Ajker Patrika

ট্রাম্পের হুমকির পরও কমবে না পানামা খালে মার্কিন জাহাজের ফি

আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯: ১৩
পানামা খালের গাটুন লেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মালবাহী জাহাজ পরিবহন কোম্পানি মেয়ার্স্কের একটি জাহাজ। ছবি: এএফপি
পানামা খালের গাটুন লেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মালবাহী জাহাজ পরিবহন কোম্পানি মেয়ার্স্কের একটি জাহাজ। ছবি: এএফপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, প্রয়োজন হলে তাঁর দেশ পানামার কাছ থেকে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেবে। কারণ, ট্রাম্পের দাবি, দেশটি ‘অযৌক্তিক’ হারে খালটি দিয়ে পার হওয়া মার্কিন জাহাজগুলোর ওপর ফি আরোপ করে থাকে। অথচ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পানামা খাল তৈরি করে দিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালিত জাহাজগুলোর জন্য পানামা খাল পারাপারে বিনা মূল্যে চলাচলের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনার কথা অস্বীকার করেছে পানামা। এর আগে হোয়াইট হাউস দাবি করেছিল, পানামা এমন একটি পদক্ষেপে সম্মত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের সরকারি জাহাজগুলো এখন বিনা মূল্যে পানামা খাল অতিক্রম করতে পারবে। এর ফলে, প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের লাখ লাখ ডলার সাশ্রয় হবে। তবে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা খালের টোল ও অন্যান্য ফি নির্ধারণের ক্ষমতা রাখে এবং এ সংক্রান্ত কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ পানামা খাল মধ্য আমেরিকার দেশটির ভেতর দিয়ে চলে গেছে এবং এটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে প্রধান সংযোগস্থল।

এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চলতি সপ্তাহে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো সফরে করছেন। তিনি পানামাকে খালের ওপর চীনের ‘প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ’ পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, পানামা যদি ব্যবস্থা না নেয় তবে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে নিজেদের অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

পানামা সফরকালে রুবিও দেশটির প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো ও খাল প্রশাসক রিকাওর্তে ভাসকেজ মোরালেসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বিষয়ে খাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করে জাহাজ চলাচলের অগ্রাধিকার ব্যবস্থার উন্নয়নে আগ্রহী। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত থাকবে বলেও তারা এক পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

পানামা খাল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চলাচল করে। খাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে খাল দিয়ে পারাপার হওয়া জাহাজগুলোর ৫২ শতাংশের গন্তব্য বা উৎস ছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার জাহাজ এই জলপথ ব্যবহার করে।

এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প বলেন, তিনি খাল পুনর্দখল করতে চান। তাঁর দাবি, চীন এই খাল পরিচালনায় প্রভাব বিস্তার করেছে এবং পানামা নিরপেক্ষ থাকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট মুলিনো ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, পানামা খাল তাঁর দেশের সম্পত্তি এবং তা তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।

মুলিনো চীনের প্রভাব সম্পর্কিত ট্রাম্পের অভিযোগও নাকচ করে বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনে বিশ্বের কোনো দেশ হস্তক্ষেপ করছে না।’

যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতকের গোড়ার দিকে খালটি নির্মাণ করলেও দীর্ঘদিনের প্রতিবাদের পর প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ১৯৭৭ সালে পানামার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যার মাধ্যমে ধাপে ধাপে খালের নিয়ন্ত্রণ দেশটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। ট্রাম্প একে ‘বড় ভুল’ বলে মন্তব্য করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত