Ajker Patrika

অভিযানের মধ্যেও পোনা নিধন

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২২, ১২: ১৯
অভিযানের মধ্যেও পোনা নিধন

খুলনার দাকোপে বিভিন্ন নদ-নদীতে গলদা চিংড়ির রেণু ধরার হিড়িক পড়েছে। নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে জেলে ও স্থানীয়রা এ পোনা আহরণ করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অভিযান চালানোর পরও থামছে না পোনা নিধন। কিন্তু চিংড়ির সঙ্গে দেশি প্রজাতির অন্য মাছের পোনাও বিলুপ্ত হচ্ছে।

এদিকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নাম ভাঙিয়ে আবার এসব জেলের কাছ থেকে প্রতি গোনে স্থানীয় একটি চক্র রীতিমতো চাঁদাও তুলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে কয়েক লাখ মিটার নেটজাল জব্দ করলেও থেমে নেই রেণু আহরণ।

সর্বশেষ জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের চতুর্থ দিন গত মঙ্গলবার মৎস্য বিভাগের অভিযানে ১০টি চায়না দুয়ারি জাল, ১টি বেহুন্দি ও দুটি অবৈধ নেটপাটা জাল জব্দ করা হয়েছে। দাকোপের বারুইখালি এলাকার বিভিন্ন খালে মৎস্য বিভাগ দিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালনা করে। পরে জব্দ করা মালামাল আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। এ ছাড়া বেহুন্দি জাল ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় উপজেলা দাকোপের কাজিবাছা, পশুর, চুনকুড়ি, ঢাকি, কালাবগি ও শিবসাসহ বিভিন্ন নদীতে গলদা চিংড়ির এ রেণু পোনা আহরণ চলছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে প্রকাশ্যে আহরণ করছেন এ পোনা। এতে একটি রেণু আহরণ করতে গিয়ে শতাধিক প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। আর প্রতিদিন এভাবে লাখ লাখ পোনা নিধন হওয়ায় দেশি প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে এখন।

স্থানীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞদের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রতিটি চিংড়ির রেণুর সঙ্গে অন্য প্রজাতির অন্তত ১২০টি পোনা নিধন হয়। তাদের মতে, নেটজাল টেনে তীরে উঠিয়ে বেছে বেছে চিংড়ির রেণু রেখে অন্য পোনা ফেলে দেয় তীরে; যা পরে কাকের খাবারে পরিণত হয়। বছরের পর বছর এ অবস্থা চলায় দেশি প্রজাতির অনেক মাছ এখন নেই বললেই চলে। আহরিত এসব রেণু পোনা আবার প্রকাশ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় উপজেলা সদর চালনা বাজারসহ বিভিন্ন আড়তে দেদার বেচাকেনাও হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালাবগি এলাকার একাধিক রেণু পোনা আহরণকারীর সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তাঁরা অনেকেই জানেন যে, নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে রেণু আহরণ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তারপরও তাঁদের অন্য কোনো আয় না থাকায় শিবসা নদীতে নেটজাল ধরে বা নদীর তীর দিয়ে টেনে যে রেণু পান, তা বিক্রি করে সংসার চালান। এসব পোনা প্রতি হাজার ১ হাজার ২০০ টাকা দরে স্থানীয় বিভিন্ন ফড়িয়ার কাছে বিক্রি করে থাকেন। তবে বর্তমানে পোনা পরিমাণে বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে দাম অনেক কমে গেছে বলে জানান তিনি। জাল জব্দ করা বন্ধ করতে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কথা বলে স্থানীয় একটি চক্র জেলেদের কাছ থেকে প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার গোনে নেটজালপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন। মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে এ ভয়ে প্রতিবাদও করতে পারেন না তাঁরা।

এ বিষয়ে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফর রহমান বলেন, গত এক মাসে দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন এরিয়া থেকে অভিযান চালিয়ে ৪ লাখ ৭১ হাজার মিটার নেটজাল জব্দ করা হয়েছে; যা পরে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। আর স্থানীয় যে চক্র প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম সুলতান জানান, নদীতে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে কোনো প্রকার মাছ ধরা যাবে না। তাই চিরুনি অভিযানে সম্প্রতি ৩৮টি মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ২ লাখ ৫০ হাজার মিটার নেটজাল, ৩৯টি বেহুন্দি ও ৮৭টি অন্যান্য অবৈধ জাল জব্দ করা হয়েছে; যা পরে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ মাছের পোনা জব্দের পর নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। আর প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তোলা চক্রের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য পেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া নেটজালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড় বলেন, নেটজাল সরকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই নদীতে নেটজাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ হচ্ছে না। এটি বন্ধ করতে পারলে মাছের প্রজনন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত