রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক রাখতে

ড. নাজমা শাহীন
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২১, ০৮: ০০

পরিমিত পরিমাণ খাবার খেতে হবে
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। একটি সুষম খাবার তালিকা তৈরি করুন। ভিটামিন, মিনারেল, কার্বোহাইড্রেট—সবকিছুর মধ্যে যেন একটা ভারসাম্য থাকে।

ভিটামিন ও প্রোটিনজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ও প্রোটিনজাতীয় খাবার রাখুন। কিন্তু তা যেন পরিমাণে বেশি না হয়, সেদিকে নজর রাখুন। অতিরিক্ত ভিটামিন ও প্রোটিন খেলেই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হুট করে বেড়ে যাবে না; বরং হিতে বিপরীত ঘটবে। হঠাৎ শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন ও মিনারেল বৃদ্ধির ফলে অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি
হতে পারে।

দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে
দুগ্ধজাত খাবারগুলো বিজ্ঞানের ভাষায় প্রোবায়োটিকস হিসেবে পরিচিত। যেমন দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি। মানুষের পাকস্থলীতে যে আবরণ আছে, তার ভেতর বেশ কিছু উপকারী জীবাণু কার্যকরী হয়। পাকস্থলীতে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমলে সেখানে ক্যানসার বাসা বাঁধতে পারে। দুগ্ধজাত খাবারগুলো পাকস্থলীতে উপকারী জীবাণুকে বাঁচিয়ে রাখে। ভিটামিন ডির জন্য দিনের কিছুটা সময় শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটা খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যার শরীরের গঠন ভালো এবং সেখানে কোনো ঘাটতি থাকবে না, তার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশি হবে। যেমন শিশুর জন্মের পর থেকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

নিয়মিত ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুননিয়মিত ডিম খেতে হবে
নিয়মিত ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সেদ্ধ, পোচ কিংবা ভাজা যেকোনোভাবেই ডিম খেতে পারেন। ডিম শরীরে শক্তি সঞ্চার করে এবং রোগের সঙ্গে লড়ার শক্তি জোগায়।

অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ফলে সেটি শরীরের ভেতরে ঢোকার পর ফ্যাট বা চর্বিতে রূপান্তর ঘটে। তাই একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৬০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা উচিত এবং এর সঙ্গে ৩০ শতাংশ প্রোটিন ও ৫ শতাংশ চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।

অতিরিক্ত চা-কফি গ্রহণ নয়
অতিমাত্রায় চা-কফি পান করা শরীরের জন্য ভালো নয়। চা-কফিতে এমন অনেক উপাদান থাকে, যার কোনোটি শরীরের জন্য ভালো ও কোনোটি খারাপ।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
অতিরিক্ত ওজন নানা রোগের উৎস। আমেরিকান একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অতিরিক্ত ওজনের ফলেই বেশির ভাগ কোভিড আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ আরও জটিল রোগের কারণ। তাই সব সময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করতে হবে
প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে হালকা ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। আমরা না জেনে অনেক সময় ভুল ব্যায়াম করি, অর্থাৎ আমাদের শরীর নিতে পারে না এমন অনেক ব্যায়াম করার ফলে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়। তাই আপনার শরীর নিতে পারে এমন ব্যায়াম করুন। নিজের সক্ষমতার চেয়ে অধিক ব্যায়াম করা উল্টো শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

শারীরিক পরিশ্রম করুন
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রমের সম্পর্ক আছে। একজন মানুষ যখন শারীরিক পরিশ্রম করে, তখন শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করে।
শরীরের মাংসপেশি এবং হৃদ্‌যন্ত্র অনেক কার্যকরী হয়। একই সঙ্গে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের দূরতম প্রান্ত পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছায়। তখন শরীরের কোষগুলোয় শক্তি উৎপাদন শুরু হয়। এমন ধরনের পরিশ্রম করতে হবে, যাতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে।

লেখক: অধ্যাপক, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত