ক্যারিয়ার সহায়তায় লিংকড-ইনের ব্যবহার

আনিসুল ইসলাম নাঈম
Thumbnail image

লিংকড-ইন হলো পেশাজীবীদের জন্য জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর মাধ্যমে আমরা পেশাগত প্রোফাইল তৈরি করতে পারি এবং অন্য পেশাজীবীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বাড়াতে পারি। আজ আমি ক্যারিয়ার সহায়তায় লিংকড-ইনের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব।

প্রোফাইল সাজানোর উপায়
লিংকড-ইনে প্রোফাইল তৈরি (সাইন আপ) করার পরে প্রথমেই একটি পেশাগত ছবি সংযুক্ত করতে হবে। যেখানে আপনার পেশাগত ভালো লুকটা দেখা যাবে। এরপর তারা প্রোফাইলের হেডলাইন সংযুক্ত করতে বলবে। যেখানে আপনার পেশাগত কিওয়ার্ডগুলো দিতে পারেন; যা পেশার জন্য সবচেয়ে বেশি সার্চ করা হয়, এটা আপনার দক্ষতাকে প্রকাশ করবে। এরপর ২ হাজার ৬০০ শব্দের মধ্যে একটি সামারি লিখতে হবে। এখানে যে কেউ তাঁর অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এসবের বিস্তারিত লিখতে পারেন। আরও যুক্ত করতে পারেন তাঁর অর্জন এবং তিনি কী করতে চান। প্রোফাইল তৈরি করতে গেলে এই অংশটিতে সতর্ক হতে হবে। যে ধরনের কাজ করতে চান, সেই ধরনের বিজ্ঞপ্তি থেকে কিওয়ার্ডগুলো বাছাই করে নিশ্চিত করতে হবে, কিওয়ার্ডগুলো যেন এই বর্ণনার মধ্যে থাকে। কেননা এখানকার কিওয়ার্ডগুলো জব সার্চ ইঞ্জিনের রিক্রুটাররা খুব সহজে দেখতে পান। প্রোফাইলে মিলে গেলে তারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করবে। পরবর্তী ধাপে আপনাকে চাকরির অভিজ্ঞতা যুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির নাম, লোকেশন এবং আপনার যে অভিজ্ঞতা, সংক্ষিপ্ত আকারে যোগ করবেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সংযুক্ত করতে হবে।

যেসব বিষয় যুক্ত রাখবেন
লিংকড-ইনে লাইসেন্স ও সার্টিফিকেশন, ভলান্টিয়ারিং এবং অন্যান্য স্কিল সংযুক্ত করতে পারেন। অন্যান্য বন্ধুর মাধ্যমে লিংকড-ইনে স্কিলগুলো সত্যায়িত করে নিতে পারেন। পরিচিত সহকর্মীকে প্রশংসাপত্র দিতে পারেন, যা তাঁর প্রোফাইলের মধ্যে সংযুক্ত থাকবে। একইভাবে আপনার সহকর্মীর বা অধ্যাপকের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র নিতে পারেন। প্রশংসাপত্রটি উন্মুক্ত, যে কেউ প্রোফাইলে ভিজিট করলে দেখতে পাবেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স সংযুক্ত করা যায়। যদি কোনো পুরস্কার থাকে তা সংযুক্ত করে, উন্মুক্ত করে নিজেকে আরও বেশি যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে দেখানো যায়। আগ্রহের জায়গায় আপনি পছন্দের ব্যক্তিদের ফলো করতে পারেন; যা থেকে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। 

মো. রমীম তানভীর রহমানলিংকড-ইন চাকরির ক্ষেত্রে কীভাবে সাহায্য করবে?
লিংকড-ইনে একটি পরিপূর্ণ প্রোফাইল থাকলে রিক্রুটাররা (দেশি/বিদেশি) সহজে আমাদের খুঁজে পাবেন। পাশাপাশি আমরা অনেক চাকরির বিজ্ঞপ্তি খুব সহজে খুঁজে পেতে পারি। লিংকড-ইনে সবাই সবার এডুকেশন, স্কিল, এক্সপার্টিজ, এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করে প্রোফাইল তৈরি করেন। এতে করে রিক্রুটাররা জব রেসপন্সিবিলিটি অনুযায়ী খুব সহজে সঠিক ব্যক্তিকে বাছাই করতে পারেন এবং লিংকড-ইনে বিজনেস ডেভেলপমেন্টের জন্য নিজের ব্যবসার নামেও পেজ খোলা যায়। ফ্রিতে আপনার কোম্পানির জন্য জব পোস্ট করতে পারবেন। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিদেশি প্রফেসররা বা সংস্থা লিংকড-ইন প্রোফাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কলারশিপ তথ্য দিয়ে থাকে। নেটওয়ার্কিং সুবিধা ছাড়াও লিংকড-ইনে বিভিন্ন প্রফেশনাল গ্রুপে সংযুক্ত হওয়া যায়। এ ছাড়া পেমেন্টে প্রিমিয়ার মেম্বার হলে লার্নিং সেন্টার থেকে সেলফ ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন কোর্সও করা যায়। 

কীভাবে মেসেজ পাঠানো হয়?
ফেসবুকের মতো এখানেও অন্যদের মেসেজ করা যায়। সে ক্ষেত্রে মেসেজ করা ব্যক্তির সঙ্গে ফার্স্ট ডিগ্রি কানেকশন থাকতে হবে। ফার্স্ট ডিগ্রি কানেকশন তৈরি করার জন্য প্রথমে ওই ব্যক্তিকে কানেক্ট রিকোয়েস্ট পাঠাতে হবে। লিংকড-ইনে প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট করা থাকলে মোটামুটি সবাইকে মেসেজ করা যায়। যেহেতু এটি একটি প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক, কাউকে মেসেজ করার আগে অবশ্যই লক্ষ করবেন এতে গ্র্যামাটিক্যাল ইরর যেন না থাকে।

চাকরির সিভির ক্ষেত্রে কীভাবে সাহায্য করে?
লিংকড-ইন প্রোফাইলটি যদি গোছানো ও সুন্দরভাবে তৈরি থাকে, তাহলে লিংকড-ইন ওয়েবসাইট থেকে সহজেই এক ক্লিকে একটি সিভি তৈরি করতে পারবেন। পাশাপাশি সিভিটি সব সময় বিভিন্ন চাকরির জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।

কাদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করব? 
লিংকড-ইনে প্রোফাইল তৈরির পর আপনার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতদের কানেকশন রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারেন। পাশাপাশি লিংকড-ইনে বিভিন্ন কোম্পানির প্রফেশনাল লোকদের সঙ্গে কানেকশন তৈরি করবেন। যেমন ভবিষ্যতে যাঁদের সঙ্গে আপনার কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া রিক্রুটার, ট্যালেন্ট ইকুইজিশন ম্যানেজার, এইচআর ডিপার্টমেন্টের প্রফেশনালদের সঙ্গে কানেকশন রাখতে হবে। কেননা তাঁরাই প্রতিনিয়ত জব পোস্টগুলো করে থাকেন। এরপর যোগ্য প্রার্থী খুঁজে কোম্পানির নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে দেন। 

লিংকড-ইনে সফল হওয়ার উপায়? 
কোম্পানির এইচআর থেকে ডিরেক্টর পর্যন্ত সবার সঙ্গে কানেকশন বাড়াতে হবে। ফেসবুক ও লিংকড-ইনের মধ্যে পার্থক্য বুঝে খুবই সুচিন্তিতভাবে পোস্ট করতে হবে। কেউ যদি কানেকশনে না থাকেন, তাহলে তাঁকে ফলো করবেন। ফলো করা ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিভিন্ন পোস্টে মন্তব্য করতে পারেন। নিজের প্রোফাইলে তাঁদের পোস্টকে রিপোস্ট করতে পারেন। লিংকড-ইনে নিজের এক্সপার্টিজ বিষয়ে পোস্টের পাশাপাশি আর্টিকেল লিখতে পারেন। এতে করে রিক্রুটাররা আপনি এবং আপনার ফিল্ড সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা পাবেন। 

মো. রমীম তানভীর রহমান, ডক্টরাল গবেষক, লাভাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুইবেক, কানাডা। 

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত