বিস্কুট খাওয়ার সময় পা পিছলে মায়ের সামনে অটোরিকশা চাপায় শিশু নিহত

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
Thumbnail image

রাজধানীর উত্তরখানে দুই বছরের শিশু জান্নাত আক্তারকে চায়ের দোকানে বিস্কুট খাওয়াচ্ছিলেন মা ফাহিমা আক্তার। ওই সময় পা পিছলে উঁচু ঢাল থেকে পড়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাপায় মায়ের সামনেই মারা গেছে শিশুটি। 

উত্তরখান মাজার টু দক্ষিণখান বাজার সড়কের ফজির বাতান এলাকায় আজ সোমবার (৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পরে আশেপাশের লোকজন ও নিহত শিশুর স্বজনেরা দুর্ঘটনা কবলিত অটোরিকশাটি আটক করে। তবে ঘাতক চালক পালিয়ে যায়। 

নিহত ওই শিশুটির বাবা সেলিম মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার রাঘবপুর গ্রামে। তিনি এক মেয়ে, স্ত্রী, মা-বাবা ও স্বজনদের নিয়ে উত্তরখান ফজির বাতান মেডিকেল রোডের মিজানের ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। 

ফজির বাতান এলাকার বাসিন্দারা আজকের পত্রিকাকে বলেন, মন্টুর দোকানে মেয়ের মা, নানী সবাই ছিল। তখন জান্নাতকে তার মা বিস্কুট খাওয়াচ্ছিল। বিস্কুট খাওয়ার সময় জান্নাত পা পিছলে কিছুটা উঁচু ঢাল থেকে পড়ে গড়াগড়ি খেতে খেতে রাস্তায় চলে যায়। ওই সময় সড়কটি দিয়ে যাচ্ছিলো মোল্লা বাড়ির পুলিশের ছেলে সোহেলের একটি অটোরিকশা। ওই অটোরিকশাটি শিশুটির বুকের ওপর দিয়ে উঠিয়ে দেয়। বাচ্চাটিকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায়। 

তাঁরা বলেন, দুর্ঘটনার পর পরই আশেপাশের লোকজন দৌড়ে ওই অটোরিকশাটিকে আটক করে। কিন্তু ঘাতক চালক ততক্ষণে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে উত্তরখান থানা-পুলিশ গেলে তাদের কাছে অটোরিকশাটি দিয়ে দেওয়া হয়। 

হাসপাতাল থেকে শিশুটির মরদেহ নিয়ে আসা হয় দুর্ঘটনাস্থলের পাশের খালার বাসায়। সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা-বাবা ও নানা-নানীসহ স্বজনরা। এদিকে দুর্ঘটনারর খবর ছড়িয়ে পরলে ভিড় জমান এলাকাবাসী। 

ওই চায়ের দোকানটির নাম ফাতেমা জেনারেল স্টোর। পরিচালনা করেন মন্টু মিয়া। ঘটনার সময় দোকানে ছিলেন তার স্ত্রী ফাতেমা। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাচ্চার নানী দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। বাচ্চাটা তার মায়ের কাছেই ছিল। হঠাৎ করে দেখি, বাচ্চার মা গড়াগড়ি করছে, আর চিৎকার করছে। পরে আশেপাশের লোকজন অটোটাকে আটক করে পুলিশে দিয়ে দেয়।’ 

ফাতেমা আরও বলেন, ‘বাচ্চাটাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই বাচ্চাটা মারা যায়।’ 

গার্মেন্টসে চাকরি করেন শিশুটির বাবা সেলিম মিয়া ওরফে সুমন। সেখান থেকে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন তিনি। এসেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন তাঁকে কয়েকজন ধরে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এর মাঝেই তিনি ঘরের দরজার সঙ্গে নিজের মাথায় আঘাত করতে থাকেন। 

ওই সময় সুমন চিৎকার করতে করতে বলেন, ‘আমার মাও কো এনে দে। আমার মারে কই নিয়ে গেছিলি। আমি এত করে কইছিলাম, ওরে ঘর থেকে বের করিস না। আমার মাইয়ারে আমায় দেখতে দে। আমি কিন্তু পাগল হয়ে যামু। আল্লাহ্ আমারে নিয়ে গেল না কেন? আমি বাড়িত নিয়ে যামু।’ 

শিশুটির মা ফাতেমা আক্তার মেয়ে হারানোর শোকে একটু পর পর জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরে পেয়েই তিনি বলতে থাকেন, ‘আমার মা—মাইয়া কইছিল খাইব। আমি বলেছিলাম, পরে। আমি রান্না শেষ করে লই। কিন্তু সেই খাওয়া আর হল না। আমি ধরতে ধরতে অটোর চাকার নিচে চলে গেল। আমার দোষেই আমার মাইয়্যা চলে গেল। আমিও আমার মাইয়্যার কাছে চলে যামু।’ 

জান্নাতের মরদেহের পাশে গিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে ফাতেমা বলেন, ‘জান্নাত ও জান্নাত। মা উঠো, আমরা ঘুরতে যামু। আমার মাইয়্যা কথা কয় না কে। ঘুমাইলে কি কথা কয় না।’ 

উত্তরখানে দুই বছরের শিশু জান্নাতকে চাপা দেওয়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ছবি: আজকের পত্রিকা শোকে পাগল প্রায় নানী নারগিস বেগম। তিনি প্রলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার নাতি জুস খাইব। আমারে কইতাছে আমি ওতি (ওইদিকে) জাইমু।’ 

ঘটনাস্থলে থাকা উত্তরখান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফা কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনাটি কবলিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটিকে আটক করা হয়েছে। চালক পালিয়ে গেছে। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগের অপেক্ষায় আছি। অভিযোগ দেওয়া মাত্রই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত