বিশ্বে এক দশকেই ছত্রাক সংক্রমণে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০: ০১
Thumbnail image

প্রতিবছর ছত্রাক সংক্রমণে প্রায় ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়—প্রায় ১১ বছর আগেই এমন দাবি করেছিলেন গবেষকেরা। সম্প্রতি এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৩৮ লাখে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। অর্থাৎ বিশ্বে মোট মৃত্যুর ৬ দশমিক ৮ শতাংশের জন্যই দায়ী ছত্রাক সংক্রমণ।

বিশ্বের মোট মৃত্যুর ১৬ শতাংশ ঘটে করোনারি হৃদ্‌রোগের (ধমনি বন্ধ হয়ে যাওয়া) কারণে, আর স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু হয় ১১ শতাংশ। ধূমপানজনিত ফুসফুসের রোগে (সিওপিডি) ৬ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়, যা প্রায় ৩২ লাখ ২৮ হাজার। আর এই মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশই ঘটে ফুসফুসে ছত্রাক সংক্রমণের কারণে। 

বৈশ্বিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বে নিউমোনিয়ায় ২৬ লাখ (এর মধ্য়ে কিছু ছত্রাক সংক্রমণ) এবং যক্ষ্মায় ১২ লাখ ৮ হাজার (এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজারেরই মৃত্যু হয় অশনাক্ত ছত্রাক সংক্রমণের কারণে) মানুষের মৃত্যু হয়। 

এমনকি এইডসের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে যে ৬ লাখ মৃত্যু হয় এর ৫০ শতাংশই ঘটে ছত্রাক সংক্রমণের কারণে। 

ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেজ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ সব তথ্য প্রকাশ করা হয়। গবেষণাটি করেছেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের ম্যানচেস্টার ফাংগাল ইনফেকশন গ্রুপের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ডেভিড ডব্লিউ ডেনিং। 

তিনি ছত্রাক সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বের করার জন্য এ সংক্রান্ত রোগ নির্ণয় ও এর চিকিৎসা এবং অনির্ণীত রোগের অনুপাত পর্যবেক্ষণ করেছেন। গত ১০ থেকে ১৫ বছরে ছত্রাক সংক্রমণ নির্ণয়ে বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে এ শনাক্তকরণের বাস্তব ব্যবহার খুবই সীমিত এবং এ সীমাবদ্ধতা শুধু নিম্ন আয়ের দেশগুলোতেই নয়, উন্নত দেশেও আছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ছত্রাকজনিত (ক্রিপ্টোকক্কাল) মেনিনজাইটিস ও রক্তে ছত্রাক সংক্রমণ (ক্যান্ডিডা) জাতীয় রোগনির্ণয় ব্যবস্থা ঈর্ষণীয়। তবে সেখানে আরও একটি পরিচিত ছত্রাক আসপেরিগিলাসের সংক্রমণজনিত রোগ নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। সময়মতো শুধু আসপেরিগিলাস সংক্রমণ নির্ণয় করতে পারলেই প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। সাধারণত, সংক্রমণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এটি নির্ণয় করতে হয়। 

সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছত্রাক হলো আসপেরগিলাস ফুমিগ্যাটাস ও আসপেরগিলাস ফ্ল্যাভাস। এ দুই ধরনের ছত্রাক ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। সাধারণত হাঁপানি, যক্ষ্মা এবং ফুসফুস ক্যানসারের মতো ফুসফুস সম্পর্কিত রোগে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে এ ধরনের সংক্রমণ দেখা যায়। এ ছাড়া যাদের লিউকোমিয়া আছে, অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে এবং যারা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন তাদের মধ্যেও এ সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। 

এ মানুষগুলোর মৃত্যুর একটি কারণ হলো চিকিৎসক বুঝতে পারেন না যে তাঁদের ছত্রাক সংক্রমণ হয়েছে অথবা সংক্রমণ নির্ণয় করতে খুব দেরি করে ফেলেন। অনেক মৃত্যুর পেছনে ধীরগতির ছত্রাক সংক্রমণ নির্ণয় ব্যবস্থা এবং ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধের অভাবও দায়ী। ছত্রাক কালচারের ভিত্তিতে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে শুধু এক-তৃতীয়াংশ মানুষের ছত্রাক সংক্রমণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। 

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের পাশাপাশি মানুষের শরীরে ছত্রাকনাশক ওষুধের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। শস্যের ওপর নির্দিষ্ট কিছু ছত্রাকনাশক ছিটানোর কারণে বেশ কয়েকটি ছত্রাকনাশক ওষুধের বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত