টক দইয়ের রেসিপি মুম্বাইয়ে যেভাবে ‘কচ্ছি বিয়ার’ নামে খ্যাতি পেল

আমিনুল ইসলাম নাবিল
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ০৩
Thumbnail image

সফট ড্রিংকস/কোল্ড ড্রিংকস কিংবা রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর পানীয় পানে শরীরে বাঁধতে পারে নানা রোগবালাই। প্রচণ্ড গরমে তাই চাই স্বাস্থ্যকর পানীয়। এ ক্ষেত্রে টক দই, পানি ও লবণ দিয়ে খুব সহজে ঘরেই বানাতে পারেন স্বাস্থ্যকর মাঠা। মাঠাকে যদিও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। রেসিপিতেও আছে ভিন্নতা।

টক দই দিয়ে বানানো সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর পানীয় মধ্যপ্রাচ্যে লাবান আর তুরস্কে আয়রান নামে পরিচিত। ভারতে রাজ্যভেদে এটির নামে ও রেসিপিতে আছে ভিন্নতা। ভারতে এটি মাঠা, ঘোল, বাটার মিল্ক, ছাঁচ, নীর মোর ইত্যাদি নামে পরিচিত।

আরব আমিরাত ভিত্তিক গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের অনেক শহরেই গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। এ সময়ে বাটার মিল্ক পানের প্রবণতা বাড়ে। বাটার মিল্ক হলো টক দইয়েরই একটি উপজাত। খরচ কম এবং স্বাস্থ্যকর হওয়ায় শিক্ষার্থী, অফিসগামী মানুষ ও দিনমজুরেরাও এটি লুফে নেন। গরমের সময় নিয়মিত খাবারের পরিবর্তে অনেকে বাটার মিল্ক পান করে থাকেন।

তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লীতে গরমের সময় বাটার মিল্কের স্টল বসানো হয়, যাদের কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁদের জন্য বিনা মূল্যে বিতরণের ব্যবস্থাও রাখা হয়। ২০০ মিলি বোতলের দাম গড়ে ১০ রুপি থেকে ১০০ রুপি। মোদ্দাকথা, ধনী–গরিব নির্বিশেষে গ্রীষ্মের স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে এটি জনপ্রিয়।

উত্তর ভারতে টক দই দিয়ে বানানো পানীয় ছাঁচ এবং দক্ষিণ ভারতে নীর মোর নামে পরিচিত। পূর্ব ভারতে এটিই আবার মাঠা নামে পরিচিত।

বাড়তি স্বাদ আনতে নীর মোর রেসিপিতে কারিপাতা, সরিষার বীজ ও আদা ব্যবহার করা হয়। আর মাঠাকে মসলাদার করতে টক দই, পানি ও লবণের সঙ্গে বিট লবণ (ঐচ্ছিক) ও জিরা গুঁড়া (ঐচ্ছিক) যুক্ত করা হয়। ছাঁচ তৈরিতে ঝাল স্বাদের জন্য কাঁচা মরিচের ব্যবহারও করা হয়ে থাকে।

দুবাইভিত্তিক পুষ্টিবিদ শিল্পা মান্দাদা গালফ নিউজকে বলেন, বাটার মিল্ক পান করার অনেকগুলো উপকারিতার মধ্যে একটি হলো—এটি অসুস্থতা থেকে দূরে রাখে। কারণ এটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া এবং প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ। অন্ত্রে বেড়ে ওঠা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে।

শিল্পা মান্দাদা আরও বলেন, জনপ্রিয় নোনতা এই পানীয় পিএইচ (অম্লতা ও ক্ষারীয়) ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি পাকস্থলী ঠান্ডা রেখে হজমে সহায়তা করে এবং ভিটামিন ও পুষ্টি সংশ্লেষ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য এই পানীয় বেশ উপকারী। প্রোটিনে ভরপুর এই পানীয়তে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে।

মজার বিষয় হচ্ছে, মাঠা/ঘোল/বাটার মিল্ক/ছাঁচ/নীর মোর/লাবান/আয়রান এসব নামের পাশাপাশি টক দইয়ের রেসিপিতে তৈরি পানীয় মুম্বাইয়ের বিখ্যাত বি ভগত তারাচান্দ রেস্টুরেন্টে বিক্রি হচ্ছে ‘কচ্ছি বিয়ার’ নামে। টক দই, লবণ, গোলমরিচ গুঁড়া ও জিরা গুঁড়া দিয়ে তৈরি এই পানীয়ের একটি বোতলের দাম রাখা হয় ১১৫ রুপি।

টক দইয়ের রেসিপিতে তৈরি পানীয়ের নাম কেন কচ্ছি বিয়ার রাখা হলো—এর কারণ হিসেবে বি ভগত তারাচান্দ রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ গালফ নিউজকে বলে, ‘এটি মূলত ছাঁচ। তবে এটি কচ্ছি বিয়ার নামে পরিচিত। কেননা আমরা এটি বিয়ারের বোতলে পরিবেশন করে থাকি এবং আমাদের বেশির ভাগ কাস্টমার কচ্ছি (গুজরাটের কচ্ছ জেলার বাসিন্দা)। তাঁরাই এটির নামকরণ করেছেন।’

ঘরে বসেই তৈরি করতে পারেন মসলাদার বাটার মিল্ক—

(দুজনের জন্য)

উপকরণ—

* টক দই—আধা কাপ
* ঠান্ডা পানি—আধা কাপ
* বরফের টুকরা
* ৪–৫টি পুদিনা/ধনে পাতা
* ১ / ৪ চা চামচ কালো গোলমরিচ
* ১ / ৪ চা চামচ লবণ

প্রণালি—

বরফ টুকরা ছাড়া বাকি সব উপকরণ ব্লেন্ড করে নিন। এরপর গ্লাসে ঢেলে বরফের টুকরা যোগ করুন। ব্যস, হয়ে গেল ঠান্ডা ঠান্ডা বাটার মিল্ক।

আরও পড়ুন—

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত