মৌচাকে ব্যাংকারের মৃত্যু: মাথায় পড়া কংক্রিটের ব্লক নিয়ে রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০: ১৬
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১০: ৫৫

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা দীপু সানা ওরফে দীপান্বিতা। গত বুধবার সদরঘাট থেকে অফিসের কাজ শেষে গাড়িতে এসে শান্তিনগরে নামেন। পরে পায়ে হেঁটে মৌচাকের ফুটপাত ধরে মগবাজারের বাসায় ফিরছিলেন। সিরাজুল ইসলাম হাসপাতালের বিপরীত সড়কে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি ও পার্টি সেন্টারের সামনে পৌঁছাতেই ওপর থেকে একটি কংক্রিটের ব্লক মাথায় পড়ে মৃত্যু হয় তার। 

গত বুধবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। দীপু সানার মৃত্যুর পর তার স্বামী তরুণ বিশ্বাস রমনা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। আসামি অজ্ঞাত। থানা-পুলিশের সঙ্গে ঘটনাটি ছায়াতদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশের কাছেও ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। 

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ব্লকের মতো শক্ত একটি টুকরা ওপর থেকে সরাসরি মাথায় পড়তেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু সেই ব্লকটি কোত্থেকে এল তা বোঝা যাচ্ছে না। 

দীপু সানার সহকর্মী বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম-ব্যবস্থাপক আবু শহীদ বলেন, ‘বাসা কাছে বলেই ওইটুকু পথ হেঁটেই যেতেন। বুধবার কাজ শেষে একসঙ্গে আমরা কয়েকজন সদরঘাট অফিস থেকে বের হই। গেট পার হওয়ার পরে যে যার গন্তব্যে চলে যাই। দীপু সানা মগবাজারের বাসার দিকে যান।’ 

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘সেখানে ব্লকটি পড়া খুবই রহস্যজনক। যেহেতু সেখানে কোনো নির্মাণাধীন ভবন নেই। যে বিল্ডিংগুলো পাশে আছে সেখানে কোনো ইট বা ব্লক থাকার কথা না। তবে পাশেই ফ্লাইওভার আছে।’ 

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, মৌচাক মার্কেট হতে মগবাজারের দিকে যে রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তার ফুটপাত ধরে হেঁটে চলছিলেন তিনি। সেখানে একটি দশ তলা নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে। সেটা পার হয়ে অনন্ত ৪৫ সেকেন্ড হাঁটার পর জমজম মেডিকেল সেন্টার। তারপর ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টার (কমিউনিটি সেন্টার)। ওই রাতে ঠিক সেখানেই সানার মাথার ওপর ওই ব্লক পরে। তার পাশে ছিল সিদ্ধেশ্বরী কলেজ। 

সেরাতে ঘটনাস্থলে স্থলে থাকা এরশাদ নামে এক দোকানদার বলেন, ‘তার সামনেই ঘটনাটি ঘটে। কিন্ত তারা কিছুই বুঝতে পারেননি। শুধু আহ করে একটু শব্দ করে তিনি পড়ে গেছেন।’ 

ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। সূত্রটি বলছে, ঘটনাস্থলে ফখরুদ্দিন পার্টি সেন্টার (কমিউনিটি সেন্টার) রয়েছে। পেছনে জমজম মেডিকেল সেন্টার। সামনে সিদ্ধেশ্বরী কলেজ। এই ভবনগুলো থেকে কোনোভাবে ব্লক পড়ার সম্ভাবনা নেই। যদি না টার্গেট কিলিং হয়। গোয়েন্দাদের ধারণা, ফ্লাইওভার থেকে এই ব্লকের টুকরা এসেছে পড়তে পারে। তবে সেটা কে বা কারা ছুড়ে মেরেছে, উদ্দেশ্যই বা কি ছিল সেটার তদন্ত চলছে। 

থানা-পুলিশ বলছে, যেটার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে, সেটা ফুটপাত নির্মাণে ব্যবহার করা হয় এমন সিমেন্টের খাঁজ কাটা ব্লক। দেখতে ইট আকৃতির। 
ফুটপাত ধরে হাঁটতে গিয়ে সুস্থ-সবল মানুষের এমন মৃত্যুকে মানতে পারছেন না পরিবার-স্বজন বা সহকর্মীদের কেউ। 

দীপু সানার মরদেহ সুরতহাল শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্তের পর তার মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

জানা যায়, খুলনার পাইকগাছার মেয়ে দীপু সানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে পড়েছেন। ছয় বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। সবশেষ তিনি সহব্যবস্থাপক হিসেবে সদরঘাট শাখার জড় সামগ্রী ও মনিহারি শাখায় কর্মরত ছিলেন। তার তিন বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত