অজয় দাশগুপ্ত
ইরানে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার জেরে এবার কড়া পদক্ষেপ নিল তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছে। ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের এক সীমান্ত গ্রামে ওই দিনই সকালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এই হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়। এর আগে মঙ্গলবার পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছিল ইরান। ওই হামলার জবাবেই ইরানে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। এর প্রতিবাদ জানাতে এবং এই হামলার ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হলো পাকিস্তানের দূতকে।
আর পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের সীমান্তবর্তী পাঞ্জগুর শহরে গত মঙ্গলবার ইরানের হামলার জেরে ইসলামাবাদ ইরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের পাশাপাশি ইরানি দূতের পাকিস্তানে ফেরাও নিষিদ্ধ করেছিল। পাকিস্তান এবং ইরান দীর্ঘদিন থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে জঙ্গি গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। এই গোষ্ঠীগুলো সীমান্ত এলাকা থেকে হামলা চালায়।ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। পাকিস্তানের দিকে আছে বেলুচিস্তান প্রদেশ। অপর পাশে আছে ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশ। পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা হয়েছে সেখানকার সীমান্তের উভয় পাশে।
করোনার ভয়াবহতার পরও যুদ্ধ থামেনি; বরং রাশিয়া-ইউক্রেনের প্রলম্বিত যুদ্ধের পর যুক্ত হয়েছে ইসরায়েলের আগ্রাসন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ শেষ হয়নি এখনো। এর ভেতরেই পেলাম আরেকটি দুঃসংবাদ। দুটি মুসলিমপ্রধান দেশ যাদের ভেতরকার স্নায়ুযুদ্ধ এত দিন গোপন থাকলেও এখন তা রূপ নিয়েছে সামরিক যুদ্ধে। বলা বাহুল্য দেশ দুটির একটিরও আর্থসামাজিক অবস্থা ভালো নয়। ইরানের প্রচুর মানুষ থাকেন সিডনিতে। আমার কর্মক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ আসে ইরান থেকে।
মেয়েগুলো দারুণ সুন্দর আর গোলাপের মতো দেখতে। তাঁদের নিষ্পাপ মুখগুলো দেখলেই বোঝা যায় তাঁরা বড় হতে চান। গণতান্ত্রিক দেশ, মুক্ত সমাজে তাঁদের আচরণও চমৎকার। বেশির ভাগ মেয়ের ইরানি পাসপোর্টে হিজাব বা বোরকা পরা ছবি থাকলেও এ দেশে এসে অনেকেই পরেন না। অবমুক্তির মাধ্যমে তাঁরা কী বার্তা দিতে চান, তা বোঝাতে হবে বলে মনে হয় না। অথচ তাঁরা ধার্মিক, নিষ্ঠায় একাগ্র।
অন্যদিকে পাকিস্তানের যুবক-যুবতীদের আমার মনে হয়েছে তাঁরা আধুনিক এবং দেশের বাইরে তাঁরা কলহমুক্ত জীবন পছন্দ করেন।বলতে দ্বিধা নেই, তাঁদের আচরণ ও ব্যবহার বাংলাদেশিদের চেয়ে খারাপ কিছু নয়। যেটা খেয়াল করি তাঁরা ভারতীয়, বিশেষ করে পাকিস্তান লড়াই বা বৈরিতার বাইরে। তাঁদের বন্ধুরা অধিকাংশই ভারতীয়। ভারতীয়দের ভেতর নর্থ ইন্ডিয়ান নামে পরিচিতদের সঙ্গে তাঁদের সখ্য চোখে পড়ার মতো। সম্ভবত খাবার, ভাষা, আচরণ ও বিনোদনগতভাবে তাঁরা এক বলেই হয়তো এমনটা হয়।
এই যে কথাগুলো বললাম এই কারণে যে, ধর্ম বা জাতিগত সংঘাত সব সময় বৈরিতা তৈরি না-ও করতে পারে। অথচ এই সব উসকানি আর হানাহানিতেই যুদ্ধে জড়িয়ে যায় দুটি দেশ। ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের সংঘাত অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। অথচ একাত্তরে শাহের ইরান ছিল পাকিস্তানের প্রতি অন্ধ। তাদের সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ। মাত্র ৫০ বছর পর এখন তারা যুদ্ধের মুখোমুখি।
এই ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে রাষ্ট্রের স্বার্থ রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকার সঙ্গে বিশ্বাস বা আদর্শ সব সময় একসঙ্গে না-ও চলতে পারে।পাকিস্তান এখন অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর। দেশটির জিডিপি রিজার্ভ বা অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে তাকালে এটা ভাবতেও কষ্ট হয় যে তারা আবার একটি যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে পারে। অথচ তাই হতে চলেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে: ইরান মনে করে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান থেকে জঙ্গিরা এসে ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে হামলা করছে। অন্যদিকে পাকিস্তানও মনে করে, বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন জোগাচ্ছে ইরানের গোয়েন্দারা। পাকিস্তান অংশে বালুচরা আলাদা একটি দেশ গঠন করতে চায়। গত বছর ইরানের ভেতরে বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা হয়েছে। ডিসেম্বরে সর্বশেষ হামলায় ইরানের একটি পুলিশ স্টেশনে অতর্কিত আক্রমণে ইরানের ১১ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন।
দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে শিয়া-সুন্নি বিরোধ। পাকিস্তানে বিভিন্ন সময় শিয়াদের লক্ষ্য করে নানা ধরনের হামলা হয়। এ বিষয়টি ইরানের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ তৈরি করেছে বহুদিন ধরে। পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে মসজিদে যখন কোনো বোমা হামলা হয়, তখন সেটি শিয়াদের বিরুদ্ধে হয়।
দেখা যাচ্ছে যুদ্ধ বাহ্যিক হলেও মূলত দুই দেশের সমস্যার জের চলছে অনেক বছর ধরে। এখন আমাদের চিন্তার বিষয়—এর ফলাফল কী হতে পারে? আমরা যারা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের চিন্তার বিষয় দেশ। দেশে সম্প্রতি একটি নির্বাচন হয়ে গেছে। সেই নির্বাচন নিয়ে যেমন স্বস্তি আছে, তেমনি কাজ করছে নানা অস্বস্তি। আমেরিকা, ইউরোপসহ পৃথিবীর বহু দেশ এই ভোটকে সঠিক বলে মনে করছে না। ভোটের হার নিয়ে উদ্বেগ আছে দেশের ভেতর; স্বয়ং নির্বাচন কমিশনারও দ্বিধায় আছেন। তাঁর বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু পরিষ্কার।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে এই সংশয় প্রভাব ফেলবে আর্থিক বাস্তবতার ওপর। মানতেই হবে আমেরিকা এখনো বড় খেলোয়াড়। যদিও জাপান, ভারতের মতো দেশ নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানানোয় তারা দমে গেছে। দমে যে গেছে তার বড় প্রমাণ এবার প্রথমবারের মতো সব রাজনৈতিক দলকে সহিংসামুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এই সহিংসতা কারা করে বা কারা এর পেছনে তা সবার জানা। কিন্তু দেশের একচোখা প্রতিষ্ঠানগুলো সেদিকে তাকায় না। এবারই প্রথম তাদের মুরব্বি আমেরিকা কোনো মন্তব্য করল। ফলে নির্বাচনোত্তর পরিবেশ শান্ত মনে হলেও ভেতরে-ভেতরে একটা অস্বস্তি চলমান।
যে কথা বলছিলাম—পাকিস্তান ও ইরানের যুদ্ধংদেহী মনোভাবে উপমহাদেশের রাজনীতি আবারও অশান্ত হয়ে উঠবে। এটাই বাস্তবতা। ঘরের ভেতর ঝামেলা থাকলে আমরা আন্তর্জাতিক বিষয়ে কোনো শক্ত অবস্থান নিতে পারব না। নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ কৌশলী মানুষ। এখন তাঁর কাজ হবে এসব যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখা। তিনি তা পারবেন এই বিশ্বাস রেখেই বলি—কাজটা কঠিন। ইরান ও পাকিস্তান দুই দেশই আন্তর্জাতিক ইমেজে নেগেটিভ অবস্থানে। কারও ভাবমূর্তিই গণতান্ত্রিক নয়। তারা এই যুদ্ধ শিগগিরই থামাবে বলে মনে হয় না। যত দীর্ঘ হবে, যত প্রলম্বিত হবে, এই লড়াইয়ের পরিবেশ ততই হয়ে উঠবে আগুনের মতো।
শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য উন্মুখ এই পৃথিবীর যেন কপালই খারাপ। তার মাথায় এমন যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া দুঃখজনক। পাকিস্তান যে পাল্টা আক্রমণ করেছে, এর পেছনে আন্তর্জাতিক উসকানি নেই, এ কথা বলা যাবে না। অন্যদিকে ইরানের আক্রমণও ছিল ভয়াবহ। দুই দেশের একটিও কোনো ডায়ালগ বা কথাবার্তায় বিশ্বাস রাখেনি।
এটাই সমস্যা। যেসব দেশ পারস্পরিক আলাপ কিংবা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাদের কাজ হচ্ছে লড়াই করা। তারা কথা শুনবে কেন? তারা না মানে জনগণের ইচ্ছা, না শোনে তাদের মনের কথা। দেশের বাস্তবতা আর আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মানুষের কথা শোনার বিকল্প নেই। যেকোনো যুদ্ধের বিপরীতে বাংলাদেশের যে অবস্থান, সেটা চলমান রাখাও জরুরি।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
ইরানে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার জেরে এবার কড়া পদক্ষেপ নিল তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছে। ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের এক সীমান্ত গ্রামে ওই দিনই সকালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এই হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়। এর আগে মঙ্গলবার পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছিল ইরান। ওই হামলার জবাবেই ইরানে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। এর প্রতিবাদ জানাতে এবং এই হামলার ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হলো পাকিস্তানের দূতকে।
আর পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের সীমান্তবর্তী পাঞ্জগুর শহরে গত মঙ্গলবার ইরানের হামলার জেরে ইসলামাবাদ ইরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের পাশাপাশি ইরানি দূতের পাকিস্তানে ফেরাও নিষিদ্ধ করেছিল। পাকিস্তান এবং ইরান দীর্ঘদিন থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে জঙ্গি গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। এই গোষ্ঠীগুলো সীমান্ত এলাকা থেকে হামলা চালায়।ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। পাকিস্তানের দিকে আছে বেলুচিস্তান প্রদেশ। অপর পাশে আছে ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশ। পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা হয়েছে সেখানকার সীমান্তের উভয় পাশে।
করোনার ভয়াবহতার পরও যুদ্ধ থামেনি; বরং রাশিয়া-ইউক্রেনের প্রলম্বিত যুদ্ধের পর যুক্ত হয়েছে ইসরায়েলের আগ্রাসন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ শেষ হয়নি এখনো। এর ভেতরেই পেলাম আরেকটি দুঃসংবাদ। দুটি মুসলিমপ্রধান দেশ যাদের ভেতরকার স্নায়ুযুদ্ধ এত দিন গোপন থাকলেও এখন তা রূপ নিয়েছে সামরিক যুদ্ধে। বলা বাহুল্য দেশ দুটির একটিরও আর্থসামাজিক অবস্থা ভালো নয়। ইরানের প্রচুর মানুষ থাকেন সিডনিতে। আমার কর্মক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ আসে ইরান থেকে।
মেয়েগুলো দারুণ সুন্দর আর গোলাপের মতো দেখতে। তাঁদের নিষ্পাপ মুখগুলো দেখলেই বোঝা যায় তাঁরা বড় হতে চান। গণতান্ত্রিক দেশ, মুক্ত সমাজে তাঁদের আচরণও চমৎকার। বেশির ভাগ মেয়ের ইরানি পাসপোর্টে হিজাব বা বোরকা পরা ছবি থাকলেও এ দেশে এসে অনেকেই পরেন না। অবমুক্তির মাধ্যমে তাঁরা কী বার্তা দিতে চান, তা বোঝাতে হবে বলে মনে হয় না। অথচ তাঁরা ধার্মিক, নিষ্ঠায় একাগ্র।
অন্যদিকে পাকিস্তানের যুবক-যুবতীদের আমার মনে হয়েছে তাঁরা আধুনিক এবং দেশের বাইরে তাঁরা কলহমুক্ত জীবন পছন্দ করেন।বলতে দ্বিধা নেই, তাঁদের আচরণ ও ব্যবহার বাংলাদেশিদের চেয়ে খারাপ কিছু নয়। যেটা খেয়াল করি তাঁরা ভারতীয়, বিশেষ করে পাকিস্তান লড়াই বা বৈরিতার বাইরে। তাঁদের বন্ধুরা অধিকাংশই ভারতীয়। ভারতীয়দের ভেতর নর্থ ইন্ডিয়ান নামে পরিচিতদের সঙ্গে তাঁদের সখ্য চোখে পড়ার মতো। সম্ভবত খাবার, ভাষা, আচরণ ও বিনোদনগতভাবে তাঁরা এক বলেই হয়তো এমনটা হয়।
এই যে কথাগুলো বললাম এই কারণে যে, ধর্ম বা জাতিগত সংঘাত সব সময় বৈরিতা তৈরি না-ও করতে পারে। অথচ এই সব উসকানি আর হানাহানিতেই যুদ্ধে জড়িয়ে যায় দুটি দেশ। ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের সংঘাত অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। অথচ একাত্তরে শাহের ইরান ছিল পাকিস্তানের প্রতি অন্ধ। তাদের সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ। মাত্র ৫০ বছর পর এখন তারা যুদ্ধের মুখোমুখি।
এই ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে রাষ্ট্রের স্বার্থ রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকার সঙ্গে বিশ্বাস বা আদর্শ সব সময় একসঙ্গে না-ও চলতে পারে।পাকিস্তান এখন অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর। দেশটির জিডিপি রিজার্ভ বা অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে তাকালে এটা ভাবতেও কষ্ট হয় যে তারা আবার একটি যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে পারে। অথচ তাই হতে চলেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে: ইরান মনে করে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান থেকে জঙ্গিরা এসে ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে হামলা করছে। অন্যদিকে পাকিস্তানও মনে করে, বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন জোগাচ্ছে ইরানের গোয়েন্দারা। পাকিস্তান অংশে বালুচরা আলাদা একটি দেশ গঠন করতে চায়। গত বছর ইরানের ভেতরে বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা হয়েছে। ডিসেম্বরে সর্বশেষ হামলায় ইরানের একটি পুলিশ স্টেশনে অতর্কিত আক্রমণে ইরানের ১১ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন।
দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে শিয়া-সুন্নি বিরোধ। পাকিস্তানে বিভিন্ন সময় শিয়াদের লক্ষ্য করে নানা ধরনের হামলা হয়। এ বিষয়টি ইরানের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ তৈরি করেছে বহুদিন ধরে। পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে মসজিদে যখন কোনো বোমা হামলা হয়, তখন সেটি শিয়াদের বিরুদ্ধে হয়।
দেখা যাচ্ছে যুদ্ধ বাহ্যিক হলেও মূলত দুই দেশের সমস্যার জের চলছে অনেক বছর ধরে। এখন আমাদের চিন্তার বিষয়—এর ফলাফল কী হতে পারে? আমরা যারা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের চিন্তার বিষয় দেশ। দেশে সম্প্রতি একটি নির্বাচন হয়ে গেছে। সেই নির্বাচন নিয়ে যেমন স্বস্তি আছে, তেমনি কাজ করছে নানা অস্বস্তি। আমেরিকা, ইউরোপসহ পৃথিবীর বহু দেশ এই ভোটকে সঠিক বলে মনে করছে না। ভোটের হার নিয়ে উদ্বেগ আছে দেশের ভেতর; স্বয়ং নির্বাচন কমিশনারও দ্বিধায় আছেন। তাঁর বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু পরিষ্কার।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে এই সংশয় প্রভাব ফেলবে আর্থিক বাস্তবতার ওপর। মানতেই হবে আমেরিকা এখনো বড় খেলোয়াড়। যদিও জাপান, ভারতের মতো দেশ নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানানোয় তারা দমে গেছে। দমে যে গেছে তার বড় প্রমাণ এবার প্রথমবারের মতো সব রাজনৈতিক দলকে সহিংসামুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এই সহিংসতা কারা করে বা কারা এর পেছনে তা সবার জানা। কিন্তু দেশের একচোখা প্রতিষ্ঠানগুলো সেদিকে তাকায় না। এবারই প্রথম তাদের মুরব্বি আমেরিকা কোনো মন্তব্য করল। ফলে নির্বাচনোত্তর পরিবেশ শান্ত মনে হলেও ভেতরে-ভেতরে একটা অস্বস্তি চলমান।
যে কথা বলছিলাম—পাকিস্তান ও ইরানের যুদ্ধংদেহী মনোভাবে উপমহাদেশের রাজনীতি আবারও অশান্ত হয়ে উঠবে। এটাই বাস্তবতা। ঘরের ভেতর ঝামেলা থাকলে আমরা আন্তর্জাতিক বিষয়ে কোনো শক্ত অবস্থান নিতে পারব না। নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ কৌশলী মানুষ। এখন তাঁর কাজ হবে এসব যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখা। তিনি তা পারবেন এই বিশ্বাস রেখেই বলি—কাজটা কঠিন। ইরান ও পাকিস্তান দুই দেশই আন্তর্জাতিক ইমেজে নেগেটিভ অবস্থানে। কারও ভাবমূর্তিই গণতান্ত্রিক নয়। তারা এই যুদ্ধ শিগগিরই থামাবে বলে মনে হয় না। যত দীর্ঘ হবে, যত প্রলম্বিত হবে, এই লড়াইয়ের পরিবেশ ততই হয়ে উঠবে আগুনের মতো।
শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য উন্মুখ এই পৃথিবীর যেন কপালই খারাপ। তার মাথায় এমন যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া দুঃখজনক। পাকিস্তান যে পাল্টা আক্রমণ করেছে, এর পেছনে আন্তর্জাতিক উসকানি নেই, এ কথা বলা যাবে না। অন্যদিকে ইরানের আক্রমণও ছিল ভয়াবহ। দুই দেশের একটিও কোনো ডায়ালগ বা কথাবার্তায় বিশ্বাস রাখেনি।
এটাই সমস্যা। যেসব দেশ পারস্পরিক আলাপ কিংবা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাদের কাজ হচ্ছে লড়াই করা। তারা কথা শুনবে কেন? তারা না মানে জনগণের ইচ্ছা, না শোনে তাদের মনের কথা। দেশের বাস্তবতা আর আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মানুষের কথা শোনার বিকল্প নেই। যেকোনো যুদ্ধের বিপরীতে বাংলাদেশের যে অবস্থান, সেটা চলমান রাখাও জরুরি।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১৫ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে