ভারত সংখ্যালঘু নির্যাতনের আঁতুড়ঘর: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ১১
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ২৭
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন রুহুল কবির রিজভী। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি ভারতের বর্তমান সরকারকে ধর্মীয় উগ্রবাদ পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, দেশটি এখন সংখ্যালঘু নির্যাতনের ‘আঁতুড়ঘর’ হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভারত নিজেদের দেশে সংখ্যালঘু মুসলিম, খ্রিষ্টান, দলিত হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে অযাচিতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এটি তাদের দ্বিমুখী নীতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর বছরের পর বছর নির্যাতন চলছে। গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মানুষ হত্যা, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া, এমনকি মসজিদ ধ্বংস করা হচ্ছে।’

রিজভী অভিযোগ করেন যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উগ্র হিন্দুত্ববাদকে উৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, ‘ভারত আজ সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মুসলিমদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে, তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক।’ তিনি যোগ করেন, ‘কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, মুঘল আমলের ইতিহাস মুছে ফেলা এবং গরুর মাংস বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপগুলো ধর্মীয় বিদ্বেষকে উসকে দিয়েছে।’

ভারতের বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রম নিয়েও রিজভী সরব হন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের ক্রমাগত আগ্রাসী মনোভাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সীমান্তে হত্যা, অপপ্রচার, এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে অযৌক্তিক মন্তব্যের মাধ্যমে তারা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আগরতলায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলা ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন। ভারতের এমন আচরণ শুধু কূটনৈতিক শিষ্টাচার নয়, বরং তা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।’

রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনোভাবেই ভারতের আক্রমণাত্মক মনোভাবের কাছে মাথা নত করবে না। আমরা স্বাধীন জাতি, যারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ভারতের দাসত্ব কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখে, তাহলে এ দেশের মানুষ একযোগে রুখে দাঁড়াবে।’

ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে রিজভী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের যে রাজ্যগুলোতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে, সেখানে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ভারতের মতো একটি বৃহৎ দেশে উগ্রবাদীদের দৌরাত্ম্য সামগ্রিক শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য হুমকিস্বরূপ।’

রিজভী বলেন, ‘ভারতের সাধারণ জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এবং বিজেপির সাম্প্রদায়িক কার্যক্রম দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।’

ভারতকে নিজেদের দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদি, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, যুবদল নেতা গিয়াস উদ্দিন মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড’ তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সাগরে নিম্নচাপ, কত দিন বৃষ্টি হতে পারে জানাল আবহাওয়া দপ্তর

শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান যার যার স্থানে শ্রেষ্ঠ: গয়েশ্বর

র‌্যাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি: নূর খান লিটন

হাসিনার আমলে রাশিয়ার সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি, জড়াল টিউলিপের নামও

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত