Ajker Patrika

ফিলিপিনো শহরের মেয়র, কিন্তু কেউই জানে না এই নারীর পরিচয়

ফিলিপিনো শহরের মেয়র, কিন্তু কেউই জানে না এই নারীর পরিচয়

রাজধানী ম্যানিলা থেকে উত্তরে অবস্থিত ফিলিপাইনের ছিমছাম একটি শহর বামবান। এই শহরেরই মেয়র অ্যালিস গুও। অল্প বয়সে জন প্রতিনিধিত্ব অর্জন করে একজন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। দিঘল কালো চুলের ৩৫ বছর বয়সী গুও স্থানীয় ট্যাগালগ ভাষায় কোনো বিদেশি প্রভাব ছাড়াই অনর্গল কথা বলেন। জনসমাগমে তিনি সাধারণত গোলাপি রঙের পোশাক পরতে ভালোবাসেন। কিন্তু এই নারী কোথা থেকে এলেন, পারিবারিক পরিচয় কী—সেই বিষয়গুলো এখন কেউই জানে না! ফিলিপিনো সমাজের জন্য এটি একটি অস্বাভাবিক ঘটনা।

এ বিষয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহের কারণে বর্তমানে অ্যালিস গুও তদন্তের মুখে রয়েছেন। কেউ কেউ ধারণা করছেন, তিনি একজন চীনা এজেন্ট। ইতিপূর্বে একটি সিনেট শুনানিতে নিজের শৈশব এবং বেড়ে ওঠার পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সম্প্রতি ফিলিপাইনের অফশোর গেমিং পরিচালকদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সন্দেশে প্রথমবারের মতো তদন্তের মুখে পড়েছিলেন গুও। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে তাঁর জাতীয়তা ও পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিবিসির তথ্যমতে, গুও যে শহরের মেয়র সেই বামবানে গত মার্চে পোগো (POGO) নামে পরিচিত একটি অনলাইন ক্যাসিনোর আস্তানায় অভিযান চালিয়েছিল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। সেখান থেকে পরে ৭০০ কর্মীকে উদ্ধার করা হয়, যাদের মধ্যে দুই শতাধিক চীনা নাগরিকও ছিলেন। তাঁদেরকে জোর করে ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করাতে বাধ্য করা হয়েছিল। বেআইনি এই জুয়া খেলাটি ফিলিপাইনের বিভিন্ন অঞ্চলে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের আমলে বিকাশ লাভ করেছিল।

অ্যালিস গুও সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তাঁর পারিবারিক উপাধি ‘গুও’ চীনা বংশের সঙ্গে ফিলিপিনোদের সাধারণ পারিবারিক নামগুলোর মধ্যে নেই। গত ৪ মে সিনেট শুনানির সময়, তিনি তাঁর পটভূমি নিয়েও অস্পষ্ট উত্তর দিয়েছেন। বিশেষ করে পরিবার ও পড়াশোনা সম্পর্কিত তাঁর দেওয়া উত্তরগুলো কর্তৃপক্ষের সন্দেহকে আরও জোরালো করেছে।

অ্যালিস গুও দাবি করেছেন, ১৭ বছর বয়স হওয়ার পর তাঁর জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছিল। কারণ তিনি কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে জন্ম নেননি। ফলে জন্মের পরপরই জন্মনিবন্ধনও করা হয়নি।

তিনি আরও দাবি করেন, পারিবারিক আবহের মধ্যেই তিনি বাড়িতে পড়াশোনা করেছেন। তবে তিনি তাঁর হোম-স্কুল সংস্থার নাম, এমনকি শিক্ষকদের নামও বলতে পারেননি। তিনি বলেন—তাঁর বাবা ফিলিপিনো। কিন্তু ব্যবসায়িক নথিপত্রে তাঁর বাবা একজন চীনা নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত।

এ অবস্থায় ফিলিপিনো সিনেটর হন্টিভেরোস গুওকে এমন একজন হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি কোনো জায়গা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো মেয়র হয়ে গেছেন।

বিষয়টি নিয়ে ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রও কথা বলেছেন। গুওর বিরুদ্ধে তদন্তকে সমর্থন করে সাংবাদিকদের কাছে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি টারলাকের (যে প্রদেশে শহরটি অবস্থিত) সব রাজনীতিবিদকে চিনি। কেউই তাঁকে চেনে না। তাই আমরা ভাবছি—তিনি কোথা থেকে এসেছেন, তা জানতে সত্যিই তদন্ত প্রয়োজন।’

এখন পর্যন্ত ফিলিপাইনের নাগরিক হিসেবে নিজের দাবির পক্ষে অবস্থান ধরে রেখেছেন অ্যালিস গুও। পাশাপাশি বেআইনি জুয়া খেলায় জড়িত থাকার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেছেন। এ অবস্থায় যদি প্রমাণিত হয়, তিনি ফিলিপাইনের নাগরিক নন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত