Ajker Patrika

মিয়ানমার-থাইল্যান্ডে ভূমিকম্প

প্রাণহানি ৩ হাজার, যেন নরকবাস

  • মিয়ানমারে এখনো চার শ মানুষ নিখোঁজ, থাইল্যান্ডে ৭০ জন।
  • অনেক স্থানে সাহায্য পৌঁছায়নি, খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন।
  • উদ্ধারকাজ এখনো চলছে, সাহায্য পেতে ছুটে বেড়াচ্ছেন অনেকে।
  • হাসপাতালগুলোয় উপচে পড়া ভিড়, পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না আহতরা।

এএফপি, মান্দালয়
৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ভবনটি ধসে গিয়েছে। পাঁচ দিন পর সেখান থেকে বের করে আনা হচ্ছে মরদেহ। এতে কাজ করছেন চীন ও মিয়ানমারের উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: এএফপি
৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ভবনটি ধসে গিয়েছে। পাঁচ দিন পর সেখান থেকে বের করে আনা হচ্ছে মরদেহ। এতে কাজ করছেন চীন ও মিয়ানমারের উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: এএফপি

স্থান মিয়ানমারের মান্দালয়ের থাহতায় কিয়াং বৌদ্ধবিহার। সেখানকার ধ্বংসস্তূপে এখনো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুঁজছেন ভিক্ষুরা। তাঁদেরই একজন ওয়েয়ামা। বললেন, এখানকার কিছু ভবনের বয়স আমার বয়সের চেয়ে বেশি। এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন যে এগুলো ভেঙে গেছে।

ওয়েয়ামা যখন মান্দালয় শহরের বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন বৌদ্ধবিহারে উদ্ধার কাজ এগিয়ে নিচ্ছিলেন অন্য ভিক্ষুরা। মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়। গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে এই শহর প্রায় তছনছ হয়ে গেছে। ঠিক কতটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। মিয়ানমারের পাশাপাশি এই ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে থাইল্যান্ডে। সেখানেও বেশ কিছু ভবন ধসে গেছে। মিয়ানমারে মারা গেছে প্রায় ৩ হাজার মানুষ। আহত হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার মানুষ। এখনো নিখোঁজ প্রায় চার শ। আর থাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২২। ধারণা করা হচ্ছে, এখনো থাইল্যান্ডের ভবনগুলোর নিচে চাপা পড়ে আছে অন্তত ৭০ জন। এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে দেশটির জান্তা সরকার। এ ছাড়া দেশটিতে উদ্ধার কার্যক্রম বাড়াতে এবং আরও মানবিক সাহায্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল।

তবে ভূমিকম্পে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তা খুব সহজে সেরে উঠবে না বলে মনে করছেন মান্দালয়ের ভিক্ষু ওয়েয়ামা। তিনি বলেন, ‘এই শহরের অনেক ভবনই এবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ধসে পড়েছে, যেগুলোর বয়স ১০০ বছরের বেশি। আমি চাই সবাই ভালো থাকুক।’

মান্দালয়ের ওই বৌদ্ধবিহারের ভূমিকম্পের সময় ছিলেন নিও নিও সান। যখন ভূমিকম্প শুরু হয়, তখন তাঁর মনে হয়েছিল, এটা ছোটখাটো কম্পন। এমন অভিজ্ঞতা তাঁর আগেও ছিল। তিনি বলেন, ‘তবে একটা সময় গিয়ে ভূমিকম্প শক্তিশালী হয়। বৌদ্ধবিহার থেকে ইট খসে যেতে থাকে। আমার কাছে মনে হয়েছিল, আমি নরকে। আমি দৌড় দিই বেরিয়ে যেতে।’

সম্প্রতি ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে মান্দালয়। এই শহরে ১৭ লাখ মানুষের বসবাস। শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর সেখানে অনেক মানুষ এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। কবে তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবে, সেই নিশ্চয়তা এখনো নেই।

গত চার বছর গৃহযুদ্ধ ভুগছে মিয়ানমার। এরই মাঝে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার বড় ভূমিকম্পে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জীবন স্বাভাবিক হওয়া বেশ ‘দূর কি বাত’ বলে মনে করছেন অনেকে। নিও নিও সান জানান, তিনি নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

এই গ্রামে ফেরার যাত্রাও সানের জন্য সহজ হবে না। কারণ গ্রামে ফিরতে হলে তাঁকে সাগাইং অঞ্চল পার হতে হবে। আর এবারের ভূমিকম্পের আঁতুড়ঘর ছিল সাগাইং এলাকা। তিনি বলেন, ‘সাগাইংয়ে সেতু ভেঙে গেছে। এ ছাড়া ওই এলাকার রাস্তাঘাটগুলোও ধসে গেছে।’

মানবিক সংকট

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মিয়ানমারের সাহায্য এগিয়ে আসছে আরও সংস্থা। বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আপাতত অস্ত্র হাতে না তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে। এই যুদ্ধবিরতি ২২ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে তারা।

তবে মিয়ানমারে মানবিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, কিছু কিছু এলাকায় প্রতি তিনটি ভবনে একটি ভবন ধসে গেছে। ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেকের কাছে সাহায্য পৌঁছায়নি। অনেকে বলেছে, তারা যে সাহায্য পাচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। অনেকে খাবার ও পানি পেলেও রাতে থাকছে খোলা আকাশের নিচে। এদিকে ভূমিকম্পে অনেক হাসপাতাল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে আসছে চিকিৎসাসেবা নিতে। তবে পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না আহতরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত