গরু ও খাসির মাংস খাওয়ার আগে যা জানা জরুরি

মো. ইকবাল হোসেন 
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ০৭: ৫৫

লিভার বা যকৃৎ আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহৎ অঙ্গ। এটি বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। লিভারের নানা ধরনের রোগের মধ্যে আমাদের দেশে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারই বেশি দেখা যায়। এর প্রধান কারণ স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব।

ফ্যাটি লিভারের মূলত কোনো চিকিৎসা নেই। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে এই রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। ওজন কমানো, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামই পারে এই রোগ থেকে মুক্ত রাখতে। লিভার বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে বলে একে সুস্থ রাখতে সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কী খাবেন, কীভাবে খাবেন, কতটুকু খাবেন—এগুলো জানা খুবই জরুরি।

বছর ঘুরে দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। ঈদ ঘিরে ফ্যাটি লিভারের রোগীদের চিন্তা কিছুটা বেশিই থাকে। ঈদের বাহারি খাবারের আয়োজনে কী খাবেন, সেটা যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না অনেকে। কারণ, ঈদ আয়োজনে যেসব খাবার থাকে, বেশির ভাগই ফ্যাটি লিভারের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর; বিশেষ করে গরু বা খাসির মাংসের খাবার।

সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাংস রেড মিট হিসেবে বিবেচিত। এটি অনেকের কাছে আতঙ্কের নাম। কেউ উচ্চ রক্তচাপের ভয়ে তো কেউ হার্ট অ্যাটাকের ভয়ে, আবার কেউ ফ্যাটি লিভারের ভয়ে এসব মাংস খেতে চান না। মায়োগ্লোবিন নামক প্রোটিন কিছুটা বেশি থাকে বলে মাংস লাল দেখায়। রেড মিটে একটু বেশি সম্পৃক্ত চর্বি থাকে, যা রক্তের খারাপ চর্বির পরিমাণ বাড়ায়। সেই সঙ্গে হৃদ্‌রোগ ও ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিও বাড়ায়।

তাই ঈদে গরু বা খাসির মাংস খেতে চাইলে কিছু নিয়ম মেনে খেতে হবে। ছোট তিন থেকে চার টুকরা মাংস খাওয়া যাবে প্রতি বেলায়। সাদা চর্বি লেগে থাকবে না এমন মাংস খেতে হবে এবং মাংসের ঝোল খাওয়া যাবে না। এ ছাড়া রান্নায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা যাবে না। তৈলাক্ত খাবার কিংবা ডুবো তেলে ভাজা খাবার, মিষ্টি, পায়েস—এগুলো খাওয়া যাবে না। ভাত বা রুটি পরিমাণে কিছুটা কম খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে। ঈদের দিনগুলোতে ব্যায়ামের পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে হবে। 

মাংস খাওয়ার আগে দেখে নিন

  • শুধু ঈদের দিন পরিমিত মাংস খান। এ ছাড়া নিয়ম মেনে মাসে একবার গরু বা খাসির মাংস খাওয়া যেতে পারে।
  • কম বয়সী গরু, খাসি বা মহিষের মাংস খাবেন। এতে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ কম থাকে।
  • সয়াবিন তেলে মাংস রান্না না করে অল্প পরিমাণে সরিষার তেল বা সানফ্লাওয়ার অয়েলে রান্না করুন।
  • মাংস কাটার সময় অতিরিক্ত সাদা চর্বি ফেলে দিন।
  • মাংসের ঝোল খাবেন না।
  • রেড মিটের সঙ্গে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন লেবু।
  • মাংস রান্নার সময় পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ কোনো সবজি যোগ করুন। যেমন টমেটো, আলুবোখারা ইত্যাদি।
  • রান্নার আগে মাংস ছোট টুকরা করে কেটে নিন।
  • অনেক দিন পরে রেড মিট খাচ্ছেন, এই ভেবে অতিরিক্ত খাবেন না।
  • অতিরিক্ত রেড মিট খেলে ইউরিক অ্যাসিড, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • রেড মিট নাম শুনেই ভয় পাবেন না। শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বয়স, ওজন, উচ্চতা এবং বিএমআই অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে রেড মিট খেতে পারেন। সারা দিনের প্রোটিনের চাহিদা অনুযায়ী মাংসসহ অন্যান্য প্রোটিন-জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাংসে ২২ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন থাকে। প্রয়োজনে একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের 
    পরামর্শ নিন।

মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা চট্টগ্রাম, ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত