Ajker Patrika

ডিম–মুরগির বাজার: ‘জানি না’ অজুহাতে মানা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২: ৫২
ডিম–মুরগির বাজার: ‘জানি না’ অজুহাতে মানা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত দাম

ডিম ও মুরগিতে সরকার নির্ধারিত দাম মানছেন না রাজধানীর বিক্রেতারা। একাধিক বিক্রেতা দাবি করেছেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, এমন কিছু তাঁরা জানেনই না!

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কয়েকটি বাজারে ঘুরে দেখা যায়, বেঁধে দেওয়া দামে পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম ও মুরগি।

গত রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। নতুন দর অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও সোনালি মুরগি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা। এ ছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। এতে প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।

তবে আজ রাজধানীর রামপুরা, আফতাবনগর ও মোহাম্মদপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫–১৯০ টাকায়, সোনালি মুরগি ২৮০ টাকায়। আর ফার্মের বাদামি ডিম দাম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫–১৭০ টাকা ডজন দরে।

আফতাবনগরের মুরগি বিক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন, ‘সরকার দাম ঠিক করে নাই। ফেসবুকে দাম ঠিক করছে। ওই সব ভুয়া। আমরা ওই দামে কিনতেও পারি না। বেচতেও পারি না।’

একই রকম কথা বলেন রামপুরা বাজারের বিক্রেতা আলআমীন।

বিক্রেতারা জানান, আজ তাঁরা পাইকারি পর্যায়ে কাপ্তান বাজার থেকে ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন ১৭৫ টাকা দরে, আর সোনালি মুরগি কেনেন ২৬০ টাকা দরে। একেকটি মুরগিতে ১০–১২ টাকা খরচ পড়ে যায়। তাই ব্রয়লার ১৯০–এর কমে আর সোনালি ২৮০–এর কমে বিক্রি করলে লাভ থাকে না।

ডিম বিক্রেতারা জানান, পাইকারি পর্যায়ে বিভিন্ন মানের ফার্মের বাদামি এক শ পিস ডিম ১ হাজার ৩২০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। সে হিসাবে পাইকারিতে প্রতি ডজনের দাম পড়ে ১৫৮–১৬২ টাকা। রামপুরা বাজারের ডিম বিক্রেতা সজীব মিয়া বলেন, ‘যেই দামে ডিম কিনতেই পারি না, সেই দামে বেচুম কেমনে?’

বিক্রেতারা দাবি করেন, তাঁরা সরকারের কোনো নির্দেশনার কথা শোনেননি। যদি নির্দেশনা দিতেই হয়, তাহলে খুচরা ব্যবসায়ীদের বদলে পাইকারি ও মোকাম পর্যায়ে কী দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, সেদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।

এদিকে ক্রেতারাও সরকার নির্ধারিত দামের বিষয়ে সচেতন নন। বাজারগুলোতে দেখা যায়, ক্রেতারা কোনো প্রশ্ন ছাড়াই নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে ডিম ও মুরগি কিনছেন। মোহাম্মদপুর বাজারে আসা নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক জায়গায় দেখেছি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এটা সত্যি নাকি গুজব বুঝতে পারিনি। বাজারে যখন দেখলাম, ওই দামে কিছুই বিক্রি হচ্ছে না, তখন ধরে নিলাম, যা দেখেছি সেটা গুজব ছিল।’

বাজারে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর গত সপ্তাহে ভারত থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮০০টি ডিম আসে। তবে বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, সম্প্রতি বন্যার কারণে বহু মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। এতে সার দেশেই মুরগি ও ডিমের সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারত থেকে যে ডিম আমদানি হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় ডিমের দামও কমছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

প্রসঙ্গত, বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে দাম বেঁধে দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চিনি, তেলসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা বাজারে কার্যকর হতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। সে সময়ও তা কার্যকর হতে দেখা যায়নি।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন বলে জানান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ–সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার বিকল্প নেই। আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিমুনাফার প্রবণতা রয়েছে। কঠোর শাস্তি বা জরিমানার ব্যবস্থা না করলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত