Ajker Patrika

স্থাপত্যকলায় পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার

সাজদিক আহমেদ
স্থাপত্যকলায় পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার

স্থাপত্য একই সঙ্গে কলা এবং বিজ্ঞানের সম্মিলিত রূপ। স্থাপত্য বিষয়টি অধিকাংশই প্রযুক্তি, নকশা ও নির্মাণের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও এটি একটি সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। স্থাপত্যকলা নিয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনা।

স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে হবে এবং উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ এবং মোট জিপিএ কমপক্ষে ৮ থাকতে হয়। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষায় ও মেধাতালিকায় স্থান থাকা সাপেক্ষে স্থাপত্যে পড়ার সুযোগ পান। সাধারণত এ বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের সঙ্গে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিষয়েও ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ থাকতে হয়। 

ভর্তি পরীক্ষা
স্থাপত্য অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা দুই ধাপে হয়। প্রথম ধাপে উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিষয়গুলো যেমন—গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও ইংরেজির ওপর প্রশ্ন থাকে। দ্বিতীয় ধাপে ড্রয়িংবিষয়ক প্রশ্ন ও মুক্তহস্তে অঙ্কন করতে হয়। একজন পরীক্ষার্থীকে মেধাতালিকায় অবস্থানের জন্য অবশ্যই প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে পাস নম্বর তুলতে হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভর্তি পরীক্ষার ধরনে কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে।

কোথায় কোথায় ভর্তি হওয়া যায়
বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যে পাঁচ বছরমেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু আছে। বর্তমানে ১১টি সরকারি ও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট থেকেও স্থাপত্যে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। 

কী কী বিষয়ে পড়ানো হয়
একজন স্থপতিকে তাঁর কাজে একই সঙ্গে তাঁর চিন্তা, নান্দনিকতা ও সৃষ্টিশীলতার প্রমাণ দিতে হয়। তাঁকে ইতিহাস, পরিবেশ, সমাজবিজ্ঞান, স্থাপত্য প্রযুক্তি, বাস্তুকলার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদার বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা থাকতে হয়। যার জন্য প্রয়োজন নন্দনতত্ত্ব, মনোবিদ্যা ও দর্শনের বিশদ জ্ঞান। এগুলোর সঙ্গে একজন স্থপতির যেটি আবশ্যিকভাবে জানতে হয় তা হলো, তাঁর চিন্তাকে বাস্তবে রূপান্তর করার প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জন। এই দক্ষতা অর্জন ও প্রায়োগিক বিজ্ঞান সম্পর্কে জানার জন্য একজন স্থাপত্যের শিক্ষার্থীকে ভবন নকশা ও অবকাঠামো, নির্মাণ প্রযুক্তি, স্থাপত্যকরণ ও নগরনীতি, বাস্তু সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সংরক্ষণ, হাউজিং, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, ফটোগ্রাফি এমনকি সংগীত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন হয়। 

কর্মসংস্থান বা চাকরির সুযোগ কেমন
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপত্যকে পেশা হিসেবে নেওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের স্থাপত্য অধিদপ্তর, রাজউক, সিডিএ, আরডিএ, বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে কাজের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষকতার জন্য স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভালো ফলাফল ও গবেষণায় অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি নগর-পরিকল্পনাবিদ, ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করার সুযোগ থাকে। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন আর্কিটেকচারাল কনসালট্যান্সি ও কনস্ট্রাকশন ফার্ম, বিভিন্ন কোম্পানির ইনহাউজ আর্কিটেক্ট, বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান এবং রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

সাজদিক আহমেদস্থাপত্যকলায় পড়ুয়াদের প্রয়োজনীয়তা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একজন স্থপতি এবং স্থাপত্যবিদ্যার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। একজন স্থপতি অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে শুধু ভবন ও এর পারিপার্শ্বিক গঠনকাঠামোর মধ্যকার সমন্বয়ই ঘটান না; বরং তিনি পরিবেশগত দিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা পরিবর্তন থেকে রক্ষা পাওয়ার বাস্তবমুখী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাসহ অনেক মৌলিক বিষয়ে কাজ করেন। দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন, বাস্তবমুখী পরিবেশচর্চা ও অর্থনৈতিক কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলনের জন্য স্থপতি এবং স্থাপত্যবিদ্যার ভূমিকা অপরিহার্য। 

পড়াশোনার খরচ
স্থাপত্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ব্যয়বহুল। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছরে প্রায় ৬০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে বেসরকারিগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ১০-১৫ গুণ বেশি খরচ হয়। সরকারিগুলোর মধ্যে এমআইএসটিতে খরচ তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। 

উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন
এটি একটি পেশাগত ডিগ্রি এবং উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হওয়ায় বর্তমানে এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষার চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশে স্থাপত্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। তবে এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী মেধাবীদের সহায়তা করার জন্য পৃথিবীর সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে কিছু স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রফেসরদের গবেষণা ফান্ড থেকেও অনেক সময় বিভিন্ন দায়িত্ব সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ বহন করা হয়। 

লেখক: সাজদিক আহমেদে সহকারী অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত