পানি আগুন নেভাতে যেভাবে সাহায্য করে, কখন ঝুঁকি বাড়ায়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮: ০০
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৫: ৪২

আগুন নেভানোর জন্য পানি ব্যবহার করার বিষয়টি ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়। আগুন নেভানোর জন্য এর গুরুত্ব বোঝানো হলেও পানি ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে আগুন নেভে তা বোঝানো কিন্তু কঠিন!

যুক্তরাষ্ট্রের মনটানা রাজ্যে অবস্থিত ইউএস ফরেস্ট সার্ভিসের সায়েন্স ল্যাবরেটরির অগ্নিনির্বাপণ বিশেষজ্ঞ সারা ম্যাকঅ্যালিস্টারের বলেন, ‘পানি আগুন নেভাতে পারে কারণ এটি খুব ভালো তাপ শোষক। অর্থাৎ আগুনের তাপ ভালোভাবে শুষে নিতে পারে পানি।’ 

পানি কিন্তু সরাসরি আগুন নেভায় না। আগুন জ্বলার জন্য তিনটি জিনিস প্রয়োজন—জ্বালানি, অক্সিজেন ও তাপের উৎস বা তাপ। 

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার দহন বিক্রিয়া বিশেষজ্ঞ মিখায়েল গলনার বলেন, সরাসরি আগুন নেভানোর পরিবর্তে পানি আগুন জ্বালানোর উপাদানের ওপর কাজ করে। পানি কাঠ, কাগজ বা কয়লার মতো যেকোনো জ্বালানির দহন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কাঠ পোড়ার সময় আগুনের তাপ কাঠের উপাদানকে বাষ্পীভূত করে গ্যাসে রূপান্তরিত করে। এই গ্যাস আবার আগুনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। আর পানি তাপ শোষণ করে। আগুনের যথেষ্ট শক্তি না থাকলে কাঠে পানি ঢাললে তা আগুনের প্রায় সব তাপ শুষে নেয়। ফলে কাঠ কিছুটা ঠান্ডা হয়ে যায়। সেসময় জ্বলার মতো যথেষ্ট তাপশক্তি থাকে না, ফলে আগুন নিভে যায়। 

সম্ভাব্য জ্বালানিকে ভিজিয়ে রাখলেও আগুন জ্বলার সম্ভাবনা কমে যায়। আগুন লাগলেও বেশি ছড়াতে পারে না। তাই বিভিন্ন দেশের ভবনে স্প্রিংকলার সিস্টেম ব্যবহার হয়। আগুন লেগেছে এমন সংকেত পেলে পাইপের মাধ্যমে সব জায়গায় পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সম্ভাব্য জ্বালানি ভিজে যায়। দমকল বাহিনী আসার আগে পর্যন্ত আগুনের তেজ কম রাখতে এই কৌশল বেশ কাজে দেয়।

মিখায়েল বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে আগুন নেভানোর জন্য পানির বদলে জলীয় বাষ্প ব্যবহার করতে হয়। যেমন: কোনো প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সার্ভার রুমের কথা কল্পনা করুন। সেখানে আগুন লাগলে, তা নেভানোর জন্য পানি ব্যবহার করলে হিতে–বিপরীত হতে পারে। কারণ আগুনের মতো পানিও বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ক্ষতি করে, এতে এগুলো বিস্ফোরিত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সরাসরি পানির বদলে জলীয় বাষ্প ব্যবহার করা বেশি কার্যকর। জলীয় বাষ্পের কণাগুলো অনেক ছোট হয় যা অক্সিজেনকে স্থানচ্যুত করতে পারে। সেই সঙ্গে আগুনের জ্বালানিকে ঠান্ডা করে। 

সারা ম্যাকঅ্যালিস্টার বলেন, সাধারণ আগুন হলে নেভানোর জন্য পানিই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু সব ধরনের আগুন নেভানোর জন্য পানি উপযুক্ত নয়। যেমন—দাবানল। এ ক্ষেত্রে আগুনের উত্তাপ এত বেশি থাকে যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় দাবানলের আগুনে পানি ছিটানো হয়। তবে সেটি আগুন নেভানোর জন্য না। এটি যেন ধীর গতিতে ছড়ায়, এ জন্য পানি ব্যবহার করা হয়। এতে অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য কিছুটা বাড়তি সময় পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে জ্বালানি সরিয়ে ফেলে বালি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করেন দমকল কর্মীরা। কিন্তু আগুনের শিখার উচ্চতা ৫০ ফুটের (১৫ মিটার) বেশি হলে সেখানে আর কিছু করার থাকে না। 

সবক্ষেত্রে পানি দিয়েই আগুন নেভানো সঠিক কৌশল নয়। ইলেকট্রিক শর্টসার্কিট বা গোলযোগ থেকে আগুন ধরলে কখনোই সেই আগুন নেভাতে পানি ছিটানো যাবে না। এতে করে যে ব্যক্তি পানি দেবেন তিনিও বিদ্যুতায়িত হতে পারেন। 

রাসায়নিক থেকে সৃষ্ট আগুন খুব সতর্কতার সঙ্গে নেভাতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সাহায্য নিতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়ে আগুন নিভিয়ে থাকেন তাঁরা। 

গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন ধরলে প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে গ্যাসের লাইন বন্ধ করার। এরপর ভেজা (সম্ভব হলে) বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। 
 
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স ও বিবিসি

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত