Ajker Patrika

পুলিশকে টাকা দিয়ে চলছে নিষিদ্ধ যান

  • ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটারে অবাধে চলছে অটোরিকশা
  • নিষিদ্ধ যানবাহন থেকে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
  • তিন চাকার যানবাহনের কারণে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের
রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ২৩
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ যানবাহন। গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসড়কের নিচে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ যানবাহন। গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসড়কের নিচে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের শ্রীপুর অংশের ১৩ কিলোমিটারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত কয়েক হাজার অটোরিকশা। পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে এসব নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে শত শত অটোরিকশা চলাচল করলেও সেগুলো বন্ধে নেই কোনো তৎপরতা। বরং পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থেকে এসব অবৈধ অটোরিকশাকে চলাচলের সুযোগ করে দিতে দেখা গেছে। তিন চাকার এসব যানবাহনের কারণে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান যাত্রী-পথচারী।

এক সপ্তাহ ধরে খোঁজখবর নিয়ে ও অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার ড. আ ক ম আক্তারুজ্জামান বসু মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মহাসড়কে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ ছোট ইস্যু (বিষয়) নয়। দেশে এখন ৪০ লোখ অটোরিকশা চলাচল করে। পুলিশ তো সব সময় অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।’ পুলিশের টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তো মানুষ। সুযোগ পেলে পুলিশও অপরাধ করে। পুলিশের এমন কিছু সদস্য রয়েছেন, আমরা স্বীকার করছি। পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে যাত্রীদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের তৎপরতা প্রয়োজন। যত্রতত্র কারখানায় তৈরি হচ্ছে অবৈধ অটোরিকশা। এগুলোও বন্ধ হওয়া দরকার। মহাসড়ক থেকে অটোরিকশা পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসড়কের নিচে ইউনিফর্ম পরা দুজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে খোশগল্প করছেন। পাশ দিয়ে চলাচল করছে বহু অটোরিকশা। পাশেই একজন পুলিশ সদস্য অটোরিকশাকে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে বৈধ গণপরিবহন। দুপুরের পর থেকে মহাসড়কের শ্রীপুর অংশের জৈনা বাজার থেকে মাধখলা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারে পাল্লা দিয়ে শত শত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়।

মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় তিনটি পুলিশ বক্স রয়েছে। এখানে সড়কের শৃঙ্খলায় নিয়োজিত থাকে জেলা পুলিশ, থানা-পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের অর্ধশতাধিক সদস্য। এত পুলিশ সদস্যের সামনেই চলছে শত শত নিষিদ্ধ যানবাহন।

মহাসড়কের দুটি লেন দখল করে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকে অটোরিকশা। মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসড়কের নিচে অটোচালকেরা লাইনে দাঁড়িয়ে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছিলেন। মাওনা চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিন খান বলেন, অটোরিকশার জন্য আজকাল হেঁটে চলাচলও দায়। অটোরিকশার চালকেরা যত্রতত্র পার্ক করে ভোগান্তির সৃষ্টি করে। ফুটপাত দখল করে শত শত অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকে।

কোনো কোনো অটোরিকশাকে দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। বাসের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে অনেক অটোরিকশা উল্টেও পড়ে।

এভাবে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত। প্রভাতি পরিবহনের একটি বাসের চালক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘অটোরিকশা আমাদের বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করে। হর্ন দিলেও ওরা সাইড দিতে চায় না। ওরা পুরোপুরি অদক্ষ চালক, কোনো প্রশিক্ষণ নেই। অটোরিকশার জন্য আমাদের অনেক সময় জ্যামে পড়ে থাকতে হয়।’

মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসড়কের নিচে কথা হয় অটোরিকশাচালক বশিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একজনের মাধ্যমে পুলিশের সঙ্গে মান্থলি (মাসিক ভিত্তিতে) করে অটোরিকশা চালাতে হয়। মাসে মাসে টাকা দেওয়ার পরও মাঝেমধ্যে সমস্যা হয়। এক মাস টাকা না দিলে অটোরিকশা জব্দ করা হয়। তাই বাধ্য হয়ে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা দিই। যাঁর মাধ্যমে টাকা দিই তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশকে কত টাকা দেয়। এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না। আমি গরিব মানুষ, এত কিছু জানার চেষ্টা করি না। গাড়ি চালাতে পারলেই হলো।’

মহাসড়কে কেন অটো চালান—এমন প্রশ্নে এমসি বাজারে নিজাম উদ্দিন নামের এক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘আমরা নিয়মিত পুলিশকে টাকা দিয়ে অটোরিকশা চালাই। মহাসড়কে যাত্রী বেশি, গাড়িও ভালো থাকে—এ জন্য সবাই মহাসড়কে অটোরিকশা চালায়। আমি চালাই, সবাই বন্ধ করলে আমিও করব।’

শ্রীপুর পৌর নাগরিক ফোরামের সভাপতি রওশন হাসান রুবেল বলেন, ‘সামান্য সড়কে হাজার হাজার অটোরিকশা কী করে চলাচল করে? পুলিশের কয়েকটি টিম তো ২৪ ঘণ্টা দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের সামনে দিয়ে অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, কই তারা তো কোনো ধরনের তৎপরতা দেখাচ্ছে না! কারণ কী? তাঁদেরও কী কোনো লাভ রয়েছে এখানে? এটা আমার প্রশ্ন।’

এ ব্যাপারে মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আয়ুব আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুলিশ যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করে, তখন সব গাড়ির জন্য রাস্তা ক্লিয়ার (চলাচলের সুযোগ) করে। এত বেশি অটোরিকশা কয়টা আটক করবে। এ ছাড়া মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আপনাদের নামসর্বস্ব কয়েকজন সাংবাদিক। পাশাপাশি পুলিশের সদস্যও থাকতে পারে। ওসি আয়ুব আলী আরও বলেন, ‘আমি চেষ্টা করি মহাসড়ক থেকে অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে। কিন্তু অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করলে চালকেরা সবাই মিলে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। অটোরিকশা বন্ধ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত