Ajker Patrika

‘ক্রলিং পেগ’ চালু করেও স্বস্তি ফিরছে না ডলার বাজারে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ৩০ মে ২০২৪, ১১: ৩২
‘ক্রলিং পেগ’ চালু করেও স্বস্তি ফিরছে না ডলার বাজারে

ডলার-সংকট সামলাতে দর বাজারের ওপর ছেড়ে না দিয়ে ক্রলিং পেগ নামক নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় চাপ না কমে উল্টো ডলার বাজার আগের চেয়ে অস্থির হয়ে পড়েছে। এমনকি ৮ মে ডলারের দাম এক দিনে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হলেও সেই দলের ডলার মিলছে না। এমনকি বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহীদের যুক্তরাষ্ট্রে গমনের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের রেট ১২৩ টাকা ধরা হয়েছে। আর খোলাবাজারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশিত ১ টাকার মার্জিন লোকদেখানো রেটে পরিণত হয়েছে। কেননা, খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় ডলারের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্রলিং পেগের মাধ্যমে প্রতি ডলার ১১৭ টাকার রেট মানছে না অধিকাংশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো সাধারণ গ্রাহকদের কাছে নির্ধারিত দরে ডলার বিক্রি করতে চাইছে না। আবার কিছু গ্রাহকের কাছে ১২২ থেকে ১২৩ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার বিক্রি করছে।

আরিফুজ্জামান নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘বেলা ১১টায় সোনালী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখায় ৩০০ ডলার কেনার জন্য যাই। কিন্তু নির্ধারিত ১১৮ টাকা দরে ডলার পাননি। পরে অন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে ১২৩ টাকা দরে ডলার কিনতে সক্ষম হই।’

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কাগজপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল বুধবার প্রতি ডলার ১১৭ টাকায় কিনে ১১৮ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আর টিটি রেট ছিল ১১৬ টাকা ৯০ পয়সা। রপ্তানি বিল ছিল ১১৬ টাকা ৭৮ পয়সা। তিন মাসের জন্য ডিএ বিলের ১২২ টাকা ৩৩ পয়সা।

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, খোলাবাজারে ডলারের সাময়িক ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বাড়াতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। সরবরাহ বাড়লে রেট কমবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ মে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার নামে ক্রলিং পদ্ধতি চালু করে। আবার প্রতি ডলারের দাম ক্রলিং পেগ মিড-রেট ১১৭ টাকা ঘোষণা করে। ওই দিন ঘোষণার পরেই ডলার ১৩১ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা যায়।

অগ্রণী ব্যাংক গতকাল প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ৯০ পয়সা ক্রয়-বিক্রয় করেছে বলে ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ব্যাংকটি থেকে ডলার ক্রয় করতে পারেননি সজীব নামের একজন গ্রাহক। তাঁর কাছ থেকে কমিশন এবং চার্জ মিলে প্রতি ডলারের জন্য ১২৪ টাকার কথা জানান সংশ্লিষ্ট একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।

মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নামে এক আমদানিকারক বলেন, ‘ডলার-সংকটে তাঁর নির্ধারিত ব্যাংক আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারছে না। কয়েক দিন ঘুরে নির্ধারিত ব্যাংকে ১২৪ টাকা দরে ডলার কিনে এলসি বিল পরিশোধ করেছি।’

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ডলারের রেট আসলে ১১৭ টাকায় কেনা বা বেচা সম্ভব নয়। কারণ, এটা বিদেশি মুদ্রা। চাইলে জোর করে দাম আটকে রাখা যায় না। এ জন্য আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবসায় ও সাধারণ গ্রাহকদের ডলার লেনদেন করা হয়। বাস্তব দর এখনো ১২৩-২৪ টাকার নিচে নয়।’

রাজধানীর মতিঝিল, দিশকুশা, পল্টন, শান্তিনগর, পান্থপথ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল খোলাবাজারে নোটিশ বোর্ডে প্রতি ডলারের ক্রয় মূল্য ছিল ১১৭ টাকা ৮০ পয়সা এবং বিক্রয় মূল্য ছিল ১১৮ টাকা ৮০ পয়সা। তবে এই দামে ডলার লেনদেন করতে দেখা যায়নি।

শিখা বিনতে তাহিতি নামে একজন বেসরকারি কর্মজীবী বিদেশে যাওয়ার জন্য ডলার কেনার জন্য মতিঝিল ও দিলকুশা ঘোরেন। তিনি বলেন, ‘ডলারের জন্য দোকানে খাটানো রেট নিতান্ত লোকদেখানো। এই দরে ডলার বেচা ও কেনা কোনোটাই হয় না। অনেক ঘোরাঘুরি শেষে ১২৪ টাকা দরে ২০০ ডলার এবং অপর একটি দোকান থেকে ১২৫ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৩০০ ডলার কিনেছি। আর ব্যাংক তো আমজনতাকে ডলার দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ রকম খেয়াল-খুশিতে ডলার লেনদেন যেন দেখার কেউ নেই।’

মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব গৌতম দে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডলার এখনো বাজারভিত্তিক হয়নি। আর ক্রলিং পেগ তো বাজারকে উসকে দিয়েছে। এই পদ্ধতি চালুর দিনে (৮ মে) ডলারের দর অনেক ওপরে ওঠে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রির জন্য কোনো চিঠি দেয়নি। একটা মৌখিক ঘোষণা দিয়েছে। ব্যাংকের চেয়ে বেশি দরে খোলাবাজারে ডলার বিক্রি করা যাবে। যদিও ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের ডলার লেনদেনের সম্পর্ক নেই। ক্যাশ ডলার কিনি আর ক্যাশ ডলার বিক্রি করি। আর ১১৭ কিংবা ১১৮ টাকা দরে খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচা কোনোটাই হয় না। এর বাহিরে ডলার লেনদেন হয়। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত ডলার রেটের সঙ্গে প্রণোদনার হার যোগ করে রেট ঠিক করা উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত