‘নারী বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকারে চাই সমান অধিকার’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ২২: ৫৩

বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমানাধিকার দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও এ দেশের নারী সমাজকে ব্যাপক বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নারীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্যের মূলস্তম্ভ উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকা। এটা বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনেরও মূল কারণ। বৈষম্যের মূলস্তম্ভে হাত না দেওয়ায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও কিছুতেই নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতার রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না। নারী নির্যাতন ও বৈষম্য দূর করতে হলে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার প্রয়োজন। 

আজ রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘বৈষম্য দূর করার জন্য উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার চাই’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

বৈঠকে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর। তিনি বলেন, নারীর প্রতি নিপীড়ন নির্যাতনের মূল কারণটি হলো নারীর পায়ের নিচে মাটি না থাকা। এই সংকট মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হবে নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা সুদৃঢ় করা, তথা উত্তরাধিকারসহ সকল সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। যা পরিবার, সমাজ ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় করবে। 

প্যানেল আলোচক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে যদি কোনো আইন সংবিধান পরিপন্থী হয় তবে সেই আইন বলবৎ থাকবে না। তিনি উল্লেখ করেন, ধর্মীয় অনুসরণ অনুযায়ী পারিবারিক আইনটি প্রণীত হয়েছে এবং তা এখনো কার্যকরী আছে যা নারীর জন্য বৈষম্য ও নির্যাতনের উৎসে পরিণত হয়েছে। সর্বজনীন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, সব আইন সংবিধানের আলোকে তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শুধুমাত্র এই আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে না নারীদের পশ্চাৎপদ করে রাখার জন্য। অবিলম্বে অভিন্ন ও সর্বজনীন পারিবারিক আইন প্রণয়ন প্রয়োজন। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আজও কেন এত নারীরা ভূমিহীন। শুধুমাত্র আইন পরিবর্তন বা সংশোধন যথেষ্ট হবে কিনা তা ভাবা দরকার। আইন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আইনি সহায়তা কীভাবে দেওয়া হবে, সামাজিক আন্দোলনে পুরুষের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা কেমন হবে, কীভাবে পুরুষদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা যায় এসব বিষয়ে আরও চিন্তা করতে হবে। 

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন—আইন কমিশনের লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান (অতিরিক্ত জেলা জজ) আবেদা সুলতানা। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাবরিনা জারিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম মাসুম বিল্লাহ। সভা পরিচালনা করেন বিএনপিএস-এর পরিচালক শাহনাজ সুমী। 
 
বক্তারা বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রনয়ন করাসহ সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার ও সম অংশীদারত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত