অনলাইন ডেস্ক
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের বিভিন্ন হোটেলে থাকা পশ্চিমা তরুণীরা আজকাল দিনের বেলা বাইরে ঘোরাফেরা করেন। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, রেস্টুরেন্ট ও শপিংমলে যান। অথচ বছর বিশেক আগেও দৃশ্যপট এমন ছিল না। পশ্চিমা তরুণীরা কোরিয়ায় এলে সারা দিন হোটেলেই থাকতেন। বের হতেন রাতে।
এই পরিবর্তনটি নজরে এনেছেন গবেষক মিন জু লির। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটনে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো। কোরিয়ার লিঙ্গ এবং জাতি রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করছেন। আন্তর্জাতিক পর্যটনের ওপর কোরিয়ার পপ (জনপ্রিয়) সংস্কৃতির প্রভাব নির্ধারণের চেষ্টা করছেন।
আটটি হোটেল পরিদর্শন এবং ১২৩ জন পশ্চিমা তরুণীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর লি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, নেটফ্লিক্সে দেখা কে–ড্রামার প্রভাবেই এসব তরুণী কোরিয়া ছুটে এসেছেন। কোরিয়ায় আসা এসব তরুণীর বেশির ভাগ উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের।
কে-পপ আর কে-ড্রামায় বুঁদ
মূলত ‘ক্র্যাশ ল্যান্ডিং অন ইউ’ এবং ‘গবলিন’-এর মতো জনপ্রিয় কোরিয়ান টিভি শোর তারকা হিউন বিন এবং গং ইউর মতো কল্পিত পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন পশ্চিমা নারীরা। এসব শোতে এমন এক জগতের আভাস দেওয়া হয় যেখানে পুরুষেরা রোমান্টিক এবং ধৈর্যশীল, যা পশ্চিমা যৌনতাপূর্ণ সম্পর্কের ঠিক উল্টো।
লি যেসব তরুণীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তাঁরা আবেগ-অনুভূতিসম্পন্ন সংবেদনশীল কোরীয় পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। টিভি শোতে দেখানো এই পুরুষেরা কোমল হৃদয়ের, অনেকটা নারীসুলভ।
এই পশ্চিমা তরুণীদের মতে, কোরিয়ান পুরুষেরা সংস্কৃতিবান এবং রোমান্টিক। তাঁদের অভিযোগ, নিজ দেশের পুরুষেরা প্রায়শই নারীদের অবহেলা করে এবং নিজের চিন্তায় নিমগ্ন থাকে।
যুক্তরাজ্যের ২৫ বছর বয়সী মালি গ্রেস থর্নটন নেটফ্লিক্সে কে-ড্রামা ‘ক্র্যাশ ল্যান্ডিং অন ইউ’ দেখে কোরীয় পুরুষদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। কল্পিত পুরুষকে সঙ্গী হিসেবে পেতে ২০২১ সালে সিউল ভ্রমণ করেন তিনি। কে-ড্রামার পুরুষেরা রাস্তায় নারীদের ঠাট্টা করে না বা উত্ত্যক্ত করে না, এটি তাঁকে বিস্মিত করেছিল। তাঁর দেশে এসব নাকি প্রতিনিয়তই ঘটে!
থর্নটনের দৃষ্টিতে, কোরিয়ান পুরুষেরা নম্র, ভদ্র, কমনীয়, রোমান্টিক, রূপকথার মতো, সাহসী ও শ্রদ্ধাশীল। কোরিয়ান পুরুষেরা রুচিসম্মত পোশাক পরে এবং মেয়েদের সাজগোজে সাহায্য করে।
গ্রেস থর্নটন বলেন, ‘বিপরীতে ইংরেজ পুরুষেরা অর্ধেক মাতাল, এক হাতে বিয়ার অন্য হাতে মাছ নিয়ে তারা ডেটিং অ্যাপে প্রোফাইল পিকচার দেয়।’
পশ্চিমের তরুণীদের কাছে কোরিয়ার পুরুষদের এমন এক নাটকীয় ভাবমূর্তিই তৈরি হয়েছে। কোরিয়ান টিভি সিরিয়ালের (কে-ড্রামা) প্রভাব এতটাই। এ কারণে দক্ষিণ কোরিয়ায় পশ্চিমা তরুণী পর্যটকের সংখ্যাও সমান তালে বাড়ছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০০৫ সালে ২৩ লাখ তরুণী দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণ করেছেন। আর ওই বছর কোরিয়া সফর করেছিলেন ২৯ লাখ পুরুষ। ২০১৯ সালে কোরিয়া ভ্রমণ প্রায় ১ কোটি তরুণী, যেখানে পুরুষের সংখ্যা ৬৭ লাখ।
একই সময়ে বিদেশি নারীদের সঙ্গে কোরিয়ান পুরুষদের প্রেমের সম্পর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
ইউটিউবে ২ হাজার ৫০০টি চ্যানেলে এবং ৩৪ হাজারটি ভিডিওতে ‘গুকজেকপল’ হ্যাশট্যাগ লেখা হয়েছে। এটি ইন্টারনেটে এক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। গুকজেকপল অর্থ, আমেরিকান বা ইউরোপীয় নারীর সঙ্গে কোরিয়ান পুরুষের প্রেম।
এসব ভিডিওতে যুগলেরা খুনসুটি করে, সাংস্কৃতিক পার্থক্য নিয়ে মজা করে এবং কখনো কখনো দৈনন্দিন জীবনের চিত্র তুলে ধরে।
এই ধারার প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম সিউলের ইউটিউবার হিও জিন–উ। তিনি শুরুতে একটি চ্যানেল চালাতেন, যেখানে দর্শকের কাছে নিজেকে প্রেমিক হিসেবে উপস্থাপন করতেন। এক ব্রিটিশ মেয়ের সঙ্গে প্রেম হওয়ার পর তিনি চ্যানেলটি বন্ধ করে দেন। এরপর দুজন মিলে ২০২০ সালে আরেকটি চ্যানেল খোলেন। সেখানে দুজনের অনেক মজার মজার ভিডিও প্রকাশ করেন। বর্তমানে চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ৫৫ লাখের বেশি।
টাকা বানানোর মেশিন
মিশ্র জাতির যুগলদের ভিডিও এখন ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়। বড় উপার্জনের উৎসে পরিণত হয়েছে এসব চ্যানেল।
ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনায় বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা হিজ গিউন। তিনি আন্তর্জাতিক (মিশ্র জাতি) দম্পতিদের নিয়ে নানা ভিডিও নির্মাণ করেন। তিনি বলেন, যেসব দম্পতির ১০ লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে তাঁরা প্রতিটি স্পনসর ভিডিও থেকে ২৩ হাজার থেকে ৩৮ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করেন।
গিউন এবং তাঁর অস্ট্রেলিয়ান স্ত্রী নিকোলা ‘মাই কোরিয়ান হাসবেন্ড’ নামে একটি ব্লগ চালান। আন্তসাংস্কৃতিক বিয়ে নিয়ে এই ব্লগে আলোচনা করা হয়। এই ধরনের সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।
নিকোলা বলেন, ১০ বছর আগে সিডনিতে হবু স্বামীর সঙ্গে প্রথম দেখা। কিন্তু তখনকার চেয়ে এখন কোরিয়ান পুরুষদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি অনেকখানি বদলে গেছে। সে সময় অনেকেই তাঁকে বলতেন, ‘তোমার স্বামী এশিয়ানদের জন্যই সুন্দর, তোমার জন্য নয়।’
তাঁদের বাগদানের পরে ‘কোরিয়ান হাসবেন্ড’ লিখে গুগল করলে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অভিবাসী নারীদের কোরিয়ান পুরুষকে বিয়ে করার নানা ভৌতিক গল্প আসত। কিন্তু এখন কোরিয়ান সেলিব্রিটিদের ছবি এবং কীভাবে একজন কোরিয়ান স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে সেসব তথ্য আসে। বোঝাই যায়, ইন্টারনেটে এই প্রবণতা কেমন জনপ্রিয়!
কোরিয়া এসে স্বপ্নভঙ্গ
বাস্তবতা কিন্তু হতাশাজনক। কে-ড্রামার স্বপ্নের পুরুষ কোরিয়াতে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কোরিয়ান তরুণেরাই বলেন, কে-পপ আর কে-ড্রামা যেমনটি দেখানো হয় বাস্তবে কোরিয়ার পুরুষেরা অত সুন্দর নয়, সামাজিকও নয়। নারীদের প্রতি তারা অত যত্নশীলও নয়।
কিছু বিদেশি নারী কোরিয়া আসার পর পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার পর সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তাঁরা পর্দায় চিত্রিত পুরুষ চরিত্রের মতো নিখুঁত কোনো কোরিয়ান পুরুষ পাননি। অনেকের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
মরক্কোর ২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মিনা বলেন, কে-পপ এবং কোরিয়ান টিভি শো দেখার পর ২০২১ সালে বুশানে আসেন তিনি। টিভিতে দেখানো কোরিয়ান পুরুষেরা আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন, নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী, সুদর্শন এবং ধনী হলেও বাস্তবে তেমনটি নয়। তাঁকে রাতের বেলা একটি বারে আটকে রাখা হয়েছিল এবং রাস্তায় অপরিচিতরা যৌনতার প্রস্তাব দিয়েছিল।
স্থানীয়দের তুলনায় বিদেশি নারীর সঙ্গে সহজেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যায়—কোরিয়ার অনেক পুরুষের এমন ধারণা। মিনা বলেন, ‘আমাদের সাময়িক ভোগ্যবস্তুই মনে করে পুরুষেরা, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সব পুরুষই এক!’
এরপর থেকে তিনি কোরিয়ান টিভি শোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। কোনো কোরিয়ান পুরুষের সঙ্গে জীবনে আর কখনো ডেট করতে চান না!
ওয়াশিংটনের ২৭ বছর বয়সী ইংরেজি শিক্ষিকা কুন্ড্রা মুর ২০১৭ সালে সিউলে এসেছিলেন। ডেটিং অ্যাপ এবং নাইটক্লাবগুলোতে সঙ্গীর সন্ধান করেছিলেন। কিন্তু তিনিও হতাশ। তিনি বর্ণবাদী মন্তব্য ও আচরণের শিকার হয়েছেন। অনেকেই তাঁকে আফ্রিকাতে ফিরে যেতে বলেছেন। অনেক পুরুষ কেবল যৌনতায় আগ্রহ দেখিয়েছেন।
মুরের অভিজ্ঞতায়, কোরিয়ান পুরুষেরা বিদেশি নারীদের সঙ্গে অন্যরকম আচরণ করেন। তিনি বলেন, ‘কেন আমরা প্রথমেই ডিনারে যেতে পারি না? এটা খুবই জঘন্য। কোরিয়ান নারীরা কিন্তু এমন আচরণ সহ্য করবে না।’
এ বিষয়ে গবেষক লি বলেন, কিছু পুরুষ মনে করেন, বিদেশি নারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা কোনো অপরাধ না। এটা স্বাভাবিক। কারণ, বিদেশি হিসেবে এই নারীদের এখানে সামাজিক বৃত্তটা সীমাবদ্ধ।
যেসব নারী হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা লিকে বলেন, আদর্শ পুরুষ খুঁজে না পাওয়াটা তাঁদের নিজেদেরই ব্যর্থতা। তবে তাঁরা আশা ছাড়ছেন না, স্বপ্নের পুরুষের সন্ধানে তাঁরা বারবার কোরিয়ায় ফিরতে চান।
লি বলেন, এই তরুণীরা স্পষ্টভাবে জানে যে, সব কোরিয়ান পুরুষ নিখুঁত নয়। কিন্তু নিজ দেশের হতাশাজনক ডেটিং পরিবেশের বিকল্প চান। তাঁরা আশা ছাড়তে পারেন না কারণ, তাঁরা বিশ্বাস করেন, আদর্শ পুরুষ পৃথিবীর কোথাও না কোথাও অবশ্যই আছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের বিভিন্ন হোটেলে থাকা পশ্চিমা তরুণীরা আজকাল দিনের বেলা বাইরে ঘোরাফেরা করেন। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, রেস্টুরেন্ট ও শপিংমলে যান। অথচ বছর বিশেক আগেও দৃশ্যপট এমন ছিল না। পশ্চিমা তরুণীরা কোরিয়ায় এলে সারা দিন হোটেলেই থাকতেন। বের হতেন রাতে।
এই পরিবর্তনটি নজরে এনেছেন গবেষক মিন জু লির। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটনে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো। কোরিয়ার লিঙ্গ এবং জাতি রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করছেন। আন্তর্জাতিক পর্যটনের ওপর কোরিয়ার পপ (জনপ্রিয়) সংস্কৃতির প্রভাব নির্ধারণের চেষ্টা করছেন।
আটটি হোটেল পরিদর্শন এবং ১২৩ জন পশ্চিমা তরুণীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর লি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, নেটফ্লিক্সে দেখা কে–ড্রামার প্রভাবেই এসব তরুণী কোরিয়া ছুটে এসেছেন। কোরিয়ায় আসা এসব তরুণীর বেশির ভাগ উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের।
কে-পপ আর কে-ড্রামায় বুঁদ
মূলত ‘ক্র্যাশ ল্যান্ডিং অন ইউ’ এবং ‘গবলিন’-এর মতো জনপ্রিয় কোরিয়ান টিভি শোর তারকা হিউন বিন এবং গং ইউর মতো কল্পিত পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন পশ্চিমা নারীরা। এসব শোতে এমন এক জগতের আভাস দেওয়া হয় যেখানে পুরুষেরা রোমান্টিক এবং ধৈর্যশীল, যা পশ্চিমা যৌনতাপূর্ণ সম্পর্কের ঠিক উল্টো।
লি যেসব তরুণীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তাঁরা আবেগ-অনুভূতিসম্পন্ন সংবেদনশীল কোরীয় পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। টিভি শোতে দেখানো এই পুরুষেরা কোমল হৃদয়ের, অনেকটা নারীসুলভ।
এই পশ্চিমা তরুণীদের মতে, কোরিয়ান পুরুষেরা সংস্কৃতিবান এবং রোমান্টিক। তাঁদের অভিযোগ, নিজ দেশের পুরুষেরা প্রায়শই নারীদের অবহেলা করে এবং নিজের চিন্তায় নিমগ্ন থাকে।
যুক্তরাজ্যের ২৫ বছর বয়সী মালি গ্রেস থর্নটন নেটফ্লিক্সে কে-ড্রামা ‘ক্র্যাশ ল্যান্ডিং অন ইউ’ দেখে কোরীয় পুরুষদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। কল্পিত পুরুষকে সঙ্গী হিসেবে পেতে ২০২১ সালে সিউল ভ্রমণ করেন তিনি। কে-ড্রামার পুরুষেরা রাস্তায় নারীদের ঠাট্টা করে না বা উত্ত্যক্ত করে না, এটি তাঁকে বিস্মিত করেছিল। তাঁর দেশে এসব নাকি প্রতিনিয়তই ঘটে!
থর্নটনের দৃষ্টিতে, কোরিয়ান পুরুষেরা নম্র, ভদ্র, কমনীয়, রোমান্টিক, রূপকথার মতো, সাহসী ও শ্রদ্ধাশীল। কোরিয়ান পুরুষেরা রুচিসম্মত পোশাক পরে এবং মেয়েদের সাজগোজে সাহায্য করে।
গ্রেস থর্নটন বলেন, ‘বিপরীতে ইংরেজ পুরুষেরা অর্ধেক মাতাল, এক হাতে বিয়ার অন্য হাতে মাছ নিয়ে তারা ডেটিং অ্যাপে প্রোফাইল পিকচার দেয়।’
পশ্চিমের তরুণীদের কাছে কোরিয়ার পুরুষদের এমন এক নাটকীয় ভাবমূর্তিই তৈরি হয়েছে। কোরিয়ান টিভি সিরিয়ালের (কে-ড্রামা) প্রভাব এতটাই। এ কারণে দক্ষিণ কোরিয়ায় পশ্চিমা তরুণী পর্যটকের সংখ্যাও সমান তালে বাড়ছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০০৫ সালে ২৩ লাখ তরুণী দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণ করেছেন। আর ওই বছর কোরিয়া সফর করেছিলেন ২৯ লাখ পুরুষ। ২০১৯ সালে কোরিয়া ভ্রমণ প্রায় ১ কোটি তরুণী, যেখানে পুরুষের সংখ্যা ৬৭ লাখ।
একই সময়ে বিদেশি নারীদের সঙ্গে কোরিয়ান পুরুষদের প্রেমের সম্পর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
ইউটিউবে ২ হাজার ৫০০টি চ্যানেলে এবং ৩৪ হাজারটি ভিডিওতে ‘গুকজেকপল’ হ্যাশট্যাগ লেখা হয়েছে। এটি ইন্টারনেটে এক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। গুকজেকপল অর্থ, আমেরিকান বা ইউরোপীয় নারীর সঙ্গে কোরিয়ান পুরুষের প্রেম।
এসব ভিডিওতে যুগলেরা খুনসুটি করে, সাংস্কৃতিক পার্থক্য নিয়ে মজা করে এবং কখনো কখনো দৈনন্দিন জীবনের চিত্র তুলে ধরে।
এই ধারার প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম সিউলের ইউটিউবার হিও জিন–উ। তিনি শুরুতে একটি চ্যানেল চালাতেন, যেখানে দর্শকের কাছে নিজেকে প্রেমিক হিসেবে উপস্থাপন করতেন। এক ব্রিটিশ মেয়ের সঙ্গে প্রেম হওয়ার পর তিনি চ্যানেলটি বন্ধ করে দেন। এরপর দুজন মিলে ২০২০ সালে আরেকটি চ্যানেল খোলেন। সেখানে দুজনের অনেক মজার মজার ভিডিও প্রকাশ করেন। বর্তমানে চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ৫৫ লাখের বেশি।
টাকা বানানোর মেশিন
মিশ্র জাতির যুগলদের ভিডিও এখন ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়। বড় উপার্জনের উৎসে পরিণত হয়েছে এসব চ্যানেল।
ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনায় বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা হিজ গিউন। তিনি আন্তর্জাতিক (মিশ্র জাতি) দম্পতিদের নিয়ে নানা ভিডিও নির্মাণ করেন। তিনি বলেন, যেসব দম্পতির ১০ লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে তাঁরা প্রতিটি স্পনসর ভিডিও থেকে ২৩ হাজার থেকে ৩৮ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করেন।
গিউন এবং তাঁর অস্ট্রেলিয়ান স্ত্রী নিকোলা ‘মাই কোরিয়ান হাসবেন্ড’ নামে একটি ব্লগ চালান। আন্তসাংস্কৃতিক বিয়ে নিয়ে এই ব্লগে আলোচনা করা হয়। এই ধরনের সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।
নিকোলা বলেন, ১০ বছর আগে সিডনিতে হবু স্বামীর সঙ্গে প্রথম দেখা। কিন্তু তখনকার চেয়ে এখন কোরিয়ান পুরুষদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি অনেকখানি বদলে গেছে। সে সময় অনেকেই তাঁকে বলতেন, ‘তোমার স্বামী এশিয়ানদের জন্যই সুন্দর, তোমার জন্য নয়।’
তাঁদের বাগদানের পরে ‘কোরিয়ান হাসবেন্ড’ লিখে গুগল করলে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অভিবাসী নারীদের কোরিয়ান পুরুষকে বিয়ে করার নানা ভৌতিক গল্প আসত। কিন্তু এখন কোরিয়ান সেলিব্রিটিদের ছবি এবং কীভাবে একজন কোরিয়ান স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে সেসব তথ্য আসে। বোঝাই যায়, ইন্টারনেটে এই প্রবণতা কেমন জনপ্রিয়!
কোরিয়া এসে স্বপ্নভঙ্গ
বাস্তবতা কিন্তু হতাশাজনক। কে-ড্রামার স্বপ্নের পুরুষ কোরিয়াতে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কোরিয়ান তরুণেরাই বলেন, কে-পপ আর কে-ড্রামা যেমনটি দেখানো হয় বাস্তবে কোরিয়ার পুরুষেরা অত সুন্দর নয়, সামাজিকও নয়। নারীদের প্রতি তারা অত যত্নশীলও নয়।
কিছু বিদেশি নারী কোরিয়া আসার পর পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার পর সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তাঁরা পর্দায় চিত্রিত পুরুষ চরিত্রের মতো নিখুঁত কোনো কোরিয়ান পুরুষ পাননি। অনেকের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
মরক্কোর ২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মিনা বলেন, কে-পপ এবং কোরিয়ান টিভি শো দেখার পর ২০২১ সালে বুশানে আসেন তিনি। টিভিতে দেখানো কোরিয়ান পুরুষেরা আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন, নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী, সুদর্শন এবং ধনী হলেও বাস্তবে তেমনটি নয়। তাঁকে রাতের বেলা একটি বারে আটকে রাখা হয়েছিল এবং রাস্তায় অপরিচিতরা যৌনতার প্রস্তাব দিয়েছিল।
স্থানীয়দের তুলনায় বিদেশি নারীর সঙ্গে সহজেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যায়—কোরিয়ার অনেক পুরুষের এমন ধারণা। মিনা বলেন, ‘আমাদের সাময়িক ভোগ্যবস্তুই মনে করে পুরুষেরা, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সব পুরুষই এক!’
এরপর থেকে তিনি কোরিয়ান টিভি শোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। কোনো কোরিয়ান পুরুষের সঙ্গে জীবনে আর কখনো ডেট করতে চান না!
ওয়াশিংটনের ২৭ বছর বয়সী ইংরেজি শিক্ষিকা কুন্ড্রা মুর ২০১৭ সালে সিউলে এসেছিলেন। ডেটিং অ্যাপ এবং নাইটক্লাবগুলোতে সঙ্গীর সন্ধান করেছিলেন। কিন্তু তিনিও হতাশ। তিনি বর্ণবাদী মন্তব্য ও আচরণের শিকার হয়েছেন। অনেকেই তাঁকে আফ্রিকাতে ফিরে যেতে বলেছেন। অনেক পুরুষ কেবল যৌনতায় আগ্রহ দেখিয়েছেন।
মুরের অভিজ্ঞতায়, কোরিয়ান পুরুষেরা বিদেশি নারীদের সঙ্গে অন্যরকম আচরণ করেন। তিনি বলেন, ‘কেন আমরা প্রথমেই ডিনারে যেতে পারি না? এটা খুবই জঘন্য। কোরিয়ান নারীরা কিন্তু এমন আচরণ সহ্য করবে না।’
এ বিষয়ে গবেষক লি বলেন, কিছু পুরুষ মনে করেন, বিদেশি নারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা কোনো অপরাধ না। এটা স্বাভাবিক। কারণ, বিদেশি হিসেবে এই নারীদের এখানে সামাজিক বৃত্তটা সীমাবদ্ধ।
যেসব নারী হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা লিকে বলেন, আদর্শ পুরুষ খুঁজে না পাওয়াটা তাঁদের নিজেদেরই ব্যর্থতা। তবে তাঁরা আশা ছাড়ছেন না, স্বপ্নের পুরুষের সন্ধানে তাঁরা বারবার কোরিয়ায় ফিরতে চান।
লি বলেন, এই তরুণীরা স্পষ্টভাবে জানে যে, সব কোরিয়ান পুরুষ নিখুঁত নয়। কিন্তু নিজ দেশের হতাশাজনক ডেটিং পরিবেশের বিকল্প চান। তাঁরা আশা ছাড়তে পারেন না কারণ, তাঁরা বিশ্বাস করেন, আদর্শ পুরুষ পৃথিবীর কোথাও না কোথাও অবশ্যই আছে।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
৩ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
৩ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
৩ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
৩ দিন আগে