২৫০ প্রজাতির গাছ সংরক্ষণ

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর
আপডেট : ০৫ জুন ২০২২, ১৩: ০৬
Thumbnail image

অক্সিজেনের ভান্ডার মধুপুরের শালবন যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তখন জীবন্ত গাছ সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। জাতীয় উদ্যান সদর রেঞ্জের জলই এলাকায় ৩ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিলুপ্তপ্রায় ২৫০ প্রজাতির গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে এ সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা হয়েছে।

জানা গেছে, মধুপুরের বনভূমির পরিমাণ ৪৫ হাজার ৫৬৫ দশমিক ১৪ একর। বিশাল এ এলাকাজুড়ে ছিল চিরসবুজ পল্লবঘন গজারিগাছে পূর্ণ। ছিল সেগুন, গামারি, চাম্বল, চাপালিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিশালাকারের গাছের সম্ভার। বনজুড়েই ছিল ভেষজ উদ্ভিদ। আমলকী, হরীতকী, বহেড়া, অর্জুন, চালতা, গাদিলা, পিতরাজসহ হাজারো ঔষধি গাছের মধ্যে ছিল বহু কবিরাজ, বৈদ্য ও বনবাসীদের জীবিকার উৎস। এ ছাড়া মধুপুরের গড় বানর, হরিণ, হনুমান, বনমোরগ, চিতাবাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী ছিল পর্যটকদের আকর্ষণের অংশ। এ বর্ণনার সবই এখন কল্পনা।

আশির দশকে শালবনের গাছ হরিলুটের সময় সরকার বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের হাতে ন্যস্ত করে সাড়ে সাত হাজার একর বনভূমি। সেখানে রাবার বাগান সৃজনের নামে দিবানিশি চলে বন লুট। ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাল, গজারি, গামারি ও চাম্বুল পাচার হয়ে মধুপুর বনাঞ্চল ফোকলা হয়ে যায়। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ে এসে মধুপুর বনাঞ্চল ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মধুপুর বনাঞ্চল কাগজে-কলমে সাড়ে ৪৫ হাজার একর এলাকা হলেও বাস্তবে বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র ১২ হাজার একর। এই অংশেও পরিবেশবান্ধব শাল, সেগুন, হরীতকীর চেয়ে ৫০ গুণ বেশি রয়েছে পরিবেশ বিনাসী ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ। ফলে প্রাকৃতিক বনের ভেষজ উদ্ভিদ আর বন্য প্রাণীর দাপাদাপিসহ সব ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে। এমন পরিস্থিতিতে জীবন্ত গাছের মিউজিয়াম গড়ার (আরবোরেটাম) উদ্যোগ নেয় সরকার।

বন বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব, বিলুপ্ত উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য স্থানীয় ও নৃগোষ্ঠীর সহায়তায় মধুপুর জাতীয় উদ্যানের ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিলুপ্তপ্রায় জীবন্ত গাছের উদ্যান (আরবোরেটাম) গড়ে তোলা হয়। জাতীয় উদ্যান সদর রেঞ্জের জলই এলাকায় তিন হেক্টর জায়গায় উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য গামার, গর্জন, গজারি, চাপালিশ, কানাইডাঙ্গা, বহেড়া, ডুমুর, সিধা, ওজা, হরীতকী, আমলকী, গাদিলা, পিতরাজ, কাঞ্চন, বন আমড়াসহ বৈচিত্র্যময় হরেক প্রজাতির ৪ হাজার ৮০০ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই চারাগুলো বেড়ে উঠেছে। সাজতে শুরু করেছে আরবোরেটাম। পর্যায়ক্রমে প্রজাতির সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এ আরবোরেটামের চারদিকে প্রাচীর ও একটি ব্যারাক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

রফিকুল ইসলাম নামের এক পর্যটক জানান, একসময় ভেষজ উদ্ভিদে পূর্ণ ছিল মধুপুর বন। বন উজাড়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে ভেষজ গাছও। বনের আদিবাসীরা ভেষজ উদ্ভিদনির্ভর চিকিৎসা চালাত। এখন আর সেই অবস্থা নেই। আরবোরেটামের মাধ্যমে হারানো ভেষজ উদ্ভিদগুলো যদি সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে মঙ্গল হবে।

টাঙ্গাইল উত্তরের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আবু সালেহ বলেন, ‘আমাদের এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো গবেষণা কার্যক্রম সহজীকরণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, বিপদাপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের আবাসস্থল সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা। জবরদখল ও অবৈধ গাছ কর্তন রোধ করে বননির্ভর স্থানীয় বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে দারিদ্র্য নিরসন কল্পে এ আরবোরেটাম করা হয়েছে। আরবোরেটাম উদ্ভিদবিদ্যার গবেষণা ও অনুশীলনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উদ্ভিদকুলের ওপর নির্ভরশীল বন্য প্রাণীও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে। প্রকল্পটি সঠিক ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হলে এ বনে শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা এসে গবেষণা করতে উৎসাহ বোধ করবেন। গবেষণায় সময়ও কম লাগবে। এ ছাড়া জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বীজ আহরণ, গবেষণাসহ নানা কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত