের মোট আখের ৩০ শতাংশের বেশি আখ এই সাব-জোন সরবরাহ করে থাকে। চারঘাট সাব-জোন এলাকায় এ বছর ১ হাজার ২৬০ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। আখ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৫৫০ মটন। গত বছর আখ চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৫৯০ একর জমিতে। সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৯০০ টন। তবে সংগ্রহ হয়েছিল ৬ হাজার ১৮ টন।

উপজেলার রাওথা এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আখের চাষ করেছেন তিনি। সার, কীটনাশক সব বাকিতে নেওয়া। জমির আখগুলো সময়মতো চিনিকলে দিতে পারলে কিংবা মাড়াই করতে পারলে গম, মসুরসহ অন্য আবাদ করতে পারতেন। জাতীয় কৃষক সমিতি চারঘাট উপজেলার সভাপতি হায়দার আলী বলেন, ‘আখ চাষ করে কৃষকেরা মহাবিপদে পড়েছেন। রবি মৌসুম শুরু হলেও কৃষকেরা জমি ফাঁকা পাচ্ছেন না। আবার মৌসুমের শেষের দিকে চিনিকল আখ নিলেও টাকা পেতে কৃষকেরা হয়রানির শিকার হন। বাধ্য হয়ে আখমাড়াই করলে মেশিন জব্দ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা কৃষকদের নিয়ে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

চারঘাট সাব-জোন প্রধান ও রাজশাহী চিনিকলের উপসহকারী আখ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, গতবারের চেয়ে এবার আখের উৎপাদন অনেক কম। আখ পরিপক্ব না হওয়ায় চিনিকলে আখ সংগ্রহ এখনো শুরু হয়নি। তবে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে আখ সংগ্রহ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কোনো কোনো কৃষক সরকারি নিয়ম অমান্য করে থ্রেসার মেশিনে আখমাড়াই করছেন। জমিতে আখ থাকলেও কৃষকদের লোকসান হবে না। কৃষকদের কথা চিন্তা করে চিনিকল আখের দাম বাড়িয়েছে। গতবার ১৪০ টাকা মণ দরে আখ সংগ্রহ করা হলেও এবার ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এক মণের দাম। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আখের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি চিনিকল বাঁচাতে কৃষকদের সহযোগিতা চান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন বলেন, থ্রেসার মেশিনে আখমাড়াই করার ব্যাপারে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে কৃষকদের অভিযোগগুলোর বিষয়ে চিনিকলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত