নকল ওষুধের আঁতুড়ঘর

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
Thumbnail image

নীলফামারীর সৈয়দপুরে অধিকাংশ ফার্মেসিতে নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বাড়ছে। শহরের পাড়া-মহল্লার ফার্মেসিতে নিম্নমানের ওষুধের ছড়াছড়ি। দাম কম হওয়ায় এসব ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনেক ফার্মেসির মালিক জেনেশুনেই রোগীর হাতে ভেজাল ওষুধ তুলে দিচ্ছেন।

এদিকে সৈয়দপুরে উৎপাদিত নকল ওষুধের একটি চালান নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকার মতিঝিলে মো. ইকবাল হোসেন রানা নামের এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০টি ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানান, তিনি সৈয়দপুরের মো. আতিয়ার রহমানের কাছ থেকে এসব ওষুধ সংগ্রহ করে বাজারজাত করতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনার হেমায়েতপুর উপজেলার সাধুপাড়ার বাসিন্দা আতিয়ারের সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে এআর ফুড ডিভিশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই সঙ্গে আছে রেক্সটন ল্যাবরেটরিজ নামের ওষুধের কারখানা। পাশাপাশি তিনি শহরের গোপনীয় স্থানে কারখানা গড়ে তোলে নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি করেন। এ অভিযোগে তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হন।

জানা গেছে, যে আসল ওষুধ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় পাওয়া যায় তা নকল করে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি ১১ টাকা দামের বড়ি মাত্র দুই থেকে তিন টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তিন টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে ১৬ টাকা মূল্যের বড়ি। বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ এভাবে নকল করে স্থানীয় একটি চক্র স্বল্প দামে বিক্রি করছে।

 বেশ কয়েকজন অসাধু ফার্মেসি মালিক মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার জন্য বহুল ব্যবহৃত নামসর্বস্ব এসব ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে অধিক মুনাফা করছেন। এমনকি পান ও মুদিদোকানেও মিলছে এসব ওষুধ। এসব ওষুধ খেয়ে কিডনি বিকল, বিকলাঙ্গতা, লিভার, মস্তিষ্কের জটিল রোগসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

শহরের গোলাহাট এলাকার সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘অসুস্থ হলে পড়লে আমার ছোট ভাইকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাজার থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে খাওয়াই। কিন্তু রোগ সারে না। পরে জানলাম, ওষুধটাই নকল।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের শেরেবাংলা সড়কের এক ফার্মেসির মালিক বলেন, যে ওষুধ নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করে সামান্য লাভ হয়, একই ওষুধ কিছু দোকানে অর্ধেক দামে বিক্রি করছে।

সৈয়দপুর শহরে স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একটি এনজিওর বাবুল হোসেন জানান, অনেক ফার্মেসির মালিক জেনেশুনেই রোগীর হাতে তুলে দিচ্ছেন এসব ভেজাল ওষুধ। এ নিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মাঝেমধ্যে কিছু অভিযান ছাড়া খুব একটা দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। যেকোনো ওষুধ বাজারজাত করার আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে বাজারজাত করতে হয়। কিন্তু একবার বাজারজাত করার পর সেই ওষুধের গুণগত মান নিয়ে আর কোনো তদারকি হয় না। এই সুযোগে অনেক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ওষুধের মান কমিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলেমুল বাশার বলেন, রোগ সারানোর জন্য ওষুধ খাওয়া হয়। কিন্তু ইদানীং রোগ সারানোর জন্য ওষুধ নয়; কিছু ওষুধই হয়ে উঠেছে রোগের কারণ।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নীলফামারী জেলা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক কাজী ফরহাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, লোকবলসংকটের কারণে সব জায়গায় সব সময় বিষয়টি দেখা সম্ভব হয় না।

তবে সৈয়দপুর উপজেলায় খুব শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত