হারুনুর রশিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরীহ বাঙালিদের ওপর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ইতিহাসের সেই বর্বর ঘটনা নিয়ে অনেক গল্প, কবিতা, চিত্র, ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই কালরাতের নীরব সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা ‘একাত্তরের গণহত্যা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’ শিরোনামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভাস্কর্যের ব্যঞ্জনা একেবারে ভিন্ন।
এর কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) নিজেই যুদ্ধের নির্মম ইতিহাসের অংশ। যুদ্ধের পুরো সময় এখানে সাধারণ মানুষদের ধরে এনে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতন করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও নারীদের। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছে শত শত নিরপরাধ মানুষকে। হত্যার পর লাশের স্তূপ গণকবর দেওয়া হয়েছে এই কলেজ ক্যাম্পাসেই। সেই গণকবরের ওপর পরে নির্মাণ করা হয় ‘একাত্তরের গণহত্যা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’ শীর্ষক গুচ্ছ ভাস্কর্য।
গুচ্ছ ভাস্কর্য বলেই এটি দুটি অংশে বিভক্ত। এর এক অংশে রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। অন্য অংশে রয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার চিত্র। ভাস্কর্যটির যে অংশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে বেদনার জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২৫ মার্চের কালরাতকে। এ অংশে দেখানো হয়েছে, সেই রাতে ইয়াহিয়া খানের মাতাল অবস্থা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, গর্ভবতীর ওপর অত্যাচার চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, লাশ ফেলে রাখা হয়েছে যেখানে-সেখানে। ভাস্কর্যের অংশ হিসেবে রয়েছে একটি পত্রশূন্য বৃক্ষ। তার ওপর একটি শকুন বসে আছে। এই চিত্রকল্প নিষ্পেষণে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া তখনকার বাংলাদেশের প্রতীক।
এর অন্য অংশে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির চিত্র। বাংলার কামার, কুমার, জেলে, কৃষিজীবী তথা সর্বস্তরের মানুষ স্বাধীনতার জন্য একত্র হয়েছে। দা, বঁটি, খুন্তি, কোচ, বর্শা—সবকিছু নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন তাঁরা। পরের অংশে দেখা যায়, সবাই সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সেখানে রয়েছে সব বয়সী নারী ও পুরুষ। পরিপূর্ণ যুদ্ধের জন্য গেরিলা কৌশল, মাঝারি আকারের অস্ত্রের ব্যবহার শিখছেন তাঁরা। ভাস্কর্যের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন প্রশিক্ষণ নেওয়া সাহসী এক কৃষকের ছেলে। তাঁর চোখে যুদ্ধজয়ের নেশা। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে সবার চোখে প্রতিশোধস্পৃহার ছাপ রয়েছে। ভাস্কর্যে সবার মাথা সোজা রাখা হয়েছে আর মুখের রং রাখা হয়েছে লাল। লাল হলো রাগের রং। আবার অন্যদিকে গণহত্যার দৃশ্যের রং ধূসর। কারণ এটি আমাদের বেদনাদায়ক স্মৃতি। তাই বেদনার রং হিসেবে এ অংশে ধূসর রং ব্যবহার করা হয়েছে।
ভাস্কর্যটির নিচে রয়েছে পানি। এটি দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশ বোঝানো হয়েছে। আর পানির ভেতরে রয়েছে বাংলা বর্ণমালা, যা দিয়ে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সফলতায় বাংলার মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার ভাবনা আসে।
একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে এটিই বাংলাদেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই দেখা যায় শান্ত চত্বরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এ গুচ্ছ ভাস্কর্যটি। এটি তৈরি করেছেন খ্যাতনামা ভাস্কর রাসা। সহকারী ভাস্কর হিসেবে ছিলেন রাজিব সিদ্দিকী, রুমী সিদ্দিকী, ইব্রাহীম খলিলুর রহমান এবং মিয়া মালেক রেদোয়ান।
এই গুচ্ছ ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। শেষ হয় ১৯৯১ সালে। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম খান এর উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে ‘একাত্তরের গণহত্যা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’ শীর্ষক গুচ্ছ ভাস্কর্য। ফলে শুধু ২৬ মার্চ বা বিজয় দিবসেই নয়। পুরো বছর এ ভাস্কর্য স্মরণ করিয়ে দেয়, নয় মাস ভীষণ কষ্ট করতে হয়েছে এ দেশের মানুষদের। স্বাধীনতার জন্য রক্ত ও সম্ভ্রম দুটোই বিলিয়ে দিতে হয়েছে অকাতরে। হতে হয়েছে রিক্ত, নিঃস্ব। তারপর আমরা পেয়েছি স্বপ্নের স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরীহ বাঙালিদের ওপর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ইতিহাসের সেই বর্বর ঘটনা নিয়ে অনেক গল্প, কবিতা, চিত্র, ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই কালরাতের নীরব সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা ‘একাত্তরের গণহত্যা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’ শিরোনামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভাস্কর্যের ব্যঞ্জনা একেবারে ভিন্ন।
এর কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) নিজেই যুদ্ধের নির্মম ইতিহাসের অংশ। যুদ্ধের পুরো সময় এখানে সাধারণ মানুষদের ধরে এনে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতন করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও নারীদের। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছে শত শত নিরপরাধ মানুষকে। হত্যার পর লাশের স্তূপ গণকবর দেওয়া হয়েছে এই কলেজ ক্যাম্পাসেই। সেই গণকবরের ওপর পরে নির্মাণ করা হয় ‘একাত্তরের গণহত্যা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’ শীর্ষক গুচ্ছ ভাস্কর্য।
গুচ্ছ ভাস্কর্য বলেই এটি দুটি অংশে বিভক্ত। এর এক অংশে রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। অন্য অংশে রয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার চিত্র। ভাস্কর্যটির যে অংশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে বেদনার জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২৫ মার্চের কালরাতকে। এ অংশে দেখানো হয়েছে, সেই রাতে ইয়াহিয়া খানের মাতাল অবস্থা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, গর্ভবতীর ওপর অত্যাচার চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, লাশ ফেলে রাখা হয়েছে যেখানে-সেখানে। ভাস্কর্যের অংশ হিসেবে রয়েছে একটি পত্রশূন্য বৃক্ষ। তার ওপর একটি শকুন বসে আছে। এই চিত্রকল্প নিষ্পেষণে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া তখনকার বাংলাদেশের প্রতীক।
এর অন্য অংশে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির চিত্র। বাংলার কামার, কুমার, জেলে, কৃষিজীবী তথা সর্বস্তরের মানুষ স্বাধীনতার জন্য একত্র হয়েছে। দা, বঁটি, খুন্তি, কোচ, বর্শা—সবকিছু নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন তাঁরা। পরের অংশে দেখা যায়, সবাই সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সেখানে রয়েছে সব বয়সী নারী ও পুরুষ। পরিপূর্ণ যুদ্ধের জন্য গেরিলা কৌশল, মাঝারি আকারের অস্ত্রের ব্যবহার শিখছেন তাঁরা। ভাস্কর্যের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন প্রশিক্ষণ নেওয়া সাহসী এক কৃষকের ছেলে। তাঁর চোখে যুদ্ধজয়ের নেশা। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে সবার চোখে প্রতিশোধস্পৃহার ছাপ রয়েছে। ভাস্কর্যে সবার মাথা সোজা রাখা হয়েছে আর মুখের রং রাখা হয়েছে লাল। লাল হলো রাগের রং। আবার অন্যদিকে গণহত্যার দৃশ্যের রং ধূসর। কারণ এটি আমাদের বেদনাদায়ক স্মৃতি। তাই বেদনার রং হিসেবে এ অংশে ধূসর রং ব্যবহার করা হয়েছে।
ভাস্কর্যটির নিচে রয়েছে পানি। এটি দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশ বোঝানো হয়েছে। আর পানির ভেতরে রয়েছে বাংলা বর্ণমালা, যা দিয়ে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সফলতায় বাংলার মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার ভাবনা আসে।
একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে এটিই বাংলাদেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই দেখা যায় শান্ত চত্বরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এ গুচ্ছ ভাস্কর্যটি। এটি তৈরি করেছেন খ্যাতনামা ভাস্কর রাসা। সহকারী ভাস্কর হিসেবে ছিলেন রাজিব সিদ্দিকী, রুমী সিদ্দিকী, ইব্রাহীম খলিলুর রহমান এবং মিয়া মালেক রেদোয়ান।
এই গুচ্ছ ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। শেষ হয় ১৯৯১ সালে। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম খান এর উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে ‘একাত্তরের গণহত্যা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’ শীর্ষক গুচ্ছ ভাস্কর্য। ফলে শুধু ২৬ মার্চ বা বিজয় দিবসেই নয়। পুরো বছর এ ভাস্কর্য স্মরণ করিয়ে দেয়, নয় মাস ভীষণ কষ্ট করতে হয়েছে এ দেশের মানুষদের। স্বাধীনতার জন্য রক্ত ও সম্ভ্রম দুটোই বিলিয়ে দিতে হয়েছে অকাতরে। হতে হয়েছে রিক্ত, নিঃস্ব। তারপর আমরা পেয়েছি স্বপ্নের স্বাধীনতা।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে