শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে লাখ লাখ কম্পিউটার গেমার: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮: ৫৮

ভিডিও গেমে যারা আসক্ত তাঁরা দীর্ঘ সময় কানে হেডফোন পরে থাকেন। হেডফোনে উচ্চশব্দে গেমের সাউন্ড ইফেক্ট ও মিউজিক বাজতে থাকে। এর ফলে গেমারদের শ্রবণশক্তির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। 

যুক্তরাজ্যের মেডিকেল জার্নাল (বিএমজে) পাবলিক হেলথে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। এর আগেও গেমিং ও শ্রবণশক্তির সম্পর্ক নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এসবের মধ্য থেকে ১৪টি গবেষণাপত্র নির্বাচিত করে পর্যালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা। নয়টি দেশের মোট ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের তথ্য এসব গবেষণায় রয়েছে। 

গবেষণাগুলোয় ভিডিও গেমের সঙ্গে শ্রবণশক্তি হারানো বা টিনিটাস রোগের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। টিনিটাস রোগে আক্রান্তরা আশপাশে কোনো শব্দ না থাকলেও কানে সারাক্ষণ ঝিঁঝি শব্দ শোনেন। 

গবেষণায় হোম কম্পিউটার, কনসোল, মোবাইল গেমস, গেমিং সেন্টার ও ই–স্পোর্টসসহ বিভিন্ন গেমিং ডিভাইসের কথা বিবেচনা করা হয়েছে। 

গবেষকেরা বলছেন, হেডফোনের ভলিউম কমিয়ে রাখলেই কান ভালো থাকবে, এমন ধারণা সঠিক নয়। শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য শব্দের তীব্রতা ও টানা কত সময় ধরে শব্দ শোনা হচ্ছে—উভয় বিষয়ই দায়ী। শব্দের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শব্দ শোনার নিরাপদ সময়সীমা কমে যায়। অর্থাৎ তিন ঘণ্টার গেমিং সেশন একই মাত্রার শব্দের ১৫ মিনিটের গেমিং সেশনের চেয়ে শ্রবণশক্তির অনেক বেশি স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, প্রাপ্তবয়স্করা প্রায় ৮০ ডেসিবেল (ডিবি) মাত্রার শব্দ সপ্তাহে মোট ৪০ ঘণ্টা নিরাপদে সহ্য করতে পারে। মানুষের চিৎকারের শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিবেল। এই তীব্রতার শব্দের নিরাপদ সময়সীমা সপ্তাহে চার ঘণ্টা। অর্থাৎ ৯০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ সপ্তাহে চার ঘণ্টার বেশি শুনলে শ্রবণশক্তির ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকির থাকে। যেখানে মানুষের কান টানা ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট সর্বোচ্চ ৯৫ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ সহ্য করতে পারে। 

এসব গবেষণাপত্রের একটিতে দেখা গেছে, চারটি শুটিং (গোলাগুলি) নির্ভর অ্যাকশন গেমে শব্দের মাত্রা গড়ে ৮৮ দশমিক ৫ থেকে ৯১ দশমিক ২ ডেসিবেল থাকে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বন্দুকের গুলি বা গাড়ি দুর্ঘটনার মতো শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছে। 
 
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১ কোটিরও বেশি গেমার ভিডিও গেম থেকে ‘জোরে’ বা ‘খুব জোরে’ মাত্রার শব্দের সংস্পর্শে আসতে পারে। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন গেমিংয়ের কারণে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার বিষয়টি নিজেরাই বুঝতে পারা ও চিকিৎসককে জানানো গেমারদের সংখ্যা বেড়েছে। 

তিনটি গবেষণায় গেমিং সেন্টারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি গবেষণায় বলা হয়েছে, পরিবেশে ৮০ ও ৯০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ থাকলে শ্রবণশক্তি হ্রাস ও টিনিটাস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। 

গেমিং সেন্টারের তিনটি গবেষণার মধ্যে আর্কেড গেমিং সিস্টেম নিয়ে পরিচালিত গবেষণার ফল ছিল আলাদা। এই দুটি গবেষণা ১৯৯২ এবং ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়। তখন গেমিং জগৎ এখনকার তুলনায় অনেক ভিন্ন ছিল। তাই এই গবেষণাপত্রের লেখকেরা উল্লেখ করেছেন, আধুনিক গেমিংয়ের সঙ্গে তাদের তুলনা করলে গবেষণাটি ঠিক হবে না। যদিও আর্কেড গেম এখনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। 

মোবাইল ফোনের গেমের গড় শব্দের মাত্রা ৪৩ দশমিক ২ ডেসিবেল। তাই এই ধরনের গেম শ্রবণশক্তির তেমন ক্ষতি করে না। 

গবেষকেরা বলেন, যেসব গেমার দীর্ঘ সময় উচ্চ–তীব্রতার শব্দে শোন, তাদের শ্রবণশক্তির স্থায়ী ক্ষতি ও টিনিটাসের ঝুঁকি থাকতে পারে। 

গবেষণাপত্রে বলা হয়, কিছু গেমার (বা ভেন্যু) তাদের গেমিংয়ের শব্দের মাত্রা কমিয়ে রাখে। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে খেলে। এটিও কিন্তু শ্রবণশক্তির ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। 

অন্য গেমারদের চেয়ে পেশাদার গেমারদের শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয় বেশি। কারণ তারা প্রতিযোগিতার জন্য অনেক বেশি সময় গেমিংয়ে ব্যয় করে। ভিডিও গেমিংয়ের সাফল্যের জন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ ও নির্দেশনা বোঝা খুবই জরুরি। এ জন্য পেশাদার গেমারদের ওপর শ্রবণশক্তির নির্ভর করতে হয়। 

তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত