অর্ণব সান্যাল
বিশ্বে এখন সংকট ও সংঘাত চলছে। সংকট থেকে সংঘাত, নাকি সংঘাতের কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা নির্ণয় করা কঠিন। অনেকটা ডিম আগে নাকি মুরগি আগের মতো বিষয়। তবে সংকটের পাকানো দড়ির দুই প্রান্ত ধরে টানাটানি করতে থাকা পক্ষগুলো যে এ ক্ষেত্রে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল, সেটি বুঝতে সমস্যা হয় না। কোকিলের ডিমে যেমন কাক তা দেয়, তেমনি গ্রামের এক মোড়ল সংকট সৃষ্টি করলে আরেকজন তাকে নিজ দায়িত্বে সংঘাতে পৌঁছে দেন!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মূলত বিশ্বায়িত বিশ্বে বা গ্রামে মোড়ল হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠেছিল। এর পেছনে কোনো না কোনো পক্ষে নিরাপত্তাহীনতার বোধ ছিল। ধরুন, জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটেনি। পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে মার্কিনপন্থী বিশ্বনাগরিকেরা বলে বসতে পারেন, ‘তবে কি বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতো? এখনো চলত।’ অর্থাৎ তাদের মূল বক্তব্যই হলো, মার্কিন সেই পরমাণু হামলাই বিশ্বযুদ্ধের ইতি টেনেছে। কিন্তু লাখ লাখ মানুষ কয়েক ঘণ্টায় মেরে যে যুদ্ধ শেষ হয়, সেটি এক অর্থে কি ওই ধ্বংসযজ্ঞকেই সমর্থন করে না? তখন মনে হতেই পারে, এক নৃশংসতা বন্ধ করতে হলে আরও নির্মম মাত্রায় পৌঁছাতেই হবে। কারণ তৈরি উদাহরণ আছেই যে, অবিচারই অবিচারের হন্তারক! এসব থেকেই হয়তো বিষে বিষক্ষয় প্রবাদের উৎপত্তি।
পরমাণু বোমার সফল প্রয়োগ ঠেকানো গেলে হয়তো এবারের ইউক্রেন সংকটেও আশঙ্কার পাশাপাশি একটা আশা থাকত। ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভ্লাদিমির পুতিন কারও ভাষায় সামরিক অভিযান, কারও ভাষায় আগ্রাসন শুরু করার পর থেকেই পরমাণু বোমা ব্যবহারের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষকই বলছেন যে, পুতিন পারমাণবিক বোমা ছোড়ার বোতাম টিপে দিতেই পারেন। কথা হলো, এই বোমা যে জনবহুল স্থানে ব্যবহার করা যায় এবং তা ব্যবহারের পরও বীরদর্পে বিশ্বজুড়ে ছড়ি ঘোরানো যায়, সেই পথ প্রথমে দেখিয়েছে কে? যদি সেই উদাহরণ না থাকত, তবে একধরনের নৈতিক বাধা বর্তমান থাকত, যা অতিক্রমের আগে যেকোনো পরাশক্তি কয়েক দফা ভাবত। কিন্তু সেই বাধা নিজে ডিঙিয়ে অন্যকে বারংবার নিষেধ করা কি নিজে পেটপুরে মিষ্টি খেয়ে অন্যকে ডায়াবেটিসের ভয় দেখানোর মতো নয়?
এর মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ডিঙিয়েছে বলে রাশিয়ারও তা ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে এই এগিয়ে ও পিছিয়ে যাওয়ার ‘অর্থহীন’ খেলার আয়োজন ও বাস্তবায়নের বিষয়টি এসব পরাশক্তিই দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। এরাই আবার আঞ্চলিক ঝগড়া মেটানোর কাজটি করে। এরাই সবাইকে সবক দিয়ে বেড়ায়। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের চুক্তিতে কি পরাশক্তিগুলো স্বাক্ষর করেছে? করেনি। নিজেরা যে রেসের অবিসংবাদিত ঘোড়া হয়ে থাকতে চায়, তাতে নতুন ঘোড়ার আমদানি বন্ধ করাই আসলে তাদের মূল লক্ষ্য। তাই নতুন কোনো রাষ্ট্র যখন পরমাণু বোমা তৈরির পথে এগোয়, তখন তার ওপর অর্থনৈতিক ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এসবের পোশাকি নাম হয় ‘বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধি রক্ষা’। আদতে এই খেলার পূর্ণ উদ্দেশ্য হলো নাটাই শুধু নিজেদের হাতে রাখা, ঘুড়ি যার আকাশেই উড়ুক না কেন!
ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পক্ষের পশ্চিমা দেশগুলো অনেক দিন ধরেই গলা ফাটাচ্ছে ‘আগ্রাসন’ নিয়ে। সেই আগ্রাসন যখন হলোই, তখন ভলোদিমির জেলেনস্কির পাশে তারা কি ত্বরিতগতিতে রসদ নিয়ে দাঁড়িয়েছিল? না, দাঁড়ায়নি। তাই জেলেনস্কিকে দুঃখ করে বলতে হয়েছিল, নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেয়ে গোলাবারুদ ও অস্ত্র দিলে ভালো হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ভালো করেই জানত, ইউক্রেনকে ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করতে গেলে উষ্ণ প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না পুতিন। হয়তো শীতলতা হিমাঙ্কের কতটা নিচে নামবে, সেই হিসাবটাই কষা হয়নি। তবে কি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা চালানোর জন্যই ইউক্রেনকে ন্যাটো-ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছিল, ‘এসো, আমার ঘরে এসো?’ দাওয়াত দিয়ে যদি অতিথিকে চা-বিস্কুট খাওয়ানোর সামর্থ্য না-ই থাকে, তবে ডাকা কেন?
ফলে ইউক্রেনে অনেকটা বাধাহীনভাবেই নিজেদের সেনা ও সামরিক যানের বহর ঢুকিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। সামরিক শক্তির পার্থক্য বিবেচনায় সেটাই স্বাভাবিক। কারণ রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনে পশ্চিমাদের অবাধ আনাগোনা ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা’র জন্য ঝুঁকি। অন্তত পুতিন তা-ই মনে করেন। তবে পুতিনের দেশের নাগরিকেরা তেমনভাবে হয়তো ভাবেন না। নইলে রুশ দেশে সীমাহীন নিপীড়নের হুমকি উপেক্ষা করে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ দেখা যেত না। আসলে এই সংঘাত বা সংকটে অসাধারণেরা কেউই তো সাধারণদের কথা ভাবছেন না। তাই ইউক্রেনীয়রা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, আকাশ থেকে ভেসে আসা বোমা-মিসাইল থেকে বাঁচতে অদৃষ্টের আশায় বসে থাকছেন। অন্যদিকে রুশ নাগরিকেরা বুঝতে পারছেন ঠিকই যে, যুদ্ধের খরচটা আদতে তাদের পেট ও পকেটের ওপর দিয়েই যাবে। পুতিনের অবকাশ যাপনের বিলাসিতা তাতে আটকাবে না কখনোই।
ইউক্রেন ইস্যুতে হালনাগাদ আশঙ্কা হলো, পুতিন ইউরোপে তেল ও গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারেন। কারণ রাশিয়ার ওপর যে পরিমাণ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তাতে একটা জুতসই জবাব না দিলে যে মান থাকে না! ফলে পুরো বিশ্ববাজারেই অস্থিরতা, এমনকি নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে, যদিও রাশিয়া থেকে ক্রুড অয়েল আমদানির তালিকায় ঢের পেছনে মার্কিনিরা। অর্থাৎ, ক্ষতি যতটা না যুক্তরাষ্ট্রের হবে, তার চেয়ে বেশি হবে অন্যদের। এ ধরনের সংকটেই আবার রাজনৈতিক সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। বর্তমান সংকটের হিসাবই হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে মানের দিক থেকে রুবল নিঃস্ব হয়ে গেলেও পুতিনের কিছু যায়-আসে না। কারণ তাঁর উদ্দেশ্য মুকুট রক্ষায় ‘অমর’ হওয়া। আর বাইডেনের উদ্দেশ্য হয়তো মেক আমেরিকা ‘ডমিন্যান্ট’ অ্যাগেইন!
মোদ্দা কথা, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় সংকট সবচেয়ে দামি পণ্য। এটি যত দিন টিকিয়ে রাখা যায়, ততই লাভবান হয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ। তাই রাশিয়া যখন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান বা আগ্রাসন চালানোর প্রস্তুতি নেয়, তখন সেটিকে ত্বরান্বিত করার জন্য জ্বালানি (বা উসকানি) সরবরাহ করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। পুতিনদের আগ্রহ যেমন নিজের রাজত্ব টেকানোর জন্য সংকটকে ব্যবহার করা, ঠিক তেমনি জো বাইডেনদেরও উৎসাহ থাকে ‘মুক্তিদাতা’ হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার। পুতিনরা যখন সংকট ও সংঘাতকে পুঁজি করে জনমত অগ্রাহ্য করার উপায় প্রতিষ্ঠা করেন, ঠিক তখনই সেটিকে বড় বড় বিলবোর্ডে উপস্থাপন করে বাইডেনরা মধ্যবর্তী বা চূড়ান্ত নির্বাচনে জনমত নিজেদের দিকে টেনে নেন। এহেন পরিস্থিতিতে পুতিনকে বাইডেনের সহযোগী বলবেন, নাকি বাইডেনকে পুতিনের—সেটাই এক ধাঁধা।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিশ্বে এখন সংকট ও সংঘাত চলছে। সংকট থেকে সংঘাত, নাকি সংঘাতের কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা নির্ণয় করা কঠিন। অনেকটা ডিম আগে নাকি মুরগি আগের মতো বিষয়। তবে সংকটের পাকানো দড়ির দুই প্রান্ত ধরে টানাটানি করতে থাকা পক্ষগুলো যে এ ক্ষেত্রে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল, সেটি বুঝতে সমস্যা হয় না। কোকিলের ডিমে যেমন কাক তা দেয়, তেমনি গ্রামের এক মোড়ল সংকট সৃষ্টি করলে আরেকজন তাকে নিজ দায়িত্বে সংঘাতে পৌঁছে দেন!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মূলত বিশ্বায়িত বিশ্বে বা গ্রামে মোড়ল হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠেছিল। এর পেছনে কোনো না কোনো পক্ষে নিরাপত্তাহীনতার বোধ ছিল। ধরুন, জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটেনি। পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে মার্কিনপন্থী বিশ্বনাগরিকেরা বলে বসতে পারেন, ‘তবে কি বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতো? এখনো চলত।’ অর্থাৎ তাদের মূল বক্তব্যই হলো, মার্কিন সেই পরমাণু হামলাই বিশ্বযুদ্ধের ইতি টেনেছে। কিন্তু লাখ লাখ মানুষ কয়েক ঘণ্টায় মেরে যে যুদ্ধ শেষ হয়, সেটি এক অর্থে কি ওই ধ্বংসযজ্ঞকেই সমর্থন করে না? তখন মনে হতেই পারে, এক নৃশংসতা বন্ধ করতে হলে আরও নির্মম মাত্রায় পৌঁছাতেই হবে। কারণ তৈরি উদাহরণ আছেই যে, অবিচারই অবিচারের হন্তারক! এসব থেকেই হয়তো বিষে বিষক্ষয় প্রবাদের উৎপত্তি।
পরমাণু বোমার সফল প্রয়োগ ঠেকানো গেলে হয়তো এবারের ইউক্রেন সংকটেও আশঙ্কার পাশাপাশি একটা আশা থাকত। ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভ্লাদিমির পুতিন কারও ভাষায় সামরিক অভিযান, কারও ভাষায় আগ্রাসন শুরু করার পর থেকেই পরমাণু বোমা ব্যবহারের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষকই বলছেন যে, পুতিন পারমাণবিক বোমা ছোড়ার বোতাম টিপে দিতেই পারেন। কথা হলো, এই বোমা যে জনবহুল স্থানে ব্যবহার করা যায় এবং তা ব্যবহারের পরও বীরদর্পে বিশ্বজুড়ে ছড়ি ঘোরানো যায়, সেই পথ প্রথমে দেখিয়েছে কে? যদি সেই উদাহরণ না থাকত, তবে একধরনের নৈতিক বাধা বর্তমান থাকত, যা অতিক্রমের আগে যেকোনো পরাশক্তি কয়েক দফা ভাবত। কিন্তু সেই বাধা নিজে ডিঙিয়ে অন্যকে বারংবার নিষেধ করা কি নিজে পেটপুরে মিষ্টি খেয়ে অন্যকে ডায়াবেটিসের ভয় দেখানোর মতো নয়?
এর মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ডিঙিয়েছে বলে রাশিয়ারও তা ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে এই এগিয়ে ও পিছিয়ে যাওয়ার ‘অর্থহীন’ খেলার আয়োজন ও বাস্তবায়নের বিষয়টি এসব পরাশক্তিই দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। এরাই আবার আঞ্চলিক ঝগড়া মেটানোর কাজটি করে। এরাই সবাইকে সবক দিয়ে বেড়ায়। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের চুক্তিতে কি পরাশক্তিগুলো স্বাক্ষর করেছে? করেনি। নিজেরা যে রেসের অবিসংবাদিত ঘোড়া হয়ে থাকতে চায়, তাতে নতুন ঘোড়ার আমদানি বন্ধ করাই আসলে তাদের মূল লক্ষ্য। তাই নতুন কোনো রাষ্ট্র যখন পরমাণু বোমা তৈরির পথে এগোয়, তখন তার ওপর অর্থনৈতিক ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এসবের পোশাকি নাম হয় ‘বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধি রক্ষা’। আদতে এই খেলার পূর্ণ উদ্দেশ্য হলো নাটাই শুধু নিজেদের হাতে রাখা, ঘুড়ি যার আকাশেই উড়ুক না কেন!
ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পক্ষের পশ্চিমা দেশগুলো অনেক দিন ধরেই গলা ফাটাচ্ছে ‘আগ্রাসন’ নিয়ে। সেই আগ্রাসন যখন হলোই, তখন ভলোদিমির জেলেনস্কির পাশে তারা কি ত্বরিতগতিতে রসদ নিয়ে দাঁড়িয়েছিল? না, দাঁড়ায়নি। তাই জেলেনস্কিকে দুঃখ করে বলতে হয়েছিল, নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেয়ে গোলাবারুদ ও অস্ত্র দিলে ভালো হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ভালো করেই জানত, ইউক্রেনকে ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করতে গেলে উষ্ণ প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না পুতিন। হয়তো শীতলতা হিমাঙ্কের কতটা নিচে নামবে, সেই হিসাবটাই কষা হয়নি। তবে কি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা চালানোর জন্যই ইউক্রেনকে ন্যাটো-ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছিল, ‘এসো, আমার ঘরে এসো?’ দাওয়াত দিয়ে যদি অতিথিকে চা-বিস্কুট খাওয়ানোর সামর্থ্য না-ই থাকে, তবে ডাকা কেন?
ফলে ইউক্রেনে অনেকটা বাধাহীনভাবেই নিজেদের সেনা ও সামরিক যানের বহর ঢুকিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। সামরিক শক্তির পার্থক্য বিবেচনায় সেটাই স্বাভাবিক। কারণ রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনে পশ্চিমাদের অবাধ আনাগোনা ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা’র জন্য ঝুঁকি। অন্তত পুতিন তা-ই মনে করেন। তবে পুতিনের দেশের নাগরিকেরা তেমনভাবে হয়তো ভাবেন না। নইলে রুশ দেশে সীমাহীন নিপীড়নের হুমকি উপেক্ষা করে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ দেখা যেত না। আসলে এই সংঘাত বা সংকটে অসাধারণেরা কেউই তো সাধারণদের কথা ভাবছেন না। তাই ইউক্রেনীয়রা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, আকাশ থেকে ভেসে আসা বোমা-মিসাইল থেকে বাঁচতে অদৃষ্টের আশায় বসে থাকছেন। অন্যদিকে রুশ নাগরিকেরা বুঝতে পারছেন ঠিকই যে, যুদ্ধের খরচটা আদতে তাদের পেট ও পকেটের ওপর দিয়েই যাবে। পুতিনের অবকাশ যাপনের বিলাসিতা তাতে আটকাবে না কখনোই।
ইউক্রেন ইস্যুতে হালনাগাদ আশঙ্কা হলো, পুতিন ইউরোপে তেল ও গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারেন। কারণ রাশিয়ার ওপর যে পরিমাণ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তাতে একটা জুতসই জবাব না দিলে যে মান থাকে না! ফলে পুরো বিশ্ববাজারেই অস্থিরতা, এমনকি নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে, যদিও রাশিয়া থেকে ক্রুড অয়েল আমদানির তালিকায় ঢের পেছনে মার্কিনিরা। অর্থাৎ, ক্ষতি যতটা না যুক্তরাষ্ট্রের হবে, তার চেয়ে বেশি হবে অন্যদের। এ ধরনের সংকটেই আবার রাজনৈতিক সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। বর্তমান সংকটের হিসাবই হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে মানের দিক থেকে রুবল নিঃস্ব হয়ে গেলেও পুতিনের কিছু যায়-আসে না। কারণ তাঁর উদ্দেশ্য মুকুট রক্ষায় ‘অমর’ হওয়া। আর বাইডেনের উদ্দেশ্য হয়তো মেক আমেরিকা ‘ডমিন্যান্ট’ অ্যাগেইন!
মোদ্দা কথা, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় সংকট সবচেয়ে দামি পণ্য। এটি যত দিন টিকিয়ে রাখা যায়, ততই লাভবান হয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ। তাই রাশিয়া যখন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান বা আগ্রাসন চালানোর প্রস্তুতি নেয়, তখন সেটিকে ত্বরান্বিত করার জন্য জ্বালানি (বা উসকানি) সরবরাহ করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। পুতিনদের আগ্রহ যেমন নিজের রাজত্ব টেকানোর জন্য সংকটকে ব্যবহার করা, ঠিক তেমনি জো বাইডেনদেরও উৎসাহ থাকে ‘মুক্তিদাতা’ হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার। পুতিনরা যখন সংকট ও সংঘাতকে পুঁজি করে জনমত অগ্রাহ্য করার উপায় প্রতিষ্ঠা করেন, ঠিক তখনই সেটিকে বড় বড় বিলবোর্ডে উপস্থাপন করে বাইডেনরা মধ্যবর্তী বা চূড়ান্ত নির্বাচনে জনমত নিজেদের দিকে টেনে নেন। এহেন পরিস্থিতিতে পুতিনকে বাইডেনের সহযোগী বলবেন, নাকি বাইডেনকে পুতিনের—সেটাই এক ধাঁধা।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখনো তিন মাসও হয়নি। এই তিনটা মাসের মধ্যেই আমাদের সেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই চেহারা নিয়ে কোনো দিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না।’ সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
২৫ মিনিট আগেঅন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরদিন থেকেই বিভিন্ন মহল সরকারের কাছে নানা দাবিদাওয়া উত্থাপন করে আসছে। এসব দাবিদাওয়া আদায়ের কৌশল হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, সচিবালয়, শিক্ষা বোর্ডসহ রাষ্ট্রীয় দপ্তর, রাজপথ ইত্যাদি ঘেরাওয়ের একটি প্রবণতাও বেশ জোরেশোরেই লক্ষ করা যাচ্ছে
১৩ ঘণ্টা আগেবিরোধী দলবিহীন দুটি ভোট ও একটি নৈশ ভোটের ‘বিশাল জয়ে’ তৃপ্তির ঢেকুর তুলে শেখ হাসিনা দিব্যি কর্তৃত্ববাদী পন্থায় এবং এক ভয়ের রাজত্ব কায়েম করে সরকার পরিচালনা করে আসছিলেন। আর পারিষদবর্গ ছিলেন স্তুতিতে মুখর। একদিকে তাঁদের ছিল জেদ ও দম্ভ, অন্যদিকে বিত্তশালী হয়ে ওঠার আলাদিনের চেরাগ। মানুষের...
১৩ ঘণ্টা আগেওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান এক সংগীত আবহে বড় হয়েছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবারের সদস্য তিনি। সেই ধারা তাঁরা এখনো বজায় রেখে চলছেন। তাঁর বাবা ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান...
১৪ ঘণ্টা আগে