ভারতের রাষ্ট্রহীন হিন্দুরা, অর্ধশতকেও মেলেনি নাগরিকত্ব

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ১৮
Thumbnail image

মাত্র ২০ বছর বয়সে মধ্য ভারতের দণ্ডকারণ্য বনে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলেন বিজয় দাস। ৫০ বছর আগের সেই সময়টিতে তিনি মূলত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশ থেকে আরও অসংখ্য হিন্দুর মতো ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখনো আতঙ্কে থরথর করে কেঁপে ওঠেন বিজয়। তবে তাঁর দুঃখের এখানেই শেষ নয়। সোমবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতে বসবাস করেও দেশটির নাগরিকত্ব পানি তিনি।

বিজয় দাসের বয়স এখন ৭২ বছর। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে তিনি তাঁর বোনের কথা স্মরণ করেন। বিজয় বলেন, ‘তারা তাঁকে টেনে নিয়ে গেল। তাঁকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছিল।’ বোনের কথা বলতে গিয়ে বিজয় দাসের গলা কেঁপে উঠছিল বারবার। দুলান নামের সেই বোনটির মরদেহ নদীতে ভাসতে দেখেছিলেন তিনি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই পড়ে আরও কয়েকজন হিন্দু শরণার্থীর সঙ্গে হেঁটে তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

ভারতের রায়পুরের কাছাকাছি মানা ট্রানজিট ক্যাম্পে ঠাঁই হয়েছিল বিজয়ের। মাওবাদীদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত সেই অঞ্চলটি ছিল ঘন অরণ্যবেষ্টিত। ভারতের মহারাষ্ট্রের গদচিরোলি জেলাসহ এই জঙ্গলের ৩০০টি শিবিরে ২ লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশি আশ্রয় নিয়েছিল। ঘন জঙ্গলে তাঁবুর মধ্যে মাসের পর মাস আশ্রয় নেওয়ার পর বিজয় দাস এখন মাওবাদী লাল করিডোরের অংশ এমন একটি গ্রামে বাস করছেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারতের জীবন মোটেও সহজ ছিল না বিজয় দাসের। বাংলাদেশি শরণার্থীরা জঙ্গলের মধ্যে বন্য প্রাণীদের হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল। আর ওই অঞ্চলের অনুর্বর জমিতে টিকে থাকার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল তাঁদের।

বিজয়ের সঙ্গী সুনীল বিশ্বাস ১৯৭০ সাল থেকেই ওই অঞ্চলটিতে বাস করছিলেন। তিনি বন পরিষ্কার এবং জমি চাষ করার জন্য তাঁদের প্রচেষ্টার কথাও স্মরণ করেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তাও ছিল অপর্যাপ্ত।

দীর্ঘ বছর ধরে বসবাস করলেও বাংলাদেশি শরণার্থীরা তাঁদের বাঙালি সংস্কৃতিকে এখনো ধরে রেখেছে। তবে তাঁরা এখনো রাষ্ট্রহীনই থেকে গেছেন। ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ১৯৬৪ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে যেসব হিন্দু জনগোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে গিয়েছিলেন, তাঁদের একটি ‘বর্ডার স্লিপ’ আছে। কিন্তু অনেকেরই এসব তথ্যপ্রমাণ হারিয়ে গেছে বা সংগ্রহে রাখতে পারেননি। বিজয় দাসসহ আরও অনেকই এমন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন তাঁদের সাহায্য করবে বলে আশা করা হয়েছিল। অনেক শরণার্থী তথ্যপ্রমাণ–সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আইনিভাবে লড়াইও করেছেন। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে মাত্র কয়েকটি আবেদন সফল হয়েছে। ফলে ৫০ বছর ধরেই একজন দেশহীন মানুষ হিসেবেই জীবন কাটছে বিজয়ের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত