অনলাইন ডেস্ক
মহাকাশ ভ্রমণ রোমাঞ্চকর বলে মনে হলেও এটি বেশ চ্যালেঞ্জিং এক অভিযান। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) নভোচারীদের জন্য খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে একাধিক কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে, যা শুধু স্বাদ বা বৈচিত্র্যের জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার খাতিরে গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশে মাইক্রোগ্রাভিটি বা প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ পরিস্থিতিতে কিছু খাবার গ্রহণে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। নাসা সেই সমস্ত খাবার মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় না, যেগুলো ওই পরিবেশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
নিচে এমন ১০টি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো মহাকাশে নেওয়া নিষিদ্ধ—
১. রুটি
পৃথিবীতে রুটি সাধারণ একটি খাদ্য হলেও মহাকাশে এর কোনো স্থান নেই। রুটির টুকরো বা গুঁড়ো মাইক্রোগ্রাভিটির মধ্যে ভেসে ভেসে মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি বা ফিল্টারে আটকে যেতে পারে। এমনকি নভোচারীরা সেগুলো শ্বাসের মধ্যে টেনে নিতে পারেন, যা শ্বাসরোধের কারণ হতে পারে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে নাসা নভোচারীদের টরটিলা (রুটির মতো একধরনের খাবার) সরবরাহ করে, যা কোনো গুঁড়ো তৈরি করে না এবং বেশি নিরাপদ।
২. লবণ ও গোলমরিচ
পৃথিবীতে খাবার তৈরির পর লবণ ও গোলমরিচ আলাদাভাবে ছড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। তবে প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণে লবণ এবং গোলমরিচের কণা ভাসতে থাকে, যা মহাকাশযানের বাতাস চলাচলব্যবস্থায় প্রবেশ করে সমস্যায় ফেলতে পারে। তাই নাসা তরল লবণ ও গোলমরিচ সরবরাহ করে, যা সহজে ও নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা যায়।
৩. কার্বনেটেড পানীয়
মহাকাশে কার্বনেটেড পানীয়ের সেবন একেবারেই অনুপযুক্ত। পৃথিবীতে গ্যাসগুলো পানীয় থেকে ওপরে উঠে আসে। তবে মহাকাশে গ্যাস ও পানীয় একসঙ্গে থাকে, যা নভোচারীদের অস্বস্তি ও পেট ফাঁপার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, সেগুলো মহাকাশে নেওয়া হয় না।
৪. কাঁচা দুধ
কাঁচা দুধের বিশেষ একটি সমস্যা আছে, তা হলো এটি প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণে খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। দুধের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, মহাকাশে সাধারণত পাউডার বা অতি পাস্তুরিত দুধ পাঠানো হয়, যা অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকে এবং মাইক্রোগ্রাভিটিতে সহজেই পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
৫. মদ
মদ মহাকাশে নেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও কিছু প্রাথমিক সোভিয়েত মহাকাশ মিশনে মদ খাওয়ার অনুমতি ছিল। তবে নাসা এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। মদ খেলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায় এবং মহাকাশযানের পানি পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ সিস্টেমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এতে নভোচারীদের নিরাপত্তা এবং মহাকাশযানের সিস্টেমের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়।
৬. কাঁচা শাক-সবজি
কাঁচা শাক-সবজি: যেমন পালংশাক ও লেটুস মহাকাশে পাঠানো হয় না। এগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং মাইক্রোগ্রাভিটির মধ্যে ছোট অংশগুলো ভেসে থাকতে পারে, যা মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি বা ভেন্টিলেশন সিস্টেমে আটকে যেতে পারে।
৭. আইসক্রিম
আইসক্রিম সাধারণত মহাকাশে নেওয়া হয় না। কারণ এটি জমাতে অনেক শক্তি লাগে, যা মহাকাশযানের শক্তির জন্য কার্যকর নয়। মাইক্রোগ্রাভিটির মধ্যে আইসক্রিম গলে যায়, যা নভোচারীদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করে। যদিও নাসা মাঝে মাঝে ছোট পরিসরে হিমায়িত খাবার পাঠায়। তবে নিয়মিত আইসক্রিম পাঠানো হয় না।
৮. মাছ ও অন্যান্য গন্ধযুক্ত খাবার
মাছ ও গন্ধযুক্ত অন্যান্য খাবারও মহাকাশে নিষিদ্ধ করা হয়। মহাকাশযানের ভেতর শক্ত গন্ধ দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং এটি অন্য খাবারের স্বাদকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া, মহাকাশে গন্ধ সঠিকভাবে বের হতে পারে না। ফলে তা নভোচারীদের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে।
৯. তাজা ফলমূল
তাজা ফলমূল খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং মহাকাশের ভেতরে এগুলোর পচন ধরা শুরু করতে পারে। আরও একটি সমস্যা হলো, কিছু ফল গ্যাস সৃষ্টি করে। যেমন: ইথিলিনের মতো গ্যাস অন্য খাবারের পচন ত্বরান্বিত করে। এ জন্য মহাকাশচারীরা সাধারণত ফ্রিজ-ড্রাইড ফলমূল খেয়ে থাকেন।
১০. নরম পনির
নরম পনির আরেকটি নিষিদ্ধ খাবার। কারণ, এগুলো সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রিজে না রাখলে এগুলোর বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় এবং মহাকাশযানের সংকীর্ণ পরিবেশে এর দুর্গন্ধ আটকে থাকে।
মহাকাশে খাদ্য বিধিনিষেধের গুরুত্ব খাবারের সঠিক নির্বাচন শুধু স্বাদ বা বৈচিত্র্যের জন্য নয়, বরং নভোচারীদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা ও মহাকাশযানের সিস্টেমের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিধিনিষেধ মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মহাকাশ খাদ্যপ্রযুক্তি আরও উন্নতি হলে ভবিষ্যতে কিছু নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা হয়তো পরিবর্তিত হবে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
আরও খবর পড়ুন:
মহাকাশ ভ্রমণ রোমাঞ্চকর বলে মনে হলেও এটি বেশ চ্যালেঞ্জিং এক অভিযান। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) নভোচারীদের জন্য খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে একাধিক কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে, যা শুধু স্বাদ বা বৈচিত্র্যের জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার খাতিরে গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশে মাইক্রোগ্রাভিটি বা প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ পরিস্থিতিতে কিছু খাবার গ্রহণে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। নাসা সেই সমস্ত খাবার মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় না, যেগুলো ওই পরিবেশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
নিচে এমন ১০টি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো মহাকাশে নেওয়া নিষিদ্ধ—
১. রুটি
পৃথিবীতে রুটি সাধারণ একটি খাদ্য হলেও মহাকাশে এর কোনো স্থান নেই। রুটির টুকরো বা গুঁড়ো মাইক্রোগ্রাভিটির মধ্যে ভেসে ভেসে মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি বা ফিল্টারে আটকে যেতে পারে। এমনকি নভোচারীরা সেগুলো শ্বাসের মধ্যে টেনে নিতে পারেন, যা শ্বাসরোধের কারণ হতে পারে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে নাসা নভোচারীদের টরটিলা (রুটির মতো একধরনের খাবার) সরবরাহ করে, যা কোনো গুঁড়ো তৈরি করে না এবং বেশি নিরাপদ।
২. লবণ ও গোলমরিচ
পৃথিবীতে খাবার তৈরির পর লবণ ও গোলমরিচ আলাদাভাবে ছড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। তবে প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণে লবণ এবং গোলমরিচের কণা ভাসতে থাকে, যা মহাকাশযানের বাতাস চলাচলব্যবস্থায় প্রবেশ করে সমস্যায় ফেলতে পারে। তাই নাসা তরল লবণ ও গোলমরিচ সরবরাহ করে, যা সহজে ও নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা যায়।
৩. কার্বনেটেড পানীয়
মহাকাশে কার্বনেটেড পানীয়ের সেবন একেবারেই অনুপযুক্ত। পৃথিবীতে গ্যাসগুলো পানীয় থেকে ওপরে উঠে আসে। তবে মহাকাশে গ্যাস ও পানীয় একসঙ্গে থাকে, যা নভোচারীদের অস্বস্তি ও পেট ফাঁপার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, সেগুলো মহাকাশে নেওয়া হয় না।
৪. কাঁচা দুধ
কাঁচা দুধের বিশেষ একটি সমস্যা আছে, তা হলো এটি প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণে খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। দুধের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, মহাকাশে সাধারণত পাউডার বা অতি পাস্তুরিত দুধ পাঠানো হয়, যা অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকে এবং মাইক্রোগ্রাভিটিতে সহজেই পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
৫. মদ
মদ মহাকাশে নেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও কিছু প্রাথমিক সোভিয়েত মহাকাশ মিশনে মদ খাওয়ার অনুমতি ছিল। তবে নাসা এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। মদ খেলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায় এবং মহাকাশযানের পানি পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ সিস্টেমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এতে নভোচারীদের নিরাপত্তা এবং মহাকাশযানের সিস্টেমের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়।
৬. কাঁচা শাক-সবজি
কাঁচা শাক-সবজি: যেমন পালংশাক ও লেটুস মহাকাশে পাঠানো হয় না। এগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং মাইক্রোগ্রাভিটির মধ্যে ছোট অংশগুলো ভেসে থাকতে পারে, যা মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি বা ভেন্টিলেশন সিস্টেমে আটকে যেতে পারে।
৭. আইসক্রিম
আইসক্রিম সাধারণত মহাকাশে নেওয়া হয় না। কারণ এটি জমাতে অনেক শক্তি লাগে, যা মহাকাশযানের শক্তির জন্য কার্যকর নয়। মাইক্রোগ্রাভিটির মধ্যে আইসক্রিম গলে যায়, যা নভোচারীদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করে। যদিও নাসা মাঝে মাঝে ছোট পরিসরে হিমায়িত খাবার পাঠায়। তবে নিয়মিত আইসক্রিম পাঠানো হয় না।
৮. মাছ ও অন্যান্য গন্ধযুক্ত খাবার
মাছ ও গন্ধযুক্ত অন্যান্য খাবারও মহাকাশে নিষিদ্ধ করা হয়। মহাকাশযানের ভেতর শক্ত গন্ধ দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং এটি অন্য খাবারের স্বাদকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া, মহাকাশে গন্ধ সঠিকভাবে বের হতে পারে না। ফলে তা নভোচারীদের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে।
৯. তাজা ফলমূল
তাজা ফলমূল খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং মহাকাশের ভেতরে এগুলোর পচন ধরা শুরু করতে পারে। আরও একটি সমস্যা হলো, কিছু ফল গ্যাস সৃষ্টি করে। যেমন: ইথিলিনের মতো গ্যাস অন্য খাবারের পচন ত্বরান্বিত করে। এ জন্য মহাকাশচারীরা সাধারণত ফ্রিজ-ড্রাইড ফলমূল খেয়ে থাকেন।
১০. নরম পনির
নরম পনির আরেকটি নিষিদ্ধ খাবার। কারণ, এগুলো সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রিজে না রাখলে এগুলোর বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় এবং মহাকাশযানের সংকীর্ণ পরিবেশে এর দুর্গন্ধ আটকে থাকে।
মহাকাশে খাদ্য বিধিনিষেধের গুরুত্ব খাবারের সঠিক নির্বাচন শুধু স্বাদ বা বৈচিত্র্যের জন্য নয়, বরং নভোচারীদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা ও মহাকাশযানের সিস্টেমের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিধিনিষেধ মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মহাকাশ খাদ্যপ্রযুক্তি আরও উন্নতি হলে ভবিষ্যতে কিছু নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা হয়তো পরিবর্তিত হবে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
আরও খবর পড়ুন:
আইনস্টাইনের কথা উঠলেই চলে আসে আরও একজনের নাম। তিনি হলের এমি নোয়েথার। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন এই নারী। তিনি ছিলেন জার্মান গণিতবিদ। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা যান এই নারী। কিন্তু এই অল্প কিছুদিনেই গণিতে তাঁর অবদান অসামান্য।
৯ ঘণ্টা আগেজলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কৃষিপ্রধান দেশগুলোর ধানে আর্সেনিকের উপস্থিতির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেডলফিনেরা পৃথিবীর অন্যতম বুদ্ধিমান প্রাণী, যাদের জটিল সামাজিক আচরণ ও শিসের মাধ্যমে নিজস্ব সাংকেতিক নাম রয়েছে। তারা ঘনঘন শব্দ, ক্লিক ও স্কোয়াক ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রহস্যময় এই যোগাযোগব্যবস্থা ভেদ করার পথেই এগোচ্ছে বিজ্ঞান।
১ দিন আগেপৃথিবী ছাড়া মহাবিশ্বের অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিগত কয়েক দশক ধরে গবেষণা পরিচালনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেই উত্তরের খোঁজে আরেক ধাপ এগোল মানবজাতি। নাসার জ্যোতির্বিদরা দাবি করেছেন, পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে ‘কে২–১৮ বি’ নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে...
২ দিন আগে