রজত কান্তি রায়, ঢাকা
লোকে তারে কয় মহানদী। হামরা তারে কই মহর্ষি, ব্রহ্মপুত্র। এবং আশ্চর্যের বিষয়, কুড়িগ্রাম থেকে সোজা ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী বন্দরের দিকে গাড়ি হাঁকানোর সময় যে বিলটি পার হতে হয়, তার নাম নিধুয়া পাথার। সেই পাথারের এপার-ওপার দেখা যেত না একসময়। এখন তার বুক চিরে পিচের রাস্তা। সেই রাস্তায় চলে গাড়ি। সেই গাড়িতে বসে সোজা গিয়ে নামা যায় রমনা ঘাটে, যেখানে এখন মহানদী ব্রহ্মপুত্রের অধিষ্ঠান। সৈয়দ শামসুল হক যাকে বলেছেন ‘লৌহিত্য নদ’। ডেকেছেন ‘বাংলার জ্যেষ্ঠ সন্তান’ বলে। বলেছেন মহৎ, বলেছেন স্মৃতিধর, দয়াবান, প্রভাষক; আরও অনেক কিছু। আলোচকেরা তাকে বলেন ‘প্রাচীন বাংলার নদীপথের কেন্দ্রস্থল।’
এই যে এইখানে এসে এখন দাঁড়ায় মানুষ, যাকে ডাকা হয় রমনা ঘাট, সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্রের অন্য পাড়ের দূরত্ব প্রায় পনেরো কিলোমিটার। পাহাড় ছেড়ে ব্রহ্মপুত্র যেখানে পলিমাটিতে পড়েছে, সেখানে তার প্রস্থ পঁচিশ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার। এই বিশাল বপুর যে নদ, তাকে মহানদ ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় কি? এই বিশাল নদীর বুকে সেই ষোলো শতকে মধু সাধুখাঁ বজরা নিয়ে ভেসে বেড়াতেন বাণিজ্যের আশায়। শুধু মধু সাধুখাঁই নন। বৃহৎ বঙ্গের প্রায় তামাম বাণিজ্য হতো ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে থাকা চিলমারী বন্দর দিয়ে।
এই যে এইখানে নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে চর, সেই চরের ওপরে বসে হাট, সেই হাটের হাজারো মানুষের একজন হয়ে আমি গল্প শুনি এক কিংবদন্তির চিলমারীর। এখন সেখানে মধু সাধুখাঁ নেই। আছেন মেম্বার রফিকুল ইসলাম, মঞ্জু মিয়া, মোকছেদ আলী, রোকেয়া খাতুন কিংবা ছোট্ট ইব্রাহিম— চোখেমুখে যাদের অপার কৌতূহল, শরীর ও মননে যারা শোনে ব্রহ্মপুত্রের ডাক। তাদের গল্প শুনি। একেবারেই ভিন্ন, এই সময়ের গল্প।
চিলমারী এখন কুড়িগ্রাম জেলার একটি উপজেলা মাত্র। আর ‘চিলমারী’ নামের সেই বিখ্যাত বন্দর এখন ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম তীর ছেড়ে ভাঙতে ভাঙতে চলে গেছে পূর্ব দিকে। প্রশাসনিক মাপকাঠিতে সেটি এখন একটি ইউনিয়ন মাত্র। মূলত চিলমারী সদর ইউনিয়ন আর অষ্টমীর চর, যা বারুণি স্নানের জন্য বিখ্যাত—এ দুটিই ছিল প্রাচীন চিলমারীর পশ্চিম প্রান্তের দুই সমৃদ্ধ জনপদ। ভাঙনের কারণে দুটি এলাকাই এখন ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব দিকে চলে গেছে।
এই ভাঙনের কারণেই চিলমারী বন্দরকে ছয়বার স্থানান্তর করতে হয়েছে। বন্দরের সঙ্গে সরাতে হয়েছে প্রশাসনিক ভবনও। এখন যে রমনা রেলস্টেশন বা রমনা ঘাট বা যেখান থেকে রাজিবপুর-রৌমারীর নৌকা ছাড়ে, তার বয়স অর্ধশত বছরের কম। রমনা ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের চর শাখাহাতিতে ছিল চিলমারী স্টেশন। সেটা নদীতে ভেঙে বিলীন হওয়ার পর ঘাট ও রেলস্টেশন আসে রমনায় বা এখনকার জায়গায়।
আমাদের জানা ইতিহাসমাত্রই মুঘল আমল থেকে। উজান কিংবা ভাটি, মুঘল আমলে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, যেতে হতো এই ব্রহ্মপুত্রের ওপর দিয়েই। আর তার প্রধান বন্দর ছিল চিলমারী। এখানে নৌযান থামত, বদল হতো দিক, যাত্রী উঠত কিংবা নামত। যদি নৌযান সোজাও চলত, চিলমারী ছিল অনিবার্য ‘বিরতিস্থল ও বাণিজ্যকেন্দ্র’। এখান থেকেই গন্তব্য নির্ধারিত হতো তিব্বত, ভুটান অথবা নেপালের পথে কিংবা বৃহৎ বঙ্গের বিস্তীর্ণ জনপদে। বাণিজ্য হতো কস্তুরি আর পোস্তদানার, যষ্টিমধু, এন্ডি সিল্ক আর ভোটকম্বলের। কখনো সন্তরা আর আমলকীরও। সন্তরা মানে কমলা। নেপাল বা আরও ওপরের দেশগুলো থেকে কমলা আসত চিলমারী দিয়েই। শুধু বাণিজ্যই নয়। নৌযুদ্ধেও চিলমারী ছিল প্রধানতম জলপথ। সে জন্যই সম্ভবত মুঘলদের জাহাজনির্মাণ শিল্প তৈরি হয়েছিল চিলমারীকে কেন্দ্র করে। সেই চিলমারীর বন্দর ঘন কুয়াশায় ঝাপসা এখন।
উপজেলা চিলমারীর আড়মোড়া ভাঙেনি তখনো। সকাল ৮টা। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন রমনা খেয়াঘাটের মাঝি মমিনুল আর চর শাখাহাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাহিদ হাসান। ‘মনন রেখা’ নামের একটি ষাণ্মাসিক পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিমসহ যখন রমনা ঘাটে পৌঁছলাম, তখন কুয়াশা কেটে গিয়ে অদ্ভুত এক ঝলমলে রোদ ব্রহ্মপুত্রের বুকে। সেই রোদে দেখা যায় রৌমারী ও রাজিবপুর থেকে দুটি খেয়া নৌকা এসে লেগেছে রমনা ঘাটে; আর দুটি ছেড়ে যাওয়ার জোগাড়যন্ত্র করছে। আমরা চলেছি চর শাখাহাতি।
রমনা ঘাট থেকে নৌকা ছাড়তেই মাদকতা মাখা ঠান্ডা বাতাসের পরশ ছুঁয়ে গেল আমাদের শরীর। পূর্বমুখী নৌকার হাল ধরে বসে আছেন মমিনুল; কিংবদন্তি থেকে উঠে আসা এক মাঝির মতো। কালচে পেশিবহুল শরীর। অভিজ্ঞ চোখ। কিন্তু মাঝ নদীতে দারুণ বিনয়ী। গুটগুট করে শ্যালো মেশিনের নৌকা চলছে। ছইয়ের ওপর আমরা তিনজন। নিচে আরও কয়েকজন। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। আমরা কথা বলে চলেছি। ওপরে মাঘের নির্মেঘ আকাশ আর নিচে টলটলে নীল জল। তার ওপর রাজহাঁসের মতো ঢেউ কেটে চলেছে শ্যালো নৌকা। গলুইয়ে হাল ধরে বসে আছেন একা এক নিঃসঙ্গ মাঝি মমিনুল। নাহিদ হাসান বললেন, ব্রহ্মপুত্র বিষয়ে মমিুনলের অনেক জ্ঞান। শুনে তিনি হাসলেন। আমি নিশ্চিত, শতসহস্র কুড়ার নদী ব্রহ্মপুত্রকে মনুষ্যজ্ঞানে যে ধরা যায় না, সেটা মমিনুল ভালোই জানেন। আর জানেন বলেই তিনি হাসছেন। নৌকার ছইয়ে বসে মমিনুলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এক নিঃসঙ্গ মাঝি ব্রহ্মপুত্রের বুক চিরে চলেছেন গন্তব্যে। এই নদীর বুকে ভাগ্য বলে কিছু নেই, সেটা তিনি জানেন। এক নদী গবেষক বলেন, ‘এইখানে, এই মহানদীর কারণে মানুষের ভাগ্য ও ভূখণ্ড দুটোই ভাঙে।’
টলটলে নীল জলের ওপর দিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা গিয়ে থামল চরের খেয়াঘাটে। নৌকা থেকে নেমে হাঁটা শুরু। একটুখানি এগোতেই দেখা হলো এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ষাটের কোঠায় বয়স তাঁর। নাহিদ হাসানের পরিচিত। মূলত পুরো চরটিই তাঁর পরিচিত। রফিুকল ইসলাম হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, ‘ওই যে ওই সরিষার খেত, ওইখানে আছিল রেল স্টেশন। এলা ভাঙি গেইছে।’ তাকিয়ে দেখলাম, নির্দিষ্ট জায়গাটিতে এখন হলুদ সরিষা মাঘের হাওয়ায় দুলছে। আমরা এগিয়ে গেলাম চর শাখাহাতির দিকে।
এখানে মানুষ গ্রাম সঙ্গে নিয়ে ঘোরে! শহরে থাকলে এসব জানা যায় না। তাই অবাক হতেই পারেন শুনে। নিজের ত্বক, দাঁত, চুলের মতোই এখানে নিজের অস্তিত্বের আরেক নাম গ্রাম। ফলে নদী গ্রাম ভাঙলে মানুষ নতুন বসতি তৈরি করে পুরোনো গ্রামের নামে। আমরা হাঁটতে থাকি। চারদিকে পলিজমা কৃষিজমি। সেই জমিতে জন্মে সুল্টি কলাই। মসুর ডালের মতো দেখতে মনে হলেও সেটা মসুর ডাল নয়। দেশের অন্য কোনো জায়গায় জন্মে না। এই অঞ্চলেই জন্মে। শুনলাম, সুল্টি কলাইয়ের ডাল বেশ সুস্বাদু।
খুব বড় চর নয় শাখাহাতি। বন্ধুর সেই চর পুরোটাই হেঁটে হেঁটে ঘুরলাম আমরা। ঠাকুরি কলাই, মাষকলাই, খেসারি কলাই, গাঞ্জিয়া ধান, ভুট্টা, সরষে আর চিনেবাদাম—এ সবই জন্মে এই চরে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর গাছ আছে চরে। এখানকার মানুষগুলো প্রাগৈতিহাসিক সরল, শহরের তুলনায়। বিনোদন বলতে তেমন কিছু নেই। একটিমাত্র ডিশ অ্যান্টেনা দেখা গেল পুরো চরে। আর আছে সাউন্ড বক্স। যখন-তখন বাজে—হিন্দি আর বাংলা গান। শিশুরা গানের তালে নাচে। বড়রা বিরক্ত হয় না।
হাঁটতে হাঁটতে সেই চরেরই আরেক প্রান্তে পৌঁছালাম আমরা চায়ের খোঁজে। সেই অংশের নাম বৈলমন্দিয়ার খাতা। পুরো চরে দু-তিনটি চায়ের দোকান; তার একটি এখানে। হাটবার বলে বন্ধ। ফিরে যাব, সে সময় ষাটোর্ধ্ব একজন কোত্থেকে উদয় হয়ে বললেন, ‘বসেন, দেখি কিছু পাই কি না।’ বলেই ডেকে আনলেন এক নারীকে। বোঝা গেল, তিনিই দোকানের মালকিন। চা নেই। অগত্যা চিনেবাদাম ভাজা আর পানি খাওয়া হলো। ষাটোর্ধ্ব সেই মানুষের নাম মো. মঞ্জু মিয়া। বয়স বললেন ৬৭। মঞ্জু মিয়া জানালেন, বয়সের কারণে এখন তিনি খেতে পারেন না খুব একটা। নইলে এক কেজি গাঞ্জিয়া চালের ভাত তাঁর কাছে কিছুই নয়। তবে তাঁরা গাঞ্জিয়া চালের ভাত খেতেন না, কিন্তু অনেক ধানের জাত হারিয়ে গেলে গাঞ্জিয়া ছাড়া উপায় নেই এখন। বেশ অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তারপর উঠতে হলো। বেলা চড়ে যাচ্ছে।
এমন নিবিড় চরের ঘুঘুডাকা দুপুরে চোখে হেল্যুসিনেশন তৈরি হয়, রঙের। সবুজ খেত আর শীতের সোনালি রোদ একধরনের বিভ্রম তৈরি করে চোখে। সেই হেল্যুসিনেশনে দুলতে দুলতে পৌঁছালাম রোকেয়া খাতুনদের বাড়িতে। সেখানে দুপুরের খাবারের আয়োজন। গাঞ্জিয়া চালের ভাত, মাষকলাইয়ের ডাল, ঘাড়ভাঙা মাছের তরকারি বেগুন দিয়ে, বেগুনের পাট ভাজি আর খেসারির কচি পাতার ভাজি পেঁয়াজ-রসুন সাঁতলে। সঙ্গে প্রায় তিন শ মিলিলিটার মোষের দুধ। হ্যাঁ, এই চরে মোষেরা পাল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় আর দুধ দেয়। জমি চাষের দায়িত্ব ট্রাক্টরের। ফলে মোষের দুধ আর দই এখানে পাওয়া যায় প্রচুর। তবে শীতকালে দই ঠিক জমে না বলে কেউ এখন দই পাতে না। দুপুর নামলে আমরা বেরিয়ে পড়ি ফিরতি পথের নৌকা ধরতে।
খেয়াঘাটে নৌকা তখনো পৌঁছায়নি। সেখানে অপেক্ষারত মানুষের মধ্যে দেখা ও কথা হলো মোকছেদ আলীর সঙ্গে। তিনি উত্তর ডাটিয়ার চর প্রামাণিকপাড়ার মানুষ। মধ্য চল্লিশের এই মানুষটি একসময় নৌকা নিয়ে চলে যেতেন বরিশালে। এখন যান না। একসময় পাঁচ-সাত বছর চাকরি করেছিলেন গাজীপুরের কোনো একটি কাপড়ের কলে। ছেড়ে দিয়ে ফিরেছেন চরের গ্রামে। এখন খেতি করেন। গাজীপুরে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সঙ্গে একবার হ্যান্ডশেক করেছিলেন মোকছেদ আলী। পরপর তিনবার হ্যান্ডশেক করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর, একই দিনে। সেই স্মৃতি মোকছেদ আলী কোনো দিন ভুলবেন না। দেশের রাজার নরম কোমল হাত! আকার-আকৃতি হাত দিয়ে মেপে দেখালেন মোকছেদ আলী। এখন কী করেন? ‘খেতি।’ বিঘা চল্লিশ জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন ধান, মরিচ, পেঁয়াজ, ভুট্টা। শ্রম আছে, চাপও আছে। কিন্তু আনন্দও আছে। পেঁয়াজ লাগিয়েছেন জমিতে। বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। উঠে আসবে বেশ খানিকটা লাভসহ, যদি বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়। বৃষ্টি হলে সব শেষ। তার পরও চাষ করছেন? ‘কিষান বাচে আশায় কাকা।’ চন্দ্রবিন্দু বাদ দিয়ে স্পষ্ট করেই কথাটি বললেন মোকছেদ আলী।
নারী-পুরুষ মিলে জনা কুড়ি মানুষ উঠলাম আমরা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত খেয়া নৌকায়। বেশির ভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। করোনা নামের এক মহামারি যে পৃথিবী কাঁপিয়ে দিচ্ছে, চরের মানুষ সম্ভবত সেটা জানেই না। কেউ করোনা নিয়ে কোনো কথাই বলল না। এবারের গন্তব্য জোরগাছ হাট।
ব্রহ্মপুত্র বহি চলে নিরবধি। তার ওপর চর। তার ওপর বসে হাট। এই হাটের দুটি অংশ, নদীর তীরে একাংশ আর চরে একাংশ। চরের অংশের নাম জোরগাছ নামাহাট। দুই অংশই বসে রবি আর বুধবার। মোকছেদ আলীর মতো শত শত মানুষের গন্তব্য জোরগাছের নামাহাট। সপ্তাহের শুধু নয়, বহু প্রয়োজনীয় বিকিকিনি চলে সেইখানে। গরু, ঘোড়া, ছাগল, মাছ, চিনেবাদাম, সাবান-তেল-শ্যাম্পু, খাট-পালঙ্ক, ঘটিবাটি—সবকিছুর বিকিকিনি চলে সেখানে।
মোকছেদ আলীরা নেমে যান জোরগাছ হাটের চরের অংশে। আর আমরা চলি শহরের দিকে; শহুরে রুক্ষ ফুসফুসে ভরে ব্রহ্মপুত্রের তাজা বাতাস। কয়েক দিন তাজা রাখবে নিশ্চয়ই।
সূত্র: মননরেখা, চিলমারী সংখ্যা, সম্পাদক: মিজানুর রহমান নাসিম, ২০২১
লোকে তারে কয় মহানদী। হামরা তারে কই মহর্ষি, ব্রহ্মপুত্র। এবং আশ্চর্যের বিষয়, কুড়িগ্রাম থেকে সোজা ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী বন্দরের দিকে গাড়ি হাঁকানোর সময় যে বিলটি পার হতে হয়, তার নাম নিধুয়া পাথার। সেই পাথারের এপার-ওপার দেখা যেত না একসময়। এখন তার বুক চিরে পিচের রাস্তা। সেই রাস্তায় চলে গাড়ি। সেই গাড়িতে বসে সোজা গিয়ে নামা যায় রমনা ঘাটে, যেখানে এখন মহানদী ব্রহ্মপুত্রের অধিষ্ঠান। সৈয়দ শামসুল হক যাকে বলেছেন ‘লৌহিত্য নদ’। ডেকেছেন ‘বাংলার জ্যেষ্ঠ সন্তান’ বলে। বলেছেন মহৎ, বলেছেন স্মৃতিধর, দয়াবান, প্রভাষক; আরও অনেক কিছু। আলোচকেরা তাকে বলেন ‘প্রাচীন বাংলার নদীপথের কেন্দ্রস্থল।’
এই যে এইখানে এসে এখন দাঁড়ায় মানুষ, যাকে ডাকা হয় রমনা ঘাট, সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্রের অন্য পাড়ের দূরত্ব প্রায় পনেরো কিলোমিটার। পাহাড় ছেড়ে ব্রহ্মপুত্র যেখানে পলিমাটিতে পড়েছে, সেখানে তার প্রস্থ পঁচিশ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার। এই বিশাল বপুর যে নদ, তাকে মহানদ ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় কি? এই বিশাল নদীর বুকে সেই ষোলো শতকে মধু সাধুখাঁ বজরা নিয়ে ভেসে বেড়াতেন বাণিজ্যের আশায়। শুধু মধু সাধুখাঁই নন। বৃহৎ বঙ্গের প্রায় তামাম বাণিজ্য হতো ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে থাকা চিলমারী বন্দর দিয়ে।
এই যে এইখানে নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে চর, সেই চরের ওপরে বসে হাট, সেই হাটের হাজারো মানুষের একজন হয়ে আমি গল্প শুনি এক কিংবদন্তির চিলমারীর। এখন সেখানে মধু সাধুখাঁ নেই। আছেন মেম্বার রফিকুল ইসলাম, মঞ্জু মিয়া, মোকছেদ আলী, রোকেয়া খাতুন কিংবা ছোট্ট ইব্রাহিম— চোখেমুখে যাদের অপার কৌতূহল, শরীর ও মননে যারা শোনে ব্রহ্মপুত্রের ডাক। তাদের গল্প শুনি। একেবারেই ভিন্ন, এই সময়ের গল্প।
চিলমারী এখন কুড়িগ্রাম জেলার একটি উপজেলা মাত্র। আর ‘চিলমারী’ নামের সেই বিখ্যাত বন্দর এখন ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম তীর ছেড়ে ভাঙতে ভাঙতে চলে গেছে পূর্ব দিকে। প্রশাসনিক মাপকাঠিতে সেটি এখন একটি ইউনিয়ন মাত্র। মূলত চিলমারী সদর ইউনিয়ন আর অষ্টমীর চর, যা বারুণি স্নানের জন্য বিখ্যাত—এ দুটিই ছিল প্রাচীন চিলমারীর পশ্চিম প্রান্তের দুই সমৃদ্ধ জনপদ। ভাঙনের কারণে দুটি এলাকাই এখন ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব দিকে চলে গেছে।
এই ভাঙনের কারণেই চিলমারী বন্দরকে ছয়বার স্থানান্তর করতে হয়েছে। বন্দরের সঙ্গে সরাতে হয়েছে প্রশাসনিক ভবনও। এখন যে রমনা রেলস্টেশন বা রমনা ঘাট বা যেখান থেকে রাজিবপুর-রৌমারীর নৌকা ছাড়ে, তার বয়স অর্ধশত বছরের কম। রমনা ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের চর শাখাহাতিতে ছিল চিলমারী স্টেশন। সেটা নদীতে ভেঙে বিলীন হওয়ার পর ঘাট ও রেলস্টেশন আসে রমনায় বা এখনকার জায়গায়।
আমাদের জানা ইতিহাসমাত্রই মুঘল আমল থেকে। উজান কিংবা ভাটি, মুঘল আমলে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, যেতে হতো এই ব্রহ্মপুত্রের ওপর দিয়েই। আর তার প্রধান বন্দর ছিল চিলমারী। এখানে নৌযান থামত, বদল হতো দিক, যাত্রী উঠত কিংবা নামত। যদি নৌযান সোজাও চলত, চিলমারী ছিল অনিবার্য ‘বিরতিস্থল ও বাণিজ্যকেন্দ্র’। এখান থেকেই গন্তব্য নির্ধারিত হতো তিব্বত, ভুটান অথবা নেপালের পথে কিংবা বৃহৎ বঙ্গের বিস্তীর্ণ জনপদে। বাণিজ্য হতো কস্তুরি আর পোস্তদানার, যষ্টিমধু, এন্ডি সিল্ক আর ভোটকম্বলের। কখনো সন্তরা আর আমলকীরও। সন্তরা মানে কমলা। নেপাল বা আরও ওপরের দেশগুলো থেকে কমলা আসত চিলমারী দিয়েই। শুধু বাণিজ্যই নয়। নৌযুদ্ধেও চিলমারী ছিল প্রধানতম জলপথ। সে জন্যই সম্ভবত মুঘলদের জাহাজনির্মাণ শিল্প তৈরি হয়েছিল চিলমারীকে কেন্দ্র করে। সেই চিলমারীর বন্দর ঘন কুয়াশায় ঝাপসা এখন।
উপজেলা চিলমারীর আড়মোড়া ভাঙেনি তখনো। সকাল ৮টা। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন রমনা খেয়াঘাটের মাঝি মমিনুল আর চর শাখাহাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাহিদ হাসান। ‘মনন রেখা’ নামের একটি ষাণ্মাসিক পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিমসহ যখন রমনা ঘাটে পৌঁছলাম, তখন কুয়াশা কেটে গিয়ে অদ্ভুত এক ঝলমলে রোদ ব্রহ্মপুত্রের বুকে। সেই রোদে দেখা যায় রৌমারী ও রাজিবপুর থেকে দুটি খেয়া নৌকা এসে লেগেছে রমনা ঘাটে; আর দুটি ছেড়ে যাওয়ার জোগাড়যন্ত্র করছে। আমরা চলেছি চর শাখাহাতি।
রমনা ঘাট থেকে নৌকা ছাড়তেই মাদকতা মাখা ঠান্ডা বাতাসের পরশ ছুঁয়ে গেল আমাদের শরীর। পূর্বমুখী নৌকার হাল ধরে বসে আছেন মমিনুল; কিংবদন্তি থেকে উঠে আসা এক মাঝির মতো। কালচে পেশিবহুল শরীর। অভিজ্ঞ চোখ। কিন্তু মাঝ নদীতে দারুণ বিনয়ী। গুটগুট করে শ্যালো মেশিনের নৌকা চলছে। ছইয়ের ওপর আমরা তিনজন। নিচে আরও কয়েকজন। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। আমরা কথা বলে চলেছি। ওপরে মাঘের নির্মেঘ আকাশ আর নিচে টলটলে নীল জল। তার ওপর রাজহাঁসের মতো ঢেউ কেটে চলেছে শ্যালো নৌকা। গলুইয়ে হাল ধরে বসে আছেন একা এক নিঃসঙ্গ মাঝি মমিনুল। নাহিদ হাসান বললেন, ব্রহ্মপুত্র বিষয়ে মমিুনলের অনেক জ্ঞান। শুনে তিনি হাসলেন। আমি নিশ্চিত, শতসহস্র কুড়ার নদী ব্রহ্মপুত্রকে মনুষ্যজ্ঞানে যে ধরা যায় না, সেটা মমিনুল ভালোই জানেন। আর জানেন বলেই তিনি হাসছেন। নৌকার ছইয়ে বসে মমিনুলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এক নিঃসঙ্গ মাঝি ব্রহ্মপুত্রের বুক চিরে চলেছেন গন্তব্যে। এই নদীর বুকে ভাগ্য বলে কিছু নেই, সেটা তিনি জানেন। এক নদী গবেষক বলেন, ‘এইখানে, এই মহানদীর কারণে মানুষের ভাগ্য ও ভূখণ্ড দুটোই ভাঙে।’
টলটলে নীল জলের ওপর দিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা গিয়ে থামল চরের খেয়াঘাটে। নৌকা থেকে নেমে হাঁটা শুরু। একটুখানি এগোতেই দেখা হলো এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ষাটের কোঠায় বয়স তাঁর। নাহিদ হাসানের পরিচিত। মূলত পুরো চরটিই তাঁর পরিচিত। রফিুকল ইসলাম হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, ‘ওই যে ওই সরিষার খেত, ওইখানে আছিল রেল স্টেশন। এলা ভাঙি গেইছে।’ তাকিয়ে দেখলাম, নির্দিষ্ট জায়গাটিতে এখন হলুদ সরিষা মাঘের হাওয়ায় দুলছে। আমরা এগিয়ে গেলাম চর শাখাহাতির দিকে।
এখানে মানুষ গ্রাম সঙ্গে নিয়ে ঘোরে! শহরে থাকলে এসব জানা যায় না। তাই অবাক হতেই পারেন শুনে। নিজের ত্বক, দাঁত, চুলের মতোই এখানে নিজের অস্তিত্বের আরেক নাম গ্রাম। ফলে নদী গ্রাম ভাঙলে মানুষ নতুন বসতি তৈরি করে পুরোনো গ্রামের নামে। আমরা হাঁটতে থাকি। চারদিকে পলিজমা কৃষিজমি। সেই জমিতে জন্মে সুল্টি কলাই। মসুর ডালের মতো দেখতে মনে হলেও সেটা মসুর ডাল নয়। দেশের অন্য কোনো জায়গায় জন্মে না। এই অঞ্চলেই জন্মে। শুনলাম, সুল্টি কলাইয়ের ডাল বেশ সুস্বাদু।
খুব বড় চর নয় শাখাহাতি। বন্ধুর সেই চর পুরোটাই হেঁটে হেঁটে ঘুরলাম আমরা। ঠাকুরি কলাই, মাষকলাই, খেসারি কলাই, গাঞ্জিয়া ধান, ভুট্টা, সরষে আর চিনেবাদাম—এ সবই জন্মে এই চরে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর গাছ আছে চরে। এখানকার মানুষগুলো প্রাগৈতিহাসিক সরল, শহরের তুলনায়। বিনোদন বলতে তেমন কিছু নেই। একটিমাত্র ডিশ অ্যান্টেনা দেখা গেল পুরো চরে। আর আছে সাউন্ড বক্স। যখন-তখন বাজে—হিন্দি আর বাংলা গান। শিশুরা গানের তালে নাচে। বড়রা বিরক্ত হয় না।
হাঁটতে হাঁটতে সেই চরেরই আরেক প্রান্তে পৌঁছালাম আমরা চায়ের খোঁজে। সেই অংশের নাম বৈলমন্দিয়ার খাতা। পুরো চরে দু-তিনটি চায়ের দোকান; তার একটি এখানে। হাটবার বলে বন্ধ। ফিরে যাব, সে সময় ষাটোর্ধ্ব একজন কোত্থেকে উদয় হয়ে বললেন, ‘বসেন, দেখি কিছু পাই কি না।’ বলেই ডেকে আনলেন এক নারীকে। বোঝা গেল, তিনিই দোকানের মালকিন। চা নেই। অগত্যা চিনেবাদাম ভাজা আর পানি খাওয়া হলো। ষাটোর্ধ্ব সেই মানুষের নাম মো. মঞ্জু মিয়া। বয়স বললেন ৬৭। মঞ্জু মিয়া জানালেন, বয়সের কারণে এখন তিনি খেতে পারেন না খুব একটা। নইলে এক কেজি গাঞ্জিয়া চালের ভাত তাঁর কাছে কিছুই নয়। তবে তাঁরা গাঞ্জিয়া চালের ভাত খেতেন না, কিন্তু অনেক ধানের জাত হারিয়ে গেলে গাঞ্জিয়া ছাড়া উপায় নেই এখন। বেশ অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তারপর উঠতে হলো। বেলা চড়ে যাচ্ছে।
এমন নিবিড় চরের ঘুঘুডাকা দুপুরে চোখে হেল্যুসিনেশন তৈরি হয়, রঙের। সবুজ খেত আর শীতের সোনালি রোদ একধরনের বিভ্রম তৈরি করে চোখে। সেই হেল্যুসিনেশনে দুলতে দুলতে পৌঁছালাম রোকেয়া খাতুনদের বাড়িতে। সেখানে দুপুরের খাবারের আয়োজন। গাঞ্জিয়া চালের ভাত, মাষকলাইয়ের ডাল, ঘাড়ভাঙা মাছের তরকারি বেগুন দিয়ে, বেগুনের পাট ভাজি আর খেসারির কচি পাতার ভাজি পেঁয়াজ-রসুন সাঁতলে। সঙ্গে প্রায় তিন শ মিলিলিটার মোষের দুধ। হ্যাঁ, এই চরে মোষেরা পাল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় আর দুধ দেয়। জমি চাষের দায়িত্ব ট্রাক্টরের। ফলে মোষের দুধ আর দই এখানে পাওয়া যায় প্রচুর। তবে শীতকালে দই ঠিক জমে না বলে কেউ এখন দই পাতে না। দুপুর নামলে আমরা বেরিয়ে পড়ি ফিরতি পথের নৌকা ধরতে।
খেয়াঘাটে নৌকা তখনো পৌঁছায়নি। সেখানে অপেক্ষারত মানুষের মধ্যে দেখা ও কথা হলো মোকছেদ আলীর সঙ্গে। তিনি উত্তর ডাটিয়ার চর প্রামাণিকপাড়ার মানুষ। মধ্য চল্লিশের এই মানুষটি একসময় নৌকা নিয়ে চলে যেতেন বরিশালে। এখন যান না। একসময় পাঁচ-সাত বছর চাকরি করেছিলেন গাজীপুরের কোনো একটি কাপড়ের কলে। ছেড়ে দিয়ে ফিরেছেন চরের গ্রামে। এখন খেতি করেন। গাজীপুরে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সঙ্গে একবার হ্যান্ডশেক করেছিলেন মোকছেদ আলী। পরপর তিনবার হ্যান্ডশেক করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর, একই দিনে। সেই স্মৃতি মোকছেদ আলী কোনো দিন ভুলবেন না। দেশের রাজার নরম কোমল হাত! আকার-আকৃতি হাত দিয়ে মেপে দেখালেন মোকছেদ আলী। এখন কী করেন? ‘খেতি।’ বিঘা চল্লিশ জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন ধান, মরিচ, পেঁয়াজ, ভুট্টা। শ্রম আছে, চাপও আছে। কিন্তু আনন্দও আছে। পেঁয়াজ লাগিয়েছেন জমিতে। বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। উঠে আসবে বেশ খানিকটা লাভসহ, যদি বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়। বৃষ্টি হলে সব শেষ। তার পরও চাষ করছেন? ‘কিষান বাচে আশায় কাকা।’ চন্দ্রবিন্দু বাদ দিয়ে স্পষ্ট করেই কথাটি বললেন মোকছেদ আলী।
নারী-পুরুষ মিলে জনা কুড়ি মানুষ উঠলাম আমরা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত খেয়া নৌকায়। বেশির ভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। করোনা নামের এক মহামারি যে পৃথিবী কাঁপিয়ে দিচ্ছে, চরের মানুষ সম্ভবত সেটা জানেই না। কেউ করোনা নিয়ে কোনো কথাই বলল না। এবারের গন্তব্য জোরগাছ হাট।
ব্রহ্মপুত্র বহি চলে নিরবধি। তার ওপর চর। তার ওপর বসে হাট। এই হাটের দুটি অংশ, নদীর তীরে একাংশ আর চরে একাংশ। চরের অংশের নাম জোরগাছ নামাহাট। দুই অংশই বসে রবি আর বুধবার। মোকছেদ আলীর মতো শত শত মানুষের গন্তব্য জোরগাছের নামাহাট। সপ্তাহের শুধু নয়, বহু প্রয়োজনীয় বিকিকিনি চলে সেইখানে। গরু, ঘোড়া, ছাগল, মাছ, চিনেবাদাম, সাবান-তেল-শ্যাম্পু, খাট-পালঙ্ক, ঘটিবাটি—সবকিছুর বিকিকিনি চলে সেখানে।
মোকছেদ আলীরা নেমে যান জোরগাছ হাটের চরের অংশে। আর আমরা চলি শহরের দিকে; শহুরে রুক্ষ ফুসফুসে ভরে ব্রহ্মপুত্রের তাজা বাতাস। কয়েক দিন তাজা রাখবে নিশ্চয়ই।
সূত্র: মননরেখা, চিলমারী সংখ্যা, সম্পাদক: মিজানুর রহমান নাসিম, ২০২১
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে