অবরুদ্ধ দেশের সাংবাদিকতা
জাহীদ রেজা নূর
যেকোনোভাবে ‘জয় বাংলা’ শব্দ দুটি লেখার সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করা যাবে না—এই নীতি নিয়েছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। ৭ জুন ইসলামাবাদ থেকে বার্তা এল। বলা হলো ‘জয় বাংলা’, ‘বাংলাদেশ’ চিহ্নযুক্ত নোট নাকি আসছে পাকিস্তানে। সেগুলো অবৈধ। পাঠক, খেয়াল করে দেখলেই বুঝতে পারবেন, এই সংবাদ প্রকাশিত হলে পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে যাবে, সীমান্তে নতুন ধরনের খেলা শুরু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ‘জয় বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশ’ লেখা মুদ্রা ঢুকছে অবরুদ্ধ দেশে। এই টাকা বৈধ কি অবৈধ, সেটা সামরিক সরকার জানানোর চেষ্টা করলেও আসল বার্তাটি পেয়ে গেছে স্বাধীনতাকামী মানুষ।
ইত্তেফাক খবরটি ছেপেছিল এইভাবে:
‘জয় বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশ’ চিহ্নযুক্ত নোট অবৈধ’
ইসলামাবাদ, ৭ই জুন—আজ কেন্দ্রীয় সরকারের এক প্রেস নোটে বলা হয়: সরকারের গোচরীভূত হইয়াছে যে, অনুপ্রবেশকারী এবং দুষ্কৃতকারীগণ তাহাদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অংশ হিসাবে ‘জয় বাংলা’ অথবা ‘বাংলাদেশ’ অথবা অনুরূপ কোনো কথা মুদ্রিত করিয়া কিংবা মার্কা দিয়া অথবা ছাপ দিয়া কিংবা এমবোস করিয়া কিংবা সিল দিয়া বিপুলসংখ্যক কারেন্সি নোট বাজারে ছাড়িয়াছে।
জনসাধারণকে সতর্ক করিয়া দেওয়া হইতেছে যে, এই ধরনের নোট বৈধ মুদ্রা নহে এবং এইগুলির আদৌ কোনো মূল্য নাই।
১৯৭১ সালের ৭ই জুনের ৮১ নং সামরিক আইনবিধি অনুসারে কোনো লোক যে কোনো ভাষায় অথবা কোনোভাবে এই ধরনের চিহ্ন সম্বলিত কোনো কারেন্সি নোটের মূল্য পাকিস্তান স্টেট ব্যাংক অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট হইতে দাবী অথবা গ্রহণ করিতে পারিবে না।
(ইত্তেফাক, ৮ জুন, ১৯৭১)
সত্যিই যে বাংলাদেশ জেগে উঠছে, তার আভাস পাওয়া যায় ২১ জুনের ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম কলামে ছাপা হওয়া এক খবরে। খবরটি লেখা হয়েছে খুবই রসঘন করে। কিন্তু তাতে স্পষ্ট হয়েছে, করাচির খালও বাংলাদেশি মুদ্রা থেকে মুক্ত নয়।
খবরটির শিরোনাম ছিল ‘করাচীর খালে বাংলা দেশ মুদ্রিত কারেন্সি নোট’।
করাচি, ১১ জুন (পিপিআই)—গত বুধবার সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট উইমেন কলেজের নিকটে নুন্নাহ খালে ‘বাংলা দেশ’ মুদ্রিত খণ্ড-বিখণ্ড ৫০০ ও ১০০ টাকার বহু কারেন্সি নোট ভাসিতে দেখা গেলে ফ্রেয়ার রোড এলাকায় দারুণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
ইহা দেখিয়া বহুসংখ্যক কিশোর ও বয়স্ক লোক নুন্নাহ খালে ঝাঁপাইয়া পড়ে। ইহাদের অনেকে নোটের ছিন্ন অংশসমূহ সংগ্রহ করিতে সক্ষম হয় এবং অনেকে আবার ইহাও দাবি করে যে, তাহারা ৫০০ টাকার গোটা নোটও ভাসিয়া যাইতে দেখিয়াছে।
এই খবর ছড়াইয়া পড়িলে হাজার হাজার লোক নুন্নাহর পাড়ে আসিয়া জমা হয় এবং অত্যুৎসাহী কিশোরদের নোট সংগ্রহ অভিযান প্রত্যক্ষ করে। এ ব্যাপারে মনে করা হইতেছে যে, কেহ হয়তো পুলিশের হাতে ধরা পড়িবার ভয়ে তাহার নোটগুলি খালে ফেলিয়া দিয়াছে।
(ইত্তেফাক, ১২ জুন, ১৯৭১)
পাকিস্তানি সামরিক সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল নির্দিষ্ট কিছু সংবাদ ছাপার ব্যাপারে। এ ব্যাপারে আমরা আগেই জানিয়েছি। এ রকম এক অবস্থায় আন্তর্জাতিক সংবাদকে তো ফেলা যায় না। আন্তর্জাতিক সংবাদে এমন কিছু থাকে, যা পাকিস্তান সরকারের জন্য খুব সুখকর নয়। সে রকমই একটি সংবাদ লুফে নিয়েছিল ইত্তেফাক। প্রথম পাতার অষ্টম কলামে নিরীহভাবে ছেপেছিল তা। কিন্তু যা বোঝার তা বুঝে নিয়েছে পাঠকমহল।
পাকিস্তানি বর্বরতার কথা ঠিকভাবে জানতে পারছে না পৃথিবী। গণহত্যার ভয়ে কত মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে ভারতে, তা-ও থাকছে অজানা। এ রকম একটি সময়ে জুলাই মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসে একটা খবর ছাপা হলো। সেই সংবাদেই জানা গেল ‘পদ্মা’ নামের এক পাকিস্তানি জাহাজ এসে ভিড়বে বাল্টিমোর সমুদ্রবন্দরে।
খবরটি পেয়ে বাল্টিমোর ও পেনসিলভানিয়ায় বসবাসরত একদল সাহসী মার্কিন নাগরিক এই জাহাজ অবরোধের ডাক দেন। এই জাহাজে করে অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হবে, সেই অস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করা হবে—এ কথা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর জাহাজটাকে বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হবে না বলে প্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন প্রতিবাদকারীরা। তাদের এই প্রতিবাদ নজরে পড়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের। মার্কিন সরকারের চতুর কূটনীতির এ ছিল এক মোক্ষম প্রতিবাদ। সব মানুষ প্রচার করেন, মার্কিন সরকার এই গণহত্যার সহযোগী। ফলে, বাল্টিমোর বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজ ভেড়া অসম্ভব হয়ে ওঠে। ছোট ছোট ডিঙি দিয়ে ঘিরে রাখা হয় পদ্মা নামের জাহাজটি। এই নাগরিকেরা জোরালো ভাষায় অস্ত্র দিয়ে বাঙালি হত্যার প্রতিবাদ করতে থাকেন। কোয়েকার বলে শান্তিবাদী খ্রিষ্টানদের একটি গোত্র এ কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিল। শান্তি ও মানবতার পক্ষে ছিল তাদের অবস্থান।
বিষয়টি শুরুতে চেপে রাখার চেষ্টা করেছিল মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু পরে তা আর গোপন থাকেনি। অগত্যা এক মার্কিন মুখপাত্র ঘটনাটি স্বীকার করতে বাধ্য হন। ইত্তেফাকে সংবাদটি এভাবে প্রকাশিত হয়েছিল:
মার্কিন মুখপাত্রের স্বীকারোক্তি
পদ্মায় সমরসম্ভার বোঝাই করিতে ডকারদের অসম্মতি ওয়াশিংটন, ১৬ই জুলাই (এপিপি/রয়টার)—পররাষ্ট্র দফতরের জনৈক মুখপাত্র স্বীকার করেন যে, বর্তমানে বাল্টিমোরে নোঙ্গরকৃত ৮৮৫৫ টনের পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ পদ্মায় মাল বোঝাই করিতে ডক শ্রমিকেরা অস্বীকার করিয়াছেন। এই জাহাজে পাকিস্তানের জন্য অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই করার কথা ছিল। আন্তর্জাতিক লং শোরমেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডকারদের করাচীভিত্তিক উক্ত জাহাজে মাল বোঝাই করিতে নিষেধ করিয়া দিয়াছেন। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতিতে উক্ত ইউনিয়ন নিরপেক্ষতা অবলম্বন করার প্রেক্ষিতে ডকারদের মাল বোঝাই করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। বর্তমানে উক্ত জাহাজ অস্ত্রশস্ত্রবহির্ভূত মালপত্র সংগ্রহের চেষ্টায় রহিয়াছে।
পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন যে, উক্ত জাহাজে বিমানের জন্য স্পেয়ার পার্টস, মিলিটারী ভেহিকলস অ্যান্ড শিপস এবং আর্টিলারীসহ ১২ লক্ষ ৩১ হাজার ৩৮ ডলার মূল্যের সরঞ্জামাদি, ইহাতে ২২ ক্যালিবর এবং ২২০০০ রাউন্ড অস্ত্রশস্ত্রও রহিয়াছে।
তিনি আরও বলেন যে, দি ফিলাডেলফিয়ার ফ্রেন্ডস অব ইস্টবেঙ্গল-এর বিক্ষোভকারীরা গত বুধবারে উক্ত মালবাহী জাহাজকে একটি অননুমোদিত সংবাদের উপর ভিত্তি করিয়া মাল বোঝাই হইতে বিরত রাখার চেষ্টা করে। উহাতে পাকিস্তানের জন্য নিষিদ্ধ মিলিটারী সরঞ্জাম বহন করার খবর প্রচারিত হয়।
(ইত্তেফাক, ১৭ জুলাই, ১৯৭১)
জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
যেকোনোভাবে ‘জয় বাংলা’ শব্দ দুটি লেখার সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করা যাবে না—এই নীতি নিয়েছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। ৭ জুন ইসলামাবাদ থেকে বার্তা এল। বলা হলো ‘জয় বাংলা’, ‘বাংলাদেশ’ চিহ্নযুক্ত নোট নাকি আসছে পাকিস্তানে। সেগুলো অবৈধ। পাঠক, খেয়াল করে দেখলেই বুঝতে পারবেন, এই সংবাদ প্রকাশিত হলে পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে যাবে, সীমান্তে নতুন ধরনের খেলা শুরু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ‘জয় বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশ’ লেখা মুদ্রা ঢুকছে অবরুদ্ধ দেশে। এই টাকা বৈধ কি অবৈধ, সেটা সামরিক সরকার জানানোর চেষ্টা করলেও আসল বার্তাটি পেয়ে গেছে স্বাধীনতাকামী মানুষ।
ইত্তেফাক খবরটি ছেপেছিল এইভাবে:
‘জয় বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশ’ চিহ্নযুক্ত নোট অবৈধ’
ইসলামাবাদ, ৭ই জুন—আজ কেন্দ্রীয় সরকারের এক প্রেস নোটে বলা হয়: সরকারের গোচরীভূত হইয়াছে যে, অনুপ্রবেশকারী এবং দুষ্কৃতকারীগণ তাহাদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অংশ হিসাবে ‘জয় বাংলা’ অথবা ‘বাংলাদেশ’ অথবা অনুরূপ কোনো কথা মুদ্রিত করিয়া কিংবা মার্কা দিয়া অথবা ছাপ দিয়া কিংবা এমবোস করিয়া কিংবা সিল দিয়া বিপুলসংখ্যক কারেন্সি নোট বাজারে ছাড়িয়াছে।
জনসাধারণকে সতর্ক করিয়া দেওয়া হইতেছে যে, এই ধরনের নোট বৈধ মুদ্রা নহে এবং এইগুলির আদৌ কোনো মূল্য নাই।
১৯৭১ সালের ৭ই জুনের ৮১ নং সামরিক আইনবিধি অনুসারে কোনো লোক যে কোনো ভাষায় অথবা কোনোভাবে এই ধরনের চিহ্ন সম্বলিত কোনো কারেন্সি নোটের মূল্য পাকিস্তান স্টেট ব্যাংক অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট হইতে দাবী অথবা গ্রহণ করিতে পারিবে না।
(ইত্তেফাক, ৮ জুন, ১৯৭১)
সত্যিই যে বাংলাদেশ জেগে উঠছে, তার আভাস পাওয়া যায় ২১ জুনের ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম কলামে ছাপা হওয়া এক খবরে। খবরটি লেখা হয়েছে খুবই রসঘন করে। কিন্তু তাতে স্পষ্ট হয়েছে, করাচির খালও বাংলাদেশি মুদ্রা থেকে মুক্ত নয়।
খবরটির শিরোনাম ছিল ‘করাচীর খালে বাংলা দেশ মুদ্রিত কারেন্সি নোট’।
করাচি, ১১ জুন (পিপিআই)—গত বুধবার সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট উইমেন কলেজের নিকটে নুন্নাহ খালে ‘বাংলা দেশ’ মুদ্রিত খণ্ড-বিখণ্ড ৫০০ ও ১০০ টাকার বহু কারেন্সি নোট ভাসিতে দেখা গেলে ফ্রেয়ার রোড এলাকায় দারুণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
ইহা দেখিয়া বহুসংখ্যক কিশোর ও বয়স্ক লোক নুন্নাহ খালে ঝাঁপাইয়া পড়ে। ইহাদের অনেকে নোটের ছিন্ন অংশসমূহ সংগ্রহ করিতে সক্ষম হয় এবং অনেকে আবার ইহাও দাবি করে যে, তাহারা ৫০০ টাকার গোটা নোটও ভাসিয়া যাইতে দেখিয়াছে।
এই খবর ছড়াইয়া পড়িলে হাজার হাজার লোক নুন্নাহর পাড়ে আসিয়া জমা হয় এবং অত্যুৎসাহী কিশোরদের নোট সংগ্রহ অভিযান প্রত্যক্ষ করে। এ ব্যাপারে মনে করা হইতেছে যে, কেহ হয়তো পুলিশের হাতে ধরা পড়িবার ভয়ে তাহার নোটগুলি খালে ফেলিয়া দিয়াছে।
(ইত্তেফাক, ১২ জুন, ১৯৭১)
পাকিস্তানি সামরিক সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল নির্দিষ্ট কিছু সংবাদ ছাপার ব্যাপারে। এ ব্যাপারে আমরা আগেই জানিয়েছি। এ রকম এক অবস্থায় আন্তর্জাতিক সংবাদকে তো ফেলা যায় না। আন্তর্জাতিক সংবাদে এমন কিছু থাকে, যা পাকিস্তান সরকারের জন্য খুব সুখকর নয়। সে রকমই একটি সংবাদ লুফে নিয়েছিল ইত্তেফাক। প্রথম পাতার অষ্টম কলামে নিরীহভাবে ছেপেছিল তা। কিন্তু যা বোঝার তা বুঝে নিয়েছে পাঠকমহল।
পাকিস্তানি বর্বরতার কথা ঠিকভাবে জানতে পারছে না পৃথিবী। গণহত্যার ভয়ে কত মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে ভারতে, তা-ও থাকছে অজানা। এ রকম একটি সময়ে জুলাই মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসে একটা খবর ছাপা হলো। সেই সংবাদেই জানা গেল ‘পদ্মা’ নামের এক পাকিস্তানি জাহাজ এসে ভিড়বে বাল্টিমোর সমুদ্রবন্দরে।
খবরটি পেয়ে বাল্টিমোর ও পেনসিলভানিয়ায় বসবাসরত একদল সাহসী মার্কিন নাগরিক এই জাহাজ অবরোধের ডাক দেন। এই জাহাজে করে অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হবে, সেই অস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করা হবে—এ কথা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর জাহাজটাকে বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হবে না বলে প্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন প্রতিবাদকারীরা। তাদের এই প্রতিবাদ নজরে পড়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের। মার্কিন সরকারের চতুর কূটনীতির এ ছিল এক মোক্ষম প্রতিবাদ। সব মানুষ প্রচার করেন, মার্কিন সরকার এই গণহত্যার সহযোগী। ফলে, বাল্টিমোর বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজ ভেড়া অসম্ভব হয়ে ওঠে। ছোট ছোট ডিঙি দিয়ে ঘিরে রাখা হয় পদ্মা নামের জাহাজটি। এই নাগরিকেরা জোরালো ভাষায় অস্ত্র দিয়ে বাঙালি হত্যার প্রতিবাদ করতে থাকেন। কোয়েকার বলে শান্তিবাদী খ্রিষ্টানদের একটি গোত্র এ কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিল। শান্তি ও মানবতার পক্ষে ছিল তাদের অবস্থান।
বিষয়টি শুরুতে চেপে রাখার চেষ্টা করেছিল মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু পরে তা আর গোপন থাকেনি। অগত্যা এক মার্কিন মুখপাত্র ঘটনাটি স্বীকার করতে বাধ্য হন। ইত্তেফাকে সংবাদটি এভাবে প্রকাশিত হয়েছিল:
মার্কিন মুখপাত্রের স্বীকারোক্তি
পদ্মায় সমরসম্ভার বোঝাই করিতে ডকারদের অসম্মতি ওয়াশিংটন, ১৬ই জুলাই (এপিপি/রয়টার)—পররাষ্ট্র দফতরের জনৈক মুখপাত্র স্বীকার করেন যে, বর্তমানে বাল্টিমোরে নোঙ্গরকৃত ৮৮৫৫ টনের পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ পদ্মায় মাল বোঝাই করিতে ডক শ্রমিকেরা অস্বীকার করিয়াছেন। এই জাহাজে পাকিস্তানের জন্য অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই করার কথা ছিল। আন্তর্জাতিক লং শোরমেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডকারদের করাচীভিত্তিক উক্ত জাহাজে মাল বোঝাই করিতে নিষেধ করিয়া দিয়াছেন। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতিতে উক্ত ইউনিয়ন নিরপেক্ষতা অবলম্বন করার প্রেক্ষিতে ডকারদের মাল বোঝাই করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। বর্তমানে উক্ত জাহাজ অস্ত্রশস্ত্রবহির্ভূত মালপত্র সংগ্রহের চেষ্টায় রহিয়াছে।
পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন যে, উক্ত জাহাজে বিমানের জন্য স্পেয়ার পার্টস, মিলিটারী ভেহিকলস অ্যান্ড শিপস এবং আর্টিলারীসহ ১২ লক্ষ ৩১ হাজার ৩৮ ডলার মূল্যের সরঞ্জামাদি, ইহাতে ২২ ক্যালিবর এবং ২২০০০ রাউন্ড অস্ত্রশস্ত্রও রহিয়াছে।
তিনি আরও বলেন যে, দি ফিলাডেলফিয়ার ফ্রেন্ডস অব ইস্টবেঙ্গল-এর বিক্ষোভকারীরা গত বুধবারে উক্ত মালবাহী জাহাজকে একটি অননুমোদিত সংবাদের উপর ভিত্তি করিয়া মাল বোঝাই হইতে বিরত রাখার চেষ্টা করে। উহাতে পাকিস্তানের জন্য নিষিদ্ধ মিলিটারী সরঞ্জাম বহন করার খবর প্রচারিত হয়।
(ইত্তেফাক, ১৭ জুলাই, ১৯৭১)
জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাজাগানিয়া একটি খবর প্রচারিত হওয়ার পর দেশব্যাপী বেশ আলোচনা চলছে। ৫ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ইউ থান শিউ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা...
২১ ঘণ্টা আগেসমগ্র বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখছে। আমূল বদলে যাওয়ার স্বপ্ন। বাংলাদেশকে এই স্বপ্ন দেখাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, এই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁকে কেন্দ্র করেই স্বপ্নগুলো আবর্তিত হতে শুরু করেছে।
২১ ঘণ্টা আগেভারতবর্ষে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ সহাবস্থান করলেও ঔপনিবেশিক শাসন এবং ব্রিটিশদের বিভেদমূলক রাজনৈতিক কৌশলের কারণে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গভীর হয়ে ওঠে। তারই চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে ১৯৪৭ সালে, যখন উপমহাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান।
২১ ঘণ্টা আগেকেন্দ্রীয় আকর্ষণ হিসেবে উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। আশির দশকে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রা আজ জাতীয় পরিচয়ের এক জীবন্ত প্রতীক। ২০১৬ সালে ইউনেসকো একে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আমাদের সাংস্কৃতিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে...
২১ ঘণ্টা আগে