শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ, শিক্ষা সংস্কারে ১২ দফা সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ১৫
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ১৬
‘বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একাডেমিক অধিকার লঙ্ঘন: প্রতিকারে নীতি সুপারিশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে এই সময়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সামগ্রিক উন্নয়নে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা না করলে আগামী দিনে বিশ্ব শ্রম বাজার ধরতে ব্যর্থ হবে বাংলাদেশ। তাই শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়া আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একাডেমিক অধিকার লঙ্ঘন: প্রতিকারে নীতি সুপারিশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়ার সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সঞ্চালনায় উক্ত সভায় আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগ শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মুশতাক খান, এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর সাবেক সভাপতি মীর মোহাম্মদ জসিম।

কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়া আহ্বায়ক বেলাল হোসেন ধারণাপত্র পাঠ করেন। সংগঠনটির মুখপাত্র প্লাবন তারিক ১২ দফা সংস্কার প্রস্তাব পেশ করেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে কোনো আলাপ চলবে না। মাস্টাররা খারাপ, স্টুডেন্টরা খারাপ, কোনো আলাপ চলবে না। উপমহাদেশে বেশির ভাগ দেশেই ৪ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ। বাংলাদেশে এখন আছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তাহলে শিক্ষা সম্পর্কে আলাপ একটাই, সেটা হচ্ছে কত দিনে আপনারা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ৪ শতাংশ করবেন?’

অধ্যাপক আজম বলেন, ‘আমাদের প্রাইমারি স্কুলে অত্যন্ত খারাপ শিক্ষকেরা পড়ান। কারণ সেখানে বেতন খুবই কম। ১৭ হাজার টাকায় আপনি কী ডিজার্ভ করেন? আপনি ভালো ইউনিভার্সিটি চান তো, ইন্ডিয়াতে ভালো ইউনিভার্সিটি আছে।’

তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশের ভালো ইউনিভার্সিটির তালিকা করে, এশিয়ার ইউনিভার্সিটির তালিকা করে, সেখানে ইন্ডিয়ার ২০টা আছে, আপনার একটাও নাই। পাকিস্তানের ১০/১২টা আছে; আপনি লজ্জা পান তো! কীভাবে এটাকে বাড়িয়ে বাড়িয়ে তাদের মতো করা সম্ভব সেটার একটা রোডম্যাপ দেন।’

এ সময় লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, ‘যদি একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হয়, তাহলে তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে হবে। পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ আর নাই, সার্টিফিকেট ব্যবসা করে আর হবে না। কর্মদক্ষতা ও উৎপাদনশীল না হলে আপনি চাকরি পাবেন না।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক করতে না পারলে এ দেশের ভবিষ্যৎ নাই। ইন্ডিয়া পাকিস্তান থেকে লোক এনে কাজ চালাতে হচ্ছে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তাদের এক নম্বর কাজ হবে শিক্ষাকে বিশ্বমানের করা। চাইলেই এক রাতে দেশের ১১২টা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বন্ধ করা যাবে না। পলিটিক্যাল ইন বিল্ট কালচার থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে, আমাদের একাডেমির সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর কোনো যোগসূত্র নাই। এটা করতে হবে।

এর মধ্যে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন, শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন, মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার, শিক্ষা বাজেট অগ্রাধিকার, গবেষণামুখী উচ্চ শিক্ষা, নিয়োগ কমিশন প্রণয়ন, মাদ্রাসাশিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও বুলিং এবং র‍্যাগিং বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত