Ajker Patrika

কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন সেলিম, ১৩ দিন পর হাসপাতালে মৃত্যু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ৩৯
কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন সেলিম, ১৩ দিন পর হাসপাতালে মৃত্যু

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় গত ১৮ জুলাই কর্মস্থলে যাওয়ার পথে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন সেলিম তালুকদার রমজান (২৮)। হাসপাতালে জীবনযুদ্ধে ১৩ দিন পর হেরে গেলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের দাবি, সেলিম কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। 

গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সেলিম তালুকদারের লাশ রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় গ্রামের বাড়ি নলছিটিতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে। এর আগে গতকাল রাত আড়াইটার দিকে তাঁর মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে এলাকায় শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর আত্মীয়স্বজন ও সহপাঠীরা। 

নিহত সেলিম তালুকদার ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার পৌরসভার টিএনটি এলাকার সুলতান তালুকদারের ছেলে। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সেলিম ছিলেন মেজো। তিনি বিয়ের করেছেন, যা এখনো এক বছর পূর্ণ হয়নি। 

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে দুই বছর আগে স্নাতক পাস করেন সেলিম। নারায়ণগঞ্জের মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডায়িং মিলস লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন। 

কান্না করতে করতে সেলিমের মা সেলিনা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেদিন (১৮ জুলাই) সকালে অফিসের গাড়ি তাকে নিতে আসেনি। অফিসে যাওয়ার উদ্দেশে সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এর ঘণ্টা দুই-তিন পর মুগদা হাসপাতাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় কেউ একজন আমার মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিয়ে জানান, আপনার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে, তাড়াতাড়ি আসেন।’ 

সেলিনা বেগম আরও বলেন, ‘ফোনে কল পেয়েই আমরা দ্রুত মুগদা হাসপাতালে ছুটে যাই। অবস্থা খারাপ দেখে আমরা ঢাকার গ্রিন রোডের তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরি। কোথাও আইসিইউতে সিট খালি পাইনি। পরের দিন ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করাই ছেলেকে। ওখানে ১৩ দিন আইসিইউতে থাকার পরে আমার ছেলেটি মারা গিয়েছে। সে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না।’ 

গ্রামের বাড়িতে সেলিমের জানাজায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সেলিনা বেগম বলেন, ‘আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। তোমরা সাবধানে থেকো। আর কোনো সন্তানকে আমরা হারাতে চাই না। মা-বাবার চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যু যে কতটা কষ্টের, তা একমাত্র যার হারায়—সেই বোঝে।’

সেলিমের বাবা সুলতান তালুকদার আজকের পত্রিকাকে জানান, ঘটনার দিন সেলিম বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে রওনা দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। এ সময় তাঁর মাথায়, বুকে ও পিঠে গুলি লাগে। ফুসফুসেও গুলি লাগে। চার হাসপাতাল ঘোরার পর ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। 

নিহতের স্বজনেরা জানান, দেনা-পাওনা পরিশোধের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিহতের মৃত্যু সনদ দেয়। গতকাল সকাল ৯টার দিকে লাশ নিয়ে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল পরিবারের। এ সময় হাসপাতালে পুলিশ এসে তাঁদের কাছ থেকে মৃত্যুর সনদ নেয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্তের চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু সেলিনা বেগম সন্তানের শরীরে আর কষ্ট দিতে চাচ্ছিলেন না। তাই ময়নাতদন্ত করাতে তিনি রাজি হননি। পরে এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফায় হাসপাতালে পরিবারের সদস্যদের কথা হয়। একপর্যায়ে নিহতের বাবাসহ চার-পাঁচজন সংশ্লিষ্ট থানায় যান। সেখানে সাদা কাগজে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের লাশ বাড়িতে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত