স্বপ্না রেজা
পুলিশের কাজ কী? তারা তো কেবল টিকিট কালোবাজারিদের ধরতে ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার কাজেই ব্যস্ত। এতে তাদের পকেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আইন নিয়ে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই।
ধর্ষণ প্রতিদিনকার একটি শব্দ। পত্রিকার পাতায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দের অবাধ বিচরণ। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কোনো জায়গা বাদ পড়ছে না ধর্ষণ থেকে। কারোর যেন কোনো ক্ষমতা নেই এমন একটি শব্দকে নির্মূল করে দেওয়ার। উপরন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ধর্ষণ যেন বৈধতা পেয়ে গেছে এই সমাজে। তাই প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত এই শব্দ চারপাশে উচ্চারিত হয়। সেই শব্দের সঙ্গে সংখ্যায় বেড়ে যায় ধর্ষক। যদি ধর্ষকের ওপর পরিসংখ্যান চালানো হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই সংখ্যা মোটেও কম হবে না, বরং দিনে দিনে বাড়ে। কারোর যেন কোনো বিকার নেই।
একজন বলছিলেন, ভারতীয় অনুষ্ঠান ক্রাইম প্যাট্রল দেখে আমাদের তরুণ ও আধা শিক্ষিত মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। তারা শিখছে কীভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করে তা গুম করতে হয়। তার কথায়, ক্রাইম প্যাট্রল দেখে এক ব্যক্তি অপরাধী হয়ে আত্মপ্রকাশ করছে। কিন্তু ক্রাইম প্যাট্রল দেখে পুলিশ কী করছে, কী শিখছে—এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি। তার কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষই হলো উত্তম প্রাণী, যারা শুধু শ্রেণিকক্ষেই শেখে না, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে শেখে এবং সেটা অবিরত ধারায়। সোজা কথায়, যা দেখে এর প্রভাব তার ওপর পড়ে এবং তা চেতন ও অবচেতনে। তবে এই প্রভাব কতটা পড়বে, তা নির্ভর করে সে কতটা মানসিকভাবে সবল কিংবা দুর্বল এবং সংবেদনশীল—তার ওপর। সাধারণত মানসিকভাবে সুস্থ-সবলেরা নেতিবাচক আচরণে ঝোঁকে না। দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার, যা তার মূল্যবোধ তৈরি করে। ট্র্যাপে না পড়লে সহজে ঝুঁকতে দেখা যায় না। ক্রাইম প্যাট্রল দেখে অপরাধপ্রবণতা যতটা না বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে অপরাধ করার সুযোগ পেলে এবং অপরাধ করে ছাড় পেলে।
সম্প্রতি কমলাপুর রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনে এক কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। নেত্রকোনা থেকে আগত কিশোরীর পরিচয় জানা যায়নি। পরিচয় শ্রেণিগত মাপে উঁচু হলে অনেকেই সোচ্চার হতেন। ধর্ষক হিসেবে অভিযুক্তরা হলো স্টেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ পানি বিক্রেতা। পাবলিক বাসে গণধর্ষণ, ধর্ষণের ঘটনা লাগাতারভাবে ঘটতে দেখে অভিভাবকেরা ভাবতেন, নারীদের জন্য, বিশেষ করে কন্যাসন্তানের জন্য পাবলিক বাস নিরাপদ নয়। তাই অনেকেই রেল ও রেলপথকে নিরাপদ ভাবা শুরু করেন এবং চলাচলের জন্য বেছে নেন। আমি নিশ্চিত, তাদের ভাবনায় ভাটা পড়েছে এবার। রাজধানীর বুকে কমলাপুর রেলস্টেশনে যদি এমন জঘন্য ঘটনা ঘটে, মফস্বলের রেলস্টেশনের নিরাপত্তার কথা কীভাবে ভাবা সম্ভব?
জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে রাত আনুমানিক একটা কি দেড়টার দিকে। গভীর রাত পর্যন্ত তো স্টেশনে ট্রেন আসা-যাওয়া করার কথা। রেলওয়ে পুলিশের পুরো স্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা, যার মধ্যে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চয়ই অন্তর্ভুক্ত। তাদের জবাবদিহি কে নিচ্ছে, কীভাবে নেওয়া হচ্ছে, সেটা প্রকাশ্যে আসা উচিত বলে মনে করি। যদি না আসে তাহলে ভেবে নিতে হবে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষই আদতে এমন একটি সংবেদনশীল বিষয়ে উদাসীন।
এটা সত্য যে রেলওয়ে পুলিশ সেই কিশোরীকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। নিরাপত্তা দেওয়ার দায় প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন লোকবলের সংকটের কথা। এ কেমন কথা? এমন একটি ঘটনা ঘটার পর এ কথা কেন? রেলপথ, যোগাযোগের এত উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপত্তাকর্মীর সংকটের বিষয় অসামঞ্জস্য। যাত্রী যদি সুরক্ষিত হয়ে চলাচল করতেই না পারে, তাহলে এমন যোগাযোগব্যবস্থার কী প্রয়োজন আছে?
জানা গেছে, ধর্ষকদের অধিকাংশই স্টেশনের অস্থায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মী। অস্থায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে রয়েছে যথেষ্ট অসাবধানতা ও খামখেয়ালিপনা। অনেকে বলছেন, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এই নিয়োগ-বাণিজ্যে রয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ। যেমনটা অতীত অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে থাকে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত একটি এজেন্সির মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। পত্রিকান্তরে জানা গেছে, নাম-ঠিকানা ও একটি ছবি নিয়েই তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সবার ঠিকানা আবার নেই, থাকে না। সে ক্ষেত্রে একজন পরিচিত দিয়ে আরেকজনের নিয়োগ হয়। সাড়ে আট হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এঁদের অনেকেই আবার মাদকে আসক্ত। এমন নেশাখোর, ভবঘুরেদের কেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, এই প্রশ্নের জবাব কোথায় মিলবে, কে প্রস্তুত আছেন জবাব দিতে, জানা নেই।
একজন বলছিলেন, সাড়ে আট হাজার টাকায় কী হয় এই জামানায়? তার কথায় মনে হয়েছে, এই বেতনে ভালো মানুষ পাওয়া সম্ভব নয়। মাত্র কিছুদিন আগে জানা গেল, নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের একটা শ্রেণি মাসে মাত্র ছয় হাজার টাকা সম্মানী বা বেতন পান। তার ওপরের শ্রেণি আট হাজার এবং তার ওপরে বারো হাজার টাকা মাত্র।
যেখানে পুরুষ ফুটবল খেলোয়াড়েরা কয়েক গুণ বেশি সম্মানী পেয়ে থাকেন। নারী খেলোয়াড়দের অনেকের পরিবার এই বেতনের অর্থে চলে বলে জানা গেছে। অভাব ও বৈষম্যের মাঝেও নারী ফুটবল খেলোয়াড়েরা সাফ ফুটবলের শিরোপাজয়ী হয়েছেন। অল্প বেতনে এত বড় সাফল্য অর্জন কিন্তু আজ বাংলাদেশের একটি ইতিহাস। কী করে তা সম্ভব হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখলে নিশ্চিত ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে। যেটা ভালোর প্রতি ব্যক্তিকে যেমন উৎসাহিত করবে, ঠিক তেমনি যুক্তিহীন কথা দিয়ে সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না। যেনতেনভাবে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে কতটা পেশাগতের পরিচয় দেওয়া হয় বা হচ্ছে, ভেবে দেখার ও চোখ দিয়ে দেখার যেন কেউ ছিল না। আর সবকিছুর মতোই এখানেও বাণিজ্য চলে কি না! সঙ্গে প্রতীয়মান হয় যে অরক্ষিত কমলাপুর রেলস্টেশন।
একজন যাত্রী প্রশ্ন করেছিলেন, রেলওয়ে পুলিশের কাজ কী? তারা তো কেবল টিকিট কালোবাজারিদের ধরতে ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার কাজেই ব্যস্ত। এতে তাঁদের পকেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আইন নিয়ে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। যাত্রীদের এমন অভিযোগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের করণীয় কী, তা দেখার অপেক্ষায় রইল সাধারণ জনগণ। একজন নিরাপত্তাকর্মী প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন, লোকবলের সংকট তো আছেই এবং সেই সঙ্গে আছে ভিআইপিদের জন্য বিশেষ প্রটোকলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মহাব্যস্ততা। সময়ের অতিরিক্ত তাঁরা ডিউটি করেন।
এসব শুনে মনে হচ্ছে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এতিম অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছে। চলন্ত ট্রেনেও অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়। ঝকঝকে ট্রেন, রেলপথ ও তার রুট দিয়ে কী হবে, যদি না যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কঠোর ব্যবস্থা না থাকে? আর সবকিছু আধুনিক হওয়ার কালে নেশাখোর, ঠিকানাবিহীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ কেন? ভেতরটা অরক্ষিত রেখে সুরক্ষার গান গাইতে চেষ্টা করা নিছক দায়িত্বহীনতা। দায়িত্বহীনতার দায় ছোট-বড় সবার। ক্রাইম প্যাট্রল নয়, কমলাপুর রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সৃষ্ট সুযোগই ধর্ষণের পেছনে ইন্ধন কি না, তা দেখার প্রয়োজন বোধ করছে সাধারণ মানুষ।
লেখক: স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
পুলিশের কাজ কী? তারা তো কেবল টিকিট কালোবাজারিদের ধরতে ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার কাজেই ব্যস্ত। এতে তাদের পকেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আইন নিয়ে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই।
ধর্ষণ প্রতিদিনকার একটি শব্দ। পত্রিকার পাতায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দের অবাধ বিচরণ। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কোনো জায়গা বাদ পড়ছে না ধর্ষণ থেকে। কারোর যেন কোনো ক্ষমতা নেই এমন একটি শব্দকে নির্মূল করে দেওয়ার। উপরন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ধর্ষণ যেন বৈধতা পেয়ে গেছে এই সমাজে। তাই প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত এই শব্দ চারপাশে উচ্চারিত হয়। সেই শব্দের সঙ্গে সংখ্যায় বেড়ে যায় ধর্ষক। যদি ধর্ষকের ওপর পরিসংখ্যান চালানো হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই সংখ্যা মোটেও কম হবে না, বরং দিনে দিনে বাড়ে। কারোর যেন কোনো বিকার নেই।
একজন বলছিলেন, ভারতীয় অনুষ্ঠান ক্রাইম প্যাট্রল দেখে আমাদের তরুণ ও আধা শিক্ষিত মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। তারা শিখছে কীভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করে তা গুম করতে হয়। তার কথায়, ক্রাইম প্যাট্রল দেখে এক ব্যক্তি অপরাধী হয়ে আত্মপ্রকাশ করছে। কিন্তু ক্রাইম প্যাট্রল দেখে পুলিশ কী করছে, কী শিখছে—এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি। তার কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষই হলো উত্তম প্রাণী, যারা শুধু শ্রেণিকক্ষেই শেখে না, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে শেখে এবং সেটা অবিরত ধারায়। সোজা কথায়, যা দেখে এর প্রভাব তার ওপর পড়ে এবং তা চেতন ও অবচেতনে। তবে এই প্রভাব কতটা পড়বে, তা নির্ভর করে সে কতটা মানসিকভাবে সবল কিংবা দুর্বল এবং সংবেদনশীল—তার ওপর। সাধারণত মানসিকভাবে সুস্থ-সবলেরা নেতিবাচক আচরণে ঝোঁকে না। দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার, যা তার মূল্যবোধ তৈরি করে। ট্র্যাপে না পড়লে সহজে ঝুঁকতে দেখা যায় না। ক্রাইম প্যাট্রল দেখে অপরাধপ্রবণতা যতটা না বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে অপরাধ করার সুযোগ পেলে এবং অপরাধ করে ছাড় পেলে।
সম্প্রতি কমলাপুর রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনে এক কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। নেত্রকোনা থেকে আগত কিশোরীর পরিচয় জানা যায়নি। পরিচয় শ্রেণিগত মাপে উঁচু হলে অনেকেই সোচ্চার হতেন। ধর্ষক হিসেবে অভিযুক্তরা হলো স্টেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ পানি বিক্রেতা। পাবলিক বাসে গণধর্ষণ, ধর্ষণের ঘটনা লাগাতারভাবে ঘটতে দেখে অভিভাবকেরা ভাবতেন, নারীদের জন্য, বিশেষ করে কন্যাসন্তানের জন্য পাবলিক বাস নিরাপদ নয়। তাই অনেকেই রেল ও রেলপথকে নিরাপদ ভাবা শুরু করেন এবং চলাচলের জন্য বেছে নেন। আমি নিশ্চিত, তাদের ভাবনায় ভাটা পড়েছে এবার। রাজধানীর বুকে কমলাপুর রেলস্টেশনে যদি এমন জঘন্য ঘটনা ঘটে, মফস্বলের রেলস্টেশনের নিরাপত্তার কথা কীভাবে ভাবা সম্ভব?
জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে রাত আনুমানিক একটা কি দেড়টার দিকে। গভীর রাত পর্যন্ত তো স্টেশনে ট্রেন আসা-যাওয়া করার কথা। রেলওয়ে পুলিশের পুরো স্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা, যার মধ্যে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চয়ই অন্তর্ভুক্ত। তাদের জবাবদিহি কে নিচ্ছে, কীভাবে নেওয়া হচ্ছে, সেটা প্রকাশ্যে আসা উচিত বলে মনে করি। যদি না আসে তাহলে ভেবে নিতে হবে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষই আদতে এমন একটি সংবেদনশীল বিষয়ে উদাসীন।
এটা সত্য যে রেলওয়ে পুলিশ সেই কিশোরীকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। নিরাপত্তা দেওয়ার দায় প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন লোকবলের সংকটের কথা। এ কেমন কথা? এমন একটি ঘটনা ঘটার পর এ কথা কেন? রেলপথ, যোগাযোগের এত উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপত্তাকর্মীর সংকটের বিষয় অসামঞ্জস্য। যাত্রী যদি সুরক্ষিত হয়ে চলাচল করতেই না পারে, তাহলে এমন যোগাযোগব্যবস্থার কী প্রয়োজন আছে?
জানা গেছে, ধর্ষকদের অধিকাংশই স্টেশনের অস্থায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মী। অস্থায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে রয়েছে যথেষ্ট অসাবধানতা ও খামখেয়ালিপনা। অনেকে বলছেন, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এই নিয়োগ-বাণিজ্যে রয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ। যেমনটা অতীত অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে থাকে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত একটি এজেন্সির মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। পত্রিকান্তরে জানা গেছে, নাম-ঠিকানা ও একটি ছবি নিয়েই তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সবার ঠিকানা আবার নেই, থাকে না। সে ক্ষেত্রে একজন পরিচিত দিয়ে আরেকজনের নিয়োগ হয়। সাড়ে আট হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এঁদের অনেকেই আবার মাদকে আসক্ত। এমন নেশাখোর, ভবঘুরেদের কেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, এই প্রশ্নের জবাব কোথায় মিলবে, কে প্রস্তুত আছেন জবাব দিতে, জানা নেই।
একজন বলছিলেন, সাড়ে আট হাজার টাকায় কী হয় এই জামানায়? তার কথায় মনে হয়েছে, এই বেতনে ভালো মানুষ পাওয়া সম্ভব নয়। মাত্র কিছুদিন আগে জানা গেল, নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের একটা শ্রেণি মাসে মাত্র ছয় হাজার টাকা সম্মানী বা বেতন পান। তার ওপরের শ্রেণি আট হাজার এবং তার ওপরে বারো হাজার টাকা মাত্র।
যেখানে পুরুষ ফুটবল খেলোয়াড়েরা কয়েক গুণ বেশি সম্মানী পেয়ে থাকেন। নারী খেলোয়াড়দের অনেকের পরিবার এই বেতনের অর্থে চলে বলে জানা গেছে। অভাব ও বৈষম্যের মাঝেও নারী ফুটবল খেলোয়াড়েরা সাফ ফুটবলের শিরোপাজয়ী হয়েছেন। অল্প বেতনে এত বড় সাফল্য অর্জন কিন্তু আজ বাংলাদেশের একটি ইতিহাস। কী করে তা সম্ভব হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখলে নিশ্চিত ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে। যেটা ভালোর প্রতি ব্যক্তিকে যেমন উৎসাহিত করবে, ঠিক তেমনি যুক্তিহীন কথা দিয়ে সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না। যেনতেনভাবে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে কতটা পেশাগতের পরিচয় দেওয়া হয় বা হচ্ছে, ভেবে দেখার ও চোখ দিয়ে দেখার যেন কেউ ছিল না। আর সবকিছুর মতোই এখানেও বাণিজ্য চলে কি না! সঙ্গে প্রতীয়মান হয় যে অরক্ষিত কমলাপুর রেলস্টেশন।
একজন যাত্রী প্রশ্ন করেছিলেন, রেলওয়ে পুলিশের কাজ কী? তারা তো কেবল টিকিট কালোবাজারিদের ধরতে ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার কাজেই ব্যস্ত। এতে তাঁদের পকেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আইন নিয়ে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। যাত্রীদের এমন অভিযোগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের করণীয় কী, তা দেখার অপেক্ষায় রইল সাধারণ জনগণ। একজন নিরাপত্তাকর্মী প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন, লোকবলের সংকট তো আছেই এবং সেই সঙ্গে আছে ভিআইপিদের জন্য বিশেষ প্রটোকলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মহাব্যস্ততা। সময়ের অতিরিক্ত তাঁরা ডিউটি করেন।
এসব শুনে মনে হচ্ছে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এতিম অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছে। চলন্ত ট্রেনেও অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়। ঝকঝকে ট্রেন, রেলপথ ও তার রুট দিয়ে কী হবে, যদি না যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কঠোর ব্যবস্থা না থাকে? আর সবকিছু আধুনিক হওয়ার কালে নেশাখোর, ঠিকানাবিহীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ কেন? ভেতরটা অরক্ষিত রেখে সুরক্ষার গান গাইতে চেষ্টা করা নিছক দায়িত্বহীনতা। দায়িত্বহীনতার দায় ছোট-বড় সবার। ক্রাইম প্যাট্রল নয়, কমলাপুর রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সৃষ্ট সুযোগই ধর্ষণের পেছনে ইন্ধন কি না, তা দেখার প্রয়োজন বোধ করছে সাধারণ মানুষ।
লেখক: স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে