Ajker Patrika

কেটি পেরিসহ মহাকাশ ঘুরে এলেন ৬ নারী

অনলাইন ডেস্ক
কেটি পেরির সঙ্গে ছিলেন লরেন সানচেজ, গেইল কিং, আইশা বোয়ে, আমান্ডা নুয়েন ও কেরিয়ান্ন ফ্লিন। ছবি: সংগৃহীত
কেটি পেরির সঙ্গে ছিলেন লরেন সানচেজ, গেইল কিং, আইশা বোয়ে, আমান্ডা নুয়েন ও কেরিয়ান্ন ফ্লিন। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিখ্যাত পপ তারকা কেটি পেরিসহ আরও পাঁচজন নারী সফলভাবে মহাকাশ ভ্রমণ শেষে পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরে এসেছেন। জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনের নিউ শেফার্ড রকেটের মাধ্যমে এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা।

এই ঐতিহাসিক ঘটনায় কেটি পেরির সঙ্গে ছিলেন বেজোসের বাগদত্তা লরেন সানচেজ, সিবিএস উপস্থাপক গেইল কিং, মহাকাশ উদ্যোক্তা আইশা বোয়ে, নাগরিক অধিকারকর্মী আমান্ডা নুয়েন ও চলচ্চিত্র প্রযোজক কেরিয়ান্ন ফ্লিন।

টেক্সাসের ভ্যান হর্ন এলাকা থেকে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। মাত্র ১১ মিনিট স্থায়ী এই মহাকাশযাত্রায় তাঁরা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার ওপরে উঠে গিয়েছিলেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মহাকাশ সীমার ওপরে।

ক্যাপসুলটি প্যারাশুটের সাহায্যে সফলভাবে অবতরণ করে পৃথিবীতে ফিরে আসে, আর রকেট বুস্টারটিও টেক্সাসে ফিরে নিরাপদে অবতরণ করে।

অভিযান শেষে চোখে পানি নিয়ে সানচেজ বলেন, ‘পৃথিবীকে অন্য চোখে দেখলাম—আমি জানি না কীভাবে বলব। জানালার বাইরে তাকিয়ে আমরা চাঁদ দেখেছি। পৃথিবীকে মনে হচ্ছিল নিঃশব্দ, কিন্তু জীবন্ত।’

কেটি পেরি বলেন, ‘আমি এখন জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ বোধ করছি। ভালোবাসার সঙ্গেও।’ তিনি কন্যার নামে একটি ডেইজি ফুল আকাশের দিকে তুলে ধরেন।

গেইল কিং মাটিতে হাঁটু গেড়ে চুমু খান এবং বলেন, ‘আমি শুধু মাটির সঙ্গে একটি মুহূর্ত কাটাতে চাই, এই গ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।’

শেষে বেরিয়ে আসা ক্রু সদস্য কেরিয়ান ফ্লিন চিৎকার করে বলেন, ‘আমি মহাকাশে গিয়েছি!’

নিউ শেফার্ড রকেটটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয় এবং এতে কোনো পাইলটের প্রয়োজন হয় না। যাত্রার আগে যাত্রীদের দুই দিন ধরে শারীরিক সক্ষমতা, জরুরি অবস্থায় করণীয় এবং শূন্য মাধ্যাকর্ষণের অভিজ্ঞতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

রকেট ও ক্যাপসুল দুটিই পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব দাবি করা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ বায়ুমণ্ডলে পানির বাষ্প নির্গমনও পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।

ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎক্ষেপণটি প্রত্যক্ষ করেছেন একঝাঁক তারকা।

দর্শক সারি থেকে ক্লোয়ি কারদাশিয়ান বলেন, ‘আমি ভাবতেই পারিনি এটি এত আবেগপূর্ণ হবে, ভাষায় বোঝানো কঠিন। আমার শরীরে যেন অ্যাড্রেনালিন ছুটছে, আর আমি শুধু দাঁড়িয়ে আছি।

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের যুগে সব স্বপ্নই হাতের নাগালে। বড় স্বপ্ন দেখো, আকাশের তারা ছোঁয়ার ইচ্ছা রাখো—একদিন হয়তো তোমরাও তাদের মাঝে থাকতে পারবে।’

অপরা উইনফ্রে তাঁর বন্ধু গেইল কিংকে নিয়ে কথা বলেন এবং জানান, গেইল মূলত বিমানে ভ্রমণে বেশ ভয় পান।

তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, ওর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন—আকাশে সামান্য ঝাঁকুনি হলেই ও কারও কোলের ওপর উঠে বসে পড়ে। ওর বিমান ভ্রমণ নিয়ে সত্যিই বাস্তবিক ভয় কাজ করে। আর এই যাত্রা ওর ভয়কে জয় করার এক বিশাল সাফল্য।’

এর আগে, ১৯৬৩ সালে একক মিশনে মহাকাশে ৭০ ঘণ্টারও বেশি সময় কাটিয়েছিলেন সোভিয়েত নভোচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। সে সময় ভস্তোক-৬ মহাকাশযানে এককভাবে মহাকাশে যাত্রা করে ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি।

এরপর থেকে আর কোনো সর্বমহিলা মহাকাশযাত্রা হয়নি। তবে মহাকাশ গবেষণায় নারীরা নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।

সমালোচনার মুখে বিলাসবহুল মহাকাশ পর্যটন

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার রাজনীতিবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা ড. কাই-উভে শ্রোগল বলেন, ‘একজন সেলিব্রিটি মানবজাতির প্রতিনিধি নন—তারা নিজেদের কারণেই মহাকাশে যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের মহাকাশযাত্রা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর। তবে মহাকাশবিজ্ঞানীদের জন্য এগুলো মাঝে মাঝে হতাশার কারণও হতে পারে। আমরা মহাকাশ ভ্রমণকে দেখি বিজ্ঞান, জ্ঞান ও মানবতার কল্যাণে পরিচালিত একটি প্রয়াস হিসেবে।’

ড. কাই-উভে শ্রোগল এর মতে, সেলিব্রিটিরা মূলত আনন্দের জন্য যান, অথচ তারাই সাধারণ মহাকাশচারীদের তুলনায় অনেক বেশি প্রচার ও মনোযোগ পান।

যদিও অনেকেই এই যাত্রাকে অনুপ্রেরণাদায়ক মনে করছেন, সমালোচকেরা বলছেন এটি ধনী ও খ্যাতিমানদের এক বিলাসবহুল শখ, যার সুবিধা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অভিনেত্রী অলিভিয়া মান বলেন, ‘অনেকে তো ডিমই কিনতে পারছেন না।’

এই মহাকাশযাত্রা সোশ্যাল মিডিয়ায়ও নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে—কারও আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস, আবার কারও বিরূপ সমালোচনা।

তবে গেইল কিং ও লরেন সানচেজ এই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এই মিশনের সঙ্গে হাজারো কর্মীর কঠোর পরিশ্রম জড়িত এবং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে।

২০০০ সালে আমাজন প্রতিষ্ঠাতা বিলিয়নিয়ার জেফ বেজোস গড়ে তোলেন বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন।

এই প্রতিষ্ঠান মূলত মহাকাশ পর্যটনের ওপর কাজ করলেও ভবিষ্যতের জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট ও চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণের প্রযুক্তিও উন্নয়ন করছে।

তাদের নিউ শেফার্ড রকেট সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য, প্রতিবার উৎক্ষেপণের পর বুস্টারটি উল্লম্বভাবে অবতরণ করে, যা খরচ কমায়।

যাত্রীদের জন্য দুই দিনের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক, যেখানে শারীরিক সক্ষমতা, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং শূন্য মাধ্যাকর্ষণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তুতি দেওয়া হয়। সহায়তার জন্য থাকেন ‘ক্রু মেম্বার সেভেন’ নামে পরিচিত দুজন সদস্য।

রকেটের ওপরে থাকে ছয়জন ধারণক্ষম ক্যাপসুল, যা রকেট থেকে আলাদা হয়ে নিরাপদে ফিরে আসে। টিকিটের দাম পুরোপুরি প্রকাশ করা না হলেও একটি আসন সংরক্ষণে ১ লাখ ৫০ হাজার‍ ডলার জমা দিতে হয়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

নালিতাবাড়ীতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

পারদর্শী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, স্থিতিশীল হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত